#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
# পর্বঃ১৯
.
.
সায়ান অতসীকে প্রথম যেদিন দেখেছিলো সেদিন ছিলো মঙ্গলবার। দূরে একটা মেয়ে লাফালাফি করছে কিছু একটা পাড়ার জন্য। একটু কাছে যেতেই দেখলো মেয়েটা পেয়ারার কচি পাতা পাড়ার জন্য লাফাচ্ছে৷
কামিজের কাটা অংশ একটু সরে যেতেই চোখ দুটো প্রথমেই মেয়েটার কোমরে গিয়ে আটকে গিয়েছিলো। ছোট্ট একটা তিল। লাফালাফির জন্য খোপা করা চুল খুলে কোমর গড়িয়ে নিচের দিকে দুলছে। ব্যর্থ
ক্লান্ত হয়ে মেয়েটা চুপচাপ কোমরে হাত গুজে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর কই যেনো চলে গেলো। সায়ান গাছের নিচে এসে খুজলেও পেলো না। একটা ডাল ভেঙে ঝুলিয়ে রাখলো।
দূরে গিয়ে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা এসেছে। এসে ডাল ভাঙা দেখেই শান্তির হাসি দিলো।
কচি পাতা মুখে গুজে আবার যেনো কই হারিয়ে গেলো।
.
.
ঠিক এভাবেই প্রথম দেখে ছিলো অতসীকে। মায়ের সাথে গ্রামে বেড়াতে গিয়ে। অতসীর নানুর বাড়ির এলাকা তে।
অতসীকে এই একটু দেখাতেই ভালো লাগে সায়ানের। তারপর শুধু একটু দেখার অপেক্ষা।
দেখা মিলেছিলো প্রায় তিন ঘন্টা সাতান্ন মিনিট পর।
নদীর বাকে একটা গাছের গুড়িতে বসে সায়ান সিগারেট টানছিলো।
প্রায় সাত বছর বিদেশ থেকেছে কয়েকদিন হলো এসেছে। যথেষ্ট স্মার্ট ছেলে হলেও মেয়েদের নিয়ে এতটা ভাবেনি কিন্তু এই মেয়ের জন্য মন কেমন কেমন করছে।
ওই যে একটা অনুভূতি আছে না?
বুকের ঠিক মাঝে ডিপ ডিপ করে, শ্বাস নিতে কষ্ট লাগে। পেটে যেনো কেমন অনুভূতি হয়?
সেইরকম।
.
.
নদীতে কিছু মেয়ে গোসল করছে। তারা অতসী কে বারবার ডাকলেও অতসী না করছে।
কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে সাতার পারে না ।
.
সায়ান একটু পাশ ফিরে অন্য দিকে বসলো। যেখানে থেকে শুধু অতসী কে দেখা যায়।
ফোনে টুপটুপ করে কয়েকটা ছবি তুলে নিয়েছিলো।
.
.
অতসীকে বুকে নিয়ে আধশোয়া অবস্থায় এক হাতে ফোনে স্লাইড করে অতসীর সেই ছবি গুলো সায়ান দেখছিলো। অতীতের কথা মনে হচ্ছিলো।
আজ অতসী এত কাছে কিন্তু সেদিন অতসী কেনো সব উল্টো পাল্টে দিয়েছিলো?
খুব কি প্রয়োজন ছিলো? বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে সমস্যা নেই কিন্তু মা কে অপমান কেনো করেছিলে? সেই জেদ ধরে অনামিকার সাথে সম্পর্ক, বিয়ে। কিন্তু আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি। অনামিকার সাথে এতটা খারাপ তুমি করতে?
যে অতসী সায়ান মাহমুদ কে ফিরিয়েছিলো সে কিভাবে আমার বন্ধু দিহানের প্রেমে পড়লো? আমি সহ্য করতে পারিনি। প্রতিশোধের নামে ছিনিয়ে এনেছি আমার ভালোবাসা কে।
দিহানের বিয়ের দিন খুব মেরেছিলাম তাই না? কি করবো? দিহানের স্পর্শ গুলো তোমার শরীরে আমার সহ্য হচ্ছিলো না।
আমি চাইলেও এখন তোমার উপর রাগ, জেদ দেখাতে পারছি না। তবে কিছু তো একটা আছে, যেদিন সেই রহস্যের জট খুলবে সেদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
অতসীর চুলগুলো খুলে দিয়ে বিলি কাটতে কাটতে কথাগুলো ভাবছিলো সায়ান। পিচ্চি মেয়েটা শাড়ি পড়ে। সামলাতে তো পারেই না। তবে কোমরে আঁচল গুজে যখন কাজ করে। গিন্নি গিন্নি লাগে।
.
হঠাৎ অতসী উঠে বসে। সায়ান তখনো শুয়ে আছে। অতসী ঘুম ঘুম চোখে বলে
-- আপু মরে গেছে৷ অনামিকা আপু মরে গেছে।
.
.
.
অতসী কান্না করতে করতে কথা গুলো বলছিলো। সায়ান দ্রুত উঠে অনামিকার রুমে যায়। নার্স মাথায় হাত রেখে ঘুমোচ্ছে। না! সব ঠিক আছে। অতসী ততক্ষণে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। কান্না করতে করতে হিচকি উঠে গেছে। অতসী দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। পিছন ফিরে সায়ান দেখে অতসী প্রায় পড়েই যাবে। দুহাতে শক্ত করে ধরে। চুল গুলো পুরো পিঠে এলোমেলো।
.
-অতসী স্বপ্ন ছিলো। আর কিছু না৷ শান্ত হও।
-আপু! আপু মরে গেছে
-না, কিছুই হয়নি
-আপুর কাছে যাবো ছাড়ুন। আপু আমার জন্য মরে গেছে। আপু
-অতসী প্লিজ শান্ত হও। স্বপ্ন ছিলো।
.
সায়ান অতসী কে খুব যত্ন করে নিজের বুকের সাথে ঠায় দিয়ে দাড় করায়। যদিও খোপা পাড়ে না তবুও চুল পেচিয়ে রাখে।
আঁচল ঠিক করে চোখ মুছে অনামিকার কাছে নিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে হাত ধরে।
অতসী তখনো ফুপিয়ে কান্না করেই যাচ্ছে।
অতসীর ডান হাত সায়ান হাতের মুঠোয় নিয়ে অনামিকার গালে স্পর্শ করিয়ে বলে
.
- দেখো তোমার আপু ঠিক আছে। খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
.
অতসী সায়ান কে ছাড়িয়ে অনামিকার বুকে মাথা রাখে৷ না সত্যি বেঁচে আছে। স্বপ্ন দেখছিলো সে।
.
উঠে দাঁড়াতেই আবার বসে পড়ে। শরীর ধকল নিতে পারছে না।
সায়ান অতসী কে টেনে বুকে নিয়ে এক হাত অনামিকার মাথায় রাখে।
জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে তবে আমি আমার সব দায়িত্ব পালন করবো। অনামিকা তুমি সব সময় আমার দায়িত্বের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলে, অতসী আমার ভালোবাসায়। ভালোবাসার আরেক রুপ না কি করুণা। জেদের বসে আমি হয়তো তোমার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম কিন্তু ভালো তো শুরু থেকে অতসী কেই বাসি। অতসীর প্রতি আমার রাগ,অভিমান তোমার প্রতি ওর অত্যাচার ওসব বাধ্য করে অতসী কে শাস্তি দিতে কিন্তু যে অতসী আমার বুকে সে অতসী তো আমার সব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মেয়ের প্রতি আমি চাইলেও কিছু করতে পারি না শুধু ভালোবাসা ছাড়া।
.
.
মনে মনে কথাগুলো বলে অতসীকে কোলে তুলে নেয় সায়ান।মেয়েটা অসুস্থই বলা চলে। জ্বর থেকে ভালো হতেই আবার মান্থলি পিরিয়ডের মধ্যে দিয়ে গেছে। যদিও সে মনে করে সায়ান কিছুই জানে না তবে ইফাদের প্রেসক্রাইব করা মেডিসিন আনতে গিয়ে সব বুঝেছে। তাইতো একটু বেশিই খেয়াল রাখতে হচ্ছে।
.
সায়ানের বুকে অতসী চুপচাপ আছে, সায়ান অতসীর কপালে চুমু দিয়ে অনামিকার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো । পিছন ফিরে তাকালো না। তাকালে হয়তো দেখতো এক জোড়া নিষ্প্রাণ, নিস্তেজ চোখ তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
চোখ বেয়ে বেয়ে নেমে আসছে নোনাজলের স্রোতধারা।
.
.
অতসীর জন্য বানানো রুমে দিহান বসে আছে। অতসী কে সে ভুলতে পারবে না।
পুরুষ মানুষ কখনো তার প্রথম প্রেমের জায়গা কাউকে দিতে পারে না। এমন কি স্ত্রী কেও না।
বালিকার প্রথম প্রেম যদি সর্বগ্রাসী হয় পুরুষের প্রথম প্রেম হয় প্রথম অনুভূতি।
.
ইদানীং দিহান বেশ স্মোক করে। অতসী এটা পছন্দ করতো না। কিন্তু যেহেতু অতসী নেই তাই বাধাও নেই।
আচ্ছা অতসী কি সায়ান কে স্মোক করতে না করে? শাসন করে? খাইয়ে দেয়?
.
এসব ভাবতে ভাবতে ডুব দেয় অতীতে।
.
সায়ান অনামিকার বিয়ের জন্য এসেছে অতসীদের গ্রামের বাড়ি। যেদিন আংটি বদল,হলুদ চলছিলো সেদিন অনামিকার বাবা অতসী কে খুব বকে। বাড়ি শুদ্ধো মানুষের সামনে মারতে আসলেও অতসী কিছুই বললো না। সন্ধ্যের পর চুল ছেড়ে পুকুড় ঘাটের কিনারায় বসেছিলো।
হঠাৎ দিহানের গলার স্বর শুনে পিছনে তাকাতেই পা ফসকে পড়ে যেতে নিলো।
দিহান হাত ধরে টেনে ধরলেও যদি একটু ছাড়ে অতসী পানিতে পড়ে যাবে।
চোখ মুখ বন্ধ করে আছে মেয়েটা। এত ভয়?
.
-কি ম্যাম? রাত করে পুকুরে সাতার কাটবেন না কি?
- প্লিজ ছাড়বেন না।
-বাব্বাহ! আমাকে এত পছন্দ?
-আমি মোটেও ওমন মেয়ে নই।
-ওমন মেয়ে মানে? ভালো মেয়ে হলে কি আর এভাবে আমার হাত ধরে থাকতেন?
.
কথাটা মনে হয় অতসীর লাগলো। দিহান ওভাবে বলতে চায়নি। শুধুই মজার ছলে বলেছিলো।
.
-আমি সাতার পারি না। পুকুরে পানি অনেক। আমার পক্ষে উঠা সম্ভব হবে না। তাই বলেছিলাম।
.
কথাটা বলেই অতসী দিহানের হাত আগলা করে দিচ্ছিলো। ঠিক তখন দিহান আরো শক্ত করে ধরে টেনে তুললো।
.
- এই তো বললেন সাতার পারেন না। আবার হাত কেনো ছাড়ছিলেন? ভরসা করে ধরা যায় না? পড়লে তো মরে যেতেন।
.
-হয়তো! প্রত্যেক প্রানীর মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। ধন্যবাদ।
.
অতসী এক মিনিট দাঁড়ায় না। দ্রুত বাড়ি ফিরে আসে। যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে দিহান। মেয়েটা কেনো প্রতিবাদ করেনা?.
.
বেশিক্ষণ স্মৃতিচারণ করতে পারলো না দিহান। অস্পষ্ট স্বরে রাইমার কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।
.
.
সকালে ঘুম ভেঙে অতসী নিজেকে সায়ানের বুকে পেলো। যতদূর মনে পড়ে সে রাতে কোন স্বপ্ন দেখেছিলো।পড়নের শাড়ির অবস্থা খুব বাজে। কয়েকটি কুচি খুলে গেছে আচল টান দিতে বুঝলো সায়ানের পিঠের নিচে।
আস্তেধীরে টান দিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। সকাল তখন সবে সাতটা।
সায়ান উঠে ফ্রেশ হয়ে ডেইলি ওয়ার্ক আউট করে শাওয়ার নিতে নিতেই নয়টা বাজলো। অতসী বইয়ে মুখ ডুবিয়ে রেখেছিলো।
.
পড়া শেষে অতসীর আরো এক চিন্তা। এ বাসায় ওর কোন কাপড় নেই। মানে শাড়ী ব্যতীত। যা শাড়ি আছে দোকান দেওয়া যাবে কিন্তু না আছে সালোয়ার কামিজ, না আছে বোরখা। আল্লাহ্ ! আজ কি পড়ে যাবে? শাড়ী? ভেবেই ঢোক গিললো অতসী৷
বেড সাইডে রাখা মিনি ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি মুখের কাছে নিতেই সায়ান হাত থেকে কেড়ে নেয়।
.
-এখন মোটেও এসব খাবে না।
-কেনো?
- পেইনে সেদিন কেমন করেছো ভুলে গেছো? পিরিয়ডের সময় ঠান্ডা সব এভয়েড করবা।
.
পিরিয়ড শব্দ শুনেই রসগোল্লার মতো বড় বড় চোখে তাকায় অতসী। সায়ান মুচকি হেসে হাতে থাকা গরম দুধের গ্লাস এগিয়ে দেয়।
সকাল সকাল দুধ? আল্লাহ্! মাফ করো।
.
একে তো লজ্জা আবার অত্যাচার?
অতসী পারলে দৌড়ে পালায়। যাওয়ার আগেই সায়ান হাত ধরে বসিয়ে মুখের সামনে ধরে।
কারণ সায়ান জানে অতসী দুধ ফিরিয়ে দেয় না।
ওর মা বলেছে -অতসী যদি দুধ খেতে না চায় তবে বলবে
-- পথের সঙ্গী ছাড়তে হয় কিন্তু দুধভাত ছাড়তে হয় না।
.
অতসী চুপচাপ সহ্য করে খেয়ে নিচ্ছিলো।
সায়ান একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো
- রেডি হয়ে নাও। আমরা বেরুবো। পৌঁছাতে সময় লাগবে।
.
রেডি হয়ে এসে অতসী দেখলো সায়ান বেরিয়ে গেছে।প্রয়োজনীয় সব সায়ান আগেই মনে করে গাড়ির ভিতর রেখে অতসীর জন্য অপেক্ষা করছিলো।
.
দূর থেকে দেখলো অতসী আসছে। ক্রীম কালারের লং রাউন্ড ড্রেস, সাথে ম্যাচিং হিজাব। বোরখা না হলেও অনেকটা তেমন। বাম হাতে দুটো চুড়ি আবার ঘড়িও। নাকে ছোট্ট নাকফুল।
গাড়িতে উঠে বসেই আবার বইয়ে মুখ ডুবালো সে। সায়ান একমনে ড্রাইভ করছে। হঠাৎ রাইমার কথা মনে হলো। আজ তো রাইমাও আসবে।
চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। যদি দিহান আসে?. আচ্ছা? রাইমা কি জানে দিহান আর সম্পর্কের কথা? কিভাবে দাঁড়াবে রাইমার সামনে?
অথচ অতসী এটা কখনো চিন্তা করেনি সে নিজেই আজ অনেক বড় সত্যের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে?
.
চলবে
(আমি আমার গল্প বা লিখা নিয়ে এক্সিপ্লেনেশন দিতে পছন্দ করি না। তবুও বলছি - বড় হবে, আরো অনেক কাহিনী বাকি। যাদের মনে হচ্ছে এখন শেষ করা দরকার তাদের বলবো তাহলে আপনি স্বাগতম। গান,কিংবা কবিতা না দিয়ে শুধু সংলাপ দিলে আমার কাছে পানসে লাগে। ধরে নিন এটা আমার লিখার একটা ধরণ মাত্র। গ্রুপে যারা এড আছেন তারা জানেন আমি বলেছি সপ্তাহে তিন পর্বের থেকে বেশি দিতে পারবোনা। যারা বলেছেন ফ্যামাস হয়েছে তাই দাম বেড়েছে, এটাই শেষ আর পড়বো না আমি বলবো তারাও স্বাগতম।এক্সাম চলে এসেছে, #সন্দেহ নিয়ে ব্যস্ত আছি তার পরেও যতটা পারবো দিবো। আশা করছি বুঝেছেন। কারো খারাপ লাগলে একান্ত ভাবে দুঃক্ষিত।)
চলবে,
0 Comments:
Post a Comment