গল্প চারুর_সংসার পর্ব ১২

 #চারুর_সংসার

#Written_by_Nowshin

#পর্ব_১২

.

🍂

.


আনাফঃচারু আমাকে ধরে নিয়ে একটু বারান্দায় দিয়ে আসো তো। 

চারুঃআমি সব জেনে গেছি!আপনার খেল খতম আহান চৌধুরী (রেগে)

আনাফঃমানে কী বলছো চারু কিছুইতো বুঝতে পারছিনা--(মা ও শবনমের দিকে তাকিয়ে) 

চারুঃপ্রচুরনাটক হয়েছে আর না।আপনার সিনেমায় অংশগ্রহণ করা উচিত।আপনার সবকিছু আমিজেনে গেছি!!! 

আনাফঃ(কিছু বলছে না)

চারুঃকেনো করলেন এমন?কেনো?এই নাটকের মানে কী? 

আনাফঃআমার পুরো কথা তো শুনো চারু.......

চারুঃআমি কিচ্ছু শুনতে চাই না.....


বলে চারু রুমে গিয়ে জুতা পড়ে হ্যান্ড ব্যাগ নিয়ে বাইরে চলেযায়।সে সিদ্ধান্ত নেয় এখানে আর থাকবে না।সে বের হয়ে আসে বাসা থেকে।শবনম আটকাতে গেলে হাত দিয়ে মানা করে দেয় চারু।কান্না করতে করতে বের হয়ে যায়।সে জানে না এখন কোথায় যাবে তবে বাসার সীমানা এখনো পেরোয় নি।


ফ্লাশব্যাক💔💔.............


নীলিমাঃচারু আমি যে কথাটি বলবো সেটা হয়তো তুমি বিশ্বাস করবে না তবে এটাই সত্য!আমি তুমায় সব প্রমান দিবো!

চারুঃআচ্ছা বলো..

নীলিমাঃতুমি কী জানো আনাফ চোখে দেখে!ও তোমার সামনে অভিনয় করছি।এমনকি ওর নাম আহান।আনাফ ওর নাম নয়।সব অভিনয়,সব মিথ্যা,তুমার প্রতি ভালোবাসাটাও মিথ্যা!!!!

চারুঃনা আমি বিস্বাস করিনা।আনাফ কখনই এমন করতে পারেনা!(মুখে হাত দিয়ে) 

নীলিমাঃজানতাম বিশ্বাস করবে না। মনে নেই সেদিন আন্টি আহান বললেন?তারপর দেখো এই ভিডিওটি দেখো!আর হ্যা তুমি ছাদের স্টোর রুমে যাবে সেখানে গেলেই সব বুঝতে পারবে এবং অখানে একটা ডায়রি আছে ওটা পড়লেই সব বুঝতে পারবে!!


নীলিমা একটি ভিডিও দেখায় যেখানে আনাফ নীলিমার সাথে হেসে হেসে হেটে আসছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে দেখতে পারিছে।চারু এটা দেখে কান্না করে দেয়।সে নীলিমাকে কিছু না বলেই শবনমদের কাছে যায়------


চারুঃমা আনাফ দেখতে পান তাইনা?

মাঃকী বলো।

চারুঃআর লুকাতে হবে না মা!আমি সব জেনে গেছি।কেনো করেছিলেন আপনারা এমন।মিথ্যা দিয়ে একটি সম্পর্ক গড়তে চেয়েছিলেন?শবনম?কী ভুল ছিলো আমার?বলো?উনার নাম আনাফ তাই না?আমি চলে যাচ্ছি ভালো থাকবেন।(কান্না করতে করতে)

মাঃচা....চারু,শুনো।শুনো!!!


শবনমঃআপু,আপু,প্লিজ্জজ না জেনে,না শুনে ভুল করনা।সব শুনে যাও।আপুউউউ!


চারু চলে যায়।এরপর আনাফের সাথে কী হলো উপরেই তো দেখলেন💔।


বর্তমানে......


আনাফ মাটিতে বসে কান্না করছে বাচ্চাদের মতো করে---


আনাফঃচারু তুমিও আমাকে ভুল বুঝে চলে গেলে?কেনো পুরোটা না শুনে চলে গেলে?তুমার জন্যই তো আমি এসব করেছি।আমার কিছু করার ছিলো না।(কান্না করতে করতে)


শবনমঃযা হওয়ার হয়ে গেছে। যখন সব জানতে পারবে তখন এমনিই ফিরে আসবে।


অন্যদিকে চারু......


চারুঃআমি এখন কই যাবো?বাড়িতে তো যাওয়া সম্ভব না? তারচেয়ে যেয়ে উনাদেরকে বলি আমাকে বাড়ি পৌছে দিতে।


চারু আর কিছু না বলে বাসার দিকে যায়।সে আনাফের কাছে যায়----


আনাফঃআমি জানতাম চারু তুমি আসবে!তুমি বসো আমি সব বলছি তোমাকে(কান্না মুছতে মুছতে) 


চারুকে ধরতে গেলে চারু একপা পিছিয়ে গিয়ে বলে...


চারুঃডোন্ট টাচ মি!!!!!আমাকে আজই এই মুহুর্তে বাড়িতে দিয়ে আসবেন।এন্ড আই নিড ডিভোর্স। আমি মুক্তি চাই🙏।মিথ্যা দিয়ে একটি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না।

আনাফঃচারুউউউ.....

চারুঃআপনি দিবেন নে পৌছিয়ে? বেশ!আমি একাই বের হচ্ছি।

আনাফঃঅকে তুমি যখন চাচ্ছো আমি নিয়ে যাবো। চলো।আর হ্যা চিন্তা করো না ডিভোর্স দিয়ে দিবো।(শক্ত হয়ে)


চারুর হঠাৎ মনে পড়ে নীলিমা তাকে  ডায়েরি র কথা বলেছিলো।হয়তো সেই ডায়েরিতে কোনো না কোনো রহস্য থাকবে তাই সে দৌড়ে চাবি নিয়ে ছাদে গিয়ে ডায়েরি টা নিয়ে আসে।এরপর ব্যাগে ঢুকিয়ে নে।



আনাফ চারুকে পৌছিয়ে দেয় চারুর বাড়িতে।গাড়িতে দুজন একটাও কথা বলেনি।আনাফ নিজেকে শান্ত রাখলেও ভিতরে ভিতরে কস্টের স্রোত বইছে।আনাফ গাড়িতেই থাকে ভিতরে যায়না।যাওয়ার সময় চারু একবারও পিছনে ফিরে তাকায়নি।আনাফও গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরে যায়।


চারু না জানিয়ে না  বলে হঠাৎ চলে আসছে দেখে সবাই-ই ওকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে।সবার একটাই কথা আনাফ চলে গেলো কেনো?বাসার ভিতরে আসলোনা কেনো?চারু কিছুই বলেনি!প্রশ্নগুলোকে এড়িয়ে নিজের রুমে সে চলে যায়।


অন্যদিকে আনাফ কান্না করতে করতে,ড্রিংক করে গাড়ি চালাচ্ছিলো!চোখে ঝাপসা দেখছিলো।হঠাৎ সে এক্সিডেন্ট করে।কেউ একজন হাসপাতালে ভর্তি করে ওর মা কে ফোন করে।উনারা দ্রুত হাসপাতালে যান। যদিও বেশি কিছু হয়নি একটু আধটু আঘাত পেয়েছে।শবনম চারুকে ফোন করে জানায় এক্সিডেন্ট করেছে আনাফ।চারু এটা মাথায় ই নেয়নি।সে অহহহ আচ্ছা বলে ফোন রেখে দেয়।কোনো দয়া-মায়া দেখায় না সে।অন্যদিকে আনাফ চারুর অপেক্ষা করে যে ওকে অসুস্থ শুনে আসবে।কিন্তু চারু তো আর আসে না!


দুইদিকে দুজনেই কান্না করছে।চারুর সবচেয়ে বেশি কস্ট হচ্ছে যাকে ভালোবাসলো সে ই অভিনয় করলো,মিথ্যা বলল!!!আনাফ ও চারু দুজনের আগের স্পেশাল মুহুর্ত গুলো মনে করতে থাকে।


দুইদিন পর...........



চারুর সেই ডায়েরির কথা মনে পড়ে সে ভাবে ডায়েরিটা পড়বে.....তাই ব্যাগ থেকে ডায়েরিটা বের করে।ডায়েরিটা পড়তে নিলেই কলিংবেল বাজে।চারু দরজা খুলে দেখে আনাফ ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে।মন শক্ত করে ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে যাবে তখনি মনে হয় ওর ডায়েরি টা পড়ে নেয়।


সে ডায়রিটা খুলে,,,প্রথম পাথায় লিখা.....


            ♥আমার চারু♥


এরপরের মাথায় আনাফের সাথে কয়েকটি ছবি যেগুলো চারুর মতে কখনই তারা তুলেনি!!চারু অবাক হয়ে যায়।এরপরে আরো অনেক অনেক কিছুলেখা!একদম শেষ পাতায় লিখা ----আমি জানি চারু যখন তুমি এই ডায়েরিটা পাবে তখন আমি তোমার থেকে অনেক দূরে অনেক!যেখান থেকে চাইলেও ফিরে আসা সম্ভব না!আমি আহানের কাছে রেখে গেলাম তোমাকে।আনাফ তুমাকে ভালো রাখবে।এই মোটেও কান্না করবে না!আহানের মাঝে তুমি আমাকে খুজে পাবে।ভালো থেকো।


 সব চারু পড়ে এবং কান্না করে দেয়।সে মাটিতে বসে পড়ে।


চারুঃআ.....আনাফ?আমার সব মনে পড়ে গেছে।আনাফ কখনই মরতে পারে না।সব মিথ্যা সব।আনাফের ক্যান্সার হয়নি।সব মিথ্যা।আমি প্রমাণ করবো।(কান্না করে)


১ বছর আগে..........


রিমঝিম এক বৃষ্টির দিনে দেখা হয় আনাফের চারুর সাথে,প্রথম দেখাই ই চারুকে ভালোবেসে ফেলে আনাফ।এরপর কথা হয়,মারামারি -ঝগড়া।তারপর প্রেম শুরু হয় দুজনের।আনাফ রা ছিলো দুই ভাই। একজন আহান, একজন আনাফ।আনাফ সবার বড়।আনাফ ও আহান যমজ ভাই।আনাফ চোখে দেখতো না।সে-ই আনাফকেই ভালোবেসেছিলো চারু।এতদিম আনাফ নামে এবং অন্ধ হয়ে যে অভিনয় করেছে সে হচ্ছে আহান।পরিবারের সবাই-ই আনাফ ও চারুর সম্পর্কে জানতো!


তাদের মধ্যে রকি নামের ছেলেটি চারুকে ভালোবাসতো।তাদের প্রেম দেখে সে সিদ্ধান্ত নেয় আনাফকে মেরে ফেলবে কিন্তু কিভাবে???ভাবতে ভাবতে সে ষড়যন্ত্র করে।খুবই জটিল ভাবে।আনাফের একটা সমস্যা ছিলো মাথায় সেজন্য সে প্রতিমাসে ডক্টরের কাছে যেতো।সেবারও গিয়েছিলো আর রকি ডক্টরকে টাকার লোভ দেখিয়ে ফেইক রিপোর্ট বানিয়ে বলে যে ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে।আনাফ এসব শুনে  কান্না 

করে দেয়।সে সবাইকে জানায় শুধু চারু বাদে কারণ চারু এসব শুনলে কাদতে কাদতে মরেই যাবে।সবাইকেও নিষেধ করে যাতে চারুকে না জানায়।


এভাবে ইঞ্জেকশন মেরে আনাফকে অসুস্থ রাখে ডক্টর। কয়েকমাস পর বিষাক্ত ইঞ্জেকশন মেরে আনাফকে মেরে ফেলে তারা।আর জানিয়ে দেয় ক্যান্সারে মারা যায়।সবাই কান্নাগ ভেংগে পড়ে।আর সবাই জানতো এমনটাই হবে।আনাফের মৃত্যুর পর চারুকে জানানো হয়।চারু শুনে কান্না করতে করতে অনেকবার বেহুশ হয়ে।শেষ মেশ কেউই আটকাতে পারেনি চারুকে!চারু দ্রুত আনাফদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। আর যাওয়ার পথে এক্সিডেন্ট করে।মাথায় বড়সড় আঘাত পায় ফলেআগের সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলে। অতীতের কিছুই মনে ছিলোনা তার।১ মাস পর সুস্থ হয় চারু।।তখন এসব কিছুই মনে নেই তার। নতুন করে সব শুরু করে চারু।



।।


মৃত্যুর আগে আনাফ আহানের হাত ধরে বলে যে-----সে যেনো চারুকে বিয়ে করে।চারুকে ভালোবাসে।চারুকে কস্ট না  দেয়।চারু যেনো আহানের মাঝে আনাফকে খুজে পায়।সে তার নামটাই যেনো ব্যাবহার করে,এবং অন্ধ হওয়ার অভিনয় করে।


প্রথমে আহান মানা করলেও আহানের শেষ ইচ্ছা ভেবে সবকিছু ভুলে রাজি হয়।চারুকে আনাফ কখনই বলেনি যে ওর ভাই যমজ।চারু শুধু এটা জানতো যে আনাফের ভাই আছেএবং ১টি বোন। যমজ কি না সেটা জানতো না!!


আনাফের মৃত্যুর পর পুরো পরিবার স্তব্ধ হয়েছিলো!!তারাকিছুতেই মানতে পারছিলো না।প্রায় ২মাস লাগে সবকিছু  স্বাভাবিক হতে।


আহান সন্দেহ করেছিলো রকিকে কিন্ত পরে সবকিছু ভুলে যায়।।।


(চারুর সাথে যার বিয়ে হয়েছে সে হচ্ছে আহান।)


বর্তমানে........


চলবে........


কেমন লাগলো এই পার্ট?এই পার্টটি লিখতে গিয়ে আমার নিজেরই মাথা ঘুরতেছিলো🥴🥴।যা ভেবেছিলাম সব ভুলে গেছি!আমি আজ জানতে পারলাম যে আমার মাথায় এমন প্যাচ ঘুচ আছে🥴।

0 Comments:

Post a Comment