গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ১৬

 #দায়িত্বের_সংসারে

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ ১৬ 

.

.

ক্যাফেতে বসে আছে দিহান অতসী। 

দিহান কয়েক মিনিটের জন্য বাহিরে গিয়েছে। হয়তো জরুরি কল এসেছে। পাশেই রাখা দিহানের পাসপোর্ট। কফিতে চুমুক দিয়ে পাসপোর্ট হাতে নিলো অতসী। 

কেমন বাচ্চা বাচ্চা আর মদন কুমারের মতো লাগছে। 

মদন কুমার?  

তাহলে কি দিহান ও গান গায় তার জন্য। মধুমালার গান?  

.


--আমি  স্বপ্নে দেখলাম মধু মালার মুখরে....। 


স্বপ্ন যদি মিথ্যা হইবো

গলার হার কেন বদন হইবো ওগো মা

আমি স্বপ্নে দেখলাম মধু মালার মুখরে......


স্বপ্ন যদি মিথ্যা হইবো

আংটি কেন বদল হইবো গো মা

আমি স্বপ্নে দেখলাম মধু মালার মুখরে......


স্বপ্ন যদি মিথ্যা হইবো

পালঙ্ক কেন বদল হইবো গো মা

আমি স্বপ্নে দেখলাম মধু মালার মুখরে......

.

- বাহ্!  মধুমালার গান গাইছো যে?  

.

দিহানের ডাকে ধ্যান ভাঙে অতসীর। হাতের পাসপোর্ট দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে 

.

-এটা এখানে?  

-কিছু দরকার ছিলো তাই নিয়ে এসেছিলাম। 

-আপনারো পাসপোর্ট লাগে? 

-কেনো লাগবে না? 

- না! মানে!  পাইলটদের আবার কিসের পাসপোর্ট!  তারা নিজেরাই তো প্ল্যানের ড্রাইভার। তাদের পাসপোর্ট লাগা টা বেমানান না?  

.

অতসীর কথা শুনে দিহান হাসবে না কাঁদবে খুজে পায় না। কথা বলার সময় অতসীর মুখের ভাব এমন ছিলো যেনো কত বড় অন্যায় পাইলটদের পাসপোর্ট থাকা। 

.

- পাসপোর্ট না থাকলে তো আমরা বাইরের দেশে স্টে করতে পারি না রে লেডি। তাই লাগে। অবশ্য তুমি যদি বলো তবে হয়ে যাক রাজ পথে মিছিল। 

হবে হরতাল, হবে অনশন বন্ধ হবে এই পাইলটদের পাসপোর্টের নিয়ম......

.

-কবিতা টা মোটেও মিলেনি। ড্রাইভার মন দিয়ে ড্রাইভ করেন। 

.

ততক্ষণে কথা বলতে বলতে গাড়িতে এসে বসেছে দুজন। পাসপোর্ট টা এখনো অতসীর হাতে। 

ছবি দেখে হেসেই যাচ্ছে। দিহান তাকিয়ে আছে। মেয়ের মাথা গেছে নাকি? 

-একদম মদন কুমার লাগতেছে। 

-তুমি মধু মালা হইলে আমি মদন কুমার হইতেও রাজি। তারপর রাতে গলার হার, পালঙ্ক বদল হবে আর আমি গান গাইবো 

আমি স্বপনে দেখি মধু মালার মুখ রে........ 

.

.

.

দূর থেকে রাইমা দেখলো দিহান পাসপোর্ট হাতে নিয়ে বসে বসে হাসছে। মানুষ টা কে এই প্রথম হাসতে দেখলো। অমায়িক হাসি। হাসতে দেখে মনে শান্তি আসছে। আচ্ছা! দিহান কি সত্যি কোন দিন মেনে নিবে রাইমা কে?  ঈশ্!যদি অতসীর সাথে যোগাযোগ করতে পারতো!  তাহলে দিহানের মনে ঠিকই জায়গা করে নিতে পারবে। 

এসব কথা ভাবতেই আবার রাইমার মনে হলো 

-আচ্ছা! আমি কি অতসী কে ঠকাচ্ছি?  ওর জায়গা জোড় করে কেড়ে নিচ্ছি?  অতসী যদি ফিরে আসে?  ফিরে আসলে কি হবে?  নাহ্!  রাইমা বুঝাবে অতসী কে দিহানের কাছে ফিরে আসার জন্য। কারণ ওদের দুজনের সুখ অতসীর ফিরে আসাতেই৷ 

.

.

টিভি অন রেখেই অতসী কাউচে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। চুল খুলে আচল ফ্লোরে ছুয়ে আছে। সায়ান নিজেও খুব ক্লান্ত। এক্সিডেন্টের পর থেকে শরীর টা ভালো যায় না। একটুতে ক্লান্তি এসে যায়। চুপচাপ অতসী কে কোলে উঠিয়ে নিয়ে অতসীর বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। সায়ানের প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। ঠিকমতো ঘুম হয় না। কাউচে আর কতো ঘুমানো যায়?  উপর তলায় চারটে রুম। একটি ওর মা-বাবার। সে রুমে কাউকে যেতে দেয় না। কারণ রুমের আনাচে-কানাচেতে আছে তাদের স্পর্শ। আরেকটি তে অনামিকা যা সায়ানের রুম,  পাশের রুম স্টাডি রুম অন্য রুমে অতসী। 

ফ্রেশ হয়ে অতসীর পাশে শুয়ে পড়লো।সাথে সাথে যেনো রাজ্যের ঘুম জেকে বসেছে দু চোখে। 

.

.

অতসী বেশ বুঝতে পারছে তার পাশে কেউ একজন আছে। মি. মাহমুদ!  হ্যাঁ উনি ছাড়া আর কে থাকবে। কিন্তু উনি আমার বা পাশে কি করছে?  উনি কি জানে না?  স্বামীদের সবসময় স্ত্রীর ডানপাশে ঘুমাতে হয়?  আশ্চর্য লোক তো। বলেই অতসী সায়ানের বা পাশে একদম কিনারা ঘেঁষে শুয়ে পড়লো। 

অতসী আবার ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখলো তার চুল ফ্লোর স্পর্শ করছে। 

কি ভেবে আবার উঠে বসে চুল গুলো খোপা করে শাড়ির আঁচল টেনে সায়ানের পাশে শুয়ে পড়লো। ভাগ্যিস মনে পড়েছিলো দাদীর কথা!  

দাদী বলতো বেহুলার চুল বেয়ে সাপ উঠে লক্ষীন্দর কে কামড়ে ছিলো। তাই স্বামীর পাশে শুলে যেনো কখনো চুল মাটি স্পর্শ না করে........ 

.

.

যদিও কুসংস্কার তবুও অতসীর অবচেতন মন এসব নিয়ম ঠিক মেনে চলছে। অতসীর অবচেতন মন সায়ান কে স্বামী বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে। ওই যে কবুল!  কবুল শব্দটার শক্তি যে অনেক। যে শব্দ টা তিনবার পড়ে বাঙালী নারী পারে সম্পূর্ণ অচেনা অজানা মানুষকে নিজের সব থেকে আপন মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে। 

সত্যি কি অতসী পারবে সায়ান কে তার জীবনের সাথে বেধে রাখতে না অপেক্ষা করছে কোন ঝড়। যা শেষ করে দিবে সব টা। 

.

.

চলবে....

0 Comments:

Post a Comment