#দায়িত্বের_সংসারে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ১৮
.
.
মনে হচ্ছে কেউ একজন মাথার ভিতর সব কিছু টান দিয়ে ধরে রেখেছে।উফফ অসহ্য যন্ত্রণা। কেমন একটা অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।
উঠে বসে দিহান। কোমর থেকে পা অবধি পাতলা কম্বল দিয়ে ঢাকা। উঠে বসেই বুঝতে পারে পড়নে কিছু নেই। আশ্চর্য! নেশার ঘোরে এমন অদ্ভুত কাজ তো কোন দিন করেনি সে।
পাশে রাখা টাওয়াল প্যাচিয়ে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে পা বাড়ায়।
শ্যাম্পু করার সময় শরীরে বিশেষ করে বুকে, পিঠে, গলায় ধরেছে কিন্তু আমলে না নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়াতেই শিরদাড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো।
বুঝতে বাকী রইলো না কাল রাতে কি হয়েছে।
পুরো ফ্ল্যাট খুজেও রাইমা কে পেলো না।
এমন এক নেশাময় রাত কাটিয়ে সকালে অতসী কে হারিয়েছে সে।
সেরাতে অতসী কোন ভাবে দিহান কে ঘুম পাড়িয়ে দিলেও রাইমার উপর সে পুরুষত্ব জাহির করে ফেলেছে।
.
.
রাইমা কে অবশেষে অতসীর রুমে পেলো। এই রুম টা দিহান অতসীর সব স্মৃতি দিয়ে, ইচ্ছে দিয়ে সাজিয়েছে। রাইমা অতসীর ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলো কারো আবাশ পেয়ে পিছনে তাকালো।
দিহান উঠে গেছে। রাইমা দ্রুত গিয়ে লেবু পানি এনে দিলো। দিহান চুপচাপ খেয়ে ওর দিকে তাকালো।
মেয়েটার চোখ অস্বস্তিতে ফেলছে। দ্বিধা না করেই জিজ্ঞেস করলো
.
-রাইমা! কাল রাতে কি হয়েছে?
-কিছুই না!
-সত্যি করে বলো।
.
হায়রে পুরুষ! কিভাবে বলবো? আপনি মেনে নিতে পারবেন? আপনার কাছে আমি যে শুধুই অতসী ছিলাম। রাইমা না।
.
-ডিড আই রেপড ইউ?
.
রাইমা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণে চোখে পানি জমে গেছে।
রাইমা কে চুপ থাকতে দেখে দিহানের রাগ বেড়ে গেলো। একে তো চিন্তা হচ্ছে আবার এই মেয়ে চুপ আছে।
হাতের গ্লাস সজোরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে দুহাতে রাইমার দুবাহু ঝাকিয়ে চিৎকার করে বললো
.
-আন্সার মি গড ড্যামেড! জাস্ট আন্সার মি!
.
রাইমা মাথা ঝাকায়। দিহান উত্তর পেয়ে অতসীর ছবির পাশে দেয়ালে হাত মুঠ পাকিয়ে আঘাত করে।
রাইমা দ্রুত গিয়ে দিহান কে থামিয়ে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলতে থাকে
.
-আপনার কোন দোষ নেই দিহান। আপনি নেশায় ছিলেন আমি গিয়েছিলাম আপনাকে আনতে ঠিক তখন আপনি যা করেছেন অতসী ভেবে করেছেন আমি পেরে উঠিনি আপনার শক্তিতে দোষ আমার। প্লিজ এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবেন না। অতসী কিচ্ছু জানবে না। আমি চলে যাবো তো। অতসীর জায়গা ওর থাকবেই। প্লিজ দিহান নিজেকে আঘাত করবেন না। আমার কষ্ট হচ্ছে।
.
দিহান এক পলক তাকায় রাইমার দিকে। কি দিয়ে বানিয়েছে আল্লাহ্ এই দুই মেয়েকে? এরা খালি যাইতেই চায়! কখনো অধিকার কেনো চায় না?
রাইমা ঠিকঠাক দাড়িয়ে থাকতে পারছে না। দিহান ওকে রুমে নিয়ে বসিয়ে দিয়ে বাহিরে কোথাও চলে গেলো।
রাইমা শুধু চাওয়ার পথে তাকিয়ে চোখের পানি ফেললো আর বললো
.
-কাল রাত টা দিহান অন্যরকম হতে পারতো। আমি এমনিতেও আমার সবটা আপনাকে দিতাম কিন্তু অতসী....
.
.
ইফাদ এসে রাইমা কে চেকাপ করে নিলো এতটা প্যানিক হওয়ার কিছু নেই। হালকা পেইন কিলার দিলেই পেইন চলে যাবে।
.
রাইমা কে দেখে ইফাদ, দিহান এসে দাড়ালো বারান্দায়। সিগারেট হাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে দিহান। সামনে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাতের সিগারেট টা এগিয়ে দিলো ইফাদের দিকে।
.
সিগারেটে টান দিতেই দিহান বললো
.
- আই রেইপড হার লাস্ট নাইট।
.
কথাটা শুনে ইফাদ চমকে না থমকে যায়। হাতে সিগারেট মাটিতে ফেলে দিয়ে রেগে দাতে দাত চেপে বলতে থাকে
.
-শালা তোরা দুইটা আসলে মানুষ না বন মানুষ। তোরা কি করে আমার বন্ধু? এক বন্ধু এক মেয়েকে জোড় করে বিয়ে করে তাকে ইচ্ছা মতো মারবে আবার সেবা যত্ন করবে, অন্য বন্ধুর বিয়ের দিন জানবো আমার বন্ধুর প্রাক্তন প্রেমিকা অন্য বন্ধুর বউ। প্রাক্তন কে দেখানোর জন্য সে জেদ করে মেয়েটার বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিয়ে করবে আবার তাকে ছেড়ে দিয়ে আগের প্রেমিকা আনতে চাইবে। রাত পোহাতেই ফোন দিয়ে এনে বলবে আই রেপড হার?
শালা তোরা মানুষ না তোরা বন মানুষ ।
.
.
রাগে গিজগিজ করতে ইফাদ বেরিয়ে গেলো। দিহান যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
গরম দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে এগিয়ে যায় রুমের দিকে। রাইমা কপালের উপর ডান হাত রেখে শুয়ে আছে। দিহানের উপস্থিতি বুঝে উঠে বসে।
.
দিহান হাতের গ্লাস এগিয়ে দেয়। চুপচাপ রাইমা চুমুক দিলো গ্লাসে।
.
-আচ্ছা আপনি কি করে বুঝলেন?
-এসব লুকানোর মতো?আমি না বললে কি তুমি বলতে না?.
-না!
-কেনো? লুকিয়ে যেতে?
-হ্যাঁ! আমি অতসীর জায়গা নিতে চাই না।
-অতসীর জায়গা আমি দিতেও পারবো না। কিন্তু তুমি বড্ড সিনেম্যাটিক
-মানে?
- রাতে ফিজিক্যাল হলে ছেলেদের মনে থাকে না বা তারা বুঝে না এটা শুধু মুভি বা গল্পেই হয়।
সি... তোমার নখের আঁচড়, লাভ সাইন....
- এটা কি সত্যি আপনার জন্য লাভ সাইন?
.
দিহান কোন উত্তর দেয় না। কারণ উত্তর টা জানা নেই।
.
.
.
সারাদিন সায়ান ছিলো না। কাল অতসী কে নিয়ে বের হবে তাই আজকে ব্যস্ত ছিলো।
বাসায় ফিরতে রাত্রি দশটা বেজে গেছে। রুমে ঢুকে দেখে অতসী পুরো বিছানা বই খাতা, পেন্সিল,ইরেজার সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পেটের নিচে বই রেখে উপর হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে।
.
সায়ান পাশে বসে শুধু অতসী কে সোজা করে শুয়িয়ে দিয়ে কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে এসেই বিছানা থেকে সব গুছিয়ে এবার অতসীর দিকে তাকালো। সারাদিনের ক্লান্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা মেয়েটা কি আমাকে চার্জ করছে না কি? আনমনে হেসে উঠে সায়ান।
পাশে বসেই সিগারেট জ্বালায় সে। একমনে চেয়ে আছে অতসীর দিকে৷ হঠাৎ পিটপিট করে তাকায় অতসী। আহ্লাদী কন্ঠে জিজ্ঞেস করে
- কি খাচ্ছেন?
-সিগারেট।
-আমিও খাবো।
.
সায়ান চোখ বড় করে তাকাতেই অতসী উঠে বসে। নিশ্চিত পাগলামি করবে। অতসী ঘুমের মধ্যে এমন পাগলামি করে অতসীর মা বলেছিলো।
.
-এই না! না!
- খাবো! দিন।
- উঁহু আমি ফেলে দিচ্ছি।
-আমি খাবো তো। (চিৎকার করে)
.
সায়ান ধমক দিতেই অতসী রেগে উঠে যাচ্ছিলো। পিছন থেকে সায়ান কোমর জড়িয়ে নিজের কোলে বসিয়ে নেয়। শাড়ির ফাকে হাত দিয়ে নাক ডুবায় চুলে।
.
-ছাড়ুন। নইলে মারবো।
-মারো
-আমি সিগারেট খাবো
-প্লিজ কথা বলো না। অনুভব করো।
- কি?.
-.আমার স্পর্শ।
-কবিতা শুনবো।
-হুম! বলবো।
.
সায়ান অতসী কে উঠিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড়ায়। এলোচুলে, ঘুম ঘুম চোখে অতসী আয়নায় তাকিয়ে দেখে সে সম্পূর্ণ সায়ানকে ভিত্তি করে দাঁড়িয়েছে। সায়ানের এক হাত তার দুহাত ধরেছে। হয়তো সকালে অতসীর এসব কিছুই মনে থাকবে না তবুও সময়টা থেমে যাচ্ছে না কেনো?
আয়নায় ঈশারা করে বলতে শুরু করে.....
.
.
ওই যে ছেলেটাকে দেখছ, পছন্দ মতো ফুল ফুটল না বলে
মাটি থেকে উপড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো গাছটাকে ?
ছেলেটার ভীষণ জেদ , ও কখনও প্রেমিক হতে পারবে না ।
এই তো সেদিন কাঁচের জানালা দিয়ে রোদ ঢুকছিল বলে
কাঁচওয়ালার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে কী বকা !
কাঁচওয়ালাতো থ’ !
সাদা কাঁচে রোদ ঢুকবে না এমন আবার হয় !
ছেলেটার খুব জেদ, ও শুধু দেখে আর চেনে
বুঝতে জানে না ।
প্রেমিক হতে গেলে ঋতু বুঝতে হয়
যেমন কোন ঋতুটার বুক ভরতি বিষ
কোন ঋতুটা ভীষণ একা একা, কোন ঋতুটা প্লাবন
কোন ঋতুতে খুব কৃষ্ণচূড়া ফোটে
ছেলেটা ঋতুই জানে না
ও শুধু দেখে আর চেনে, বুঝতে জানে না ।
ছেলেটা কখনো প্রেমিক হতে পারবে না
প্রেমিক হতে গেলে গাছ হতে হয় ।
ছায়ার মতো শান্ত হতে হয় ।
বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হয় ।
জেদি মানুষেরা কখনও গাছ হতে পছন্দ করে না ।
তারা শুধু আকাশ হতে চায় ।
(রুদ্র গোস্বামী)
.
.
চলবে
0 Comments:
Post a Comment