#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৩৪
.
.
অতসীর থমথমে কান্নাজড়িত কন্ঠে ডিভোর্স চাওয়া সায়ানকে একটুও বিচলিত করলো না।
এমন চুপচাপ থাকতে দেখে অতসী মাথা তুলে সায়ানের দিকে তাকালো।
চোখ বন্ধ করে আছে।
চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। একদিনে বয়স কি বেড়ে গেলো?
দাড়ি গুলো হালকা বড় হয়েছে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক।
অতসীর শ্বাস সায়ানের মুখে পড়তেই সায়ান চোখ মেলে তাকালো।
অতসী আবার বলে উঠলো
.
-আমার ডিভোর্স চাই!
.
অতসীর কথায় সায়ান কোন কিছুই বললো না। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অতসীর চোখের দিকে।
সায়ানের স্থির চাহনী অতসীকে এলোমেলো করে দিচ্ছে।
.
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সায়ান বললো.....
-একটা কবিতা শুনবে?
- উঁহু! আমি কিছু বলেছি
-হ্যাঁ!
-কবে দিবেন? আপু সুস্থ হওয়ার পর? না কি আগে?.
.
অতসী কথা শেষ করতে পারে না। কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে গলায় আটকে যাচ্ছে। অতসীর কথায় কোন কর্ণপাত করলো বলে মনে হলো না।
.
সায়ান অতসীকে কোলে নিয়েই উঠে দাঁড়ায়।পা বাড়ায় বিছানার দিকে।
.
অতসীর শাড়ির আঁচলে বাধা পড়েছে যে সায়ান! পৃথিবীর কোন প্রেমিক পুরুষ তার প্রিয়তমার এই বাধন থেকে মুক্ত হতে চায় না। একজন পুরুষ চায়, একজন নারী তাকে আগলে রাখুক, সামলে রাখুক। ভালোবাসার আবদার করুক প্রয়োজনে শাসন! যদি কোন প্রেমিক পুরুষ এমনটা না চায়! তাহলে বুঝে নিতে হবে
সম্পর্কে প্রেম নামক কোন কিছু ছিলোই না! যা ছিলো শুধুই আবেগ,মায়া কিংবা আকর্ষণ।
.
সায়ানের স্পষ্টত্ব চাহিদা জানান দিচ্ছে তার দু চোখ।
অতসীর সায়ানের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগলো
.
খুব কাছে এসো না কোন দিন
যতটা কাছে এলে কাছে আসা বলে লোকে
এ চোখ থেকে ঐ চোখের কাছে থাকা
এক পা বাড়ানো থেকে অন্য পায়ের সাথে চলা
কিংবা ধরো রেল লাইনের পাশাপাশি শুয়ে
অবিরাম বয়ে চলা ।
যে কাছাকাছির মাঝে বিন্দু খানেক দূরত্বও আছে
মেঘের মেয়ে অতো কাছে এসোনা কোন দিন
দিব্যি দিলাম মেঘের বাড়ীর, আকাশ কিংবা আলোর সারির।
তার চেয়ে বরং দূরেই থেকো
যেমন দূরে থাকে ছোঁয়া, থেকে স্পর্শ
রোদ্দুরের বু্ক, থেকে উত্তাপ
শীতলতা, থেকে উষ্ণতা
প্রেমে্র, খুব গভীর ম্যাপে যেমন লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা
তেমন দূরেত্বেই থেকে যেও-
এক ইঞ্চিতেও কভু বলতে পারবে না কেউ
কতটা কাছা কাছি এসেছিলে বলে দূরত্বের পরিমাপ দিতে পারেনি পৃথিবী।
(রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্)
.
.
সায়ান মুচকি হেসে উঠে আসে।
-তুমি যেদিন নিজ থেকে এসে আমাকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নিবে! যেদিন পুরো পৃথিবীর প্রতিটি ঈশারা তোমাকে জানান দিবে, তুমি আমাকে ভালোবাসো! সেদিন আমি আমার অধিকার চাইবো। কিন্তু তোমাকে মুক্তি দিতে পারবো না।তোমার ভাষায় ডিভোর্স আমার ভাষায় মরণ! আমি স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে কেনো বেছে নিবো? আমি এতটা বোকা না মিসেস. মাহমুদ!
তুমি আমার নও তো কারো নও! এটা মাথায় রেখো৷
.
খুব ছোট কিন্তু একটা গভীর স্পর্শ চুমু দিলো সায়ান অতসীর কপালে। গায়ে চাদর টেনে দিয়ে বললো
-ঘুমাও! সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে।
.
.
বেহালায় সুর তুলেছে রেদোয়ান। আজ হঠাৎ ইচ্ছে করছে।
অফিসে নিজের কেবিনে বসেই সুর তুলেছে রেদোয়ান।
.
Everytime in my dreams গানের সুর তুলেছে।
হ্যাঁ! ইদানীং সে বড্ড মিস করে। হাসি হাসি মুখ,গালের তিল, হাত নাড়িয়ে কথাবলা।মেয়েটা হাসলে যেনো চোখ দুটো হাসে৷
ইদানীং নিঃসঙ্গ সময় বড্ড পোড়ায়,শত ব্যস্ততার মাঝেও রেদোয়ান ফোনের স্ক্রীনে হাসি মুখ দেখতে সময় হয় কিন্তু আগে না ছিলো চাহিদা না ছিলো ইচ্ছা।
মেয়েটা চাতক পাখির মতো বসে থাকতো একটু কথা বলার জন্য। অথচ তখন সময় দেয়নি।
কি করেছে সে? আজ যদি সব ঠিক থাকতো তাহলে ছোট্ট একটা পরী হয়তো আজ রেদোয়ানের সন্তান হিসেবে পৃথিবীতে থাকতো। কোন নর্দমায় ভেসে থাকতো না।
প্রেমটা হয়তো শুধু শারিরীক সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলো তাই তো ভালোবাসা প্রমাণ করতে রেদোয়ান যেমন বুকের লোম ত্যাগ দিয়েছিলো তেমনি মেয়েটার স্বতীত্ব নিয়ে ভালোবাসার প্রমাণ নিয়েছিলো।
যখন জানতে পারলো মেয়েটার ভিতরে বেড়ে উঠছে তার নিজ স্বত্বা! ঠিক তখন ঘিরে ধরলো ব্যস্ততা! শতশত কল, ম্যাসেজ দেখেও দেখার সময় হয়নি রেদোয়ানের। যেদিন সব শেষ হয়ে গেলো সেদিন থেকে মেয়েটি আর যোগাযোগ করেনি।ভালোবাসার দাবী, অধিকারের দাবী নিয়ে আর আসেনি। রেদোয়ান ফিরে গিয়েও লাভ হয়নি। কারণ সে এক কথাই বলেছিলো
.
-আমি আমার প্রথম সন্তানের খুনীকে কখনো মাফ করতে পারবো না। কখনো না৷
.
.
দিহান ছয় মাসের জন্য ছুটিতে আছে। সেদিনের মেন্টাল টেস্টে রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে। তাই ছয় মাসের জন্য বিরতি দেওয়া হয়েছে।কিন্তু সায়ানের বেশ সাপোর্ট হয়েছে দিহান।
যেখানে এদেশে এক মেয়ের জন্য দুই বন্ধুর প্রাণ যায় সেখানে এক মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য দিহান সায়ানকে আগলে রাখছে।
বছর খানেক পর আজ তিন বন্ধু আড্ডায় বসেছে। অনামিকা কে বাসায় নিয়ে এসেছে। ইফাদ আশা করছে খুব দ্রুত সুস্থ হবে। প্যারালাইজড হলেও অনামিকা সব শুনতে অনুভব করতে পারে।
.
সময় বহমান। পার হয়ে গেলো দুটো মাস। আজকের দিনের জন্য অতসীর অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। রাত জেগেছে, সব দায়িত্ব পালন করেছে, সায়ান কে সামলেছে, সংসার সামলেছে। সম্পর্কগুলো গুছিয়ে নিয়েছে। কেমন? যেমন
.
অতসীর সারাদিন কেটে যাচ্ছে সব সামলাতে।
আবার আজ শাড়ি পড়েছে। সায়ান শাড়ি ছাড়া অতসীকে দেখতে নারাজ। ইদানীং অবশ্য অভ্যেস হয়েছে।
অনামিকার প্রোপার কেয়ার তারপর আবার সবার জন্য রান্না করতে হচ্ছে। রাইমা, অতসী আজকে পাক্কা গিন্নী লুকে আছে।
সারাদিনে বেশ আড্ডা হলো।
.
ধীরেধীরে রাইমার সাথে দিহান স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। এদিকে আফরিনের সাথেও সব ঠিক। আজ সায়ান-অনামিকার বিয়ের এক বছর পূর্ণ হলো। সায়ানের বন্ধু,রাইমা, আফরিন, অনামিকার অতসীর মা-বাবা সবাই আজ এসেছে। অতসী আজ সায়ান কে উপহার দিবে।সবাই এসেছে। আফরিন আজ ওদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠেছে। অতসীর প্রতি কোন অভিমান নেই। সব জানার পর অতসীর কাছে আফরিন নিজে সরি বলেছে। বেলা গড়িয়ে
প্রায় সন্ধ্যে। সায়ান অপেক্ষা করছে অতসীর উপহারের জন্য।
ধীর পায়ে অতসী অনামিকার রুম থেকে বেরিয়ে আসছে। সায়ানের উপহার নিয়ে।
.
অনামিকা! সায়ানের উপহার অনামিকা কে নতুন বউয়ের সাজে সাজিয়েছে অতসী৷ সব থেকে অবাক করা বিষয় অনামিকা নিজের দুপায়ে দাঁড়িয়ে বউ সেজে হাসি মুখে এগিয়ে যাচ্ছে সায়ানের দিকে।
.
.
চলবে
#ছবিয়ালঃআশিক
0 Comments:
Post a Comment