গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ৪২

 #দায়িত্বের_সংসার

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ৪২ 


"শাস্তি? ঠিক কি শাস্তি দিতে চাইছেন অনামিকা আপু কে?  কি করবেন?  মারবেন?  না কি পুলিশে দিবেন?  না!  মানে আমি তো এদুটো ছাড়া কোন শাস্তি খুজে পাচ্ছি না। অনা আপুর জন্য আপনাদের কোন সিম্প্যাথি না থাকলেও আমার হচ্ছে। মেয়েটা ছোট বেলা থেকেই যে এক প্রকার গুমোট জীবন পার করেছে এটা চোখে পড়ছে না?  ক্রিমিনাল মাইন্ডেড?  স্বাভাবিক!  আমরা মানুষ চামড়ার মুখ দিয়ে অনেক কিছু বলতে পারি। কিন্তু ততক্ষণ অবধি সমস্যা অনুভব করতে পারি না, যতক্ষণ আমাদের নিজেদের উপর না আসে৷ অনামিকা আপু যাই হোক না কেনো সে স্বাভাবিক মাইন্ডে এসব করতো না। সে কারো দয়ার পাত্রী না। আমি বলছি না দয়া দেখাতে৷ কিন্তু তার অনুমতি ব্যতীত, কোন প্রকার জ্ঞানহীন অবস্থায়  তার ডিভোর্স করানো উচিৎ না । তার জীবন নিয়ে খেলার অধিকার কেউ আমাদের দেয়নি। অথচ দেখেন কোন না কোন ভাবে আমরা সবাই এই জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছি। 

আমি জানি অতসী কতটা সহ্য করেছে কিন্তু অতসীর জন্য বাবা বাদ দিয়ে আমরা সবাই ছিলাম। অনামিকার কে ছিলো?  কেউ না। তাছাড়া হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয় না।ঠিক তেমনি অতসী, অনামিকা দুজন আলাদা মানুষ। অতসীর ধৈর্যের প্রশংসা করতে আমি বাধ্য সেদিকে অনামিকার পরিস্থিতিতে আমি আশাহত। আমি নিজেও অনামিকা আপুকে বারবার কথা দ্বারা অপমান করেছি। কিন্তু আজ বুঝছি মেয়েটা কতটা ভয়ংকর একা ছিলো। 

একটা গল্প যখন আমরা পড়ি  

আমরা গল্পে একটা নায়িকার এমন কষ্টে কষ্ট পাই ঠিক কিন্তু সে বাদে অন্য কারো এমন কষ্ট মেনে নিতে পারি না। গল্পটা শুধু নায়িকা নিয়ে হয় না। একটা গল্প তখন স্বয়ংসম্পূর্ণ যখন প্রতিটি চরিত্র পরিপূর্ণ। প্রতিটি মানুষের জীবনে গল্প থাকে, থাকে বেঁচে থাকার লড়াই। বার বার হারতে হারতে জিতে যাওয়া। আমি অনামিকা আপুর পক্ষ নিচ্ছি না। বলছি না সে যা করেছে এর জন্য অবশ্যই সে ধিক্কারের যোগ্য কিন্তু তাই বলে তার অসহায়ত্বের সুযোগ ব্যবহার করে আমরা কি তার থেকে খুব ভালো কাজ করছি?  


এখন আমাদের তার প্রয়োজন। সাপোর্ট প্রয়োজন, ভালোবাসা প্রয়োজন। এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলে সে বড্ড একলা তো সারাজীবন ছিলোই এখন হয়তো মরেও যাবে।

সায়ান ভাই অতসীকে ছাড়বে না এটা আমার বিশ্বাস। আবার সুস্থ মস্তিষ্কে 

অনামিকা আপু সায়ান ভাই আর অতসীর মাঝে আসবে না। আমি অতসীর কথা চিন্তা করি কিন্তু অনামিকা আপুকে ফেলে দিতে পারছি না। তার ভালোবাসার প্রয়োজন। কেয়ার,ভালোবাসা সব দিয়ে অনামিকা আপুকে নরমাল লাইফে আমরা ছাড়া কে ফিরিয়ে আনবে?  


রাইমার কথায় ইফাদ সহমত হলো। সায়ান অতসীর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে 


"এই মেয়েটার তাহলে কি দোষ?  এই মেয়েটা কেনো সহ্য করছে?  তবে যাইহোক না কেনো আমি তোমাকে ছাড়বো না অতসী। "


আমি একা ।

এই ব্রক্ষ্মান্ডের ভিতর একটি বিন্দুর মতো আমি একা ।

আমার অন্তর রক্তাক্ত ।

আমার মস্তিষ্ক জর্জরিত ।

আমার স্বপ্ন নিয়ন্ত্রিত ।

আমার শবীর লাবন্যহীন ।

আমার জীভ কাটা ।

তবু এক নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন আমাকে কাতর করে

আমাকে তড়ায়...(রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্) 


অনামিকা সত্যি বড্ড একা। ক্লান্তিতে দুচোখ ভেঙে আসলেও নিজেকে সামলে নিচ্ছে সে। শাওয়ারের পানিতে ভিজে যাচ্ছে পুরো শরীর। মা কে তার মনে নেই৷ বাবাকে দেখেছে বছর দুয়েক আগে। সংসার করছে দিব্যি।আজকে নিজের জীবন কেমন যেনো খয়রাতী জীবন মনে হচ্ছে। এমন জীবন তো কাম্য ছিলো না। ভুলেও সে কারো করুণার পাত্রী হতে চায় না। 

নিজেকে গুটিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো অনামিকা। বাহিরে সবাই বসে আছে। 

হালকা গতিতে অতসীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো অনামিকা। অতসী এগিয়ে এসে দুহাতে আকড়ে ধরতে চাইলে অনামিকা ছাড়িয়ে নেয়। আর কত করুণা! আর চাই না তার। 


"অতসী!  তোকে এখন প্রচন্ড আদর করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু একটু পরেই আবার তোকে খুন করতে ইচ্ছা করবে। তাই কথাগুলো বলছি। 

আমি জানি না কেনো আমার সাথেই এমন হয়েছে। জানতেও চাই না। তোর সংসার তুই সামলে নে। আমাকে মুক্তি দে। আমি মুক্তি চাই৷ কিন্তু হ্যাঁ! সায়ান মাহমুদ!  তোমার সাথে আমার বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন টা ফেইক ছিলো। চাইলে খোঁজ নিতে পারো। এই কারণে আমি শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করতে রাজি হই নি। না সে এক মাসে তোমার কাছাকাছি এসেছিলাম। আমি জানতে চেয়েছিলাম অতসীর প্রতি ঘৃণা কি আমার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে?  যদি করে তাহলে ধুমধামে বিয়ে করে নিবো।এভাবে আমার প্রতিশোধ শেষ হবে। কিন্তু কথায় আছে না?  রাখে  আল্লাহ্ মারে কে?  

যাইহোক যেখানে কোন সম্পর্ক নেই সেখানে ডিভোর্স আসবে না। "


অতসীর সাথে কথা শেষ করে অনামিকা রেদোয়ানের দিকে এগিয়ে যায়। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলতে থাকে 


"আমি মনে করতাম আমার মা আমার সন্তান হয়ে ফিরে আসবে!  কিন্তু আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি। কোথাও না কোথাও আমার সন্তানের খুনী আপনি। কোন মা কি পারে তার সন্তানের খুনীকে মাফ করে দিতে?  আমিও পারবো না। তাই আমার সামনে কোন দাবী নিয়ে আসবেন না। " 


কথাগুলো বলে অনামিকা মামা কে গিয়ে হাত ধরে বললো 

"কয়েকটা দিন! মাত্র সাতটা দিন আমাকে আপনার বাসায় ঠায় দিন। আমি চলে যাবো। " 


সেদিন অনামিকা সত্যি চলে যায় অতসী-সায়ানের জীবন থেকে। তারপর সায়ান খবর নিয়ে জানতে পারে সত্যি তাদের বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন হয়নি। এতটা নিখুঁত ভাবে সব অনামিকা হ্যান্ডেল করেছিলো যেখানে সন্দেহের কোন অবকাশ ছিলো না। 


অনামিকার মাইন্ড এতটা প্রতিশোধ নেশায় মত্ত ছিলো ভাবলেই গা শিউরে উঠে। অনামিকা রেদোয়ান কে মাফ করেনি । রেদোয়ান আশা ছাড়েনি। সাতদিন পর অনামিকা ইন্ডিয়ার ব্যাঙ্গালুরু চলে যায় । কারণ সে নিজেকে সময় দিতে চায় । কেউ বাধা দেয়নি। 


অতসী সায়ানের লাইফ ভালোই চলছিলো৷ কিন্তু হঠাৎ একদিন অতসীর কথায় সায়ানের সব যেনো বিভীষিকাময় হয়ে উঠছে। যে অতসী কে পাওয়ার জন্য এত কিছু!  সে অতসী সায়ান কে ছেড়ে যেতে চাইছে?


"মি.মাহমুদ!  সব কর্মের ফল না পেলেও কিছু কর্মের শাস্তি এই পৃথিবীতে পেয়ে যেতে হয়। ধরে নিন না এটা আমার প্রতি,আমার বোনের প্রতি করা প্রতিটি অন্যায়ের শাস্তি।" 


চলবে 


#ছবিয়ালঃতৃষা

0 Comments:

Post a Comment