#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৩৫
.
.
পুরো বাড়ি জুড়ে অতসীর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।প্রথম যেদিন এ বাসায় এসেছিলো তখন কি ভেবেছিলো? সব পাল্টে যাবে কয়েক মুহুর্তে?
এ বাড়ির আনাচে-কানাচেতে অতসীর বড্ড মায়া পড়েছে।
বাগানের প্রতিটি ফুলের টব নিজ হাতে গুছিয়েছে। সায়ান অনামিকার বিবাহিত জীবন যেনো সৌরভময়ী হয়ে উঠে।
তিতির পাখিটা ছোট্ট দুটো বাচ্চা দিয়েছে।
বারান্দায় তিতিরপাখির জন্য বানানো ছোট্ট একটা ঘরে খুটিপাতিলে পানি রেখে এলো অতসী।
বিছানায় তাকাতেই মনে পড়লো জ্বরের সময় করা পাগলামোগুলো।
সায়ানের জেদ,আবদার আজ থেকে খুব মনে পড়বে।
কটু হলেও সত্য অতসী সায়ানকে ভালোবেসে ফেলেছে৷
কিন্তু এটা ভুল।সায়ান অনামিকার আমানত৷ যা কিছুক্ষণ আগেই অতসী সায়ান কে ফিরিয়ে দিয়েছে।
এক বছর আগে অতসীর জীবনে এই দিনে দিহান ছিলো, সময়ের ব্যবধানে কেউ নেই। আজ নিঃস্ব হয়েও পরিপূর্ণ লাগছে।
.
কারণ? সায়ানের কাছে অনামিকা, বাবার কাছে তার মেয়ে সুস্থ ফিরিয়ে দিতে পেরেছে।
সায়ান যখন অনামিকাকে প্রথম দেখলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো।মুখে কোন কথা ছিলো না। বাবা প্রথমে এসে অনামিকাকে জড়িয়ে ধরে কি কান্নাটাই না করলো!
অতসী যখন অনামিকার হাত সায়ানের হাতে দিলো! সায়ান খুব শক্ত করে অনামিকার হাত ধরেছে। ছাড়লে এইবুঝি আবার হারিয়ে যাবে!
খাবার টেবিলে সবাই আড্ডায় মেতে উঠেছে।
সবাই জুটিতে আছে। সেখানে অতসী বড্ড বেমানান। আর তাছাড়া কিছুক্ষণ পর বাবা-মা চলে যাবে। অতসীকে তো আর রেখে যাওয়া যায় না। তাই বাবা বলেছে তৈরী হতে। বাবা না বললেও অতসী তৈরী হয়েই নিতো।
মায়ের কাছে বলে আগেই অতসী সালোয়ার কামিজ আনিয়েছে।
গায়ের শাড়িটা ছেড়ে সালোয়ার কামিজ পড়ে নিয়েছে।
আজ অনেকদিন পর চুলগুলো বিনুনি করেছে। বাম হাতে ঘড়ি। নাকফুল খুলে ছোট্ট একটা নাকফুল পড়ে নিলো।
বিলাসিতা করার কোন উপায় নেই। কারণ কিছুক্ষণ পর থেকে নিজের হাল নিজের ধরতে হবে।
.
ঘরের সবকিছু একবার করে ছুয়ে দেখছিলো অতসী৷ বাহিরে থেকে হাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
.
অপেক্ষা না করে অতসী নিচে চলে আসে।
এমনিতেও অনেক সময় হলো।
সব সার্ভেন্টদের সাথে দেখা করে অতসী আড্ডার জায়গায় এসে দাঁড়ালো।বাবা মসজিদে নামাজে গিয়েছে মা অন্য রুমে রেস্ট করছিলো।
অতসীকে দেখে রাইমার হাসি হাসি মুখ মলিন হয়ে যায়।
কিন্তু অতসীর মুখে হাসি লেগেই আছে।
রাইমার মুখ অনুসরণ করে দিহান, ইফাদ তাকাতেই ওরাও অতসীকে দেখলো।
সায়ান তখনো ব্যস্ত অনামিকার সাথে কথা বলাতে।
অতসীর উপস্থিতি বুঝে অনামিকা প্রথম জিজ্ঞেস করলো
.
.
-তুই কি আজকেই চলে যাবি?
-হ্যাঁ!
-থাক না দুদিন। প্লিজ
-আপু ছয়মাস হয়েছে এসেছি। তাছাড়া.....
-তাছাড়া কি?
-আপু তুই এবার নিজের সংসারের দায়িত্ব নিজে নে।
-তুই কি সত্যি চলে যাবি?
.
অনামিকার প্রশ্নের উত্তর আমিনুর সাহেব দিলেন।
.
-হ্যাঁ রে মা! আবার কে আসবে ওকে নিতে?
.
অতসীকে উদ্দেশ্য করে বললো
-যা তোর মা কে তৈরী হতে বল।
.
অতসী মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে চলে গেলো। রাইমা উঠে আসছিলো দিহান হাত ধরে বললো
.
- কোথায় যাচ্ছো?
-অতসীর কাছে।
-কেনো?
-কথা বলতে....
-পরেও তো বলা যায় না কি? আড্ডা থেকে উঠলে সবাই কি মনে করবে?
.
দিহানের কথার কোন জবাব দিলো না রাইমা। চুপচাপ আবার আড্ডায় মেতে উঠলো।
.
.
অতসী যাওয়ার জন্য মোটামুটি প্রস্তুত। কিন্তু কোথাও একটা কষ্ট হচ্ছে। অতসী জানতো এমন হবে তবুও কেনো এমন কষ্ট হচ্ছে?
.
ইফাদ, আরেফিন,রাইমা, দিহান সবাই চুপ। অতসী হেসে সবার থেকে বিদায় নিয়ে মায়ের হাত ধরে বেরিয়ে আসছিলো।
হঠাৎ সায়ানের ডাকে সবাই পিছনে তাকালো
.
-অতসী! রুমে যাও।
.
সায়ানের কথার জবাব অনামিকা দিলো
-চলে যাওয়ার সময় এভাবে পিছন ডাকতে নেই। যেতে দাও!
-অনামিকা তোমাকে আমার কিছু জানানোর আছে কিন্তু তার আগে তুমি প্লিজ চুপ থাকবে।
.
অতসী আমি কিছু বলেছি? রুমে যাও।
.
-ওর দায়িত্ব এখানেই শেষ! ওকে আমার সাথে যেতে দাও। জেদ করো না। (নির্লিপ্ত কন্ঠে উত্তর আমিনুর সাহেবের)
-অতসী! আমি কি বলেছি? কানে যাচ্ছে না?
-আমি চলে যাবো মি.মাহমুদ!
.
.
সায়ান এতক্ষণ চুপ থাকলেও রেগে এগিয়ে যাচ্ছিলো অতসীর দিকে। এটা দেখে অতসী মায়ের হাত আরো শক্ত করে ধরে। সায়ান টান দিয়ে হাত ছাড়িয়ে কাধে উঠিয়েই সিড়ির দিকে পা বাড়ালো।
ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই চুপ।
.
রুমে নিয়ে এসেই অতসীকে সায়ান বিছানায় ফেলে দেয়৷ একহাতে ওর হাত বিছানায় আকড়ে ধরে অন্য হাতে অতসীর দুগাল চেপে ধরেছে।
.
-বলেছিলাম না? যা ইচ্ছে করো! কিন্তু ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করবে না।সাহস কি করে হয় তোমার? এত সাহস কে জুগিয়েছে?
মরার শখ জেগেছে? তুমি কি চাইছো আমি তোমাকে মেরে নিজে মরে যাই? আর এসব কি পড়েছো? বেনুনি কেনো করেছো?.
.
কথাগুলো বলতে বলতে সায়ান অতসীকে টেনে তুলে উঠিয়ে বসাই। এলোপাথাড়ি টেনে অতসীর বেনুনি খুলে ফেললো। অতসী ব্যথায় সায়ান কে ধাক্কা দিতে চাইলে সায়ান আরো জোরে চুল টানতে থাকে। ওড়নায় হাত দিতেই অতসী বাধা দেয়। কে শুনে কার কথা? টান দিয়ে ওড়না সরাতেই সেফটিপিন লাগানো অংশ ছিড়ে আসে।
.
অতসী তাকিয়ে দেখে সায়ান কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে চিৎকার করে বলে
.
-আপনি সাইকো মি. মাহমুদ! আপনি সত্যি একটা সাইকো
.
.
অতসীর এক কথায় সায়ান এগিয়ে গিয়ে অতসীর কামিজের পিছনের দিকটা টান দিয়ে ছিড়ে ফেলে।
.
এটা কি পড়েছিস তুই? শাড়ি কেনো চেঞ্জ করেছিস? এত কোথায় পেলি? শাড়ি পড়িস নাই কেনো? না করেছিলাম না এসব পড়তে?
.
অতসীর দুহাত পিছনের দিকে নিয়ে এক হাত দিয়ে চেপে ধরেছে। অন্য হাতে অতসীর চুলের মুঠি ধরে বলে
.
-আমার ভালোবাসার গভীরতা তুই ভাবতেও পারবি না। তোর জন্য আমাকে যদি কাউকে মারতে হয় আমি মারবো নিজের মরতে হলে আমি মরবো। কিন্তু তোকে আমি ছাড়বো না। আমি সবার মতো না। আমি সায়ান মাহমুদ! আট দশটা ছেলের মতো আমি ভালোবাসা ত্যাগ দিয়ে মহান আমি সাজবো না। আমি মহান বাহিরে সাজবো ঘরে না।
আমার ভালোবাসা আমি ছিনিয়েই নিবো। এটা আমি খুব ভালোভাবে করতে জানি।
.
শাড়ি কি তুই নিজে চেঞ্জ করবি না আমি......
আমিই পড়াবো।
.
ওয়ারড্রব থেকে শাড়ী ব্যতীত বাকী কাপড় দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো। পাঁচ মিনিট না হতেই ওয়াশরুমের দরজায় কড়া নাড়ছে সায়ান। অতসী চুপচাপ এসে সায়ানের সামনে দাঁড়ালো। সায়ান খুব যত্ন করে অতসীকে শাড়ি পড়িয়ে দিলো ।অতসীর শরীর থেকে তোয়ালে ফেলে দিয়ে আঁচল উঠিয়ে দিয়ে খুব যত্ন করে চুলগুলো ঠিক করে দিলো।
অতসী নিজে হাত খোপা করলো।
সায়ান ড্রয়ার থেকে নাকফুল,চুড়ি,চেইন সব বের করে নিজে হাতে পড়িয়ে দিলো।
.
অতসীকে নিজের সামনে দাড় করিয়ে খুব গভীর ভাবে কপালে একটা আবেগী চুমু দিলো সায়ান।
আধো আধো কান্নামিশ্রিত কন্ঠে সায়ান বললো
.
-তোমার ভালোবাসা যদি আমাকে হিংস্র করে তুলে তবে আমি তোমার জন্য হিংস্র হবো।স্বার্থপর হবো কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়বো না। না হলে আমি মরে যাবো। কিন্তু আমি বাঁচতে চাই শুধু তোমার সাথে । তোমাকে কেউ স্পর্শ করুক এটা আমি চিন্তাও করতে পারি না। তুমি যদি চলে যেতেই চাও তাহলে প্লিজ আমাকে একবারে মেরে তারপর যাও না হলে আমার থেকে নিজেকে আলাদা করো না।
.
.
চলবে।
#ছবিয়াল_নিশো
0 Comments:
Post a Comment