গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৬

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 36


🍂🍂🍂


~মেহেরজান রেডী? দেরি হয়ে যাচ্ছে তো!

রুদ্রর কথায় তার দিকে ঘুরে দাড়ালো মেহের। রুদ্র মোহনীয় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো মেহেরের দিকে। মেহের আরেকবার আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বর দিকে চেয়ে দেখলো সব ঠিক আছে কি না। রুদ্রর সামনে গিয়ে কোমরে হাত রেখে বললো,

দাড়িয়ে আছেন কেন? জলদি চলুন! যেতে হবে তো।

রুদ্র সন্ধি ফিরে পেলো। মেহেরকে কাছে টেনে বললো,

তুমি এত সুন্দর কেনো বউ? আমি ব্যতীত অন্য কেউ তোমাকে দেখুক তা আমার ভালো লাগে না।

মেহের লজ্জায় মাথা নুয়ে দাড়িয়ে রইলো। স্নেহা এসে ডাক দিতেই দুজনে ছিটকে দূরে সরে দাড়ালো। স্নেহা বাকা হেসে বললো,

বেচারা আয়মান ভাইয়ারও তো রোমান্স এর জন্য বউ দরকার নাকি! জলদি চলো নাহলে দিয়া আবার বিয়ে করবে না বলে বেকে বসবে।

রুদ্র উদাসীন কণ্ঠে বললো,

তুমিও না বউমনি! পাঁচ মিনিট পরে আসলে কি হতো? এক চুমুও দিতে পারলাম না। ধুর!

স্নেহা আর মেহের দুজনেই অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো। একটা মানুষ এতটা ঠোঁট কাটা স্বভাবের হয় কি করে! মেহের লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে স্নেহার দিকে তাকালো। রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,

আরেহ বউ! এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে? বউমনি কি শুধুই আমার ভাবি নাকি? আমার শালীও।

মেহের কপাল চাপড়ে বললো,

এখন দেরি হচ্ছে না?

~হ্যা তাইতো! তুমিও না মেহেরজান! দিলে তো দেরি করিয়ে!

মেহের আর স্নেহাকে দ্বিতীয় বারের মতো অবাক করে দিয়ে হন হন করে চলে গেলো রুদ্র।

রুদ্র আর মেহেরের বিয়ের তিনমাস চলছে। তাদের সম্পর্কটা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। আজ আয়মান আর দিয়ার বিয়ে। আয়মান হটাৎ জিদ ধরে বসেছে সে যত দ্রুত সম্ভব দিয়াকে বিয়ে করবে। বিয়েতে প্রথমে দিয়া রাজি না হলেও পরে আয়মানের জোরাজুরিতে অবশেষে বিয়ে করতে রাজি হয়। 

_____________________________


~একজন চাকরের বিয়েতে এতো তামঝাম করার কি দরকার ছিল ভাবি? অযথাই টাকা নষ্ট করছো কেনো?

~রুদ্র আর আমাদের পরিবারের সকলের ইচ্ছেতেই বিয়েটা এভাবে করছি ভাবি। আয়মান মোটেও চাকর নয়। সে আমার ছোট ছেলের মতোই।

~ওই ছেলে নির্ঘাত তোমাদের ওপর কোনো জাদু করেছে ভাবি। নয়তো একটা বাহিরের ছেলের জন্য এত কিছু....

মেহের রাগান্বিত হয়ে বললো,

মুখ সামলে কথা বলুন আন্টি। কিসের এতিম সে? মামনি কে চোখে পড়ছে না আপনার? আর আমার ভাই কে চাকর বলার সাহস কি করে হলো আপনার!

জুমানা বেগম ফের কিছু বলার আগে কোনোকিছু ভাঙার আওয়াজে সেদিকে ঘুরে তাকালো মিসেস তিথি আর জুমানা বেগম। পেছনে ঘুরেই এক জোড়া চক্ষুদ্বয় দেখে রুহ কেপে উঠলো জুমানা বেগম এর। রুদ্রকে বরাবরই ভয় পায় সে। রুদ্র যেই এক চরিত্র! রেগে গেলে সামনে কে আছে তার পরোয়া সে করেই না যেনো। রুদ্র গর্জে উঠে বললো,

আপনার সাহস কি করে হলো ওকে বাইরের ছেলে বলার!

মিসেস তিথি দৌড়ে এসে রুদ্রকে ধরে বললো,

বাবা রাগ করিস না। শান্ত হ।

~কিসের শান্ত মা! এই মহিলার সাহস কি করে হলো মানকে বাহিরের ছেলে বলার। কে এই মহিলা?

মিসেস তিথি শান্ত চোখে তাকালেন। কাউকে একবার দেখলে তাকে খুব সহজেই ভুলে যাওয়ার মতো মানুষ রুদ্র না। কারো সাথে একবার সাক্ষাৎ হলে তাকে যেনো তার মেমোরি সেভ করে নেয়। আর আজ বলছে "এই মহিলা কে?"। স্নেহা, তীব্র ওরা দ্রুত পায়ে নিচে এসে দাড়ালো। রুদ্রর চেহারা দেখে কারণ না জানলেও রুদ্র রেগে আছে তা বুঝতে অসুবিধা হলো না। জুমানা বেগমকে দেখতেই স্নেহার চোখে মুখে যেনো রাজ্যের অন্ধকার নেমে এলো। এই মহিলাকে তার একদম অপছন্দ। এসেছে পর থেকে "বিয়ের দু বছর হতে চললো বাচ্চা নিচ্ছো না কেনো?, তুমি কি বাচ্চা দিতে অক্ষম?, এই কাজ এভাবে করছো কেন?, এভাবে চলছে কেনো?, বাড়ির বউ হিসেবে কিভাবে চলতে হয় জানো না!" এমন অনেক কথা বলেই জ্বালিয়ে মারছে। নেহাৎ সে এ বাড়ির বড় বউ নয়তো খুব কথা শুনিয়ে ছাড়তো সে। মেহেরের দিকে চেয়ে দেখলো তার চোখে মুখেও বিরক্তিভাব বিদ্যমান। রুদ্রর ভয়ে মেহেরকে জুমানা বেগম কিছু না বললেও স্নেহাকে একেকটা বলায় বেশ রেগে ছিল মেহের। এমনিও মেহের যে স্নেহার মত ঠান্ডা মেজাজের মেয়ে না তাও বেশ বুঝতে পেরেছেন তিনি। জুমানা বেগম সাহস যুগিয়ে বললো,

ঠিকই তো বলছি রুদ্র। একটা চাকরের জন্য এতো কিছুর মানে হয়! এতিম তো তাই তোমাদের পটিয়ে খাচ্ছে।

রুদ্র এবার বেজায় রেগে গেলো।

~একে তো আমি!

বলেই পিস্তল নিয়ে তেড়ে জুমানা বেগমের কাছে যেতে নিতেই আয়মান এসে আটকালো রুদ্রকে। তীব্র তেড়ে যেতে নিলে তাকেও আরেক হাত দিয়ে আটকায় আয়মান। দু হাত দিয়ে দুজনকে টেনে আনার চেষ্টা করতে করতে বললো,

~স্যার! স্যার! কি করছেন কি স্যার!

~মান! ছাড় আমাকে! এই মহিলাকে আজ আমি খুন করবো।

~স্যার প্লীজ শান্ত হোন। প্লীজ স্যার!

রুদ্র শান্ত হলো না। চেঁচিয়ে বললো,

তুই জানিস না মান এই মহিলা কত বড় দুঃসাহস দেখিয়েছে। ছাড় আমাকে! ছাড় বলছি!

আয়মান ছাড়লো না। আরো শক্ত করে ধরে বললো,

আমি জানি। শুনেছি আমি। আপনি প্লীজ শান্ত হোন।

মেহের আর স্নেহার দিকে চেয়ে বললো,

ভাবিমা! ভাবি! আপনারাই বুঝান না!

মেহের মুখ ফুলিয়ে বললো,

ঠিকই করছে ভাইয়া। ওনার সাহস কি করে হলো আপনাকে এতিম বলার। আমি তো বলি রুদ্রকে ছেড়েই দিন। দু চারটে গুলি খেয়ে দেন বুঝবে উল্টো পাল্টা কথা বলার মজা।

স্নেহাও সায় জানিয়ে বললো,

একদম ঠিক বলেছে মেহের। ভাইয়া ছাড়ুন ওনাদের!

রুদ্র আর তীব্রকে দেখে ভয় পেয়ে মিসেস তিথির পিছনে লুকালেও মেহের আর স্নেহার কথায় আরো গুটিয়ে যায় জুমানা বেগম। আয়মান পারে না এবার দেয়ালে মাথা ঠুকে। কিছু মাস আগেই না বিয়ে করবে না বলে লাফাচ্ছিলো? এখন কেমন স্যার এর কাজে সাপোর্ট করছে দেখো! একেই বলে "সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে"। আয়মান ফোঁস করে দম ছেড়ে বললো,

আজ আমার বিয়ে স্যার। এই খুশিতেই মাফ করে দিন। আবার কখনো কিছু বললে তখন শাস্তি দিয়েন।

তীব্র ফুঁসে উঠে বললো,

তার আবারো এমন কিছু বলার সুযোগ দেওয়ার দরকার নেই। রুদ্র তুই এখান থেকেই গুলি কর। তোর নিশানা ভালো।

জুমানা বেগম হু হু করে কেঁদে উঠে বললো,

মাফ করে দাও বাবা। আমি আর কখনোই এমন ভুল করবো না।

আয়মান করুন চোখে মেহেরকে ইশারাতে অনুরোধ করতেই তার মুখ দেখে যেনো মেহেরের মনে মায়া হলো। এগিয়ে গিয়ে রুদ্রকে বললো,

উনি মাফ চাইছেন রুদ্র। মাফ করে দিন। আর কখনো এমন করবে না বললোই তো।

তীব্রকে স্নেহা বুঝালে দুজনে একটু শান্ত হয়। তবে রুদ্র রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে রইলো জুমানা বেগমের দিকে। আয়মান জানে রুদ্র এখন শান্ত থাকলেও কিছু একটা তো করবেই তাকে শাস্তি দিতে। আয়মানকে সে পি এ নয় বরং ভাই মানে এতে কোনো কোনো সন্দেহ নেই। আয়মান রুদ্র আর তীব্রকে নিয়ে সোফায় বসে বললো,

আপনি খুবই ভালো একজন মানুষ স্যার। আপনি দয়া করে আর রাগ করে থাকবেন না।

রুদ্র আয়মানের দিকে তাকালো। আয়মান এর চোখে জল স্পষ্ট। রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

আর কখনো যদি দেখেছি আমাকে স্যার ডাকতে! আই স্বয়ার সবার আগে তোকেই গুলি করবো আমি।

~আমাকে মা আর রেদওয়ানকে বাবা বলে ডাকবি। নয়তো তোর খাওয়া বন্ধ।

মিসেস তিথি এর কথায় আয়মান হেসে উঠলো। মনে মনে বললো,

নির্দ্বিধায় এ মানুষগুলো ভালো মনের। ভাগ্যবানদেরই শুধু এমন পরিবার নসিব হয়। আর ওই ভাগ্যবানদের তালিকায় আমিও আছি।

_______________________________


আয়মান আর দিয়ার বাসর ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছে মেহের, আহিল, কাব্য আর স্নেহা। উদ্দেশ্য ওদের বাসরে ব্যাঘাত ঘটানো।

~কি করবি ভেবেছিস? (আহিল)

~জানালা দিয়ে পানি মারি চল। (কাব্য)

~হোয়াট আ লেইম আইডিয়া!

স্নেহার কথায় ফুঁসে উঠলো কাব্য। ফিসফিসিয়ে বললো,

ওই বেডি! আমার আইডিয়া মোটেও লেইম না।

~ঠিক। তোর আইডিয়া লেইম না বরং বেটা তুই নিজেই লেইম। এদিকে ঝগড়া করলে ধরে দিবো এক লাথি। (আহিল)

~মীরজাফর! তোর বাসরে যদি ডিস্টার্ব না করছি!

ওদের কথার মধ্যেই হাজির হলো তীব্র আর রুদ্র। মেহেরকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র বলে,

কি?

~আপনারা এখানে কি করছেন?

~যা তোমরা করতে এসেছো।

~কি! আপনারা ডিস্টার্ব করতে এসেছেন? আপনারা না আয়মান ভাইয়ার বড়?(স্নেহা)

~হ্যা কিন্তু দিয়া তো আমাদের শালী। (রুদ্র)

~আমার বাসরে বহুত ডিস্টার্ব করেছে ফাজিল গুলায়। আজকে আমার পালা। (তীব্র)

~কি করবেন? (মেহের)

~দেখাচ্ছি।

দরজায় জোরে করাঘাত করে "ভাগো!" বলেই দৌড় দিলো রুদ্র। রুদ্রর কাণ্ডে হকচকিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে তারাও সব দৌড় দিয়ে লুকালো। আয়মান দরজা খুলে দেখলো কেউই নেই। দরজা লাগাতেই ওরা সকলে বেরিয়ে এলো। মেহের ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বললো,

না বলে এমন করতে গেলেন কেনো আপনি! এখনি তো ধরা পড়ে যেতাম।

একটা ৭ বছরের বাচ্চা ছেলে গেট এর সামনে এসে দাড়াতেই রুদ্র বাকা হাসলো। বাচ্চাটিকে বললো,

যা বলেছিলাম মনে আছে?

বাচ্চাটি দ্রুত বেগে মাথা নাড়ালো। রুদ্র ঠোঁটের হাসি বিস্তর করে বললো,

যা বলেছি করো। তবেই এত্তোওওও গুলা চকোলেট দিবো।

বাচ্চাটি ঘাড় কাত করে আচ্ছা বলতেই রুদ্র সবাইকে লুকাতে বললো। সকলেই আড়াল হতে বাচ্চাটির কার্যকলাপ দেখতে লাগলো। 

~কিরে? এই ছোট প্যাকেট আর কি ডিস্টার্ব করবে? (কাব্য)

~আমি কি জানি? চুপ চাপ দেখ! (মেহের)

হটাৎ ই বাচ্চাটা "দেখেছি তোমারে তুরাগ নদীর পাড়ে" বলে সুর নিয়ে চেচিয়ে উঠলো। গান নামক চিল্লানিতে কান চেপে ধরলো ওরা।

~এটা দেখতে পিচ্চি হলেও এ তো দেখি চলতি ফিরতি ফাটা বাঁশ রে! আল্লাহ গো! আমার কান শেষ! (আহিল)

~এইটা আবার কি গান রে? বাপের জন্মে তো শুনি নাই। (স্নেহা)

~আরেহ! এটা তো আমার প্রিয় গান!

কাব্য ওই ছেলেটির সাথে তাল মিলিয়ে গাইতে নিতেই কাব্যর মুখ চেপে ধরে আহিল। ফিসফিসিয়ে বলে,

~বেটা গর্ধব! ধরা খাওয়াবি নাকি! চুপ!!!

আয়মান হুড়মুড়িয়ে দরজা খুলতেই বাচ্চাটা হেসে বললো,

ভাইয়া ভালো আছো?

আয়মান ভ্রু কুচকে তাকাতেই ছেলেটি বললো,

থাক চলে যাই। টাটা।

বলেই আবারো গান গাইতে গাইতে সিড়ি বেয়ে নিচে চলে গেলো। আয়মান স্তব্ধ হয়ে বাচ্চার যাওয়া দেখলো। কিছুক্ষণ পরেই আবারো রুদ্র একজন গার্ডকে পাঠালো। লোকটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে কাশতে শুরু করলো।

~এই বেটা তো কাশির অ্যাক্টিং ই পারে না! দেখি আমি যাই সর।

যেতে নিতেই কাব্যকে আহিল টেনে ধরে বলে,

একটা উষ্টা দিমু তোরে এখন! চুপচাপ দাড়া এদিকে!

কাব্য হতাশ হয়ে বললো,

দেখলি! বুঝলি না আমার মতো ট্যালেন্টেড মানুষের কদর। আপসুস!

আয়মান এবার আর দরজা খুললো না। ওরা এবার বাগান দিয়ে আয়মান এর ঘরের জানালার কাছে এসে জড়ো হলো। একটা ইট জানালায় ছুড়ে মারতেই আয়মান দ্রুত জানালা খুললো। কাউকে না দেখতে পেয়ে জানালা বন্ধ করতেই আবারো দরজায় ইট ছুড়লো রুদ্র। এবার দিয়া জানালা খুলে বললো,

আরেকবার কেউ ইটের টুকরা মারলে আমি ডিরেক্ট দশ ইঞ্চি ইট ছুঁড়ে মারবো। ফাজিলের দল! ঘুমা গিয়ে!

রুদ্র হতভম্ব হয়ে গাছ ধরে দাড়িয়ে রইলো। আড়াল থেকে একে একে সবাই বের হয়ে খিল খিল করে হেসে উঠলো। বেচারি দিয়া হয়তো ভেবেছে তার বন্ধুরা এমন করছে তাই ঝাড়ি দিয়েছে। যদি জানতো রুদ্র এমন করেছে তবে হয়তো শকের বশে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতো।

~~~

চলবে~

(আজকে যদি কেউ বলছে গল্প ছোট। তবে রুদ্রর পিস্তল দিয়ে মেহেরকে উড়িয়ে দিবো😒 দেন একদম শান্তিময় এক এন্ডিং। হ্যাপি রিডিং~)

0 Comments:

Post a Comment