#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৪১
ধীরপায়ে রেদোয়ান এগিয়ে যাচ্ছিলো। অনামিকা কে দেখে দুচোখ উপচে পানি আসছে।মেয়েটা কি হতে কি হয়েছে!
আধোঘুমে পিটপিট করে তাকিয়ে আছে অনামিকা।
রেদোয়ানের প্রথম স্পর্শে হাত সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। রেদোয়ান ধীরেধীরে দুহাতে মাঝে অনামিকার ডান হাত আবদ্ধ করে নেয়।
কপালে হাত ঠেকিয়ে চুপচাপ হাটুতে ভর দিয়ে বসে আছে।
অনামিকা চোখ মুখ শক্ত করে আছে।
বাকী সবার দৃষ্টি তখন ওদের দিকে। হাজারো কথার ঝট আজকে খুলছে। আচ্ছা আজকে কি রহস্য সমাধান দিবস?
কিছুটা সময় নিয়ে রেদোয়ান বলতে শুরু করে
"আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে আমি প্রথম অনামিকা কে দেখেছিলাম। একলা একটা মেয়ে ক্যাম্পাসের পুকুরের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে। বইয়ের পাতায় ডুব দিয়ে সে যেনো অন্য এক জগতে। চারপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে কোন খেয়াল নেই৷ হঠাৎ মেঘ ডাকলো! বৃষ্টি শুরু হলো। ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে সে হাটছিলো লাইব্রেরীর দিকে৷ যতক্ষণ লাইব্রেরী খোলা ছিলো ততক্ষণ সে বসে এক মনে পড়ছিলো। বিকেলের দিকে চলে যাচ্ছিলো আমার মন খারাপ হলো কারণ সেই দুপুরের সময় থেকে আমার চোখের প্রতি পলকে যে মেয়েটা ছিলো।
তারপর প্রায় মেয়েটা দেখতাম। খুঁজে বেড়াতাম। কারণ জানি না।হঠাৎ হঠাৎ পেয়েও যেতাম। পুরো ক্যাম্পাস যখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতো! তখন মেয়েটা বই নিয়ে চুপচাপ এক কোণে বসে পড়তো।একদিন নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করেছিলাম, মেয়েটার কি কোন বন্ধুই নেই?
হ্যাঁ! মেয়েটার কোন ফ্রেন্ড ছিলো না। একদম একা। তবে ভবঘুরে বাচ্চাদের প্রতি বেশ টান। নিজে তাদের জন্য এটা ওটা কিনতো।কেউ সাহায্য চাইলে ফিরিয়ে দিতো না৷
একদিন অনুভব হলো আমি তো ভালোবাসি! হ্যাঁ! এই মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছি। যেদিন ভালোবাসার দাবী নিয়ে সামনে যাই সেদিন প্রত্যাখ্যান করে।
সে বলেছিলো
" পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কিছুই নেই। সব সাময়িক আকর্ষণ কিংবা দায়িত্ব। "
তবুও আমি তো পিছিয়ে থাকিনি। প্রতিনিয়ত দাবী নিয়ে সামনে দাড়িয়েছিলাম। একদিন সে বললো
"আপনি কি জানেন?আমি অনাথ! আমার বাবা-মা কেউ নেই? এমন মেয়েকে করুনা করা যায় ভালোবাসা যায় না।"
"তোমার মা-বাবা নেই এটা তোমার দোষ না। আর ভালোবাসতে হলে এসবের প্রয়োজন নেই। "
" দুদিন পর এই আমি আপনার কাছে অসহ্য হয়ে উঠবো! তখন?"
"আমি ভালোবেসে আগলে রাখবো।"
"আমাকে ভালোবেসে আপনি কি করতে পারবেন?"
"তুমি যা বলবে তাই!"
"বিসর্জন দিতে পারবেন আপনার ওই বুকের সৌন্দর্য?"
"জান দিতে পারবো এটা আর কি?"
"পুরুষ মানুষের গোপন সৌন্দর্য তার বুকের ঘন লোম। কোন নারীর জন্য এটা বির্সজন দিয়েন না। আমার থেকে ভালো মেয়ে পাবেন।আমার জন্য নিজের সময় নষ্ট করবেন না। ভালো থাকবেন।"
দুদিন পর যখন সে আমাকে দেখলো অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। হয়তো ভাবতে পারেনি আমি এমন করবো। কিছুক্ষণ পর আমার বুকে হামলে পড়ে কাঁদতে থাকে। সেদিনের কান্নায় কিছু তো ছিলো! হয়তো একটু ভালোবাসা পাওয়ার পূর্ণতা!
শুরু হয় আমদের পথ চলা৷ অতসী, মামি,মামা সম্পর্কে সব বলতো, প্রচন্ড কান্না করতো যেদিন অতসীকে ওর জন্য অপমানিত হতে হতো। বারবার প্রতিজ্ঞা করতো অতসীকে কিছুই বলবে না। মাফ চাইবে বার বার ভুলেও যেতো।
এভাবেই চলছিলো। একদিন আমার মাথায় ভূত চাপলো ! বিয়ে করার ভূত। অনামিকা প্রস্তাব পাঠাতে বললে আমি বলেছিলাম পরে পাঠাবো তো। আগে আমরা নিজেরা বিয়ে করে নিবো। এতে ফ্যামিলি না মানলেও আলাদা করতে পারবে না।
প্রথমে সে রাজি হয়নি। কিন্তু পরে বাধ্য হয়। হুজুর আমাদের কালেমা পড়ে বিয়ে দেয়। তিন কবুলে বিয়ে!
তারপর বেশ চলছিলো। আমার তখন অনামিকা কে শারিরীক ভাবে চাই ! খুব চাই। কিন্তু অনামিকার এবারো রাজি না। পরে যখন বলি আমার হক আছে সে ফেরায় না।
সেরাতের পর থেকে অনীহা আসতে শুরু করে। তখন ওর কথা,কান্না অসহ্য লাগতো। ইগ্নোর করতাম।
কয়েকদিন পর যেমন মুখে মুখে কবুল বলে বিয়ে করেছিলাম ঠিক তেমন তালাক বলে সব শেষ করে দেই। আমি জানতাম অনামিকার কেউ নেই। ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
কিন্তু বোকা মেয়েটা কি করলো জানো? বোকা মেয়েটা ক্যাম্পাসে ছেলেদের সাথে মিশতে শুরু করলো।বন্ধু বানাতে লাগলো। হয়তো মনে করেছিলো আমি জেলাস হয়ে ফিরে আসবো। কিন্তু তার প্রতি আমার একরাশ অনীহা! আমাকে ফিরে আসতে দেয়নি। কয়েকদিন পর কল দিয়ে সে বলল সে কন্সিভ করেছে। আমি সহজ ভাবে এবোরশন করাতে বললাম। সে প্রতিউত্তরে বলেছিলো
"আমি এবোরশন করাবো না।নিজে এতটুক যোগ্যতা রাখি নিজের সন্তান কে আগলে রাখার,মানুষ করার। ভয় নেই! কোনদিন সামনে এসে দাঁড়াবে না, অধিকারের দাবী নিয়ে। "
তারপর আর তার সাথে কথা হয়নি। পরে একদিন জানতে পারলাম বাচ্চা কে এবোরশন করিয়েছে। মেজাজ গরম হয়ে যায় কিন্তু পরে জানতে পারি অক্সিজেনের অভাবে আমাদের সন্তান ১৩ সপ্তাহে মারা যায়। কারণ আমি, আমার দেওয়া টেনশন হয়তো নিতে পারেনি তাইতো এমন হলো।
তারপর অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। তারপর সেদিন আফরিন যখন ফেসবুকে অনামিকার সাথে ছবি আপ্লোড করে তখন দ্রুত দেশে ফিরে এসেছি।আফরিনের থেকে সব জেনে নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি।
আমি জানি আমি খুব খারাপ। আমার উচিৎ ছিলো যখন অনামিকা শুরুর দিকে অতসী বা মা নিয়ে পাগলামো করতো সে বিষয় সিরিয়াসলি নেওয়া।কারণ ওর ব্যবহার মাঝেমধ্যে উগ্র হয়ে উঠতো যা একজন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আমি আমলে নেইনি। ভেবেছিলাম হয়তো স্বাভাবিক কিন্তু এসব মোটেও স্বাভাবিক ছিলো না।
রেদোয়ানের কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে আছে। ঠিক সে মুহূর্তে আফরিন অন্য এক কথা বলে বসলো।
"আমরা সবাই এটা জানি সায়ানভাই অতসী কে ভালোবাসে। বিয়েটা কি আজ তাও ক্লিয়ার হলো। তাই বলছিলাম তাদের ডিভোর্স হয়ে যাওয়াই ভালো। অনামিকা আপুকে আমাদের মেনে নিতে সমস্যা নেই৷ তাই বলবো যত দ্রুত ডিভোর্স করানো যায় তাই দেখা উচিৎ।
আফরিনের কথায় এবার রাইমা ফুসে উঠলো। কিছুটা চিৎকার করেই বললো
" কেনো গো? মেয়েটাকে তোমাদের মানুষ মনে হয় না? যার যখন ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করবে? অনামিকা আপু যতক্ষণ পর্যন্ত নিজে থেকে সায়ান ভাইকে ডিভোর্স না দিবে সে পর্যন্ত ডিভোর্স এর কথাও কেউ মুখে আনতে পারবেন না। যখন ইচ্ছা হবে মাথায় নিয়ে নাঁচবেন ইচ্ছা হবে দূরে ফেলে দিবেন তা হচ্ছে না। দেখি কে কি করে?"
চলবে
#সন্দেহ নিয়ে কিছু কথা৷
অনেকেই জানেন "সন্দেহ" ২০২০ সালের প্রকাশিতব্য উপন্যাস। ফেসবুকে প্রকাশিত #সন্দেহ গল্পটার সাথে বইয়ের গল্পের ২০-২৫% মিল পাবেন। এর বেশি নয়। কারণ গল্পটার প্রথম লাইন থেকে মাঝের থিমের অনেক অংশ কিংবা শেষ অংশ অনেক গল্পে কপি হয়েছে। তাই শুরু থেকে অনেক সংযোজন-বিয়োজন হয়েই আসছে "" সন্দেহ""
যেখানে ইরার ষড়যন্ত্রের সকল প্রমাণ, কি হয়েছিলো সেরাতে? অনু নিজেই বা কোথায়? কিংবা কি হবে যখন আহামাদ কে নিয়ে অনু ফিরে আসে চার বছর পর!
সাম্য না নিলয়? অনুর ভবিষ্যৎ কি? আহামাদের দুষ্টমি, বাবার জন্য হাহাকার সব নিয়েই আসছে।
সারা বাংলাদেশে বই পেয়ে যাবেন। যারা বই মেলায় আসবে না তারা অনলাইন থেকে নিতে পারবেন। অবশ্যই প্রি-অর্ডার করতে পারবেন। এবং যারা দেশের বাহিরে থাকেন তারাও পেয়ে যাবেন। কাছের মানুষকে সংগ্রহ করে নিতে বলতেই পারেন। ইন্ডিয়াতে বই পৌঁছাতে সময় লাগে, একটু অপেক্ষা করলেই আপনাদের দেশের লাইব্রেরি থেকে নিতে পারবেন।
খন্ডাংশ দেখেই বিচার করবেন না। কারণ শুরুর দিকের অনেক লিখা দেখেও মনে হচ্ছে এগুলো হয়তো অনু চলে যাওয়ার পরের অংশ। এমন কিন্তু নয়। শুরু থেকেই শুরু হয়ে বইতে আসছে "" সন্দেহ"
#ছবিয়ালঃসাদিয়া
0 Comments:
Post a Comment