1t/Banner 728x90

গল্প এক_আকাশ_দূরত্ব পর্ব ৯

 #এক_আকাশ_দূরত্ব (৯)

#তানজিলা_খাতুন_তানু 


আজ থেকে নাজিয়ার এক্সাম শুরু। নাজিয়া হোস্টেলে ফিরে গেছে, বাবা মাকে ছেড়ে যাবার কোনো ইচ্ছা ছিল না কিন্তু সবার জোরাজুরিতে গেছে।  আবির আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক, অফিসে যাওয়া শুরু করেছে। আবরারের কাজ পড়ে যাওয়া'তে ওহ ফিরে গেছে। গোটা বাড়িতে সারাদিন আবিরের মা আর প্রান। ছোট প্রানকে সামলাতে আবিরের মাকে ভালোই হিমশিম খেতে হচ্ছে।


- 'খালাম্মা আমি বলি কি একটা বউ নিয়ে আসুন সেই না হয় আমাদের প্রানকে সামলাবে।'


কাজের লোকের কথা শুনে আবিরের মা চমকে উঠলেন, বিরক্ত কন্ঠে বললেন..

- 'কি সব বলছিস? নিসা মারা গেছে এখনো একমাস হয়নি 


আবিরের মাকে পুরোটা বলতে না দিয়ে কাজের মেয়েটা বলল,

- 'আরে খালাম্মা আমি বড়ো দাদার বিয়ের কথা বলছি না।'

- 'তাহলে?'

- 'আমি তো ছোট দাদার কথা বলছি।'


আবিরের মায়ের মুখটা চকচকে হয়ে উঠল। সবকিছুর মধ্যে আবরারের বিয়ের কথাটা মাথা থেকে বের হয়ে গেছে। মনে মনে ঠিক করলেন আজকেই স্বামীর সাথে কথা বলবেন। 


--


নাজিয়া কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, এক্সামের সিট পড়েছে হোস্টেল থেকে কিছুটা দূরে তার জন্য তাড়াতাড়ি বের হয়েছে তার উপর আজকে প্রথমদিন। কিন্তু একটাও অটো, টোটো পাচ্ছে না। নাজিয়া বিরক্ত হয়ে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে, তখনি সামনে একটা বাইক দাঁড়াল। নাজিয়া বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে চোখ করে নিল।


- 'বাইকে উঠে বসো।'


চেনা কন্ঠস্বর শুনে নাজিয়া সামনে তাকিয়ে দেখল বাইক নিয়ে আসা ছেলেটি আবরার। 


- 'আবরার আপনি?'

- 'হুমম আমি। এখন বেশি কথা না বলে উঠে বসো, কলেজ যেতে হবে তো!'

- 'আমি যাই হোক কিছু নিয়ে চলে যাবো। আমি চলে যান।'

- 'আমি চলে যাবার জন্য এতটা পথ জার্নি করে আসিনি। বেশি কথা না বলে ওঠো তাড়াতাড়ি।'

- 'কেন জোরাজুরি করছেন? আমি বলছি তো আমি আপনার সাথে যাবো না।'

- 'সেইদিনের ঘটনার জন্য তুমি এখনো আমার উপরে রেগে আছো তাই না!'

- 'আমি কোনো কিছুই মনে রাখিনি। আর অন্যের বাড়িতে থাকাটা দৃষ্টিকটু, এই বিষয়ে কারোর উপরে রাগ করার কোনো কারন খুঁজে পাইনি আমি।'


নাজিয়ার শান্ত বলা কথাগুলো শুনে আবরারের বুঝতে অসুবিধা হলো না, বিষয়টা নিয়ে ওর মনখারাপ হয়ে আছে। 


- 'প্লিজ নাজিয়া চলো আমার সাথে, আমি শুধু মাত্র তোমাকে পৌঁছে দেব।'


নাজিয়া রাগে চেঁচিয়ে উঠল..

- 'আমি একটা কথা আপনাকে কতবার বলবো! বলছি তো আমি আপনার সাথে যাবো না।' 


আশেপাশের মানুষ ওদের দিকে কেমন চোখে তাকাল, আবরারের মনটা খারাপ হয়ে যায়। নাজিয়াকে আর কিছু না বলে বাইক নিয়ে চলে গেল। নাজিয়া আবরারের যাবার দিকে তাকিয়ে রইল, চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। আবরারের সাথে এইরকম ব্যবহার করতে চাইনে কিন্তু ওকে ওই কথাগুলো না শোনালে আবরার কখনোই ওর পেছন ছাড়ত না।


কিছুক্ষন পর, একটা টোটো ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,


- 'দিদি কোথায় যাবেন?'

- '... কলেজ।'

- 'উঠে বসুন।'


টোটোতে বসে নাজিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, যাক কিছু একটা পেল। নাহলে সত্যি যেতে দেরি হয়ে যেত। 


--


নাজিয়ার এক্সাম মোটামুটি ভালোই হয়েছে, যে খারাপ প্রিপেরশন ছিল তাতে যেটা হয়েছে সেটাই অনেক কিছু। নাজিয়া এক্সাম শেষ করে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে তখনি সে টোটো'টা ওর সামনে এসে বলল,

- 'দিদি যাবেন?'


টোটো ড্রাইভারকে দেখে নাজিয়া চমকে গেলেও বিষয়টাকে কাকতালীয় ভাবেই নিল। হয়তো উনি এই লাইনে গাড়ি চালায়, নাজিয়া বেশি কিছু না ভেবে উঠে‌ বসল এখন ভালো ভাবে হোস্টেলে ফিরতে পারলেই শান্তি।


---


রাতে খাবার টেবিলে আবিরের মা গুনগুন করেই চলেছেন, কিন্তু আসল কথা বলে উঠতে পারছেন না। উনি ভালো করেই জানেন ওনার কথা শুনে স্বামী ও ছেলে কিরকম রিয়াক্ট করবে, তারপরেও ওনাকে যে কথাটি বলতেই হবে।


বিষয়টা আবিরের নজর পড়ল তার মা কিছু একটা বলতে চাই সেটা ভালো করেই বুঝল। তাই মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,

- 'মা তুমি কি কিছু বলবে?'

- 'হ্যাঁ আসলে..

- 'বলো?'

- 'আমি আবরার আর শ্রেয়ার বিয়েটা দিয়ে দিতে চাইছি।'


আবিরের বাবা খাওয়া থামিয়ে দিয়ে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাল, চোখ মুখে বিস্ময়। কিন্তু আবির স্বাভাবিক যেন এইরকম একটা কথা আশা করেছিল, এইটা না বললে বরং অবাক হতো। 


আবিরের বাবা রেগে কিছু একটা বলতে যাবেন তার আগেই আবার বলল,

- 'আমার কোনো আপত্তি নেই তবে একটা শর্ত আছে।'


আপত্তি নেই কথাটিতে খুশি হলেও শর্ত আছে কথাটাই আবিরের মায়ের ভ্রু কুঁচকে গেল। 


- 'কি শর্ত?'

- 'বিয়ের আগে একমাস শ্রেয়া এই বাড়িতে এসে থাকবে।'

- 'কেন?'

- 'আরে পরীক্ষা করতে হবে না, শ্রেয়া কতটা যোগ্য।'


ছেলের কথার ধরন বুঝতে না পেরে আবিরের মা বললেন,

- 'মানে?'

- 'তুমি শ্রেয়ার বউ করতে চাইছ কেন? তোমার সংসারটা গুছিয়ে রাখার জন্য তো!'

- 'হুমম।'

- 'সংসার গুছিয়ে রাখার মধ্যে আমার ছেলের দায়িত্বটাও পড়ছে কিন্তু।'


আবিরের মায়ের মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট বোঝা গেল, হ্যাঁ উনি নিজের সংসারকে গুছিয়ে রাখার জন্য শ্রেয়াকে নিয়ে আসতে চাইছেন, আর তার মধ্যে প্রানকে দেখে রাখাও একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কিন্তু শ্রেয়া কি সেটা করতে পারবে!


আবিরের বাবা বুঝলেন স্ত্রী ভালোই গ্যারাকলে আটকে পড়েছেন, এই সুযোগে ওনাকে জব্দ করা যাবে। চাই আবিরের কথাতে সমর্থন করে বললেন,

- 'আবিরের শর্তে আমি রাজি। তুমি শ্রেয়াকে আসতে বলো।'


আবিরের মা কি করবেন কিছুই বুঝতে পারলেন না, তবুও মনে মনে নিজেকে শান্তনা দিলেন শ্রেয়া সবকিছু ঠিক সামলে নেবে। কিন্তু ঠিক কতটা সামলাবে, সেটাই দেখার বিষয়।


--


রাতের খাবার পর, আবির নাজিয়ার সাথে ফোনে কথা বলে আবরারকে কল করল। আবরার সবেমাত্র হাতের কাজটা সেরে ল্যাপটপটা রেখেছে তখনি আবিরের ফোন আসলো।


- 'হ্যাঁ দাদা বলো।'

- 'কেমন আছিস?'

- ' আলহামদুলিল্লাহ চলছে। তুমি কেমন আছো? আর প্রান কেমন আছে?'

- 'আমি ভালো আছি কিন্তু প্রান কেমন আছে সেটা জানি না, বেশিরভাগ সময়েই দেখছি কান্নাকাটি করছে।'


কথাটা বলার সময়ে আবিরের গলা কিরকম একটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়ে আবির নিঃস্ব হয়ে গেছে তার উপর আবার সদ্য জন্মানো ছেলেটা মায়ের স্মেহ ছাড়া বেড়ে উঠছে। আবরার বিষয়টা বুঝল কিন্তু কি বলে শান্তনা দেবে সেটাই বুঝতে পারল না, মায়ের জেদের কাছে হার মেনে নাজিয়া একা ফিরে গেছে, তবুও ওর কাছে থাকলে কিছুটা নিশ্চিন্তে থাকা যেত। মায়ের বয়স হচ্ছে, ওনাকে সামলাতেই একটা লোকের দরকার হয়, আর উনি এই বয়সে এসে কিনা বাচ্চা সামলাবেন, জেদ বলিহারি!


আবির নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

- 'আবরার শ্রেয়া আমাদের বাড়িতে আসছে।'

- 'কেন?'

- 'মা তোর আর শ্রেয়ার বিয়ে দিতে চাইছে। তুই যতটা তাড়াতাড়ি পারিস বাড়িতে ফিরে আয়।'

- 'আমি শ্রেয়াকে বিয়ে করতে পারব না।'

- 'তোকে বিয়ে করতেই হবে।'

- 'দাদা!'


#চলবে....


ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আসসালামু আলাইকুম।



No comments

Powered by Blogger.