গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ২০

 #দায়িত্বের_সংসার 

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ২০ 

.

.

অতসী বেশ আরাম করে বসেছে। পা উঠিয়ে কোলের উপর বই রেখে বসে বসে পড়ছে। পৌঁছাতে মিনিমাম তিন ঘন্টা লাগবে। জ্যামে পড়লে তো কথাই নেই। সাড়ে নয়টা নাগাদ বেরিয়েছে। কিছুদূর যেতেই সায়ান দেখলো দিহানের গাড়ি দাঁড়ানো। ইফাদ বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। অতসীর দিকে তাকিয়ে দেখলো অতসী বইয়ের দিকে তাকিয়ে এক মনে পড়া দেখেই যাচ্ছে।সে চাচ্ছে না দিহান কে অতসী দেখুক। অন্তত এখানে তো নয়। 

দিহানের গাড়ি ক্রস করে সামনে থামলো সায়ান। 

সায়ানের গাড়ি দেখে ইফাদ এগিয়ে যায়। 

.

অতসীর পাশের গ্লাস খুললেই অতসী মুচকি হেসে নেমে দাঁড়ায়। 

ইফাদ পর পর দুটো বক্স এগিয়ে দেয়। 

এখানে চকলেট আছে, যদিও তুমি খাও না। কিন্তু খেয়ে নিবে। এক্সামের আগে তো অবশ্যই একটা। আর পানি কিন্তু মাস্ট। শুনো যেতে সময় লাগবে অনেক। হিজাব খুলে নাও। না হলে মাথা গরম হয়ে যাবে। 

.

অতসী হেসে মাথা নাড়িয়ে আবার গাড়িতে উঠে বসে। দূর থেকে দিহান, রাইমা অতসী কে দেখছিলো। দিহানের চোখেমুখে প্রশান্তির হাসি থাকলেও রাইমার যেনো কেনো সব বিষাদ বিষাদ লাগছে। 

.

.

ইফাদ সোজা হয়ে দাড়াতেই আবার অতসীর জানালায় ঝুকে দাঁড়িয়ে দুহাত বাড়িয়ে  অতসী হাত ধরে  বলে 

.

-আপুরে!  জীবনে অনেক সময় হঠাৎ করেই আমদের জীবনের অপ্রিয় সত্য গুলো সামনে চলে আসে। তাই বলে কিন্তু আত্নার সম্পর্কগুলো ভেঙে যায় না!  নিয়তি কে মেনেই চলতে হয়। তুমি সাহসী মেয়ে। যেকোন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে পারবে এটা আমার বিশ্বাস। সাবধানে যাও। ফাটিয়ে এক্সাম দিবা, এসে কিন্তু বাদামের মরিচবাটা দিয়ে ভাত রান্না করে খাওয়াতে হবে। 

.

অতসী কে ছেড়ে দিয়ে সায়ান কে তাগিদে করে দ্রুত যেতে। 

এদিকে অতসীর মন তো কু ডাকছিলো, ইফাদের কথা শুনে আরো তীব্রভাবে ভয় ঝেকে বসেছে। 

.

.

সায়ান গাড়ি মাস্টার লক করে নেয়। সব জানালা উঠিয়ে এসি অন করে আনমনে এগিয়ে যাচ্ছে। অতসী পড়ছে তো পড়ছে। মনে হচ্ছে বিদ্যাসাগরের বউ। 

চন্দ্রা ক্রস করতেই পড়লো জ্যামে। 

টিফিন বক্স খুলে অতসীর সামনে নিতেই অতসী সরিয়ে দেয়। 

.

-এক্সামের আগে আমি ডিম খাই না। 

-আশ্চর্য!  এটা কেমন কথা?

.

-ডিম খেলে এক্সামের খাতায় ডিম পাবো। তখন? 

-চুপচাপ খেয়ে নাও। 

-না! প্লিজ!  

.

অতসী এমন ভাবে বললো  সায়ান আর জেদ করলো না। জ্যাম ছাড়তে অনেক ক্ষন লাগবে। সায়ান নিজেই হাত ধুয়ে  রুটি ছিড়ে এগিয়ে ধরলো অতসীর দিকে। 

.

অতসী এক পলক তাকিয়ে আবার সায়ানের দিকে তাকায়। 

.

- রাতে ঠিক মতো খাওনি, সকালে শুধু দুধ এখন না খেলে খবর আছে। 

.

কথায় কথা বাড়ে অতসীর কথা বাড়ানোর মুড নেই । দ্রুত খেয়ে নিলো। 

 মির্জাপুর ক্রস করার পর কখন অতসী  ঘুমিয়েছে নিজেও জানে না। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে সায়ানের  হাত ধরে আছে, সায়ান ড্রাইভ করছে। কোথায় আছে দেখার জন্য চোখ খুললেই বুঝতে পারে কেবল ওরা টাংগাইল বাইপাস ক্রস করলো। উদ্বিগ্ন কন্ঠে অতসী সায়ান কে বলে 

.

- এই এই!  এদিকে না। আমরা ভুল এসেছি তো। 

- উঁহু!  ঠিক যাচ্ছি। 

-বাইপাস রেখে আসছি। 

-ঘারিন্দা বাইপাস দিয়ে ঢুকবো। সাবালিয়ার দিকে নিরিবিলি আছে। ওখানে পার্কিং প্রব্লেম হবে না। 

.

.

সায়ানের হাত ছেড়ে দিয়ে অতসী উঠে বসে। প্রায় দেড় ঘন্টার মতো ঘুমিয়েছে। সায়ান পানির বোতল এগিয়ে দিলে চোখে মুখে পানি দিয়ে আবার হিজাব বেধে নেয়। 

কুমুদিনীর পিছনে গাড়ি পার্কিং করে বসে আছে ওরা। 

সায়ান মনে করেছিলো অতসী এসেই কলেজে চলে যাবে কিন্তু চুপচাপ বসে পড়ছে। এদিকে সময় যত এগিয়ে আসছে অতসীর অস্থিরতা দ্বিগুণ বেগে বাড়ছে।  ঠিক পনেরো মিনিট আগে অতসী বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সায়ান একটা চকলেট খুলে অতসী কে দেয়। প্রায় গলেগেছে। অতসীর মুখে লেগে যাচ্ছে। সায়ানের হাত থেকে খেয়েই বের হয়। পিছন পিছন সায়ান আসে।  

 অতসীর দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে গেটে দাঁড়ায়। এর বেশি এলাউ না।   অতসী বার বার আল্লাহ্ কে ডাকছে। সে পড়তে চায় না দিহানের সামনে, রাইমার সাথে কথা বলবে কিভাবে?  

এসব ভাবতে ভাবতেই এক্সাম হলে ঢুকে পড়লো। 

সবাই অতসী কে দেখে এগিয়ে এসে কথার ঝুড়ি নিয়ে বসলেও বেশি সময় পারলো না। কারণ খাতা দিয়ে দিয়েছে। 

প্রতিবার এক্সামে অতসী এক মিনিট আগেও বের হয় না৷ কিন্তু এবার ৩০ মিনিট আগে খাতা জমা দিলো। 

দ্রুত পায়ে বেরিয়ে আসতেই পিছন থেকে রাইমা হাত ধরে টেনে হোস্টেলের গেইটের কাছে নিয়ে যায়। 

.

-অতসী!  তুই কি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছিস?  

- না! আসলে মি. মাহমুদ অপেক্ষা করছে। 

-করুক!  তুই এই গেট দিয়ে বেরিয়ে যা!  দিহান তোর জন্য অপেক্ষা করছে। 

-মানে?মাথা ঠিক আছে?  

-হ্যাঁ! এমন সুযোগ  আর হয়তো আসবে না। দিহানের গাড়ি এখান থেকে কিছু দূরে। তুই যা। আমি সামলে নিবো।

.

অতসীর চোখ এবার রাইমার গলার দিকে যায়। ওড়না সরে গিয়েছে। 

না বুঝলেও এতটা অবুঝ অতসী না। কান্নাগুলো কি দলা পাকিয়ে গলায় আটকে গেলো?  

কয়েকবার জোড়ে শ্বাস নিলো মেয়েটা। রাইমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো 

.

-কি চাচ্ছিস রাই?  

-তুই দিহানের সাথে চলে যা, নিজের সব স্বপ্ন পূরণ কর। দিহান তোকে খুব করে চায়৷ 

-আমি মি. মাহমুদের রেজিষ্ট্রি করে, কালেমা পড়ে বিয়ে করা বউ। যেমন টা তুই দিহানের। এখন কি তুই আমাকে মি.মাহমুদ কে আর তুই মি. দিহান কে ডিভোর্স দিতে বলছিস?  জীবন টা কোন সিনেমা না!  এখানে চাইলেও এসব হয় না। 

.

অতসী এত শান্ত গলায় কথাগুলো বললো না !  রাইমার শিড়দাড়া ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। 

অতসী আবার বললো 

- মি. দিহান অবশ্যই ভালো মানুষ। তোকে আগলে রাখবে। চিন্তা করিস না। সময় সব ঘা মিটিয়ে দিবে। আমার কোন ভবিষ্যৎ নেই৷ অনামিকা আপু সুস্থ হলে আমি কোথায় যাবো জানি না। কিন্তু এতটা স্বার্থপর হতে পারবো না তোর থেকে সব কেড়ে নিবো। 

.

কথা বলার এক সময় অতসী রাইমার গলায় ওড়না ঠিক করে দেয়। 

-এসবের পর তুই পারবি দিহান কে ছাড়তে?  সব তো তুই দিয়ে দিয়েছিস। 

-তুই ভুল বুঝছিস!  আসলে 

-ভালো থাকিস। 

-অতসী আমার কথা কিন্তু শেষ হয়নি 

.

অতসী দাঁড়ায় না। দ্রুত পা চালায়। পিছন থেকে রাইমা জোড়ে জোড়ে বলতে থাকে 

- তুই কি জানিস?  তুই আর অনামিকা আপু আপন বোন না?  এক রক্ত না?  তুই কি জানিস?. 

.

.

চলবে

0 Comments:

Post a Comment