গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ৩১

 #দায়িত্বের_সংসার

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ৩১ 

.

.

মানুষের সব কিছুই ছোট ছোট।

জীবন ছোট, ভালবাসাবাসির দিন ছোট,

শুধু দুঃখের দিন কাল দীর্ঘ !


হুমায়ূন আহমেদ এর কথাটা হয়তো সত্যি । অতসীর জন্য সুখের সময়কাল গুলো সত্যি খুব ছোট। সবে মাত্র সুখের গন্ডিতে পা রেখেছিলো।  সুখ হয়তো ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। 

.

পাগলের প্রলাপ করে অতসী একসময় নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। সায়ান বা দিহান!  কেউ তুলেনি। ইফাদ দুহাতে আকড়ে তুলে কাউচে শুইয়ে দিয়েছে। 

ব্লাড প্রেশার একদম লো। এত কম ব্লাড  প্রেশারের জন্য মানুষের বেশ ক্ষতি এমনকি এট্যাকা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রাইমা ঠাই বসে আছে অতসীর পাশে। অতসীর মাথা কোলে নিয়ে বসে আছে অতসীর মা। 

.

.

-বাবা তুমি তো ডক্টর!  এমন কিছু দেও আমার মেয়েকে যেনো ও মরে যায়। ওর মতো মেয়ে বেঁচে থেকে কি করবে? 

আজ সত্যি মনে হচ্ছে ওর বাবা ঠিক বলে 

ও আসলেই কুফা। না হলে অভাগীর কপাল যেদিকে যায় পুড়তে পুড়তে কেনো যায়?  তোমরা ওকে মেরে ফেলো। আমি তো মা!  সহ্য করতে পারবো না। আমি নামাজে বসবো বাবা। আল্লাহ্ এর কাছে এই প্রথম আমি আমার মেয়ের মৃত্যু চাইবো। তোমাদের সুখের জন্য। শুনেছি মা-বাবা আল্লাহ্ এর দরবারে সন্তানের জন্য যা চায়, মুখ ফুটে বলে আল্লাহ্ তালার ফেরেশতা না কি সাথে সাথে আমিন বলে। এতদিন ওর বাবা চাইতো। আজ মা হয়ে আমিও চাইছি 

ওকে মেরে ফেলো। বেঁচে থাকলে শুধু অবহেলায় পড়ে থাকবে। 

.

কথাগুলো শেষ করে অতসীর মা দ্রুত উঠে চলে যায়। অতসীর মাথা ওর মায়ের কোলে ছিলো, উঠে যাওয়াতে অতসী  কাউচের থেকে কিছুটা নিচে পড়ে যাচ্ছিলো।

রাইমা আগে দিহান হাত পাতে। দিহানের হাতে অতসীর মাথা এলিয়ে আছে। চুলগুলো পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। 

এক হাতে অতসীর চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছিলো দিহান। 

.

অতসীর চেহারার পরিবর্তন বেশ স্পষ্টত। চোখ, মুখ বেশ শুকনো। চোখের কার্ণিশে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায়। 

কি এমন হতো কিছু দিন অপেক্ষা করলে?  

অতসীর কান্নামুখ কখনো দিহানের পছন্দ ছিলো না। 

সে বার যখন অনামিকা-সায়ানের বিয়ের জন্য গিয়েছিলো গ্রামে!  তখন অতসীর বাবা ওকে বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে বকেছিলো, বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছিলো। 

তখন অতসী চুপচাপ দাঁড়িয়ে অসহায় ভাবে তাকিয়ে ছিলো পুকুরের পানির দিকে। 

বিকেলে যখন অনামিকার গায়ে হলুদ শুরু হলো 

অতসীর বাবা সবার সামনে অতসীকে ডেকে বলেছিলো রীতিনীতি শেষ না হওয়া অবধি অতসী যেনো বাড়িতে না আসে। 

টকটকে লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি পড়ে অতসী হয়তো এসেছিলো সবার মতো হলুদে থাকতে কিন্তু ওই যে!  ওর বাবা তো মানে অতসী কুফা। শুভ কাজে থাকতে নেই। 

অতসী সে বিকেল পুরোটা গ্রামের বাড়ির দিঘির পাশে বসে ছিলো। অনুষ্ঠান শুরু হলো সন্ধ্যেবেলা। মেয়েটার তো আবার তেনাদের ভয়! 

ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা অতসীকে দেখে প্রথম বার প্রেমে পড়েছিলো দিহান। শুনেছি 

করুণা থেকে ভালোবাসা জন্মায়। হয়তো অতসীর প্রতি দিহানের করুণা ছিলো। 

.

-এখানে কি করছেন? 

অতসী একবার দিহানের দিকে তাকিয়ে আবার পানির দিকে তাকালো। 

দিহান অতসীর পাশে বসে ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে বললো 

.

-বাহ্!  মানতেই হবে আপনি তো খুব সাহসী মেয়ে৷ না হলে এই ভর সন্ধ্যে বেলা কেউ এভাবে দিঘির পাশে বসে থাকে?  চলেন!  বন্ধুর শালী। 

.

অতসী তবুও চুপ। বাড়ি গেলে কথা শুনতে হবে। আর কিছুক্ষণ পর অনুষ্ঠান শেষ হলেই মা ডাকতে আসবে। 

.

-কি হলো চলুন!  আপনার বোনের গায়ে হলুদ আর আপনি......

-আমাকে বাড়ির কোন শুভ কাজে থাকতে নিষেধ আছে। 

-কেনো? 

-আমার জন্মের সময় আমার ফুপু মারা যায়,তাছাড়া আমি কোন কাজে থাকলে সে কাজ ঠিকঠাক হয় না। 

-কি সব কুসংস্কার!  আচ্ছা তবে অন্য কোথাও গিয়ে বসুন। যদি ভূতে নিয়ে যায়?  

.

অতসী এবার শব্দ করে কান্না করে দিলো। দুহাতে শাড়ির আঁচল শক্ত করে আকড়ে ধরে বললো 

.

-আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই।

থাকলে আমি অনেক আগেই চলে যেতাম। বিশ্বাস করুন!  আমি সত্যি থাকতাম না। আমার তেনাদের বড্ড ভয় করে। যদি আমাকে মেরে পানিতে ফেলে রেখেও যায় আমার লাশ কেউ পাবে না। আর এখন বাড়ি ফিরে গেলে আপুর অনুষ্ঠানে কিছু হলে আবার প্রমাণ হবে আমি কুফা। 

.

দিহানের প্রচন্ড খারাপ লাগছিলো কিন্তু কিছু করার নেই। অতসীর পাশে বসে চুপচাপ দেখছিলো। প্রায় ঘন্টাখানেক পর অতসীর ডাক পড়লো বাড়ি ফিরে যেতে। অতসী উঠে দাড়াতেই দিহানের পায়ের নিচে থাকা শাড়ির আঁচলের এক কোণায় টান পড়লো। হুড়মুড়িয়ে দিঘির পানিতে পড়ে যাচ্ছিলো। দিহান একহাতে অতসীকে টেনে ধরে। 

অভয় দিয়ে দিহান বলেছিলো 

-ভয় পাবেন না মাই লেডি!  আমি তো আছি। বিশ্বাস করে দেখুন আমি আপনার হাত ছাড়বো না।

.

.

কারো ধাক্কায় দিহান অতীত থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। ধাক্কাটা আর কেউ না সায়ান দিয়েছে। 

দিহান কে সরিয়ে সায়ান অতসী কে কোলে তুলে নেয়। 

পা বাড়ায় দরজার দিকে। দিহান বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করে 

.

-সায়ান এই অবস্থায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস? 

-বাসায়। 

-এখন ওর ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। 

-ও এতটা অসুস্থ না যে হস্পিটালাইজড করতে হবে। 

-লিভ হার সায়ান! লিভ মাই লেডি!  

-নো সি ইজ মাই ওয়াইফ!  এন্ড ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু টাচ হার!  

.

দিহান এই পর্যায়ে বেশ রেগে যায়। বলতে থাকে 

.

-কয় বউ লাগে তোর?  হ্যাঁ? আজকে তোর ওয়াইফ!  যেদিন মেরেছিস সেদিন?  অত্যাচারের সময় মনে ছিলো না?  আজকে হঠাৎ তোর ওয়াইফ হয়ে গেলো?আজ যদি বলি তোর জন্য লেডির এই অবস্থা!  তুই কেনো সব শেষ করে দিলি?  আমার সাথে কি ভালো ছিলো না? ছিলো তো। আমরা বিয়ে করে নিতাম। ওকে নেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছিলাম কিন্তু ফিরে আসার আগেই তুই সব শেষ করে দিয়েছিস।

.

দিহানের দিকে তাকিয়ে সায়ান খুব শান্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিলো 

.

-আমার বুকে অতসী কে দেখে  তোর যেমন কষ্ট হয়, ঠিক তেমন তোর পাশে অতসীকে দেখেও আমার কষ্ট হতো। 

অতসী কে তুই যখন লেডি বলে ডাকতি তখন মনে হতো আমি তোর ঠোঁট কেটে ফেলি। 

তোর শার্টে যখন অতসীর চোখের কাজল লেগে থাকতো আমার কি ইচ্ছে হতো জানিস? 

তোর হৃদপিণ্ড বরাবর ছুড়ি দিয়ে আঘাত করি।

তোর জন্য অতসীর হাসি, অপেক্ষা সব আমাকে হিংস্র করে তুলতো।

কারণ অতসী শুধু আমার। 

এই যে ওর দুহাত!  এই দুহাত শুধু আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য, এই চোখের কাজল,ঠোঁটের লিপস্টিক, শাড়ির আঁচল সব শুধু আমার জন্য। অথচ তুই কি করতি?  তুই আমার সামনে অতসীর আঁচলে মুখ মুছে নিতি। এসব বড্ড লাগতো। পুড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছিলো আমায়। তাই তো........ 

.

- সায়ান!  তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?  তোর চিকিৎসা প্রয়োজন!  ইফাদ ওকে মনোবিজ্ঞানীর সাথে যোগাযোগ করতে বল। 

- আমাকে যেতে দে দিহান। অতসীর রেস্ট প্রয়োজন। 

- এত যখন অতসী কে ভালোবাসিস তাহলে অনামিকা কে বিয়ে কেনো করেছিলি?  না কি বিয়ের পর...... 

- তুই ভালোবাসার ৫ মাস ১৭ দিন ২৩ ঘন্টা আগে থেকে আমি অতসীকে ভালোবাসি। 

-তাহলে কেনো এত কষ্ট দিচ্ছিস?  জানিস না ভালোবাসাকে মুক্ত রাখতে হয়? 

-আমার ভালোবাসা আমাতেই আবদ্ধ থাকবে। অতসীকে বিয়ে আমি প্রতিশোধ নিতে করেছিলাম। যে মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে না বলে আমার মা কে অপমান করেছিলো সে মেয়ে কিভাবে আমার বন্ধুর প্রেমে পড়লো? আমাকে ভালোবাসতে আমি ওকে বাধ্য করেছি।আশা করছি উত্তর পেয়ে গেছিস। 

.

.

পিছন থেকে অতসীর মা নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো 

.

-তোমার বাড়ি থেকে অতসীর জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসেনি, এমনকি অতসী তোমার মা কে অপমান করেনি। করেছিলো তোমার প্রথম স্ত্রী অনামিকা। 

.

.

চলবে 

#ছবিয়াল_নুসরাত

0 Comments:

Post a Comment