গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ৩৮

 #দায়িত্বের_সংসার 

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ৩৮ 

.

.

অতসী খুব দ্রুত উঠতে চেষ্টা করেও পারে না। এদিকে অনামিকা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। পড়নে হালকা আকাশী রঙের শাড়ি। 

চুলগুলো বড্ড অগোছালো। শরীর বেশ ভালোই লাগছে। স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে আগের থেকে একটু। 

অতসী যতই উঠতে চাইছে, সায়ান আষ্টেপৃষ্টে আবদ্ধ করে নিচ্ছে বারবার। 

অতসীর ডাক সায়ান গ্রাহ্যেই করছে না। 

এদিকে সায়ান ঘুমের মাঝে ভাবছে হয়তো আজান দিয়েছে তাই অতসী উঠতে চাইছে।

সায়ান অতসীকে শক্ত করে দুহাতে আকড়ে ধরে টেনে শুইয়ে দিয়ে অতসীর কাধে মাথা রাখলো। 

অনামিকার চোখের সামনে সব স্পষ্টত ঘটছে। 

এদিকে অতসীর ছটফটানো বেড়েই চলেছে। 

এবার সায়ান চোখ খুলে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো 

.

-এমন করছো কেনো? বাহিরে এখনো আলো ফোটেনি তো.... 

.

কাঁপাকাঁপা কন্ঠে অতসী বললো 

-আপু!  

-আপু ঘুমে আছে...  প্লিজ ঘুমাতে দাও। 

.

.

- না সায়ান!  আমি ঘুমে নেই। ভাগ্যিস আমার ঘুম ভেঙে ছিলো!  না হলে তো..... 

.

.

অনামিকার কন্ঠস্বরে সায়ান উঠে বসে। দরজার দিকে তাকাতেই অনামিকা কে দেখতে পায়। এক হাতে দরজায় ভর দিয়ে হেলানো ভাবে দাঁড়িয়ে আছে সে। 

কিন্তু এই দরজা তো.....

.

নিজেকেই মনে মনে গালি দিলো সায়ান। 

ফোনে কথা বলার সময় এতটা ব্যস্ত ছিলো যে দরজা ঠিক মতো লাগিয়েছে কি না খেয়াল করেনি। 

সায়ানের চিন্তার ঘোর কাটলো যখন অতসী দ্রুত নেমে গিয়ে অনামিকার দুহাতে আকড়ে ধরে বলতে শুরু করেছে 

.

-আপু!  তুই ভুল বুঝছিস!  আসলে 

.

অনামিকা অতসীকে থামিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করে... 

-ভুল? অতসী নিজের স্বামীকে বোনের বিছানায় দেখে আমি ভুল ভাবছি? না কি আমার বোনকে আমার স্বামীর বুকে দেখেছি বলে ভুল করেছি?  

তুই না চলে গিয়েছিলি?  কখন আসলি? 

-আপু!   প্লিজ শান্ত হও। চিৎকার করো না। তোমার স্বাস্থ্যের জন্য....

- চিৎকার?লজ্জা করছে না তোর?  আমার সংসার এভাবে শেষ করে দিতে?  আরে ও তো পুরুষ মানুষ!  চাহিদা থাকতেই পারে তাই বলে রাস্তার মেয়ের মতো সব বিলিয়ে দিলি? 

-আপু আমার কথা শোন!  

-বাবা ঠিক বলে তুই রাস্তার মেয়ে। আসলে তুই রাস্তার মেয়ে না তুই বাজারি মেয়ে। ছোট বেলা থেকে আমার সব কিছুই তোর চাই। তাই এভাবে আমার স্বামীকে কেড়ে নিলি? সমাজে কি পরিচয় দিবি নিজের?  সায়ানের রক্ষীতা বলে?  

.

অতসী এ পর্যায়ে অনামিকার পায়ে বসে পড়ে। পা ধরে মিনতির সুরে বলতে থাকে 

-আপু!  তুই যা বলবি আমি মাথা পেতে নেবো। কিন্তু এবার শান্ত হয়ে যাও। 

.

সায়ান এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার এগিয়ে এসে বললো 

.

-অতসী আমার স্ত্রী!  লিগ্যাল ওয়াইফ। আশা করি তুমি বুঝেছো..... 

-স্ত্রী?  মানে?  অতসী তোমার স্ত্রী হলে আমি কে সায়ান?  

-তুমি আমার প্রথম স্ত্রী। 

.

সায়ানের কথায় অনামিকা দরজা ঘেঁষে বসে পড়ে। 

কিছুক্ষণ চুপ থেকে খুব সহজ গলায় বললো 

.

- তোমরা দুজন আমাকে এভাবে ঠকাতে পারো না। সায়ান মাহমুদ!  তুমি অতসীকে ছাড়বে। এমনকি এখনি তালাক দিবে।

-সম্ভব নয়। (সহজ উত্তর সায়ানের) 

-সব সম্ভব। তুমি মুখে মুখে এখনি তিন তালাক না দিলে আমি কিছু করে বসবো 

.

অতসী চুপচাপ উঠে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছে বলে 

-আপু আমি চলে যাচ্ছি। প্লিজ তুই শান্ত হও। কোনদিন ফিরে আসবো না। আমার জন্য তুই অনেক হারিয়েছিস আর হারাতে হবে না। 

.

সায়ান অতসীর হাত খুব শক্ত করে ধরে। হাত ধরে টেনে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে অনামিকার মুখোমুখি দাড় করায়। 

.

-অনামিকা!  এটা তোমার জীবনের একটা সত্যি!  তুমি মানতে বাধ্য। তোমার যতটা অধিকার ঠিক ততটা অধিকার অতসীর। 

- আমি মানি না!  

কথা শেষ করার আগেই অনামিকা অতসীর হাত ধরে টান দিয়ে উল্টো ধাক্কা দেয় যার ফলে অতসী পাশে রাখা ল্যাম্পের স্ট্যান্ডের কাছে ফ্লোরে ধপ করে পড়ে যায়। এদিকে অনামিকা নিজেও সেন্সলেস হয়ে সায়ানের পায়ে লুটিয়ে পড়ে। 

.

.

রাত প্রায় ২.২৩ 

.

দিহান,ইফাদ চলে এসেছে। অনামিকার ব্লাড প্রেশার প্রায় ১৮০ /১৩০  যেখানে নরমাল ১২০/৮০ । অনামিকার মাইনর এট্যাক হয়নি এটাই বেশি। এত দ্রুত ব্রেন হয়তো নিতে পারছে না। কিন্তু যদি বেশি জোর দেওয়া হয় অনামিকা মারা অবধি যেতে পারে। 

.

ইফাদ বেশ রেগে আছে। এতটা কেয়ারলেস সায়ান কিভাবে হতে পারলো? অনামিকার লাইফ রিস্ক?  হ্যাঁ! মেয়েটা যা করেছে হয়তো ঠিক না। কিন্তু সত্যতা এখনো প্রমাণ হয়নি। তাছাড়া কারো লাইফ নিয়ে এমন রিস্ক নেওয়ার অধিকার কারো নেই। 

কিন্তু দিহানের দৃষ্টি অতসীতে স্থির। মেয়েটা অনবরত কাঁপছে। দরজার হাতল ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। 

দিহানের প্রচন্ড ইচ্ছে করছে অতসীর কাছে এগিয়ে গিয়ে শক্ত করে দুহাত ধরতে। সাহস দিতে 

-লেডি!  আমার লেডি লাক তুমি চিন্তা করো না। আমি তো আছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। 

.

কিন্তু আফসোস আজ দুহাত ধরার অধিকার নেই। না আছে সামনে দাঁড়ানো কোন যোগ্যতা। জেদ এতটা কেড়ে নেবে জানলে দিহান হয়তো জীবন থেকে জেদ শব্দ মুছে ফেলতো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সায়ানের দিকে আগালো দিহান। 

মাঝেমধ্যে পুরুষ মানুষের এমন অনেক কিছুই মেনে নিতে হয় যার কারণে তার হৃদয়ে অনবরত রক্তক্ষরণ হতে থাকে কিন্তু তবুও মেনে নিতে হয়। কারণ পুরুষ জাতি এমন এক জাতি তাদের ভিতরে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাক তবুও তাদের চেহারায় যেনো সামান্য আঁচ না আসে। 

.

.

অতসী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। 

নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। 

কেনো সেদিন সে চলে গেলো না?  বারবার কেনো সবার সুখের পথে বিষাদের রুপ নিয়ে আসে?  

বাবা হয়তো ঠিক বলে

-আমি মেয়েটাই খারাপ। মন্দ ভাগ্য নিয়ে এসেছি সবার জন্য। আচ্ছা?  আমার কি দোষ?  আমি তো বলেছিলাম না আমাকে মি.মাহমুদের সাথে বিয়ে দিতে। জোর করে কেনো আমাকে নিয়েই এসব হলো। বাড়ির ভাঙা কুলোটা ব্যবহার হয় সব আবর্জনা পরিষ্কারে। কাজ শেষে ফেলে রাখা হয় কোন একটা কোণায়। আজকে নিজেকে বড্ড তেমন মনে হচ্ছে। 


.

ধীরেধীরে সিড়ি ভেঙে নিচে নেমে এলো অতসী। বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেটের কাছে আসতেই গার্ডস গুলো বাধা দিলো। পায়েও যেনো শক্তি নেই। তাইতো অতসী গেটের পাশটায় ঠায় বসে আছে। 

.

একটা মেয়ে!  কোথায় যাবে, কি করবে, কি হবে আগামী সে জানে না। তবে নিজের বোনের ক্ষতি তো আর করতে পারবে না। 

অতসী এখানে থাকলে সায়ান কোনদিন অনামিকাতে আসক্ত হতে পারবে না।

তাই আমাকে দূরে সরে যেতেই হবে। 

এমন হাজারো একথা সে কথা ভাবছিলো অতসী । 

.

 

ভালোবাসা আমি তোমাকে নিয়েই

সবচেয়ে বেশি বিব্রত আজ

তোমাকে নিয়েই এমন আহত

এতো অপরাধী, এতো অসহায়!

তোমাকে নিয়েই পালিয়ে বেড়াই

তোমাকে নিয়েই ব্যাকুল ফেরারী।

(মহাদেব সাহা)

.

সায়ানের কন্ঠস্বর শুনে পিছন ফেরে অতসী। সায়ান এসে চুপচাপ অতসীর পাশে বসেছে। 

অতসীর 

ঠোটের কোনায় লেগে আছে রক্ত। আস্তেধীরে এগিয়ে যায় রক্তিম ঠোঁটের প্রান্তে। 

আজ সায়ান অন্য এক নেশায় ডুব দিয়েছে। নেশা যেনো গভীর থেকে গভীরতম৷ 

মানুষের রক্তে আলাদা এক স্বাদ আছে। সত্যি কি তাই?  না এই স্বাদ শুধুই অতসীর.....

 

.

চলবে 

.

#ছবিয়াল_দিবা

0 Comments:

Post a Comment