গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ২২

 #দায়িত্বের_সংসার 

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ২২ 

.

.

অতসী কে নিয়ে সায়ান নৌকায় উঠার আগে বেশ শক্ত করে ওর হাত ধরে। সদ্য ঘুম থেকে উঠা অতসী ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে। অতসী কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে একটা স্পর্শ চুমু দেয় কপালে। 

সায়ান জানে যদি ওর সন্দেহ ঠিক হয় তাহলে হয়তো দুজনের এক জনেও বেঁচে ফিরতে পারবে না। আর যদি বেঁচে ফিরে তাহলে এটা তো নিশ্চিত হবে কোন প্রি-প্ল্যান্ড কিছুই না।

.

-কোন নৌকায় যাবে? 

-ডিঙি নৌকায়। 

.

ছোট্ট একটা নৌকায় বসে আছে সায়ান, অতসী আর নৌকা চালক। বয়স্ক মানুষ। হয়তো এখানে তার নৌকায় উঠে না। গ্রুপে যারা আসে সবাই পিচ্চি  লঞ্চে করে ঘুরতেই পছন্দ করে। 

নৌকা এদিক ওদিক দুলছে। অতসীকে দুহাতে আকড়ে ধরে আছে। হাত বাড়িয়ে পানি ছুইছে অতসী। সায়ান ধমক দিয়ে একদম নিজের বুকের সাথে পিঠ লাগিয়ে বসে। 

.

সবাই হয়তো চিন্তা করবে সায়ান একটা ছেলে যে কি না অতসী কে এতটা অত্যাচার করেছে, মেরেছে, দিহান কে কেড়ে নিয়েছে তারপরও অতসী সায়ানের সাথে স্বাভাবিক?  

দুজন মানুষ একজন অপরজনের সাথে থাকবে চলবে অথচ মায়া জন্মাবে না? শুধুমাত্র গল্পে এসব সীমাবদ্ধ। বাস্তবে তো সবাই এটাই মানে "কায়া(মুখ) দেখলে মায়া বাড়ে "। 

.

হঠাৎ করেই বুড়ো মানুষ গান ধরে 

.

- বসে ভাবি নিরালায়

আগেতো জানিনা বন্ধের পিরিতের জালায়

যেমন ইটের ভাটায় কয়লা দিয়া আগুন জালাইছে।


আমি কি বলিব আর

বিচ্ছেদের আগুনে পুড়ে কলিজা আঙ্গার

প্রান বন্ধের পিরিতের নেশায় কুলমান গেছে।


বাউল আব্দুল করিম গায়

ভুলিতে পারিনা আমার মনে যারে চায়

কুলনাশা পিরিতের নেশায় কুলমান গেছে।

বন্ধে মায়া লাগাইছে,পিরিতি শিখাইছে

দেওয়ানা বানাইছে

কি যাদু করিয়া বন্ধে,মায়া লাগাইছে।

.

সত্যি অতসী কি যাদু করে যে মায়া লাগিয়েছে সায়ান সত্যি বুঝে না। সময় পরিস্থিতি সব কিছুর সাথে গানটা একদম পারফেক্ট। পরিবেশ বলছিলো সময় থেমে যাক কিন্তু সময় তো থামবে না। নিত্যনতুন গল্প লিখবে সময়। 

প্রায় এক ঘন্টার মতো বিল দিয়ে ঘুরে ওরা আবার রাস্তায় ব্যাক করে। উঠে আসার সময়  অতসী চুল গুলো হাত খোপা করে নেয়। বৃদ্ধ লোককে বিদায় দিয়ে সায়ান অতসী কে গাড়ির ভিতরে বসিয়ে দরজা লক করে দেয়। 

ফোন নিয়ে একটু দূরে এসে ওর বন্ধু রাফিউল কে কল দেয়। 

.

-তোরা ঠিক আছিস?  সায়ান?

-হ্যাঁ! তুই গার্ডস পাঠিয়ে দে। 

-এর মানে কি?. 

-অতসী এক্সিডেন্টের সাথে জড়িত নয়। জড়িত হলে আজ ও আমার ক্ষতি করতো। সব থেকে বড় কথা আজকে যদি অতসী চাইতো আমাকে মেরে ফেলতেও পারতো আর রইলো বিজনেস রাইভালদের কথা ওরাও আজকের সুযোগ হাত ছাড়া করতো না। 

-হুম! তুই তোদের দুজনের লাইফ অনেক রিস্কে নিয়েছিস  

-উপায় ছিলো না। আমি অতসী কে মন থেকে ভালোবাসি। সন্দেহ চাই না। সম্পর্ক আগানোর আগে আমার জানা প্রয়োজন ছিলো অতসী কি সত্যি আমার মা-বাবার খুনের সাথে জড়িত কি না। 

-হতে পারে শুধুই এক্সিডেন্ট। 

- হুম! এসে কথা বলছি। আর শোন এসব যেনো ইফাদ না জানে।  

.

.

ফিরে এসে সায়ান দেখে অতসী আবার ঘুমে। এই মেয়ের এত্তত কিসের ঘুম। সায়ান অতসী কে ডাকে। সে নাইনুকুড় করে চুপচাপ ঘুমিয়ে যায়। করাতি পাড়া বাইপাস অবধি আসতেই সায়ান গার্ডসদের পায়। অতসী কে নিয়ে পিছনের সিটে বসে গা এলিয়ে দেয়। সত্যি এখন একটুও শক্তি নেই। ভাগ্যিস ড্রাইভারকে আসতে বলেছিলো। 

.

.

খুব দ্রুত দিহান দেশ ছাড়বে। এখানে অতসী কে নিয়ে ডুবে থাকলে রাইমাকে মেনে নিতে পারবে না। কিন্তু এখন ওর পক্ষে কোন ফ্লাই করা সম্ভব নয়৷ মেন্টালি টেস্ট দিয়েই ওকে আবার ফ্লাইটের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। যদি মেন্টালি টেস্টে ও ফিট না হয় তাহলে কতৃপক্ষ কিছুতেই পারমিশন দিবে না। 

কাজের প্রতি নিজের ডেডিকেশন বরাবর দিহানের বেশ ভালো। 

কিন্তু আজ ঘুম প্রয়োজন কারণ কাল টেস্ট। 

অথচ রাত হলে ঘুম আসে না৷ শুধু অতসীর স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায়। নেশারঝোঁকে বলা কথাগুলো, অপমান করে দরজার বাহিরে বের করে দেওয়া, বিয়ের দিন রাইমাকে দেখানো, সায়ানের মারের দাগ। 

এসব বড্ড পোড়ায় দিহান কে। 

রাইমা সবে মাত্র ফ্রেশ হয়ে এসেছে। দিহান কে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ওর পাশে গিয়ে বসে। 

বিছানায় হেলান দিয়ে রাইমা হাত বাড়িয়ে দিহানের হাত ধরে ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়। 

ঈশারা করে কোলে মাথা রাখতে। দিহান ভ্রু-কুচকে তাকায়। 

.

-চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি । আসুন ঘুমাবেন। 

-প্রয়োজন নেই। 

-খুব আছে। 

-অধিকার ফলাতে চাইছো?

-হ্যাঁ!  আমার স্বামীর চুলে আমি হাত বুলিয়ে দিবো। আপনার সমস্যা হলে আপনি আসতে পারেন। 

-মানে?  তোমার স্বামী তো আমিই। 

- উঁহু!  আমার স্বামী মি.দিহান মেহেবুব। 

-তো আমি কে?  

-অতসীর প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হওয়া ব্যর্থ প্রেমিক। 

.

দিহান চোখ রাঙিয়ে উঠে যেতে নেয়। কিন্তু রাইমা হাত ধরে জোর করে নিজের কোলে দিহানের মাথা রাখে। 

চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে 

-আমি অতসীর জায়গা চাইনা। আমি শুধু আমার জায়গা চাই দিহান। অতসী ফিরবে না কিন্তু অতসীর আমাকে দেওয়া সেরা উপহার আপনি। আমি আপনার অযত্ন করতে পারি না। প্লিজ ঘুমানোর চেষ্টা করুন। 

.

.

বাসায় ফিরে অতসী ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পড়ে নেয়। ডিনার রেডি কর‍তে বলে চলে যায় অনামিকার কাছে৷ অনামিকার বুকে মাথা রেখে অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকে। 

.

অনামিকাও হয়তো কিছু বলতে চাইছিলো। হয়তো ওর সাথে ঘটে যাওয়া কথাগুলো অতসী কে বলতে চায় সে।। অতসী সব সমস্যার সমাধান করতে পারে এটাও পারবে কিন্তু নিয়তি সায় দিচ্ছে না। 

অতসী উঠে অনামিকার গা মুছিয়ে কাপড় পাল্টে সায়ানের জন্য ডিনার রেডি করে নেয়। 

আজ থেকে এই সংসারের দায়িত্ব সে পুরোপুরি নিবে। খুব দ্রুত অনামিকাকে সুস্থ করে তুলবে। সায়ানের কাছে ফিরিয়ে দিবে তার ভালোবাসা৷ বাবাকে ফিরিয়ে দিবে তার মা কে। 

.

.

ইদানীং হয়তো সায়ান অতসীর প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এটা অতসী মনে করছে। এমন হলে ভবিষ্যতে অনামিকা যখন এসব জানবে কষ্ট পাবে। আমার জন্য আগেই সব হারিয়েছিলে আপু আর কিছুই হারাবে না তুমি। তোমার সব আগলে রাখবো শুধু সুস্থ হয়ে নাও। 

.

রাতে ঘুমানোর সময় সায়ান এসে পাশে শুয়েছে। অতসীর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে৷ অতসী বেশ বুঝতে পারে সায়ান তাকে চাইছে কিন্তু এভাবে অনামিকার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করার প্রশ্নই উঠে না। 

একটা মেয়ে যতই অসুস্থ থাকুক না কেনো কোনদিন ফিরে এসে তার স্বামীকে অন্যের বাহুতে দেখার সাহস বা ক্ষমতা নিয়ে এই পৃথিবীতে কোন মেয়েই জন্মায়নি । 

মনে প্রচন্ড সাহস নিয়ে অতসী সায়ানের দিকে ফিরে সেই কাজ করে ফেললো যার পরিনামে হয়তো সায়ান কোনদিন ফিরবে না অতসী কুঞ্জে। 

.

.

অতসীর এক ধাক্কায় সায়ান বিছানা থেকে পড়ে গেলো। মেয়েটার এত শক্তি এলো কই থেকে । ইগোতে লেগেছে সায়ানের। উঠে দাড়াতেই অতসী বললো 

.

-প্লিজ বেরিয়ে যান আমার ঘর থেকে। আমাকে তো আপুর নার্স হিসেবে রেখেছেন। আমি একটা খারাপ লোভী মেয়ে। খুব তো বলেছিলেন অনামিকা কে ছাড়া কাউকে ভালোবাসেন না তাহলে রাত বিরাতে আমার ঘরে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরতে লজ্জা লাগে না?  

.

.

চলবে(ফটো ক্রেডিট- অনামিকা)

0 Comments:

Post a Comment