#নেশাটাই_তুমিময়
#পর্বঃ - 02+03
#লেখনিতে:- আবরার আহমেদ শুভ্র
নিস্তব্ধতায় আচ্ছন্ন মধ্যরাতীয় শহরের কোন এক দ্বিতল ভবনের এককোণে ভাবলেশহীনভাবে দূর আকাশপানে চেয়ে আছে অনিমা নামের রমণীটি। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এখন হয়তো তার ভালোবাসার মানুষটি অন্যকারোর কুলে মাথা দিয়ে ফ্যামিলি প্লানিং করছে! সে ভাবছে আজ সে কারো কাছে ঠাট্টার ফুলঝুরি, আর কারো কাছে খুব কাছের কেউ! তবে এসবে চিন্তা নেই তার! তবুও সে ব্যস্ত তার জীবনের সুখকে ত্যাগ করে দুঃখকষ্টকে আপন করে নিতে। কারণ, জীবন চলার পথে এসবই তার সঙ্গী!
তার ভাবনা ভাঙ্গলো ঘাড়ে কারো গরম নিশ্বাসের আচড়ে। আড় চোখে তাকিয়ে আঁখি নিক্ষেপ করলো সেদিকে। মুহুর্তেই আষাঢ়ের কালো মেঘে ছেয়ে গেলো তার কোমল মন! কেননা, তুরন এসে দাঁড়িয়েছে পাশে। একদম গা ঘেষে! তার কাছ থেকে কিছুটা সরে এলো অনিমা। কারণ, সে এখন তার নয়, কারো ব্যক্তিগত সম্পদ! এক সময়কার প্রিয়জন হলেও যেটা ছিলো প্রয়োজনে মাত্র! আর আজ সে অন্যকারো স্বামী! কথাটা মনে আসতেই মনটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
- জীবনটা কি অদ্ভুত, তাই না তুরন?
- হঠাৎ এই কথা মনে হলো যে?
- মনে হওয়ারই কথা নয় কি? এই যে আপনি আমার ছিলেন, কিন্তু আজ! যাক গে, আপনার এখন মুনাপুর সাথে থাকার কথা, আফটার অল ভাবি হয় আমার! তাছাড়া আজ আপনাদের কাঙ্ক্ষিত বাসর রাত বলে কথা!!.... বলেই তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসি উপহার দিলো অনিমা।
- অনি প্লীজ, আমাকে এসব বলো না। আমি তোমায় ভালোবাসি, শুধু তোমায়!.... একথা বলে তুরন অনিমার দিকে কয়েক পা এগিয়ে যেতেই অনিমা শক্ত কণ্ঠে বলে উঠল,,
- আর এক কদম সামনে এগোবেন না মিস্টার তুরন ইনকিয়াত চৌধুরী। কি ভেবেছেন কি আপনারা হা? মেয়েরা কি আপনাদের হাতের পুতুল! যেমনটা চাইবেন ঠিক তেমন করেই ইউজ করবেন মেয়েদের, আর কাজ শেষ হলেই টিস্যু পেপারের মতোন ছুঁড়ে ফেলে দেবেন? এসব অবশ্য আপনারা পার... আর বলতে পারলো না অনিমা। শক্ত হাতে মুখ চেপে ধরল তুরন অনিমার।
- ব্যস অনেক বলেছো আর না। আমি বলি এবার, এই বিয়েতে আমার কোনোকালেই মত ছিলো না আমি এই বিয়েতে রাজি ছিলাম, আমায় জোর করে প্রাণের ভয় দেখিয়ে রাজি করিয়েছিল কারো স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে! আর কি যেন বলছিলে রিয়ার মতোন মেয়েকে আপন করতাম? হাউ ফানি! যাকে আমি দুচোখ ভরে ঘৃণা করেছি তারেই আপন করে নিবো? ব্যাপারটা বেশ ফানি জোকস এর মতোন ছিলো তাই না?.... বলেই হনহনিয়ে চলে গেলো তুরন।
অনিমা একধ্যানে চেয়ে রইল তুরনের যাওয়ার পথে! ভাবছে, কিসের স্বার্থের কথা বলল তুরন? আর কার প্রাণেরই বা ভয় দেখিয়েছে তাকে যার জন্য সে তিন বছরের সম্পর্ক মাত্র তিন সেকেন্ডেই শেষ করে দিলো! না সে আর ভাববে না, যে তার হয়নি সে কখনও তার ছিলো না, সে শুধু সময়ের মোহ ছিলে মাত্র। তাকে যে করেই হোক এসব ভুলতে হবে। তার এখনও অনেক পথচলা বাকি আছে। তাকে তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। কিন্তু কিভাবে করবে সেটা সে যানে না। এমনিতেই বড় মামি আর মামু তাকে পড়ালেখা করতে মানা করেছেন তার উপর সে যদি তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ না করে তারা মরেও শান্তিতে থাকতে পারবে না। এক গোলকধাঁধায় পরে গেলে সে। কি করবে সে? তার মন বেয়ে কিছু দীর্ঘশ্বাস হৃদয়কাঁপানো কথা বেড়িয়ে এলো,
- "আর একটা নিস্তব্ধ রাতের সাক্ষি রয়ে গেলাম আমি!
কিছু নিরব অবিশ্বাস আর কিছু চাপা দ্বীর্ঘশ্বাসেরও
ঝুল বাড়ান্দায় গায়ে চাদর মোড়ানো আমি গ্রিলের ফাঁক গলে উড়ে আসা কুয়াশায় ল্যাম্পপোস্টের আলো পড়ে অদ্ভূত ভুতূরে দৃশ্যের নিরব সাক্ষী আমি! দুরে ঠায় হয়ে থাকা গাছগুলোর পাতা থেকে টুপ করে ঠিক কয়েক ফোঁটা শিশির বিন্দু ঝড়েছে তার হিসেব করেছি আমি কড়ায়-গন্ডায়! নিস্তব্ধ রাত্রীরে কোনো মানবীর চাপা কান্নার আওয়াজ করেছে আমায় ব্যাতিব্যস্ত! আমার চোখের কোণ বেয়ে পড়ে গেছে শুধু দু ফোঁটা নোনা জল। তবে আমি কাঁদিনি মোটেও! কারন সাক্ষীদের কোনো আবেগ থাকতে নেই। দুরে আরো একটু দুরে ধীরে বয়ে চলেছে যে নদী, তার বুকে আজ নেই কোনো ঢেউয়ের ছলাৎ ছল। সেটাও বোধহয় শুধু আমারই অগোচরে ঘটে চলেছে । নাকি আরো কোথাও কোনো এক ঝুল বাড়ান্দায় রয়েছে বসে অন্য কোনো এক রমনীও সেও হয়তো আমার মতো করেই আরো কোনো নিশুতি রাতের উপন্যাসের নিরব সাক্ষী রয়ে গেল! এইতো!! আর কিছুক্ষন বাকি সময়ের, তারপর পূর্ব গগনে উঠে যাবে সেই টুকটুকে লাল সূর্যে রাত্রির হবে শেষ! কিন্তু সেই যে কোনো একটা অবিশ্বাস মাখানো দ্বীর্ঘশ্বাস! শিশির বিন্দুর ঝড়ে পড়ে যাওয়া এসবকিছুই থেকে যাবে আড়ালে! বুকে জমানো ছাই চাপানো অনুর্বর জমীনে।".....
-- [আবরার আহমেদ শুভ্র]
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাদ বেয়ে চলে এলো নিজ রুমে। যেখান থেকে শুরু হবে তার আরও একটা তীক্তময় দিন হয়তো এবাড়ীতে নাহয় অন্য কোনে একজগতে!
____________
কোন এক রূপসী রমণীর হাসোজ্জ্যাল ছবি দিয়ে পুরো রুম সাজিয়ে তুলেছে রুদ্ধ! রুমের এমন কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই যা খালি পরে আছে। সে তার প্রেয়সীর জন্যই আলদা এই জগৎ তৈরি করেছে এখানে। একটা ছবির দিকে তাকিয়ে প্রেমময় কণ্ঠে বলে উঠল,
- 'তুমি কতটা সুন্দর তা বলার জন্য আমার এই শব্দগুলি যথেষ্ট নয়। লোকে বলে যে মানুষ নাকি কেবল একবার প্রেমে পড়ে, তবে আমার ক্ষেত্রে এটি কখনও সত্য হতে পারে না। কারণ, যতবার আমি তোমায় দেখি ঠিক ততোবারই আমি তোমার প্রেমে পড়ে যাই নতুন করে!'
- 'আমি যদি আমার জীবনের একটি বিশেষ জিনিস তোমাকে দিতে পারতাম তবে হয়তো আমি তোমাকে আমার চোখের মাধ্যমে আমার হৃদয়টা দেখার ক্ষমতা দিতাম, তবেই তুমি বুঝতে পারতে তুমি আমার জন্য ঠিক কতটা স্পেশাল!'
হঠাৎ কারো উপস্থিতে ধ্যান ভাঙ্গলো রুদ্ধের। বেশ রাগও হলো ওর! কিন্তু পরক্ষণেই শান্ত হয়ে গেলো। পাশ ফিরে দেখলো সার্ভেন্ট এসেছে তাকে ডাকতে,
- ছোটস্যার, বড়স্যার ডেকেছে আপনাকে।
- যাও, আমি আসছি। বলা মাত্রই চলে গেলো। রুদ্ধ ফোব হাতে কারও কাছে ফোন করল। ওপাশে রিসিভ হতেই,
-খবর কি?
-স্যার সবটা আপনার কথা মতোই হচ্ছে। তবে জাহের আলি আপনার বিরুদ্ধতা করতে চাইছে। আপনাদের কোম্পানির এক চতুর্থাংশ মালিকানা আপনার বাবা তাকে দিয়েছিলো শুধু তার মেয়ে লিসার সাথে আপনার বিয়ে দিবেন বলে। বাকিটা এখনও জানতে পারি নি।
-ওকে। আমি কাল আসছি। আর তুর্যনের খবর কি? তার ব্যবস্থা কি আমায় করতে হবে নাকি তোমরা করবে, ড্যাম ইট! তোমরা কোনো কাজেরই না। সবকটা স্টুপিডের দল!
-স্ স্ স্যার স্ সবটা হয়ে যাবে।
-কালকের মধ্যেই যেন তুর্যনকে পায়। এট এনি কস্ট!
- ও ও্ ওকে স্যার। রাগে ফোন কেটে দিলো রুদ্ধ। সবকটা স্টুপিড! রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে নিচে নেমে এলো রুদ্ধ।
সামনের করিডোরে বসে আছেন রুদ্ধের বাবা ফারদিন শাহরিয়ার। দেশের নামকরা ইন্ডাস্ট্রিয়াস তিনি। তার উপর শহরের মন্ত্রীও তিনি। তাই তার পাওয়ার একটু বেশি দেশের আনাচেকানাচে! সামনে রুদ্ধকে দেখে একটু নড়েচড়ে বসলেন। কেননা অন্য সবাইকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেও রুদ্ধকে যমের মতোন ভয় পান তিনি। সেটা অবশ্য তিনি মনে মনে বিশ্বাস করেন। রুদ্ধই বলে উঠল,
-কিছু বলবেন মিস্টার ফারদিন শাহরিয়ার?
-মুখ সামলে কথা বলো, তোমার বাবা হয় আমি!
- বাবা! সেটার যোগ্যতা আপনার আছে? আমার মাকে আমার থেকে আলাদা করে আবার বাবা অধিকার আদায় করতে আসছেন? ব্যাপারটা একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো না!
যোগ্যতার কথা শোনে মুখটা পানসে হয়ে গেলো ফারদিন শাহরিয়ারের। কোন মুখে তিনি রুদ্ধকে শাসন করবেন? যেখানে তিনিই সব নষ্টের কাঠিগুড়া! আজ তার কারণেই তার ছেলেটা তার সাথে এমন আচরণ করে। সবটার যে মুল তিনি নিজেই। প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে উঠল,
- বাই দা ওয়ে, কেন ডেকেছেন সেটা বলুন। আফটার অল, সময়ের দাম আছে আমার।
- তোমার বিয়ের ব্যাপারে!
-হোয়াট? সবটা জানার পরেও এমন করার মানে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না! নেক্সট টাইমে আমায় এ বিষয়ে বলার আগে দুবার ভাববেন। আসি!... হনহনিয়ে চলে গেলো রুদ্ধ।
-রুদ্ধ, রুদ্ধ শোনো। আহহহ্ মাগো!
হঠাৎ বাবার কাতর কন্ঠ শোনে পিছন ফিরতেই হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো রুদ্ধের।
#চলবে কি?
#নেশাটাই_তুমিময়
#লেখনিতে:- আবরার আহমেদ শুভ্র
•|পর্ব - ০৩|•
বাবর কাতর কন্ঠ শোনে ছুটে এলো রুদ্ধ। তাকে দেখে কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় সে। কারণ, বা হাতে গুলি লেগেছে ফারদিন শাহরিয়ারের। বুলেটটা কাধের ঠিক নিচে দিক দিয়ে আঘাত করে শরীরের এসপার ওসপার হয়ে সামনে রাখা কাচের গ্লাসে গিয়ে লাগল। আর অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। ব্যথার চোটে সেন্সলেস হয়ে গেছেন তিনি। রুদ্ধ খুব দ্রুতই হসপিটালে এডমিট করিয়েছে তার বাবাকে। যতোই হোক না কেন, সে তার জন্মদাতা পিতা বলে কথা! খুব গোপনতার সাথে কেউ একজন এই কাজটা করেছে। কিন্তু কে বা কারা করেছে সেটা এখনও জানা যায় নি। তবে সেটা খুব শীঘ্রই জানা যাবে বলে আশা করা যায়। কেননা শহরের প্রতিটা কোনায় কোনায় এখন পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। খবরটা যেন বাতাসের আগেই সকলের কানে কানে পৌঁছে গেলো। মন্ত্রী ফারদিন শাহরিয়ারকে কেউ একজন গুলি করে মারাত্মকভাবে জখম করেছে। হাসপাতালের করিডোরের এক কোণে চেয়ারে মাথানিচু করে বসে আছে রুদ্ধ। হঠাৎ, কাঁধে কারো হাত পরতেই চমকে উঠলো সে। মাথা তুলে সেদিকে তাকাতেই তার মাকে অশ্রুসিক্ত নয়নে দেখতে পেলো। মানুষটি আজ বেশ অনেক বছর পর এসেছে রুদ্ধের কাছে। রুদ্ধ তার মাকে জড়িয়ে ধরে হোহো করে কেঁদে উঠল,
- মাম্মা, কোথায় ছিলে তুমি? তোমায় কত জায়গায় খুঁজেছি, জানো তুমি? আমায় কি তোমার একটিবারও মনে পরলো না? তোমার ছোট্ট রুদ্ধর কথা কি তোমার মনে নেই!
- বাবাটা! আমি ছিলাম কোনো এক জায়গায়। তোমার বাবার খবরটা শোনে না এসে পারলাম না। হাজার হোক, আমার স্বামী হোন উনি। একটা অধিকার তো আছে তার প্রতি, তাই না?
অধিকারের কথা কানে আসতেই রুদ্ধ তার মায়ের থেকে ছিটকে দূরে সরে আসলো। তার রুদ্ধের কথা একটিবারও মনে পরলো না! দীর্ঘ ১৩ বছর পর এসেও তার স্বামীকেই দেখতে এলেন তিনি? জন্মদাত্রী মা হয়েও কেমনে ছেলের কথা মনে রাখলেন না হাফসা বেগম? কি দোষ করেছিলে সেদিন সে যার কারণে তিনি তাদের ছেড়ে চলে এলেন? যার নিমিত্তে তাদের বাবা ছেলের সম্পর্ক এতো তিক্তময় হলো! কই সে তো এখানে আসার পর রুদ্ধের কথা একবারও জিজ্ঞেস করলো না? জন্ম দেয়ার পর কি সব কিছু থেকে দায়মুক্তি হয়ে গেলেন তিনি? এতে কি রুদ্ধের অধিকার ছিলো না? আকাশসমান অভিমান নিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে সেই স্থান ত্যাগ করলো সে। কি অধিকার নিয়ে তাকে আবার মা বলে ডাকবে রুদ্ধ? ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে, যেখানে ডাক্তার অপারেশন করে বেরোল সবেমাত্র! তাদের কাছে আসতেই,
- মিস্টার রুদ্ধ! ডোন্ট পেনিক, হি ইজ আউট অফ ডেন্জ্ঞার নাও! তাকে ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। সো ইট মে টেক টাইম ফর রিগেইন হিজ সেন্স।
- থ্যাংকস ডক্টর।
- হা, একটু আমার চেম্বারে আসুন। গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলার আছে আপনাকে। তারা দুজনেই চেম্বারে গিয়ে বসল,
- আপনাকে একটা ইম্পরট্যান্ট নিউজ দিবো বলেই এখানে ডেকে আনলাম। মিস্টার ফারদিন আউট অফ ডেন্জ্ঞার হলেও আরেকটা একটা কথা, ওনার শরীরে স্লো পয়জন এন্ড তিনটে বুলেট পাওয়া গেছে! দুটো বাহাতের একদম উপরে এবং একটা ডানপাশের বুকে। স্লো পয়জন ঠিক দেড় ঘণ্টা আগে পুশ করা হয়েছে। যেটা আস্তে আস্তে ওনার শরীরকে নিস্তেজ করে দিতে দিতে একেবারে নিঃশেষ করে দিবে।
- ওয়াট? কি বলছেন এসব? কিন্তু ওনাকে এই স্লো পয়জন দিবে কে?
-আমারও ঠিক একই প্রশ্ন, এতো সিকিউরিটি থাকার মাঝেও এসব সত্যি আনবিলিবেবল! আমার মনে হয় এসব আপনার আপন কোনো মানুষের কাজ। না হলে এসব কাজ যেন বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার মতোন মনে হচ্ছে।
- থ্যাংকস ডক্টর আমায় সঠিক তথ্য দেয়ার জন্য।
- ইটস্ মাই ডিউটি সান! টেক কেয়ার।
রুদ্ধ বাইরে চলে এলো। কোথাও তার মাকে দেখতে পেলো না। আর দেখতেও চাই না, যে তার খবর রাখে না তার খবর সে নিয়েই বা কি করবে? আপন যখন আপন রক্তকে দূরে সরিয়ে দিয়ে দীর্ঘ ১৩বছর কাটাতে পারে তাহলে সে কেন পারবে না সারাজীবন কাটতে! দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনের দিকে এগুতেই ফোনটা বেজে উঠল। কল রিসিভ করা মাত্রই ওপাশ থেকে খবর এলো,
- স্যার কাজ হয়ে গেছে। আপনার বাবার ক্ষতি করতে চাওয়া ব্যক্তিটির খবর কিছু পেলেও সেটা ভুয়া মনে হচ্ছে। তবে তুর্যন ইনকিয়াত চৌধুরীকে আমরা কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছি।
- গুড, ওকে কয়েকটা দিন অনাহারে রাখো। এখন যেহেতু শীতের মৌসুম, প্রতিটা কাপড় খুলে বস্ত্রবিহীন শরীরে বেধে রাখো।
- কিন্তু স্যার....
- তোমাকে অর্ডার করেছি, সো ডু ইউর জব।
-ও্ ওকে স্ স্যার।
ফোন কেটে দিলো রুদ্ধ। রাগে থরথর করে কাঁপছে সে। 'তুর্যন ইনকিয়াত চৌধুরী! হাহ! এবার বুঝবি এই রুদ্ধ শাহরিয়ার কি জিনিষ! আমার পার্সোনাল প্রপার্টিতে হাত দিয়েছিস না তুই? তোর সেই হাত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিবো আমি। আগে কয়েকদিন শীতের আমেজ উপভোগ করে নে। ফোন পকেটে রেখে চলে গেলো তার বাবার ক্যাবিনে।
__________
'চৌধুরী বাড়ী' তে সকলে মুখ কালো করে বসে রয়েছে। সকলের চোখেমুখে শোকের ছায়া! অনিমাও আতংকে রয়েছে! কি কারণে তুর্যন অপহরণ হয়েছে সেটা বুঝতে পারছে না সেও। কি হয়ে গেলো তুর্যনের? বৌভাতের রাত থেকেই কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তুর্যনকে। বাড়ীর মেঝো ছেলে হঠাৎ এমন হুট করে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া যেন কেউই মেনে নিতে পারছে না। যে ছেলে কোথাও যাওয়ার আগে তার মায়ের কান ঝালাপালা করে দিতো সেই ছেলে আজ দুদিন ধরে নিখোঁজ। বিষয়টা একটু বেশিই রহস্যময় লাগছে তুর্যন-তুরনের বাবা ইনকিয়াত আনাস চৌধুরীর কাছে। শিল্পপতি বলে শত্রুর অভাব নেই তাদের! কিন্তু করলো কে এসব? হঠাৎ কল আসলো তুরনের মোবাইলে। মোবাইল নিয়ে একপাশে চলে এলো সে। একটু টুকরো আগ্রহ নিয়ে সকলে সেদিকে রইল যেন কোন খবর পাওয়ার আশায়! কিন্তু সকলের আশায় এক বালতি পানি ঢেলে দিলো যখন তুরন এসে অসহায় কন্ঠে বলল,
- ২২০৮৮ থেকে টিউন সেট করতে কল দিছে। তাই কেটে দিছি।
- এদের আর খেয়েদেয়ে কোন কাজ নেই? বিপদের উপর আসছে টিউন সেট করতে! যাও কোনো খবর পাও কিনা দেখো। আর সকলে শোনো বাড়ীর ছেলেমেয়েদের কয়েকদিন বাড়ীর বাইরে যেতে দিও না। পরিস্থিতি আমার ভালো ঠেকছে না।
- আমার তুর্যনের কি হবে? আজ দুদিন ছেলেটার কোন খবর নেই! আমার মনে হয় এসব আপনার বোনের মেয়ের কাজ। ঐদিন সবার সামনে অপমান করছিলো বলে ওরে কিডন্যাপ করাইছে।... বলে ন্যাকা কান্না জুড়ে দিলেন তুরনের মা কলি চৌধুরী।
- সাটআপ কলি ভাবি। কি পেয়েছো কি তোমরা হা? তোমার বড় ছেলের বিয়েতে নিয়ে অনির চরিত্রে কালি লাগালে আর আজ নিজের ছেলে নিরুদ্দেশ হয়েছে বলে কি সেটাও ওর নাম দিবে? কি ক্ষতি করেছিলো অনি তোমাদের? বাড়ীতে যত দোষ হয় সবটাই কি অনির নামে দিবে তুমি? ব্যাস অনেক হয়েছে এর একটা বিহিত করতেই হবে এবাড়ীতে, নাহলে কেউই কখনও ন্যায়বিচার পাবে না।
অনিমার চোখ বেয়ে দুফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ল। এই দুজন মানুষই তাকে এতো ভালোবাসে। তার সাথে করা প্রতিটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন তারা। তাদের ছাড়া কেমনে থাকবে সে? কিন্তু তাকে থাকতে হবে। মা-বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য হলেও। সে এবার অবাক হলো তার বড়মামা ইনকিয়াত আনাস চৌধুরীর কথায়। সে আজ তার হয়ে কথা বলল,,
- আহা আনাফ! থামো তোমরা। আর কলি তোমার কি আক্কেল জ্ঞান বলতে কিছু নেই? কোথায় কি বলতে হয় সেটা কি এখনও যানো না তুমি? অনি মেয়েমানুষ, তার এতোটা সাহস নেই যে ডিরেক্ট তুর্যনকে কিডন্যাপ করবে। ও এমন করবেও না, সেটা বিশ্বাস। এটা এমন কেউ করেছে যার হদিস আমরা কখনও পাই কিনা সন্দেহ আছে।
- তাহলে কি করবো বাবা? তুর্যনকে তো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
- ডিসি মামুনকে কল করে এখানে আসতে বলো ইমিডিয়েলি। এখন আমরা ওনার সাহায্য ছাড়া কিছুই করতে পারবো না।
- ওকে।
- সবাই এখানে বসে থাকলে কি হবে? সবটা সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দাও। যাও সকলে নিজেদের কাজ করো গিয়ে। আনাস চৌধুরীী কথায় যে যার কাজে চলে গেলো।
অনিমাও চলে এলো রান্নাঘরে। তার এখনও অনেক কাজ করা বাকি। এসব ভাবলে হবে না তার। তাই কাজে মন দিলো সে। কিন্তু ফোনে মেসেজের শব্দে চোখ ঘুরালো সেদিকে। মেসেজ ওপেন করতেই বড় ধরনের একটা শক খেল সে, কি দেখছে সে এটা? ভয়ে অন্তরাত্মা থর থর করে কেঁপে উঠল তার! ভয়ে বার বার গলা শুকিয়ে কাট হয়ে আসছে তার।
প্রিয় ফুলপরী,
কেমন আছো? ভালো আছো কিংবা খারাপ! খারাপ থাকারই কথা। কেননা চৌধুরী বাড়ীর মেঝো ছেলে নিখোঁজ বলে! যায়হোক, সেটা আমিই করলাম। কেন জানো? তাকে আমার প্রেয়সী ফুলপরীকে অসম্মান করার সাহস কে দিলো সেটা জানতে আর বুঝাতে যে আমার ফুলপরীর দিকে চোখ তুলে তাকালে সেই চোখ আমি তুলে নেবো কতো নিষ্ঠুরতার সাথে। কজ, অনিমা মেহরুবা ইজ মাই পার্সোনাল প্রপার্টি! সি ইজ অনলি মাইন! তার প্রাপ্য শাস্তি পেয়ে সে আবার চৌধুরী বাড়ীতে ফিরবে। তবে সে তার ফার্স্ট এন্ড লাস্ট ওয়ার্নিং নিয়েই সেই বাড়ীতে প্রবেশ করবে। বাই! সিই ইউ সোন ডিয়ার ফুলপরী!
মেসেজ পড়া শেষে চোখ তুলবে এমন সময় কেউ একজন এসে ফোনটা হাত থেকে নিয়ে নিলো তার। সে তাকাতেই আরেকদফা ভয় পেলো সে। তাহলে কি সবাই আবারও তাকে ভুল বুঝবে? ছোট মামা-মামিও কি তাকে ভুল বুঝবে তাহলে?
#চলবে কি?
0 Comments:
Post a Comment