গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ২৪

 #দায়িত্বে_সংসার 

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ ২৪ 

.

.

নিজের প্রতিটা মুহুর্ত অতসী অনামিকা কে দিচ্ছে। পুরো দায়িত্ব যেনো নিজের। খুব যত্ন করে অনামিকার সব কাজ করে। সারাদিন বোনের সাথে থাকবে, ননস্টপ কথা বলেই যাবে। ইফাদ বলেছে অনামিকা সব শুনতে পাচ্ছে।ফিল করছে কিন্তু ব্রেনের কিছু নার্ভ ঠিকমতো রেসপন্স করছে না। যতটা পারা যায় অনামিকাকে বাঁচার তাগিদে দিতে। 

.

সায়ান অফিসে যাওয়ার পর থেকে ঘুমানোর আগ অবধি অতসীর সব যেনো অনামিকা। মুভি দেখছে, কথা বলছে আবার হাতের কাজ ওর পাশে বসেই সেরে নিচ্ছে। 

এইতো সেদিন সাকিব আল হাসান আর শিশিরের কথা বলাতে অনামিকা মনে হয় হাসলো। মানুষ হাসলে তো মানুষের চোখ হাসে। অতসীর জানে অনামিকা হেসেছিলো। 

কারণ সাকিব হলো অনামিকার ক্রাশ। শিশির কে একদম সহ্য করতে পারে না।অতসী মাঝেমধ্যে শাকিবের বিভিন্ন ইন্টারভিউ পড়ে শোনায় অনামিকা কে। আজকে একটা ইন্টারভিউ পড়ে শুনিয়েছে। যেখানে সাকিব শিশিরের প্রথম দেখার কথা বলেছে আবার শিশির না কি ক্রিকেট মোটেও পছন্দ করতো না। শুরুর দিকে বলতো তুমি আস্তে দৌড়াও কেনো? জোড়ে বল ফেলো না কেনো?এভাবে কেনো ব্যাট ধরেছো সহ অনেক কথা। অতসী পড়ার সময় এমন ভাবে পড়ছিলো যা শুনে যে কেউ হাসবে হয়তো তাই অনামিকাও হেসেছে। 

.

.

অতসীর প্রতি সায়ানের অত্যাচার  ধীরেধীরে বেড়েই চলেছে। অতসী যতই চাচ্ছে সায়ানের থেকে দূরে যেতে সায়ান যেনো আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে ফেলছে।

প্রতিদিন অফিস যাওয়ার সময় তার বায়না। টাই বেধে দাও,ঘড়ি পড়িয়ে দাও আরো কত কিছু। 

.

অতসী যদি না করে তখন বিখ্যাত ডায়লগ দেয় 

-------আজ যদি আমার অনামিকা সুস্থ থাকতো!  তাহলে সব করে দিতো। 

.

নাক ফুলিয়ে অতসী যখন সায়ান কে টাই পড়িয়ে দেয় সায়ানের দুই হাত খেলা করে অতসীর কোমরে। 

কখনো গোজা আঁচল খুলে দিচ্ছে আবার বা কখনো ফাজলামো করে চিমটি কাটছে। এসব অতসীকে হেনস্তা করার জন্য সায়ান বেশ ভালো ভাবেই পারে।

.

.

কী হচ্ছে আমার এসব!

যেন তুমি ছাড়া জগতে কোনও মানুষ নেই, কোনও কবি নেই, কোনও পুরুষ নেই, কোনও

প্রেমিক নেই, কোনও হৃদয় নেই!

আমার বুঝি খুব মন বসছে সংসারকাজে?

বুঝি মন বসছে লেখায় পড়ায়?

আমার বুঝি ইচ্ছে হচ্ছে হাজারটা পড়ে থাকা কাজগুলোর দিকে তাকাতে?

সভা সমিতিতে যেতে?

অনেক হয়েছে ওসব, এবার অন্য কিছু হোক,

অন্য কিছুতে মন পড়ে থাক, অন্য কিছু অমল আনন্দ দিক।

মন নিয়েই যত ঝামেলা আসলে, মন কোনও একটা জায়গায় পড়ে রইলো তো পড়েই রইল।

মনটাকে নিয়ে অন্য কোথাও বসন্তের রঙের মত যে ছিটিয়ে দেব, তা হয় না।

সবারই হয়ত সবকিছু হয় না, আমার যা হয় না তা হয় না।

(তসলিমা নাসরিন)

.


.

রাতের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কবিতাটা আবৃত্তি করে জোড়ে শ্বাস নিলো অতসী। এই একটা জিনিস প্রচন্ড প্রশান্তি এনে দেয়।

প্রেমের বিয়েও বিচ্ছেদ হয়েছিলো রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এবং তসলিমা নাসরিনের। একসময় ছেড়ে চলে যায় তসলিমা কারণ রুদ্র বাবুর পরকিয়া কিন্তু বিচ্ছেদের চার বছরের মাথায় রুদ্র বাবু পৃথিবীর ত্যাগ করে। হয়তো তসলিমা নাসরিনের বিচ্ছেদ সইতে পারেনি তাইতো অতিরিক্ত মাদক সেবন প্রাণ নিয়ে নিলো। 

দুজনের কবিতায় কষ্টের ছাপ গুলো বেশ ফুটে ওঠে তাইতো অতসীর এত ভালোলাগে। 

.

.

নিস্তব্ধতার মাঝে কখন যে সায়ান এসে পাশে দাঁড়িয়েছে অতসী বুঝেনি। নীরবতা ভেঙে সায়ান বললো

.

-দিহান কে মনে পড়ছে?  

.

হঠাৎ কন্ঠস্বর শুনে অতসী হচকচিয়ে যায়। দুহাতে সায়ানের বাম হাত খামচে ধরে। বেশ খানিকটা ছিলে গেছে। 

সায়ান রেগে যাওয়ার বদলে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো 

.

-মিসেস মাহমুদ!  আমার অফিস আছে তো। যে গরম পড়েছে!  শার্টের হাতা ফোল্ড করে রাখি এই দাগ যদি কেউ দেখে মান সম্মান থাকবে না। বলবে বউ না কি রাক্ষসী!  

.

গা দুলিয়ে হাসছে সায়ান। অতসী চুপচাপ এসে দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কারণ সায়ান এখন মরীচিকা। মরীচিকা কে বাস্তব ভেবে আবেগ দিয়ে কাছে টেনে নেওয়া যায় না। 

.

.

দিনগুলো বেশ ভালোই যাচ্ছিলো। হঠাৎ একদিন অতসীর মা এসে হাজির। মা কে দেখে অতসী হাসবে না কাঁদবে!  অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে বসে ছিলো কিন্তু হঠাৎ মা বললো দ্রুত রেডি হয়ে নিতে। 

নিজের হাতে মেয়ে কে সাজিয়ে দিচ্ছে। লাল পাড় কালো শাড়ি, চোখে হালকা কাজল, চুল গুলো খোলা। 

মা কে জিজ্ঞেস করেও লাভ হচ্ছে না তবে এটা নিশ্চিত সায়ানের সাথে অতসীর মায়ের বেশ ভাব। দুজনের প্রতিদিন কথা হয়৷ 

সন্ধ্যে হতেই ইফাদ চলে এলো। অতসী কে রেগুলার চেকাপ করে নিচ্ছে।মেয়ের শরীরে ভিটামিনের খুব অভাব। 

তখন অতসী জানতে পারলো দুইদিনের জন্য গ্রামে যাচ্ছে কোন একটা অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র সায়ান-অতসী। তাইতো মা এসেছে অনামিকা কে দেখাশোনা করার জন্য। 

অতসী বেকে বসলো না সে যাবে না। এদিকে সায়ান পুরো দিন অফিস করে এসে ক্লান্ত হয়ে অতসীর ড্রামা দেখছে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে  একই ড্রামা আবার।  

যতই ইফাদ বুঝাচ্ছে এটা সায়ানের জন্য দরকার কারণ বয়স্ক মহিলা সায়ানের বাবার একমাত্র ফুপি। সায়ানের বউয়ের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু অতসীর এক কথা। 

অনামিকা আপুকে নিয়ে যাক না। আমি যাবো না। 

অতসীর শাড়ির সাথে ম্যাচ করে সায়ান ব্ল্যাক শার্ট , অফ হোয়াইট প্যান্ট পড়েছে সায়ান। পায়ের জুতো পড়তে পড়তে অতসী কে দেখে নিলো। 

হুট করে এসে ওকে কাধে তুলে নিয়েই সায়ান বেরিয়ে যাচ্ছে। 

ঘটনার আকস্মিকতায় ইফাদ, অতসীর মা অবাক হয়ে গেছে অতসী তো চুপ। 

কেনো জানি এই মানুষ কে বড্ড ভয় লাগে। 

.

অতসী কে সায়ান গাড়ির ভিতর বসিয়ে দিয়ে চোখ মুখ লাল করে বললো 

.

- তোমার সাথেই আমার বারবার কেনো হারতে হয় বলবে? 

তোমার জন্য আমার বুক ফেটে বারবার চৌচির কেনো হয় সেটাও বলবে..... 

কেনো আমি সইতে পারি না!  কেনো অন্যদের জন্য এই ফিলিংসটা হয় না আমার?. 

কেনো আমার দীর্ঘশ্বাসের কারণ টাও তোমাকে হতে হবে?  

.

.

চলবে

0 Comments:

Post a Comment