#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ ৩৩
.
.
নামাজ শেষে মোনাজাতের সময় ডুকরে কেঁদে উঠলেন আমিনুর সাহেব। ইদানীং মেয়েটার জন্য মনটা বেশ ছটফট করছে।
বোনের একমাত্র শেষ অংশ এই মেয়েটা। কখনো কোন কিছুতে কমতি রাখেনি।
মা-বাবা দুটোই হয়েছে। এতিম মেয়েটা না হলে কোথায় যেতো?
সবাই এই মেয়েটাকেই কেনো এত কষ্ট দেয়?
"" আল্লাহ্!এই জীবনে যদি আমি কোনদিন কোন ভালো কাজ করে থাকি, কারো একটু কাজেও সাহায্য করে থাকি একটু পূন্যের বিনিময়ে হলেও তুমি আমার মেয়েকে সুস্থ করে দাও। ""
.
মোনাজাতে কথাগুলো বলছিলো সাথে চোখের পানি ফেলছিলো আমিনুর সাহেব।
.
নামাজ শেষে সবাই গোল হয়ে বসে আছে। হুজুর সাহেব হাদিস বলছে।
.
হযরত মুসা (আ:) ছিলেন অনেক বেশি কৌতুহলী ।তিনি যে কোন বিষয় তার মনের মতো জবাব হওয়ার আগ অবদি আল্লাহর কাছে প্রশ্ন করতেই থাকতেন ।তো একবার হযরত মুসা (আ:) আল্লাহকে প্রশ্ন করলেন_
হে আমার রব আপনি যখন বান্দার উপর খুশি হন তখন কি করেন?
আল্লাহ সুবাহানা তায়ালা বললেন _ "আমি তখন তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করি । "
এরপরে তিনি আবার প্রশ্ন করলেন যে _ এরচেয়ে যখন বেশি খুশি হন তখন কি করেন ? ?
মহান পরওয়ারদেগার বললেন _ " তখন আমি তোমাদের ঘরে মেহমান দেই । "
তো মুসা (আ:) পুনরায় প্রশ্ন করলেন _
তাহলে আপনি যখন সবচেয়ে খুশি হন বান্দার উপর তখন কি করেন ? ?
মহান দয়াময় আল্লাহ সুবহানা তায়ালা বললেন _ " হে মুসা শুনে রাখো আমি যখন বান্দার উপর সবচেয়ে বেশি খুশি থাকি তখন তোমাদের ঘরে কন্যা সন্তান দেই ।
.
কন্যা সন্তান! হ্যাঁ! আমিনুর সাহেবের মন এখন অতসীর চিন্তা করছে। মেয়েটা সব সহ্য করে, অনেক অত্যাচার তো নিজেই করেছে কিন্তু এভাবে রাগের বশে,জেদের বশে সায়ানের সাথে বিয়ে দিয়ে মেয়েটার জীবন অনিশ্চিয়তার বেড়াজালে বন্দী।
অনামিকা সুস্থ হলে অতসীর কি হবে?
এক মেয়ের জন্য আমি কিভাবে পারলাম অন্যজনের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে?
হয়তো এভাবেই শুরু হচ্ছে আমিনুর সাহেবের অনুতাপের অধ্যায়।
.
.দিহানের হাত থেকে সিগারেট নিয়ে মুখে দিলো ইফাদ।
সায়ানের পাগলামো, জেদ বা যাই হোক না কেনো এগুলোর জন্য পাঁচটা লাইফে আজ অশান্তি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইফাদ বলতে লাগলো
.
-সায়ান আমাদের ছোটবেলার বন্ধু। আমরা তিনজন, আমাদের বন্ধুত্ব সবার হিংসের কারণ ছিলো। এক সাথে উচ্চমাধ্যমিক পাশ। তারপর আলাদা হয়ে গেলাম কিন্তু দিন শেষে আমরা এক। জানিস তো সায়ানের জেদ৷ ও কখনো জেদ করে না কিন্তু যা চাই তা ওর চাই।কোন ভাবে নিজেকে সামলাতে পারে না। আর অতসী তো ভালোবাসা।
অতসীকে ছাড়া হয়তো ওর সব শেষ করে দিতো।
.
-জানি আমি। অতসীকে আগলে রাখবে কিন্তু আমি কি করবো?
(নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দিহানের)
- এখন সময় সায়ানের পাশে দাঁড়ানো। অনামিকা নামক যে রহস্য সমাধান আগে করতে হবে।
-হ্যাঁ! কিন্তু তারপর লেডির কি হবে?
-তুই রাইমাকে ছাড়িস না। মেয়েটার তো দোষ নেই
-দোষ তো আমার লেডি লাকের ও নেই।
-তোর লেডি লাক অন্যের সহধর্মিণী। তুই অনেক ভাগ্যবান অতসীর প্রথম প্রেম তুই। কতটা ভালোবাসিস এখন প্রমাণ করার সময়। ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পেতেই হবে এমন তো নয়। দূর থেকেও ভালোবাসা যায়। তুই না হয় তাই কর!
অতসীকে, সায়ানকে সাপোর্ট দিতে হবে।
অতসী কে দুই বন্ধুর মাঝে টেনে এনে সম্পর্ক নষ্ট করিস না।
.
-আমাদের বন্ধুত্ব এতটা ঠুনকো নয় যে এভাবে ভাঙবে৷ তবে অতসীকে সায়ান কষ্ট দিলে আমি ছেড়ে দিবো না।
-সায়ান যে সাইকো লাভার! যে ছেলেটা মেয়েদের দিকে তাকায় না। সেই ছেলে একটা মেয়ের জন্য কি তুলকালাম বাধিয়েছে?
-রহস্য তো রয়েই যাচ্ছে। অনামিকা, যার জন্য তিনটা জীবন আজ অনিশ্চিত হয়ে দাড়াচ্ছে। সুস্থ হবে না?
-আশা করছি খুব দ্রুত।
.
.
অতসী ঘুমিয়ে আছে। একটা চেনা স্পর্শ! স্পর্শ সুবাস ঘিরে রেখেছে।
চোখ না খুলেই বুঝতে পারলো মায়ের বুকে ঘুমিয়ে আছে। আচ্ছা! আল্লাহ্ এখানে এত শান্তি কেনো দিয়েছে? এতটা শান্তি! এই বুকে মাথা রেখে হাসতে হাসতে চোখের পানি ফেলা যায় অভিমান করা যায়।
.
রাত ২.১৩ বাজে। সায়ান সবে মাত্র ফিরলো। অতসী কে রেখে আবার বেরিয়েছিলো। শত শত চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সাথে একটা ধোয়াশাময় ভবিষ্যৎ।
অতীত না জানলে ভবিষ্যৎ শুধুই অন্ধকার।রুমে এসে ইজি চেয়ারে বসে সবে মাত্র দুচোখ বন্ধ করেছে সায়ান। আজ দুচোখে ঘুম নেই। মায়ের কথা বড্ড মনে পড়ছে৷ মা তবে কেনো এসব বলেনি? অনামিকা অপমান করেছিলো অতসী না। এসবের উত্তর শুধুই মা দিতে পারতো। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করে সায়ান।
.
অতসী চুপচাপ এসে সায়নের পাশে দাঁড়িয়েছে। সায়ান হাত ধরে বসাতে চাইলে অতসী হাত ছাড়িয়ে নেয়। সায়ান তখন দুহাতে আকড়ে ধরে অতসীর কোমর। চুপচাপ অতসীকে বসিয়ে অতসীর মাথা বুকের বা পাশে খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে।আজ যেনো সায়ানের হৃদ স্পন্দন একটু বেশিই। এক সময় প্রশ্ন করে.....
.
-অভিমান?
-নাহ্!
-ভালোবাসি!
-কেনো এমন করলেন?
-তোমাকে ছাড়া আমার থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না।অন্য কাউকে সহ্য করতে পারি না।
.
-এভাবে আমাদের দু বোনের জীবন নিয়ে খেলার অধিকার আপনার ছিলো না। আপনি তো অনামিকা কে ভালোবাসেন।
-সব জেদ ছিলো।
- আমার কি হবে কখনো চিন্তা করেছেন? আপু সুস্থ হলে? আমি কোথায় যাবো? সব কেড়ে নিয়েছেন। আমার বাবার ঘরে জায়গা দিবে না, এই সংসারের কোন অংশীদার আমি নই।
-এসব তোমার অতসী। এভাবে কেনো বলছো?
-আমার কি করা উচিৎ? নারীবাদীদের মতে আপনাকে সেসব ব্যবহার ফিরিয়ে দেওয়া উচিৎ? যা আপনি আমার সাথে করেছেন? না বড়মার কথা মতো আপনার ভুল শুধরে আগলে রাখা?জীবন কেনো গল্পের পাতার মতো হয় না? এখানে কেনো সবাই শাস্তি পায় না? কারণ জীবন গল্পের মতো চলে না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন আমার মতো অনেক অতসী আছে, শুধু মাত্র সমাজের মানুষের কথার ভয়ে শত অপরাধ মুখ বুজেও সহ্য করছে। অতসীরা কেনো সমাজের সায়ানদের শাস্তি দিতে পারে না?
আপনি আমি না চাইলেও আপনি আমার স্বামী। আমার সবকিছু শুধু মাত্র আপনার জন্য কিন্তু অতীত ভুলতে পারছি না আমি।
কাল রাতেও আমি স্বার্থপর ছিলাম, আপুর কথা না ভেবে আপনাকে চেয়েছিলাম।
দিহান কে ভালোবাসা অনেকটা হারাম ছিলো কিন্তু আপনার প্রতি আমার অনুভূতি বৈধ হওয়ার পরেও আমি মানতে পারছি না।
আপুর আমানত আপনি।হয়তো দিহানের কাছে ফিরে যেতাম কিন্তু রাইমার জন্য পিছিয়ে এসেছিলাম, তারপর না চাইতেও আপনার মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আপুর জন্য আমাকে আপনাকে ছাড়তেই হবে। আমি আমার সব দায়িত্ব পালন করে চলে যাবো। কারণ
আমি এই বন্ধন থেকে মুক্তি চাই মি. মাহমুদ!
.
আমি ডিভোর্স চাই মি:মাহমুদ,আমি ডিভোর্স চাই...
.
.
চলবে
#ছবিয়াল_SuraiYa S. Tulip
0 Comments:
Post a Comment