#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৩৬
.
.
সাত মিনিটে তিনটে সিগারেট শেষ করেছে দিহান।
ভয়, টেনশন একটাই! সায়ান আবার বেশি রাগ করে অতসীর কোন ক্ষতি না করলেই হলো।
সব আগে থেকেই প্ল্যান ছিলো, অনামিকা যেহেতু সুস্থ হয়েছে। সবাই ওর সাথে স্বাভাবিক আচরণ করবে তাইতো অনামিকার সাথে এত ভালো ব্যবহার না হলে দিহান আগেই এই মেয়েকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে দিতো।
.
ইফাদের স্পর্শে পিছনে ফেরে দিহান।
-উপরে চল! সায়ানের সাথে কথা বলা দরকার। অনামিকার স্বাস্থ্যের জন্য কিন্তু এটা......
.
ইফাদের কথা শেষ হতে না হতেই দিহান বললো
-সব সময় বন্দুক অতসীর কাঁধে রেখেই কেনো চালাতে হবে? তুই কি দেখিস নি?লেডির কতটা কষ্ট হচ্ছিলো?
-আমি জানি! কিন্তু আমরা নিরুপায়। অনামিকার সুস্থ থাকা প্রয়োজন। না হলে সত্য জানবো কি করে?.
.
.
সায়ান চুপচাপ অতসীর সামনে বসে আছে। রাগ অনেকটা কমে গেলেও অতসীর হাত খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে। বা পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ফ্লোরে অনবরত আঘাত করছিলো অতসী। সায়ানের দৃষ্টি সেদিকে। হঠাৎ অতসীর বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কটাশ করে ভেঙে গেলো।
সায়ান আনমনেই হেসে অতসীর দিকে তাকিয়ে ধীরে গলায় বললো
.
- ক্ষতি কার হলো?
-রাগ ভালো না মি.মাহমুদ! রাগ হলে পানি খেতে হয়৷ আপনি বসুন আমি পানি নিয়ে আসছি৷
-লাগবে না। আজ থেকে তুমি এই রুম থেকে বেরুবে না। যতদিন না অবধি অনামিকাকে আমাদের সম্পর্কের কথা জানানো হচ্ছে৷
-জানানো কি খুব প্রয়োজন? না! মানে আমি চলে গেলেই তো আপনারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে পারবেন।
-এটা ঠাকুমার ঝুলি না! যেখানে গল্পের শেষে সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো বলে তুমি ইতি টানবে।
-কিন্তু!
-এই ঘরে সব আছে৷ যা যা লাগবে তোমার সব এসে যাবে। কিন্তু রুম থেকে বেরুবে না।
.
অতসীর করুণ দৃষ্টি সায়ানের দিকে। দৃষ্টি উপেক্ষা করেই সায়ান আবার বললো
- হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন অধিক ভালোবাসলে হয় ছেলে মেয়ের হাতের পুতুল হয়ে যায় না হয় মেয়ে ছেলের হাতের পুতুল।দুজনে একসাথে একে অপরের কাছে হাতের পুতুল হয় না।
জানো অতসী! আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তোমার হাতের পুতুল আমি হতে পারবো না। তুমি যেদিন শুধু আমার হবে! শুধুই আমার! সেদিন আমি তোমার হাতের পুতুল হবো। এর আগে না। কারণ আমি তোমাকে হারাতে পারবো না।
.
সায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে অতসীকে দাড় করিয়ে খুব শক্ত করে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।
কপালে একটা গভীর উষ্ণ চুমু দিয়ে সাবধানে থেকো বলে বের হয়ে আসলো।
বাহিরে থেকে লক করতে অবশ্যই সায়ান ভুলে যায় নি।
হ্যাঁ! গৃহবন্দী করেই রাখবে অতসীকে তবুও ছাড়বে না।
.
.
.
অনামিকা অবশ্যই এসব স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনি । তাই ইফাদ কৌশলে মেডিসিন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। উঠলে কিছু একটা বলে ঠিক ম্যানেজ করে নিবে।
সায়ান কে নিচে নামতে দেখে এগিয়ে গেলো রাইমা। কাঁদোকাঁদো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
.
-আপনি কি অতসীকে মেরেছেন? ও কি কান্না করছে?
.
সায়ান বেখেয়ালি হেসে জবাব দিলো
- নাহ্! ম্যাম ঠিক আছে। বসে বসে টুইলাইট মুভি দেখছে। রিলাক্স!
.
ইফাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই ইফাদ বললো
অনামিকা ঘুমিয়েছে। বেশ ভালোই রিয়্যাক্ট করেছে । বিশেষ করে অতসীকে ওভাবে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অনামিকা অনেকটা উগ্র হয়ে উঠেছিলো। তাই বাধ্য হয়েই...৷
.
কথা শেষ করার আগেই সায়ান বললো
-বুঝতে পারছি না কি করবো! তবে অতসী কোথাও যাচ্ছে না । এটা ফাইনাল।
.
ইফাদ উত্তর দিলো।
-যেতে দেওয়া উচিৎ ছিলো। কারণ আমাদের প্ল্যানে...
.
দিহান কথায় ফোড়ন কেটে বললো
-লেডি চলে গেলে সমস্যার সমাধান নয়! তাছাড়া সায়ানের সাপোর্ট লেডি। লেডি এখানে থাকবে। অধিকার কেনো ছাড়বে?
.
ইফাদ আর কথা বাড়ালো না। তিন বন্ধু আগালো অনামিকার বাবার দিকে। আমিনুর সাহেব কে উদ্দেশ্য করে সায়ান বললো
.
-আংকেল আপনারা চাইলে চলে যেতে পারেন কিন্তু অতসী যাবে না।
-কেনো? এখানে আর দরকার নেই। তাহলে কেনো থাকবে? (আমিনুর সাহেব)
-অধিকারে থাকবে। (দিহান)
-কিসের অধিকার? এটা অনামিকার সংসার। এখানে অতসীকে আমি রেখে যেতে পারবো না। (আমিনুর সাহেব)
-অতসী আমার স্ত্রী! সে অধিকারে থাকবে। আমি না চাইলে অতসী এক পা এই বাসা কেনো রুম থেকেও বের হতে পারবে না। (সায়ান)
-তুমি কিন্তু ঠিক করছো না সায়ান! (আমিনুর সাহেব)
-আংকেল! কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন। আপনি নিজে বলবেন আমার আজকের সিদ্ধান্ত ঠিক। (সায়ান)
.
আমিনুর সাহেব বাধ্য হয়েই অতসীকে রেখে চলে আসলো। রাতে দিহান-রাইমা,ইফাদ-আফরিন চলে গেলো।
অনামিকা তখনো ঘুমে।
.
.
হঠাৎ অতসী রুমের দরজার লক খুলার শব্দে দরজার দিকে তাকালো।
সায়ান এসেছে। সাথে একটা বড় সুটকেস, খাবারের ট্রলি।
এসব রেখেই বিনাবাক্য ব্যয়ে সায়ান ওয়াশরুমে চলে যায়।
অতসীর মনোযোগ তখন ল্যাপটপের স্ক্রিনে।
এইতো এডওয়ার্ড কে অনেক খোঁজার পর পেয়েছে বেলা৷এত্তগুলা ভ্যাম্পায়ার এর মধ্যে..... উফফফ অস্থির মুহুর্তে আছে। ঠিক তখন সায়ান এসে টুক করে ডিসকানেকটেড করে দিয়েছে।
অতসী রেগে তাকাতেই মুচকি হেসে সায়ান বললো
-তেরা ধ্যান কিদার হ্যে? তেরা এডওয়ার্ড ইধার হ্যে....
-মি.মাহমুদ! আপনি একটা বান্দর!
.
-হ্যাঁ! তুমি সায়ান বান্দরের বউ। নাও হা করো খেয়ে নাও।
.
কথা না বলে চুপচাপ অতসী খাচ্ছিলো কিন্তু নজর যাচ্ছিলো সুটকেসের দিকে।
.
হঠাৎ মনে পড়লো মি.মাহমুদ তো আমাকে মেরে এই সুটকেসে ভরে পানিতে ফেলে দিবে না তো?
ক্রাইম সাসপেন্সে এমন অনেক কিছু দেখেছে! তাই বুঝি মি.মাহমুদ এত আদর যত্ন করে খাওয়াচ্ছে?শুনেছি মানুষ নিজের মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে থেকে বুঝতে পারে তবে কি সময় শেষ? উনি তো আগেই বলেছিলো
বিয়েটা শুধুই প্রতিশোধের। তাহলে কি আমার মৃত্যু দিয়েই সব শেষ হয়ে যাবে?
ভাবতেও বার দুয়েক বিষম খেলো অতসী।
.
.
চলবে
#ছবিয়াল_সাবরিন
0 Comments:
Post a Comment