গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ২৮

 #দায়িত্বের_সংসার 

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ২৮ 

.

.

-মিসেস.মাহমুদ!  তুমি কি ডুব দিবে?

- উঁহু!  

-চোখ খুলে তাকাও!  

-না!  

-এত কিসের লজ্জা?আমিই তো!  

.

.

অতসী চুপচাপ দুই চোখ বন্ধ করে আছে। মনে হচ্ছে শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি কমিয়ে দিয়েছে। সায়ান তো মুচকি মুচকি হেসেই চলেছে। বেশ লাগছে অতসীর এমন ব্যবহারে। 

.

-আচ্ছা!  চোখ খুলতে হবে না৷ বি প্রিপেয়ার্ড!  আমিই তোমাকে নিয়ে  ডুব দিচ্ছি। 

.

সায়ান একটু গভীর পানিতে যেতেই অতসী নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।আর যাই হোক নদীর পানিতে সে ডুব দিবে না। বিশেষ করে এই পানির মৌসুমে। ছোটবেলায় 

নানুর থেকে শুনেছে নদীতে যখন নতুন পানি আসে, পানির সাথে বিভিন্ন জীব জোনার আসে।চুল প্যাচানি আসে। চুল দিয়ে প্যাচানোর তারপর গভীর পানিতে নিয়ে উপর করে মেরে রাখে৷ তাইতো একা একা কোনদিন পানিতে নামতে নেই৷ 

.

কিন্তু অতসীর এসব ভাবনার মাঝে সায়ান এক ডুব দিয়েছে অতসীকে নিয়ে।উঠার পর অতসী নিজেকে জোড় করে ছাড়িয়ে পাড়ে উঠে আসে। 

.

-মিসেস.মাহমুদ!  এটলিস্ট তিনটে ডুব তো দিবে? 

-দিলে কি হবে?  গা ভর্তি গহনা আসবে না আমি রূপবতী হবো? 

-তুমি কি ভয় পেয়েছো?  কাঁপছো কেনো?  

.

অতসী উত্তর দেয় না। বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে 

যে বাড়িতে তেনারা বাস করে, সে বাড়িতে পানিতে যখন তখন নামতে নেই। তেনারা নানা রুপ ধরে, তেনাদের সাথে মশকরা করা মোটেও উচিৎ নয়। এটা আপনারা কি বুঝবেন?  যেদিন একটা ছ্যাঁচা খাবে সেদিন বুঝবে। 

.

বাড়ি ফিরে অতসী হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পড়েছে। সায়ান তখনো ফিরেনি।অতসী চাইছে সায়ান আসার আগেই দ্রুত বড়মার ঘরের দিকে চলে যেতে। আজ কি কান্ডটাই না বাধিয়েছে। 

.

-নাও এটা পড়!  এটা তে বেশি ভালো লাগবে।

.

আচমকা সায়ানের কথায় বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে অতসী। অতসী চিন্তায় পড়ে গিয়েছে এটা কি মি.মাহমুদ?  না কি...... 

ফাঁকা ঢোক গিললো অতসী৷ টুপ করে চিমটি বসিয়ে দিলো সায়ানের হাতে। 

.

-কি করছো?  

-না সিউর হচ্ছিলাম। 

-কি?. 

-কিছু না। 

.

 অতসী কেনো চিমটি কেটেছে বিষয় টা বুঝতে সায়নের কয়েক সেকেন্ড লাগে না।বেশ শব্দ করেই হেসে উঠলো। হাসি  থামিয়ে হাতে রাখা অফ হোয়াইট কালারের কাতান শাড়ি এগিয়ে দিয়ে বললো

.

-এটা পড়!  তোমাকে মানাবে। 

.

অতসী সায়ানের দিকে তাকিয়ে বেখেয়ালি ভাবে বললো 

.

.

 


যদি আমাকে কাজল পড়তে হয় তোমার জন্য,

চুলে মুখে রঙ মাখতে হয়,

গায়ে সুগন্ধি ছিটোতে হয়,

সবচেয়ে ভালো শাড়িটা যদি পড়তে হয়,

শুধু তুমি দেখবে বলে মালাটা চুড়িটা পরে সাজতে হয়,

যদি তলপেটের মেদ,

যদি গলার বা চোখের কিনারের ভাঁজ

কায়দা করে লুকোতে হয়,

তবে তোমার সঙ্গে অন্য কিছু, প্রেম নয় আমার।


প্রেম হলে আমার যা কিছু এলোমেলো

যা কিছু খুঁত, যা কিছুই ভুলভাল,

অসুন্দর থাক, সামনে দাঁড়াবো,

তুমি ভালোবাসবে।

কে বলেছে প্রেম খুব সহজ, চাইলেই হয়!

এতো যে পুরুষ দেখি চারদিকে,

কই, প্রেমিক তো দেখিনা !!(তসলীমা নাসরিন)

.

-আজ এত রোমান্টিক রোমান্টিক আবহাওয়া?  কি ব্যাপার? মিসেস.মাহমুদ? 

-মানে?

-প্রেমিক,প্রেম, কবিতা তারপর নদীর পাড়ের..... 

.

সায়ানের কথা শেষ করার পূর্বেই অতসী শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোজাসুজি বড়মার ঘরের দিকে যাচ্ছিলো। ঠিক তখন কারো সাথে ধাক্কা লাগে। 

দুজনেই পড়ে গিয়েছে। বেশ লেগেছে হাতে। 

অতসী উঠে পড়ে যাওয়া ব্যক্তির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।  

একটা মেয়ে!  পড়নে জিন্স, লেডিস টিশার্ট। বেশ ফিটিং কাপড় পড়েছে। পায়ে হিল জুতো। অতসী হাত বাড়িয়ে মেয়েটি কে উঠিয়ে বললো 

.

-আমি দুঃক্ষিত আপু!  আমার জন্য.... 

-ইটস্ ওকে লেডি!  দোষ দুজনের ছিলো। বাই দি ওয়ে...  আমি সাহারা তুমি?  

.

-মিসেস অতসী মাহমুদ!  ওয়াইফ অফ সায়ান মাহমুদ। 

.

পিছন থেকে উত্তর দেয় সায়ান।এগিয়ে এসে অতসীর ডান হাত ধরে। 

.

-ওহ্! কংগ্রাচুলেশনস। বিয়ে করেছো তাহলে?  

-হ্যাঁ। কেমন আছো সায়রা বানু? 

-এই তোমাকে না বলেছি আমাকে এই নামে ডাকবে না। 

-কত সুন্দর নাম!  কেনো যে পছন্দ করো না.... আচ্ছা থাকো। পড়ে কথা হচ্ছে,বড়মা ডাকছে অতসী কে। 

.

.

অতসীকে নিয়ে সায়ান দ্রুত চলে আসে কিন্তু অতসীর মনে হচ্ছিলো এক জোড়া চোখ তাকিয়ে আছে এদিকেই। 

.

.

বিয়ের কনেকে সাজানোর দায়িত্ব অতসীর উপর এসে পড়েছে৷ সবার ধারণা অতসী খুব সুন্দর সাজাতে পারে কিন্তু এটা ভুল। সে নিজেই তো ভালোভাবে কাজল দিতে পারে না। মেকাপের সাথে সম্পর্ক দূরদূরান্তের। 

.

অতসী বিয়ের কনের হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছিলো। হঠাৎ সেখানে সাহারা এসে উপস্থিত। মেয়েটার ব্যবহার অতসীর কাছে ভালোই লেগেছে।ড্রেস সেন্স হয়তো ওয়েস্টার্ন বা হতেও পারে দেশের বাহিরে থাকে। 

কথায় কথায় জানতে পারলো বড়মার নাতনী হয়। হ্যাঁ দেশের বাহিরে ছিলো। 

.

-তোমার নাম যেনো কি?  অতসী?  রাইট?  তোমাকে না শাড়িতে আন্টি আন্টি লাগে। 

.

উত্তর টা বিয়ের কনে দিলো

-শাড়ি পড়লে সবাই কে বড় বড় লাগে। এটা জানো না?  

-অহ্! এমন জিনিস পড়ার কি দরকার যা পড়লে বড় বড় লাগবে? 

.

অতসী কিছুই বলেনা চুপচাপ কাজে মন দিচ্ছিলো। কিন্তু সাহারার কথায় পারলো না। 

.

-আমি বুঝলাম না!  সায়ানের টেস্ট এতটা বাজে হলো কবে থেকে?. তোমাকে পছন্দ করলো কোন হিসেবে?  তোমার তো কোন ক্লাস নেই,না আছে অন্য কিছু কিভাবে এসব পড়ো?  মনে হয় গরু কে ঘাসপাতা খেতে দিয়েছে। ঘাস পাতা সহ গরু বসে বসে খাচ্ছে। নো মেনারস্, নো ড্রেসিং সেন্স। নাথিং! ব্লাডি 

থার্ড ক্লাস পিপলস্! 

.

অতসী খুব শান্ত গলায় উত্তর দিলো 

-জ্বী আপু! আমার কোন ক্লাস নেই তবে আমার এতটুক বুদ্ধি আছে কোথায় কি পড়ে যেতে হয় অথবা কি বলতে হয়৷ শালীনতা বজায় রেখে, সম্মান দিয়ে কথা বললে যদি থার্ডক্লাস হতে হয় তবে আমার কোন আপত্তি নেই। 

.

অতসী আর কোন কথা না বলে চুপচাপ রুমে চলে আসে।এদিকে  সায়ান অতসীকে খুঁজতে গিয়ে সব টা বিয়ের কনের থেকে শোনে। 


.

এটা বুঝতে বাকী নেই সাহারা সায়ান কে পছন্দ করে। অতসীকে মেনে নিতে পারছে না। তাইতো কি ভাবে অতসীকে অপদস্ত করা যায় সে উপায় খুঁজতে ব্যস্ত। 

.

কয়েকজন মেয়ের সাথে বসেছিলো সাহারা।প্ল্যান সিম্পল। অতসীকে অপমান করা। সায়ান ওদের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় এটুক শুনতে পায় 

-বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান!  এবার ঘুঘু তোমার বধিবো পড়াণ!  

.

কাছে গিয়ে সায়ান বেশ চিৎকার করেই বলতে শুরু করে

.

-হ্যালো!  মিস এটেনশন সিকার!  তুমি অতসীকে কি বলেছো? ঘাসপাতা খাওয়া গরু?  যদি তাও হয় তাহলেও ও দেশি গরু!  তোমার মতো অস্ট্রেলিয়ান গাই না!  যার না আছে গুণ না আচ্ছে অন্য কিছু। জানো এদেশে অস্ট্রেলিয়ান গরুর কদর নেই?.

.

-সায়ান কি বলছো এসব?  আর ইউ ড্রাংক? নেশা করেছো না কি? 

-নেশা আমি করবো কেনো?  নেশা করা তো তোমার কাজ। তুমি মনে হয় প্রতিদিন নেশা করো তাই তো তোমার মুখেই সব সময় উইড, ড্রিংক্স এসব শোনা যায়। 

-ইউ!  তুমি কি আমাকে অপমান করছো?  আমি কেনো নেশা করবো?  

-যে ব্যক্তি যেমন! অন্য কে তেমন ভাবে। তুমি নেশা সম্পর্কে  জানো বলেই, নেশা করো বলেই অন্যকে সব সময় বলো। 

-তোমার বউ কে আমি কি বলেছি না জেনেই তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারো না। ওই মেয়েটা আমাকে যে বলেছে?  আমার শালীনতা নেই সে বেলায়?. 

(কান্না করতে করতে কথাগুলো বললো)

.

-ভুল কি বলেছে?  এটা গ্রাম !  এখানে এভাবে কেউ চলে না। সামান্য পয়েন্ট বুঝো না?. 

.

-এবার কিন্তু তুমিও আমাকে ইনসাল্ট করছো! 


-অহ রিয়েলি?  নিজেকে আর কি কি ভাবে ভিক্টিম প্রমাণ করবে? এক দিকে না হয় এক দিকে নিজেকে আমি ভিক্টিম প্রমাণ করেই ছাড়বো!  এই মনোভাবে চলো তাই না?মানব সমাজে বাস করি আমরা। কিছু মানুষ তোমাকে খোশামোদ করলেও সত্য টা অনেকেই জানে। কিন্তু কেউ বলে না কারণ জানো কি?  সবাই তোমার মতো এটেনশন সিকার না।তাই তোমার চালচলন  বা পোশাক নিয়ে কিছু বলে না। বললে তুমি তাদের অপমান করো। কিন্তু বাস্তবতা?  

.

-আমার কথা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো?  তুমি আমার বান্ধুবিদের কে জিজ্ঞেস করো!  ওরা বলবে তোমাকে তোমার বউ কেমন মেয়ে!  

.

-কুকুরের কাজ দল বেধে চলা কিন্তু সিংহ একাই চলে এটা মনে রাখবে। তোমার কুকুরের পাল তোমার মতই ঘেউঘেউ করবে আমি জানি।আর কি বলছিলে?  বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান!  এবার  ঘুঘু তোমার বধিবো পড়ান?  

বাহ্!  আমার প্রাণ বধিবে? এতই সহজ? আমি কি করতে পারি  আশা রাখছি উত্তর পেয়ে গেছো! 

আমার সাথে লাগতে এসো না। খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ রেগে গেলে কি কি করে এর ধারণা তোমার নেই। 

নেক্সট টাইম অতসীর থেকে দূরে থাকবে। দশ ঘর পড়ে কোন কাহিনী হলো সেই কাহিনী নিজের মধ্যে টেনে নিজেকে এভাবে এটেনশন দিতে যেয়ো না। তোমাকে আমার আগে থেকে ভালো লাগে না। আমি এতটা বোকা না যে  আজকে তোমার কোন প্ল্যানে আমি ফেসে যাবো। ছোট বয়সেই যখন তোমার চক্রান্ত থেকে বেঁচেছিলাম এটা আবার কি?  নারীর বড় সম্পদ নারীর সম্মান। এভাবে ঠুনকো করে দিও না যাতে কেউ সম্মান না করে। 

ভালো থেকো।

.

.

সায়ান অপেক্ষা করে না। এই মেয়েকে হাড়ে হাড়ে চিনে সায়ান।তখন সায়নের বয়স আঠারো আর  সাহারা চৌদ্দ কি পনেরো। সায়ান কে সাহারা নিজের মনের কথা জানায় কিন্তু সায়ান না করে দেয় । একদিন রাতে সায়ান ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে দেখে ওর বিছানায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে আছে সাহারা৷ সেরাতে বুদ্ধি করে মায়ের ঘরে চলে যায় সায়ান। তাই সফল হতে পারেনি সাহারা।

এই বাড়িতেই ঘটিয়েছিলো এত জঘন্য কাজ সাহারা। 

.

.

রুমে এসে ধপ করে অতসীর পাশে শুয়ে পড়লো সায়ান।রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। কিন্তু অতসীর সেদিকে খেয়াল নেই। দৃষ্টি বাহিরে। 

 উঠে টেবিলের উপর থেকে পেয়ারা দুটো এনে অতসীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো 

.

-মিসেস.মাহমুদ! পেয়ারা খেলে কেউ প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় না!  তুমি খেতে পারো। এত চিন্তার মতো কিছুই হয়নি। 

.

অতসী উঠে বসে পেয়ারা হাতে নিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো 

.

-অনামিকা আপু সুস্থ হয়ে গেলেও কি আপনি আমাকে এভাবে কেয়ার করবেন?  না কি চলে যেতে বলবেন?

.

চলবে।

#ছবিয়াল_ঈশিতা 💕💕

0 Comments:

Post a Comment