গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ৩০

 #দায়িত্বের_সংসার

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ৩০ 

.

.

আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো বৃষ্টি নামবে। 

সায়ানের বুকে চুপটি মেরে ঘুমিয়ে আছে অতসী। 

কিন্তু সায়ান তখনো ইফাদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। 

এত রাতে অতসীকে নিয়ে ফিরে যাওয়া মোটেও সম্ভব নয়। তাছাড়া এলাকায় পানি দিন দিন বাড়ছে। যেতে হলে নদীর ধারের রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ্!  না করুক যদি কিছু হয়?  

সায়ান একা থাকলে হয়তো বেরিয়ে যেতো কিন্তু অতসীর জন্য মোটেও রিস্ক নিতে চাচ্ছে না। এদিকে অনামিকার জন্য খারাপ লাগছে। মেয়েটা খুব ছোট বয়সে সব হারিয়েছে কিন্তু অনামিকা অতসী দুজনের কথা একত্রে মনে হলে একটা ধোয়াশার সৃষ্টি করে। দুটো মেয়েকে খুব কাছে থেকে দেখেছে কিন্তু অনামিকার বর্ণনার অতসীকে আজ অবধি সায়ান খুজে পায়নি। 

.

.

সবে মাত্র চোখ লেগেছিলো সায়ানের। সাত-পাঁচ ভেবে পুরো রাত ঘুমোতে পারেনি। নিজেকে বড্ড স্বার্থপর মনে হচ্ছে। এক জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছিলো। 

অতসীর প্রতি রাগ, জেদ, অনামিকা কে বিয়ে, এক্সিডেন্টের  পুরো বিষয়ে অতসীর দোষ ধরা, দিহানের থেকে অতসী কে আলাদা তারপর অতসীকে বিয়ে। 

সবটা জঘন্য খেলা ছিলো কিন্তু এর মধ্যে একটা সত্যি ছিলো। সত্যিটা হলো অতসী কে সায়ান ভালোবাসে। যতটা ভালোবাসা যায় তার থেকে বেশি ভালোবাসে। 

.

.

অতসীর হাত সায়ানের বুক থেকে সরাতেই সায়ান খুব শক্ত করে হাত ধরে ফেললো। অতসী চোখ খুলে তাকিয়ে সায়ানকে একপলক তাকালো। সায়ান কিছু না বলে খুব গভীরভাবে অতসীর কপালে চুমু দিলো। দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। এই বুঝি  হারিয়ে যাচ্ছে। 

.

অতসী নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো। 

সায়ান আজকে কোন ফাজলামো করছে না৷ 

এটা অতসীর জন্য চিন্তার বিষয়। কারণ 

একজন মানুষ যখন অনবরত কাউকে জ্বালাতন করে আবার হুট করে জ্বালাতন বন্ধ করে দেয় ঠিক তখন তুমি মানুষটার জ্বালানো প্রচন্ডরকম ভাবে অনুভব করবে। 

কেনো চুপচাপ হয়ে আছে কারণ জানতে চাইবে কিন্তু পারবে না। অস্বস্তিতে পার হবে সময়। 

ঠিক এমন হচ্ছে অতসীর৷ 

খুব দ্রুত সায়ান অতসীকে তৈরী হতে বলে বেরিয়ে যায়। 

.

ফিরে আসার সময় বড়মা অতসীর হাতে একজোড়া বালা পড়িয়ে দিয়ে বলেন

-এটা আমার ছিলো। এর বয়স দুশো বছরের বেশি হবে। আমিও উপহার পেয়েছিলাম সাথে একটি কথা । 

.

-সম্পর্কে মান-অভিমান স্বাভাবিক। যদি কখনো খুব অভিমান হয় তখন কিছুটা দূরে সরে গিয়ে নিজেকে সময় দিও। সম্পর্ক কে সময় দিও কিন্তু কখনো ছেড়ে যাওয়ার কথা ভেবো না। 

.

.

সকাল থেকে রাইমা বেশ কয়েকবার বমি করেছে। কপালে ভাজ ফেলে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে দিহান।

প্রথমে যা মনে হচ্ছে যদি এমন হয়?  

সম্পর্ক এখনো এতটা মজবুত হয়নি। এক রাতের ভুল কি সারাজীবন এই মেয়েকে কষ্ট দিবে?  

ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসছে দিহানের। 

.

কথা না বাড়িয়ে রাইমাকে নিয়ে হস্পিটালে ছুটলো দিহান। 

.

.

রাতেই অনামিকাকে এডমিট করানো হয়েছে। অতসীর মা সাথেই। অতসীর বাবা চল্লিশ দিনের জন্য কোন এক মসজিদে জামাতে গিয়েছেন। উনাকে জানানোর সুযোগ হয়নি। 

সায়ান অতসীরা হস্পিটালের সামনে। 

অতসীর চোখমুখে এখন চিন্তা ফুটে উঠেছে। 

সকাল থেকেই মন কু ডাকছিলো কিন্তু অতসী মনে করেছিলো সায়ান চুপচাপ তাই এমন লাগছে। 

লিফটে উঠে পরিচিত ছয়তলার জন্য বাটন প্রেস করলো সায়ান। 

অতসী খুব শক্ত করে ওর হাত ধরে আছে। 

সায়ান বেরিয়ে যাওয়ার আগে শুধু এটাই বললো 


- অতসী! যাইহোক না কেনো কখনো এই হাত ছাড়ার চেষ্টা করো না।

.

.

অনামিকার কাছে যাওয়ার অনুমতি নেই তবে দূর থেকে যতটা দেখা যাচ্ছে অনামিকাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। 

ইফাদের সাথে কথা বললে জানতে পারলো 

-এক্সিডেন্টে ব্রেইন অনেকটা ক্ষতির স্বীকার হয়েছে৷ ইদানীং ইম্প্রুভ করছিলো কিন্তু কাল একটা মাইনর এট্যাক এসেছে। এটা খুব খারাপ ভাবে ব্রেইনে ইফেক্ট করেছে। শ্বাস চলছে কিন্তু নিজ থেকে নেওয়ার ক্ষমতা অনামিকার নেই। 

.

.

অতসী এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আইসিইউ এর বাহিরে দাঁড়িয়ে অনামিকা কে দেখছিলো। ইফাদ শুধু সায়ান কে যাওয়ার পারমিশন দিয়েছে। অতসী অনামিকা কে এই অবস্থায় দেখলে কান্না করবে হয়তো ভয় পাবে৷ 

তাই অতসীকে যেতে দিচ্ছে না। হঠাৎ অতসী চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো। 

ইফাদ কান্নারত অতসীকে কেবিনে নিয়ে এসে বসিয়ে পানি এগিয়ে দিলো। 

.

-অতসী!  শান্ত হও!  তুমি না অনেক লক্ষী একটা মেয়ে?  আপুরে কান্না করিস না। 

.

অতসী টেবিলে মাথা রেখে কান্না করেই চলেছে৷ আরো দুটো মানুষ সেখানে ছিলো। অতসীর জন্য এইদুটো মানুষ যে কাঁদতে পারে। 

.

মাথায় কারো স্পর্শ পাওয়াতে চোখ তুলে তাকায় অতসী। রাইমা কে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। কান্নার বেগ বেড়েই চলেছে। 

অতসীর  হঠাৎ কান্নায়  রাইমা নিজেও কাঁদছে। 

.

-জানিস তো রাই!  আমি না খুব স্বার্থপর রে। কাল আমি কি চিন্তা করেছি জানিস?  আমি চিন্তা করেছিলাম আপু যদি আর ঠিক না হতো?

আজকে দেখ?  বাবা সত্যি বলে আমি খুব খারাপ রে। আমার জন্য এতকিছু হয়। 

.

অতসীর কান্নায় হিচকি উঠে গেছে। ইফাদ রাইমা থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। এক সময় দিহান এসে রাইমার থেকে অতসীকে ছাড়িয়ে নিয়ে অতসীর দুহাত ধরে হাটুতে ভর দিয়ে মাটিতে  বসে।

শক্ত করে দুহাত ধরে বলতে থাকে 

-মাই লেডি!  কান্না করো না। প্লিজ। সহ্য হচ্ছে না। তোমার চাওয়া তে কিছুই হয়নি। প্লিজ শান্ত হও। 

.

অতসী আলোর  বেগে হাত ছাড়িয়ে নেয়।এত জোড়ে টান দেওয়াতে  বড়মায়ের দেওয়া হাতের বালায় লেগে অতসীর হাত খানিকটা কেটেছে। সেদিকে খেয়াল না করে বলতে থাকে 

.

-কষ্ট? সহ্য? এসব কোথায় ছিলো দিহান যখন রাইমা কে বিয়ে করলেন?  তখন আমার কথা মনে হয়নি?  না আমি তো খারাপ মেয়ে, লোভী মেয়ে আজ আমার জন্য আপনার কষ্ট হওয়ার কোন মানেই হয় না। 

যদি সত্যি ভালোবাসতেন তাহলে আমার জন্য অপেক্ষা করতেন, জানতে চাইতেন কি হয়েছে?  না!  আপনি করেন নি এমন। আপনি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিয়ে করে এনেছেন যখন সবটা জানলেন তখন বললেন আমাকে নিয়ে চলে যাবেন। রাইমা কে ছেড়ে দিবেন?. 

কি মনে করেন আপনারা আমাকে?  আর এই যে আমার দোস্ত!  আমার কলিজার টুকরা!  সে কি বললো?. স্বামী ত্যাগ করবে আমার জন্য.... হাহ্!  আমি কত অভাগী!  সবাই শুধু দান কর‍তে চায়। 

.

বাহিরে থেকে অতসীর চিৎকার শুনে সায়ান দ্রুত কেবিনে প্রবেশ করে। অতসীকে পাগলের মতো প্রলাপ করতে দেখে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। 

দিহান চুপচাপ তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।সবাই হয়তো ভেবেছিলো  অতসী শান্ত হবে কিন্তু অতসী আরো রেগে যায়৷ 

সায়ান কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। না জানি এত শক্তি কোথায় পাচ্ছে সে আজ!  

.

-আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না মি.মাহমুদ!  আপনার জন্য আজ এই অবস্থা। আপনি কেনো এসেছেন আমার জীবনে?  আমি তো ভালোই ছিলাম। যেমন ছিলাম রাতে অন্তত শান্তির শ্বাস নিতে পারতাম কিন্তু যখন আপনি এলেন সব বদলে দিয়েছেন। আমার সব শেষ!  সব।কি মনে করেছেন কি?  আমার কোন আত্নসম্মানবোধ নেই? কিছু বলিনা, চুপচাপ থাকি তাই আমার কোন অনুভূতি নেই? যখন যার যেমন ইচ্ছা ব্যবহার করবেন?কেনো আমাকে মানুষ বলে মনে হয় না? 

 আমি আপনাকে কোন দিন মাফ করবো না। কোন দিন না। আপনাদের কাউকে কোন দিন মাফ করবো না। 

.

চলবে

.

#ছবিয়াল_শাকিল

0 Comments:

Post a Comment