#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ২৩
.
.
অতসীর কথাগুলো শুনে সায়ান কোন রিয়্যাক্ট করেনি। চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে স্টাডিরুমের কাউচে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আপাতত ঘুমের প্রয়োজন। অতসীকে পড়েও দেখা যাবে।
.
এদিকে অতসী সায়ানের কোন রিয়্যাক্ট না দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে। সায়ানের উচিৎ ছিলো অন্তত একটা চড় অতসীকে মারা। এতে অতসী পাল্টা ফিডব্যাক দিতো কিন্তু এমন কিছুই হলো না ভেবে অতসী একটু অবাক।
.
কিছুক্ষণ পর পা টিপে টিপে ভ্রু-কুচকে এগিয়ে যাচ্ছে স্টাডিরুমের দিকে গিয়ে দেখলো কাউচের উপর উল্টো হয়ে ঘুমিয়ে আছে সায়ান। এসি তো অন। একটু পরেই আবার ঠান্ডা লাগবে। তাই দ্রুত ফিরে এসে চাদর নিয়ে ঢেকে দিলো। মানুষটার স্বভাবটাই এমন। যতই গরম পড়ুক না কেনো রাতে ঘুমানোর সময় পাতলা চাদর বা কম্বল তো তার লাগবেই। আর কয়েকটা দিন মাত্র মি. মাহমুদ! তারপর আপু সুস্থ হয়েগেলে আপনাকে আর এভাবে ঘুমাতে হবে না।
.
.
অতসী চলে যাওয়ার পর সায়ান উঠে বসে। মুচকি হেসে হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো ঠিক করতে করতে রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কথা টা বলে
.
"নারীর হৃদয়ের রহস্য জানিবার মতো অভিজ্ঞতা আমার হইল না। নিতান্তই
উপর হইতে, বাহির হইতে, যেটুকু দেখিলাম তাহাতে আমার এই বিশ্বাস
জন্মিয়াছে যে, যেখানে মেয়েরা দুঃখ পাইবে সেইখানেই তারা হৃদয় দিতে
প্রস্তুত।"
.
মিসেস.মাহমুদ! তুমি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছো। আমিও দেখবো তুমি আমার থেকে কত দিন দূরে থাকতে পারো।
.
.
আজকে নাইট ডিউটি নেই। বাসায় ফিরে গা এলিয়ে ফোন গাটছিলো ইফাদ। আফরিন কোন বার এত রাগ করেনা।
নিজে থেকে এসে রাগ ভাঙায়। দোষ যদি ইফাদের থাকে তবুও আফরিন সরি বলে। এবার তিন দিন হয়ে গেলো অথচ আফরিন কোন যোগাযোগ করলো না?ইফাদের ইগোতে লাগছে। আরে ভালোবাসবে তো সরি বলবে না কেনো? এবার দোষ তো সত্যি আফরিনের৷ যখন দোষ থাকে না তখন সরি বলে অথচ এবার দোষ যে নিজের তবুও বলবে না।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ওয়াইফাই অন করলো ইফাদ৷
আগে ম্যাসেঞ্জারে গিয়ে আফরিনের ইনবক্সে
ছোট্ট একটা ম্যাসেজ সেন্ড করলো।
.
তোমার বাড়ি থেকে
আমার বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি নয়
আমি না হয় নিষ্ঠুর স্বার্থপর
আমার না হয় পেট ভর্তি রাগ
তুমি তো আসতে পারো
কত কেউ তো
ভুল করেও কত দিকে চলে যায়
চিৎকার করে ভালোবাসতে জানো
একটা ভুল করতে জানো না?
(রুদ্র গোস্বামী)
.
নিউজফিডে আসতেই ইফাদের চোখ ছানাবড়া। আফরিন ১১ ঘন্টা আগে এয়ারপোর্টে চেকইন করেছে। কোথায় যাচ্ছে ও?
ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে কল দিলো আফরিন কে। অপর পাশ থেকে যান্ত্রিকমানবী বলছে
-The number you have dialed is currently unreachable. Please try sometime latter.
.
.
টানা ২২ ঘন্টা জার্নি করে আফরিন, রেদোয়ান ওদের বাবাকে নিয়ে পৌছালো লস অ্যাঞ্জেলেসে। ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত শহর লস অ্যাঞ্জেলেস৷আয়তনের দিকে ক্যালিফোর্নিয়া ৩য় তম শহর যুক্তরাষ্ট্রের। লস অ্যাঞ্জেলেস! এই বৃহত্তর নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নাতিশীতোষ্ণ রৌদ্রময় জলবায়ু সব মিলিয়ে মন ভালো হতে বাধ্য৷
কিন্তু আফরিনের বুকের ভিতর কেমন যেনো চিনচিন ব্যথা হচ্ছে।
.
প্রচন্ডরকম ক্লান্ত সে। এপার্টমেন্টে গিয়ে যে যার যার রুমে চলে গেলো। এক আদিবাসী ছেলে এখানে ওদের দেখাশোনা করার জন্য বরাদ্দ। ফ্রেশ হয়ে প্রচন্ডরকম ক্ষুধা নিয়ে ডায়নিং টেবিলে বসলো রেদোয়ান, আফরিন। ডিনারের পালা শেষ করে রুমে এসে গা এলিয়ে দিতেই ফোনে টুংটাং শুরু হয়ে গেছে। ওয়াইফাই অন করেও শান্তি নেই।
ফোন হাতে নিতেই ইফাদের সাথে অনেক ম্যাসেজ চোখে পড়লো। ভ্রু-কুচকে দেখে আফরিন রিপ্লাই করলো
.
ধরবোনা,ছুবোনা।
আশেও থাকবোনা,পাশেও থাকবোনা।
কথাও বলবোনা,কথাও শুনবোনা।
তাও পাবি মরন যন্ত্রণা.........
.
.
সারা রাত ইফাদের ঘুম হয়নি। চোখ-মুখ দেখেই সায়ান বুঝতে পারছে। এদিকে সে ঘাড় ব্যথায় নড়তে পারছে না। উফফ কি অসহ্য যন্ত্রণা!
.
-তোর অফিস নেই?
-বাসায় বসেই সব ম্যানেজ করতে হচ্ছে।
-দুই বউ সামলানো তো আর চারটে খানি কথা না।
.
বলেই বিদ্রুপের হাসি হাসলো ইফাদ।
-পিঞ্চ মারছিস?
-নাহ্! তা যখন অনামিকার সুস্থ হবে তখন কি করবি?
-সময় আসুক।
-যদি অনামিকা অতসী কে ছাড়তে বলে? ছেড়ে দিবি? আফটার অল তোর প্রথম বউ হক বেশি।
.
.
এসময় অতসী এসে বললো
-আপুর স্বামী সংসারের দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র। আপু সুস্থ হলে চলে যাবো। চিন্তার কিছু নেই।
.
দুই গ্লাস দুধ দুজনের সামনে রাখতে রাখতে কথাগুলো বলে অতসী। দুধ দেখে সায়ান,ইফাদ দুজনেই না করে। অতসী বোকা বোকা চেহারা নিয়ে জিজ্ঞেস করে৷
.
-তোমরা কি মদ খাও! আমি শুনেছি যারা মদ খায় তারা দুধ খায় না।
.
সায়ান, ইফাদ একজন আরেকজনের দিকে ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে। তারপর ইফাদ মুখ খুললো
-আমরা মোটেও মদ খাই না।
-তাহলে দুধ খেতে সমস্যা কি?
-আপুরে বুঝবা না তুমি!
-তাহলে আমিই ঠিক।
-আমরা শুধু মাঝেমধ্যে বিয়ার খাই।
-ওইতো মদ
-বিয়ার আর মদ এক না রে পাগলী। বিয়ার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সপ্তাহে একটা বিয়ার খেলে মুখে পিম্পল উঠে না, স্কিন ভালো থাকে।
(ইফাদ শুরু করলো অতসী কে বিয়ার নিয়ে ভাষণ দেওয়া)
.
-যে লাউ সেই কদু। বিয়ারেও অ্যালকোহল আছে সো খাওয়া হারাম।
.
এবার সায়ান বলে উঠলো
-শুনো! তোমার ভাই ওসব খেতে পারে! আমি ভদ্র ছেলে আমি কিন্তু ওসব খাই না।
.
অতসী উত্তর না দিয়েই আবার কিচেনের দিকে পা বাড়ায়। ইফাদ সায়ানের গলা চেপে ধরে বলে
.
-শালা তুই আমাকে কেস খাওয়াচ্ছিস কেনোরে? আর কবে থেকে বাদ দিলি?
-এ-সম্পর্কে তুই আমার শালা। আর ঘরে যখন তোর বোনের মতো অ্যালকোহল থাকে না? তখন আর অন্য কিছুর নেশার দরকার হয় না।
.
.
চলবে।
0 Comments:
Post a Comment