গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ৩৯

 #দায়িত্বের_সংসার

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ৩৯ 

.

.

আমিনুল সাহেব অনামিকার মুখোমুখি বসে আছে। পুরোটা বিষয় সব নিজের মুখে অনামিকা কে জানিয়েছে সে। 

সায়ান অতসীর বিয়ে সে নিজে দিয়েছে এটা সে স্বীকার করে নিয়েছে। 

.

অনামিকার দৃষ্টি বাহিরের দিকে। শান্ত স্বরে আমিনুর সাহেবকে প্রশ্ন করলো 


-আমি যদি আপনার নিজের সন্তান হতাম তাহলে কি এমন করতে পারতেন? 


অনামিকার এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠে আমিনুর সাহেব। 

অনামিকা তার সন্তান নয় এটা অনামিকা জানে?  কিভাবে?  


-না!  তুমি আমার সন্তান৷ আমি তোমার বাবা। এমন কেনো বলছো? 


তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে অনামিকা জবাব দিলো 

-আমি জানি আপনি আমার বাবা নন মামা। আমার মায়ের  ভাই।তাইতো আজ আপনি এমন করতে পেরেছেন৷ 

-তুমি ভুল বুঝছো মা!  আমি তোমার..... 

-আমার সুখের জন্য? কেমন সুখের জন্য আপনি এমন করেছেন?  কি সুখ পাচ্ছি আমি?  

-অনামা! 

-আজ যদি আমার মা-বাবা থাকতো তারা হয়তো আমার জন্য এমন সিদ্ধান্ত কোনদিন নিতো না।  


এমন সময় সায়ান-ইফাদ রুমে প্রবেশ করলো। অতসী চুপচাপ রাইমার হাত ধরে বাহিরে অপেক্ষা করছে। পাঁচ মিনিট পর দিহান আসলো। দিহান এসে অনামিকার মুখোমুখি বসে আছে। 

কিছুটা সময় নিয়ে অনামিকাকে দিহান জিজ্ঞেস করলো 

-অনামিকা তুমি ঠিক আছো? 


অনামিকা চুপচাপ বসে আছে৷ দৃষ্টি এখনো বাহিরের দিকেই। কেমন আছে?  হাহ্! হ্যাঁ! ভালো আছে সে বেশ ভালো। এতটা ভালো যে তার মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী যেনো শুধু তাকেই ভালো রেখেছে৷ 


 

দিহান আবার বলতে শুরু করে।


অনামিকা!  আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই। 

সায়ানের মা যখন তোমাদের বাড়িতে বিয়ে নিয়ে যায় তখন তুমি আন্টিকে যা নয় তা বলে অপমান করো। ঠিক তার কয়েকদিন পর সায়ানের সাথে দেখা করে সব দোষ অতসী কে দাও৷ 

এর কারণ জানতে পারি?  


অনামিকা  তবুও নিশ্চুপ। আমিনুর সাহেব দিহানকে ধমকে উঠে। কারণ এখন এসব প্রশ্ন করার সময় না। অনামিকা অসুস্থ। কিন্তু দিহান অনড়!  আজ সে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে অনামিকার সামনে। কারণ এগুলো না জানা অবধি কোন সিদ্ধান্তে কেউ পৌঁছাতে পারছে না। 


কিছু সময় পর অনামিকা বিছানা ছেড়ে উঠে অতসীর দিকে এগিয়ে যায়। খুব শান্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে 


-আমার সব কেড়ে নিলি কেনো রে?  সারা জীবনের শোধ একবারে তুলে নিলি?  

মা -বাবা কেড়ে নিয়ে শান্তি আসেনি?  


অনামিকা হঠাৎ হিংস্র হয়ে উঠে। অতসীকে আঘাত করতে লাগলে ইফাদ গিয়ে সামনে দাঁড়ায়।রাইমাকে আগেই ধাক্কা দিয়েছে। সায়ানের পায়ের কাছে পড়েছে সে। সায়ান দুহাতে রাইমা কে তুলেছিলো। মেয়ে মানুষের এত শক্তি কোথা থেকে এলো ভেবে পায় না ইফাদ। খামছে গলার পাশটায় রক্ত বের করে ফেলেছে ইফাদের। 

দিহান, সায়ান পিছন থেকে অনামিকা কে ধরলেও অনামিকা শান্ত হচ্ছিলো না। বাধ্য হয়েই ইফাদ খুব দ্রুত সিডেটিভ দিলো। চিৎকার করে কিছু সময় পর ঘুমিয়ে পড়লো। 

.


রাইমার হাতে হ্যান্ডরাব দিয়ে পরিষ্কার করে দিচ্ছিলো অতসী। ইফাদের গলা সে নিজেই পরিষ্কার করে নিয়েছে। 

আমিনুর সাহেব চুপচাপ বসে আছে। অনামিকা এই রুপ যেনো তাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। 

ইফাদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনামিকা কে একজন মনোবিজ্ঞানীর কাছে নিয়ে যাবে। 

অথবা এখানে কল দিয়েই নিয়ে আসবে। 

দুই ঘন্টার ভিতর একজন মনোবিজ্ঞানী চলে আসলো। সম্পূর্ণ কথা শোনার পর সে হিপনোটিজম এর পরামর্শ দিলো। 


হিপনোটিজম হিপনোটাইস কিংবা সম্মোহন বিদ্যা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত এই মানব সমাজে।

একজনের চরম প্রস্তাবনা,তীব্র আবেগ ও কল্পনা শক্তি দ্বারা অন্যের মনকে প্রভাবিত করা এবং পরিচালনা করাকে বলা হয় হিপনোটিজম। 


অষ্টাদশ শতকে সম্মোহন বিদ্যার নামকরণ হয় ‘মেজমেরিজম’। অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরের ড. ফ্রাণ্ডস্ অ্যান্টন মেজমার সম্মোহন বিদ্যার চর্চা শুরু করেন। ফলে 

এর ব্যাপক প্রচার শুরু হয় এবং ডাক্তারবাবুর নামানুসারে সবাই একে ‘মেজমেরিজম’ বলতে থাকে।


এটি এক ধরণের চরম প্রস্তাবনা, শিথিলতা এবং তীব্রতার কল্পনা শক্তির দ্বারা একটি অস্বাভাবিক স্বপ্নায়ন মোহগ্রস্তের অবস্থার বৈশিষ্ট্য বর্ননা করে। যা অনেকটা ঘুমের মত মনে হলে আসলে ঘুম নয়। কারণ বিষয়টি পুরো সময়জুড়ে সজাগ থাকে। অধিকাংশ সময় একে দিবা স্বপ্নের মত মনে হয়। অথবা কোন বই বা মুভিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মত। হিপনোসিস চলাকালীন সময়ে মস্তিষ্কের সচেতন অংশকে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে ঐ ব্যক্তির বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলোকে কেন্দ্রীভূত করা হয় এবং তাকে রিলাক্স করার দিকে মনোনিবেশ করা হয়। যখন আমাদের মন কোন একটি দিকে নিবিষ্ট হয়, কেন্দ্রীভূত হয় তখনই আমরা শক্তি অনুভব করি। যখন কোন ব্যক্তি সম্মোহিত হয় তখন আমরা তার মাঝে কিছু শারীরিক পরিবর্তন ও লক্ষ্যনীয় হয়। যেমন তার নাড়ীর স্পন্দন ও কমে যায়, শ্বাস প্রশ্বাস ও কমে যায়। এই সময়ে ঐ ব্যক্তিকে কোন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে বা বিশেষ কোন নির্দেশনা প্রদান করা হয়।


.

সম্পূর্ণ বিষয় ডক্টর নাতাশা সায়ানদের বুঝিয়ে বললো।প্রশ্নের উত্তরগুলো যে চাই। তাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে কোন সমস্যা নেই। 

কিছুক্ষণ পর অনামিকার রুমে প্রবেশ করলো ডক্টর নাতাশা। 

কিছুক্ষণের মধ্যেই সে অনামিকাকে হিপনোটাইস করতে সক্ষম হলো 

.

ডক্টর নাতাশা কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে অনামিকার সাথে আলাপন শুরু করে। যেমন নাম, কি পছন্দ এসব দিয়ে। তারপর ধীরেধীরে অনামিকার জীবনের সম্পূর্ণ এলোমেলো অধ্যায় শুরু হলো 

.

(অনামিকার উত্তর)  


আমার বয়স তখন সবে মাত্র সাত বছর।আমার ছোট বোন অতসী পাঁচ বছরের। আমি আমার বোন, মা-বাবা বেশ ভালোই ছিলাম। মায়ের আদরে কোথাও কমতি ছিলো। আমি মনে করতাম বোন ছোট তাই মা আমাকে সময় দিতে পারে না। মেনেও নিয়েছিলাম। আমরা সুখী পরিবার, এটা আমি মানতাম।  কিন্তু হঠাৎ একদিন জানতে পারি আমি তাদের আসল মেয়ে না। আমার মা মারা যায় আরো পাঁচ বছর আগে আর বাবা নিজের কাছে নেয়নি। কিন্তু মামার ঘরে আমি রাজকন্যা বৈ আর কি? আদর যত্ন সব পেয়েছি। অতসীর মতো বোন। নিজেকে অনেক বুঝিয়ে সবার সাথে স্বাভাবিক হতে থাকলাম। কিন্তু ওই অভাগী যে দিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়। আমিও তেমন। 

দিন যেতে থাকে মায়ের অবহেলা বাড়তে থাকে। তার ধারণা আমার জন্য বাবা অতসীকে আদর করতে পারে না। 

একজন মেয়ের জীবনে মায়ের প্রয়োজন সব থেকে বেশি কিন্তু আমার তথাকথিত মায়ের কাছে আমার কোন মূল্য ছিলো না। 

সে শুধুই অবহেলা করতো। আমারো ইচ্ছে হতো মায়ের সাথে থাকতে, কথা বলতে, একসাথে ঘুমাতে। কিন্তু আমার জন্য তো এসবের সময় ছিলোই না। 

রাতের পর রাত বিছানায় একা ঘুমিয়েছি। আর অতসী মায়ের বুকে। তাই একরাতে আমি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই। যে অতসীর জন্য আমার মা মারা যায়, বাবা ছেড়ে চলে যায় সে অতসীকে আমি কোনদিন শান্তি দিবো না। ওর থেকে ওর সব আনন্দ কেড়ে নিবো। ওর বাবা শুধুই আমার বাবা হবে। ও যেমন মা পেয়েছে!  মা নিয়েই থাকতে হবে আর আমি ওর বাবাকে সম্পূর্ণ আমার বাবা করে নিবো। 

এবং আমি খুব দ্রুত করেও নিয়েছিলাম। 

.


চলবে

(অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃক্ষিত। এখনো হাতে ব্যথা আছে তাই অল্প দিতে হলো)  

#ছবিয়ালঃমিঠু

0 Comments:

Post a Comment