#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৩৭
.
.
অতসীর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো সায়ান।
এক শ্বাসে পুরো পানি খেয়ে নিলো অতসী। কে জানে? এটাই হয়তো শেষ খাওয়া।
সায়ান মুচকি হেসে বললো
-তোমার চিন্তাভাবনা তারিফ করতে হয়। ভাবলে কিভাবে তোমাকে আমি মেরে ফেলবো?
.
সায়ানের কথা শুনে অতসী থমকে যায়। মনের কথা মি.মাহমুদ জানলো কিভাবে?
এটা শুধু ভ্যাম্পায়ারদের দ্বারাই সম্ভব। কারণ তারাই পারে মাইন্ড পড়তে। আল্লাহ্! তাহলে কি?
.
ফাকা ঢোক গিলে কাঁপানো হাতে স্পর্শ করলো সায়ানের হাত। না গরম লাগছে। ভ্যাম্পায়ার হলে অবশ্যই শরীর ঠান্ডা থাকতো।
.
সায়ান খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে এসে অতসীকে উদ্দেশ্য করে বলে
.
-না আমি মরে গিয়েছি, না আমি তোমাকে মেরে সুটকেস বন্দী করে পানিতে ফেলবো। এসব আজগুবি চিন্তাভাবনা বাদ দাও। যাও সুটকেস খুলে দেখো কি আছে....
.
সায়ানের বলতে দেরি হলেও অতসীর খুলতে দেরি হলো না।
সুটকেস খুলে অতসী বিষ্ময়ের সপ্তম আসমানে পৌঁছেছে।
পুরো সুটকেস ভর্তি বিভিন্ন লেখকের বই।
শরৎচন্দ্র থেকে শুরু করে ফিফটি শেডস অফ গ্রে।
অতসীর যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না।
কিছু সময়ের মধ্যে রুমের এক পাশে ছোট একটা লাইব্রেরী হয়ে গেলো।
ইজি চেয়ারের পাশের দেয়াল শুধুই বই।
.
.
তার চেয়ে বরং দূরেই থেকো
যেমন দূরে থাকে ছোঁয়া থেকে স্পর্শ
রোদ্দুরের বু্ক থেকে উত্তাপ
শীতলতা থেকে উষ্ণতা
প্রেমের খুব গভীর ম্যাপে যেমন লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা,
তেমন দূরেত্বেই থেকে যেও-
এক ইঞ্চিতেও কভু বলতে পারবে না কেউ
কতটা কাছাকাছি এসেছিলে বলে দূরত্বের পরিমাপ দিতে পারেনি পৃথিবী।
.
(রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ)
.
অতসীর কবিতা আবৃতি বরাবর সায়ানকে মুগ্ধ করে। আজ ব্যতিক্রম হয়নি। কালো সবুজ রঙের শাড়ি, হাত খোপা এসব যেনো বারবার বাধ্য করে প্রেমে পড়তে।
ইদানীং সিগারেটের নেশায় নেশা হয় না যতটা হয় অতসীর কথায়৷ ইজি চেয়ারে বসে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
অতসীর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে সায়ান জিজ্ঞেস করলো
-এখনো অভিমান?
- উঁহু!
-ভালোবাসি। তাইতো কষ্ট হয়! তুমি কেনো ছেড়ে চলে যেতে চাইলে? তাইতো বাধ্য হয়ে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে হলো......
-এটাও হয়তো ভালোবাসা প্রকাশের একটা ধরণ মাত্র ।আমার মতে ছেলেদের ভালোবাসার অনেক পদ্ধতি ব্যবহার । তারা ব্যবসায় যেমন নিত্যনতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে হয়তো ভালোবাসার মানুষের ক্ষেত্রেও তাই।না হলে হিংস্রতায় কি ভালোবাসা প্রকাশ হয়?
(অতসীর কন্ঠে বিদ্রুপের স্পর্শ)
-এটা ভুল। ভালোবাসা মানুষকে হিংস্র কেনো খুনী অবধি বানিয়ে দিতে পারে। নির্ভর করে সামনের ব্যক্তিকে কতটা ভালোবাসো।আচ্ছা!
কিছু কথা বলবো হয়তো তুমি বুঝতে পারবে।
রোমান্স আর ইন্টিমেন্সির মধ্যে পার্থক্য জানো? ইদানীং কালের কিছু লেখা পড়লে মনে হয় রোম্যান্স মানেই কাপড় খোলা, নগ্ন দেহ ছাড়া রোমান্স হয় না। যদি এমনটা হতো তাহলে ধর্ষণ ও রোমান্সের কাতারেই পড়তো। আজকাল মানুষ ভুলেই গিয়েছে। চোখে চোখ রেখে, হাতে হাত ধরে কিংবা প্রেয়সীর চুলে, হাতের চুড়িতে রোমান্স খুজে পাওয়া যায়। না কি প্রেয়সীর নাভির গভীরতা পরিমাপে কিংবা তার দেহাকৃতির অঙ্গভঙ্গিতে। হ্যাঁ! শারীরিক চাহিদা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ তবে বাসর রাতে কি হয় এটা তো আর বলে বেড়ানোর কথা না! মানুষ বুঝে ভাই! কিন্তু একদল মানুষ এটা নিয়েও কুটক্তি করবে। কারণ তাদের চোখে নিজের মতবাদ সঠিক অন্য সবাইকে এরা মানুষ মনে করে না। অন্যকে ছোট করে এরা যা আনন্দ পায় হয়তো এই আনন্দ এদের একদিন কাল হয়ে দাঁড়ায়। প্রকৃতি নিয়ম প্রতিশোধ নেওয়া। তুমি ছেড়ে দিলেও প্রকৃতি ছাড়বে না। কারণ?
karma is a bitch..... (প্রত্যয় হিরন)
তুমি হয়তো বলবে আজ সন্ধ্যেবেলা আমি যা করেছি তা কি?
সেটা আমার হিংস্রতা ছিলো। ভালোবাসা মাঝেমধ্যে মানুষকে হিংস্র করে তোলে।
কিন্তু আমার কোন আফসোস নেই। তোমার জন্য আমি যেমন হিংস্র, স্বার্থপর ঠিক তেমন আমার ভালোবাসায় তোমাকে সিক্ত করতেও সবসময় প্রস্তুত।
.
.
অতসী ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সব থেকে রহস্যময় চরিত্র তো সায়ান।কিন্তু এখন যা বললো সব মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে। কি বুঝালো মি.মাহমুদ!
কিন্তু এখন প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। তাইতো কথা না বাড়িয়ে অতসী চুপচাপ বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
.
.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো প্রায় দু সপ্তাহ। এই দু সপ্তাহে অতসী এক বারের জন্য রুম থেকে বাহিরে যায়নি। পুরো সংসার সাজিয়েছে এই রুমেই। সারাদিন কেটে যায় অনলাইনে কাজ করে না হয় বই পড়ে। সময় মতো খাবার রুমে চলে আসে। তিতির পাখি, বারান্দায় ছোট্ট বাগান এসব অতসীর সাথী।
সায়ান অফিস থেকে এসেই প্রথমে অতসীর কাছে আসবে কিছুক্ষণ থেকে অনামিকা কাছে চলে যায়।
অনামিকা যে সায়ান কে সেদিনের জন্য প্রশ্ন করেনি এমন কিন্তু নয়। করেছিলো কিন্তু সায়ান কোনভাবে কাটিয়ে নিয়েছে।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো অনামিকা সায়ানের থেকে দূরত্ব মেপে চলে।
হিসেব মতো অনামিকার চাহিদা বেশি থাকবে। সায়ান,অধিকার সব চাইবে কিন্তু এসবে বড্ড অনীহা।
একদিকে অবশ্য সায়ানের জন্য ভালোই হয়েছে। কারণ অনামিকা যদি অধিকার চাইতো তাহলে কি যে হতো......
.
ইফাদ এসেছিলো অনামিকা কে দেখতে। আপাতত সব ঠিক। এখন উচিৎ অনামিকা রিপোর্ট সম্পর্কে জানানোর। কিন্তু যদি হিতে বিপরীত হয়? অনামিকার স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই ইফাদ আরেক দফা পিছিয়ে এলো৷
.
অতসীর সাথে দেখা করতে যায় ইফাদ।সায়ান একপ্রকার বন্দী করে রেখেছে। ভালোবাসার বিভিন্নরুপ ইফাদ দেখেছে। খুব অল্প সময়ে দেখেছে। অতসীর জন্য সায়ানের পাগলামো,দিহানের জেদ, অতসীর বন্ধুত্ব কিংবা রাইমার আত্নত্যাগ। সব যেনো একেকটি জীবন্ত উদাহরণ।
অতসীর সাথে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো ইফাদ। একথা সে কথা কত কথা হলো। আফরিন -ইফাদের সম্পর্ক ঠিক করতে বেচারিকে বেশ ভুগিয়েছে। কিন্তু দিন শেষে অতসী সব সামলে আফরিন কে বাধ্য করেছিলো ফিরে আসতে। তাই হয়তো ইফাদ আফরিন এক হয়েছে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে
রাইমা, দিহানের সম্পর্কে বিনা দ্বিধায় জিজ্ঞেস করে অতসী।
ইফাদ সবটা বলে।বিয়ের কারণ,দিহানের নেশায় করা ভুল, সব বলে। অতসী চুপচাপ শুধু শুনছিলো। রাইমা কেনো এসব বলেনি? কিছু ধারণা সে করেছিলো কিন্তু এতটা?
ইফাদের কথা শুনে অতসী দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এছাড়া আর কি বা করার আছে।
তবে হ্যাঁ! এটা বিশ্বাস আছে রাইমা ঠিক দিহানের মনে জায়গা করে নিতে পারবে।
.
.
দ্রুত ইমিগ্রেশন শেষ করে ফ্লাইটে চেকইন করলো রেদোয়ান। লাস্ট মোমেন্টে আজ দেশে ফিরছে সে৷ অনেক প্রশ্নের জবাব চাই, ভালোবাসার প্রত্যাখ্যান করেছিলো তার জন্য মাফ চাই। কিন্তু আদৌ কি পাবে?
নাহ্ পারতে তো হবেই।প্রায় সতেরো মাস পর আজ তার একটু দেখা পেয়েছে। মেয়েটা উধাও হয়ে গিয়েছিলো। ফিরিয়ে দিবে তো? দিক না! কিন্তু একবার তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। ভালোবাসার দাবী নিয়ে না, ক্ষমার জন্য। নিজের সন্তান অস্বীকার করার পাপ থেকে মুক্তির জন্য।
কিন্তু এ পথ যে কখন শেষ হবে.........
.
.
ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করলো সায়ান৷ আজ বড্ড বেশি দেরি করে ফেলেছে। অতসী প্রায় ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। সায়ান এসে টেনেটুনে খাইয়ে দিতেই আবার ঘুম। রাতের খাবার সায়ানের হাতে খাওয়ার অভ্যেস হয়ে গিয়েছে অতসীর।
ফ্রেশ হয়ে এসে অতসীর পাশে শুয়ে একহাতে নিজের দিকে টেনে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় সায়ান।
.
.
কারো হালকা চিৎকারে ঘুম ভাংলো অতসীর। চোখ বুঝেই নিজেকে আবিষ্কার করলো সায়ানের বুকে।
আধোঘুমে চোখ মেলে তাকাতেই একজন কে দেখতে পেলো অতসী৷ হঠাৎ গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। বুকের মাঝখানে কেমন জ্বালাপোড়ার অনুভূতি।
বাম হাতে সায়ানের বুকের কাছটার টিশার্ট খামছে ধরে অতসী।
অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো
-অনা আপু! তুই এখানে? .....
.
চলবে
#ছবিয়াল_জুবায়েদ
0 Comments:
Post a Comment