গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ৩২

 #দায়িত্বের_সংসার

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ৩২

.

.

কিছুক্ষণ আগে একজন নার্স এসে রাইমার রিপোর্ট দিয়ে গিয়েছে। 

রিপোর্ট নেগেটিভ।নরমাল ফুড পয়েজেনিং। শুধু শুধু দিহান এত চিন্তা করছিলো। হয়তো মনের কোণে এখনো আশার  প্রদীপ ক্ষীণ আলো দিচ্ছে। অতসী ফিরবে তাই হয়তো বাবা হওয়ার সুখের খবর থেকেও নিজেকে বঞ্চিত রাখতে চাইছে। 

.

.

খুব সাবধানে হাতের চুড়ি সহ বালা জোড়া খুলে নিলো রাইমা। হাত ড্রেসিং করছে। ইফাদ। অতসীর মা চুপচাপ বসে আছে। মেয়ের জীবনের থেকে অতীত বড় নয়। 

হ্যাঁ! আজ সে বলবে কিন্তু অতসীর ট্রিটমেন্ট বেশি প্রয়োজন ছিলো। 

সায়ানের বুকেই মাথা এলিয়ে আছে অতসী। জ্ঞান ফিরেছে, কিন্তু সায়ান ছাড়ে নি। 

অদ্ভুত!  দুই বন্ধুর কাছে এই মেয়েটা যেনো একটা পুতুল মাত্র। 

দিহান অতসীকে সায়ানের কাছে থাকতে দিতে নারাজ অথচ সায়ানের অধিকারের কাছে দিহান নিরুপায়। 

.

জ্ঞান ফিরলে সায়ান অতসীর সামনে জুসের গ্লাস এগিয়ে দিলে দিহান বাধা দিয়ে বলে 

-লেডি কখনো জুস খায় না৷ সি জাস্ট হেইট ইট। স্ত্রী বলিস আর এটা জানিস না?  

.

কথা শেষ করেই দিহান অতসীর দিকে ডাবের পানি এগিয়ে দেয়। এ পর্যায়ে সায়ান বলে 

-তুই কেমন প্রেমিক পুরুষ?  প্রাক্তন প্রেমিকা  ডাবের পানি খায় না!  তুই এটাও জানিস না?  

.

ইফাদের মনে হচ্ছে দুই শালার মাথা ফাটিয়ে দিতে। শুরু করেছে টা কি?  ন্যাকামো হচ্ছে। রাইমার দিকে তাকালো ইফাদ।  মেয়েটার মনে না জানি কি চলছে। অদ্ভুত!  রাইমা হাসছে?  এ কেমন মেয়েরে বাবা!  

স্বামী অন্য মেয়ের জন্য এতটা আবেগী অথচ এই মেয়ে মজা নিচ্ছে?  

সব কয়টা পাগল।এদের মাঝে আমি থাকলে আমিও পাগল হয়ে যাবো। 

এসব মনে মনে ভাবছিলো ইফাদ। 

হাতের গ্লাস এগিয়ে দিলো অতসী দিকে। অতসী তিন শ্বাসে পুরো এক গ্লাস গ্লুকোজ মেশানো পানি খেয়ে নিলো।

.

অতসী একটু সুস্থ। সায়ানের বুকের সাথে লেগে আছে একদম।সায়ানের পাশে বসেছে রাইমা। 

অপর পাশে দিহান বসেছে, সাথে ইফাদ। অতসীর মা আলাদা বসেছে। 

কিছুটা শ্বাস নিয়ে অতসীর মা  বলা শুরু করলো........

.

 

.

বছর দেড়েক আগের কথা৷ অনামিকা, অতসী কে নিয়ে আমি আমার বাবার বাড়ি গিয়েছিলাম। 

একদিন বিকেলবেলা এক ভদ্রমহিলা আসে৷ সম্পর্কে আমার চাচাতো বোনের ননদ। বেশ মার্জিত ভাষায় কথা বলছিলেন,পোশাক, ব্যবহার,আচরণ সব অমায়িক । 

উনি উনার ছেলের জন্য আমার মেয়েকে দেখতে এসেছেন। প্রথমে অতসী মনে করলেও পরে উনি বলেন আমার বড় মেয়ে অনামিকার জন্য এসেছে। সবাই তো ওদের দু বোন বলেই জানে। 

অনামিকাকে দেখে বেশ পছন্দ হয়। 

ছেলে কি করে জিজ্ঞেস করলে উনি বলেছিলেন 

.

-হালাল পথে যা ইনকাম হয় আরকি। ছোট একটা বিজনেস আছে। বাবা ছেলে মিলে তাই দেখাশুনা করে। 

ছেলে সন্তান একটাই আমার। আমাদের যা আছে সব ওর। 

.

.

কিছুক্ষণ পর অনামিকা বেশ তেতে উঠে। কারণ ছোট ব্যবসায়ী হয়ে অনামিকা কে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সাহস হয় কি করে?  অনামিকা রুপে রূপবতী, গুণে গুণবতী। অবশ্যই অনেক ভালো ফ্যামিলি পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। সাহস কি করে হয় এই মহিলার এসব বলার?  

.

এমন অনেক কটু কথা সেদিন অনামিকা ভদ্র মহিলা কে শুনিয়েছিলো। ভদ্র মহিলা চুপচাপ শুনে শুধু উত্তর দিয়েছিলো 

-তুমি একবার আমার ছেলের সাথে যোগাযোগ করে দেখো!  

.

অনামিকা কোন কথা না বলে দ্রুত পা চালিয়ে চলে যায়। 

.

ভদ্রমহিলা এক ঘর মানুষের সামনে অপমানিত হয়। হয়তো উনি  সেদিন মনে প্রচন্ড আঘাত নিয়ে বেরিয়েছিলো। 

.

.

এটুক বলে থামলো অতসীর মা। অতসী সায়ানের বুকেই মাথা রেখে শুনছিলো সব। হঠাৎ মনে হচ্ছে মি.মাহমুদ এর হৃদ স্পন্দন অনেকটা বেড়ে গেছে। 

ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে, সাথে মাথা ফেটে যাচ্ছে এমন অনুভূতি হওয়া স্বত্বেও সায়ানের হাতে আলতোভাবে হাত রাখলো অতসী৷ সায়ান নিজের মধ্যেই ডুবে ছিলো। অতসীর স্পর্শে নিজেকে সামলে নিলো। 

অতসীর দুহাত নিজের হাতে বদ্ধ করে জিজ্ঞেস করলো 

.

-এটা কি করে সম্ভব? মা কে তো আমি অতসীকে দেখিয়েছিলাম। ইফাদ সেদিন আমার সাথে ছিলো। তাহলে মা কেনো অনামিকার  সাথে বিয়ের কথা বলতে গেলো?

.

সায়ানের কথা শেষ হওয়ার আগে ইফাদ বললো 

-তাহলে আন্টি অতসীর কথা বলতো?  মেয়ের বোন অনেক ভালো!  তুই মেয়ের বোনকে যদি বিয়ে করতে চাস তাহলে এনে দিবো?  

.

অতসী ধীর গলায় বলে 

.

-আমি জানতাম না উনি আপনার মা! সেদিন নদীর পাড়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম আন্টিটা হাটতে পারছে না।শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাই দ্রুত উনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই ঈশারায় ইনহেলার বের করে দিতে বলে।উনার অবস্থা সত্যি খারাপ ছিলো, উনি নিজ থেকে বের করতে পারছিলেন না। দ্রুত স্প্রে দেওয়ার পর বুঝলাম এটা হার্ট প্যাশেন্টদের দেওয়া হয়। 

কিছুক্ষণ পর উনি কিছুটা সুস্থ হলে পাশের বাড়িতে নিয়ে পানি খাইয়ে, হাত মুখে পানি দিয়ে দিচ্ছিলাম। তখন উনি আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করে। আমি জানতাম না এত কিছু ততক্ষণে বাড়িতে এত কিছু হয়ে গেছে।এটাই ছিলো আন্টির সাথে আমার প্রথম দেখা। দ্বিতীয় বার দেখা হয় সরাসরি আপনাদের বিয়েতে। 

.

.

দিহান এতক্ষণ চুপচাপ ছিলো। এক সময় বলে উঠলো 

- এত কথার মাঝেও কথা কিন্তু সেই থেকেই গেলো। অনামিকার এত সমস্যা থাকলে কয়েকদিন পর কেনো সে সায়ানের সাথে দেখা করলো এবং, এবং, এবং কেনো সব দোষ অতসী কে দিলো?  

এসবের উত্তর কিন্তু শুধু অনামিকা নিজে দিতে পারবে। তাছাড়া অন্য কেউ নয়। এজন্য হলেও অনামিকা কে আমার সুস্থ চাই ইফাদ!  এই ধোয়াশার অন্ত একমাত্র অনামিকার সুস্থতায় কাটবে। 

.

চলবে।

.

#ছবিয়াল_তানজীল

0 Comments:

Post a Comment