গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ৪০

 #দায়িত্বের_সংসার

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ৪০


একজন নারী পারে সন্তানকে যেকোন ভাবে গড়ে তুলতে। সন্তান কেমন হবে নির্ভর করে  মায়ের উপর।  সন্তানের শৈশব  হলো কাঁদা মাটির মতো।  মা যেমন চায় তেমন শিক্ষা দিয়ে সন্তানের মনুষ্যত্বের কাঠামো তৈরী করতে পারে। তারপর বাস্তবতা, শিক্ষা দিয়ে সেই কাঠামোকে শক্ত, মজবুত তৈরী করার ক্ষমতা শুধু মা রাখে।

মায়ের অবদান সন্তানের জীবনে সব থেকে বেশি। বাবা চাইলেও মায়ের কমতি পূর্ণ করতে পারে। 


নারী কি নদীর মতো

নারী কি পুতুল,

নারী কি নীড়ের নাম

টবে ভুল ফুল।


নারী কি বৃক্ষ কোনো

না কোমল শিলা,

নারী কি চৈত্রের চিতা

নিমীলিত নীলা।

(হেলাল হাফিজ).


নারী চাইলে গড়তে পারে ভাঙতে পারে। অতসীর মা নিজের মাঝে কুকড়ে যাচ্ছে। কারণ সে নিজে। সে চাইলে অনামিকার প্রতি যত্নশীল হতে পারতো। তাহলে অতসীর প্রতি তার বাবার এমন মনোভাব কেটে যেতো।

শুরু থেকে!  অতসীর জন্মের পর থেকেই সে অতসী অনামিকা কে আলাদা চোখে দেখেছে। খুব কি ক্ষতি হতো যদি দুজন মেয়েকে নিজের বুকে সমান ভাবে আগলে রাখতো? হয়তো পারতো! তাহলে হয়তো আজ দুই মেয়ের জীবনে এমন পরিস্থিতি আসতো না। 


ডক্টর নাতাশা কিছুক্ষণ সময় নিয়ে অনামিকাকে আবার জিজ্ঞেস করে 


-তুমি কি মিসেস মাহমুদ কে চিনো?  

অনামিকা ধীর গলায় উত্তর দেয় 


-হ্যাঁ! আমার শ্বাশুড়ি মা

-তার সাথে তোমার প্রথম দেখা কোথায় হয়?  

-নানা বাড়ি 

-তুমি কি তাকে আগে থেকে চিনতে? 

-না! 

-অপমান করেছিলে কেনো? 

-আমি করতে চাইনি। কিন্তু সে যখন আমাকে আংটি পড়াতে এসেছিলো তখন আমার এটা ছাড়া উপায় ছিলো না।

-কেনো? 

-কারণ...... 

-কি কারণ?  

-আমি.... আমি...

-আচ্ছা!  বাদ দাও। তাহলে পরে কেনো সায়ানের সাথে দেখা করেছিলে?  

-প্রতিশোধ নিতে 

-প্রতিশোধ?  কিসের প্রতিশোধ? 

-অতসীর জীবন থেকে সব ভালোবাসার মানুষ কেড়ে নিতে। 

-কেনো? অতসী তোমার বোন। 

-আমিও মানতে চেয়েছি। বার বার চেয়েছি। যখন যখন সব ভুলে মায়ের কাছে গিয়েছি শুধু শান্ত অপমান ছাড়া আর কিছুই পাইনি। আমারো মা চাই! বাবার আদর ছিলো কিন্তু মা তো মা!  জীবনের সবথেকে খারাপ সময় পার করছিলাম আমি। ভালোবাসার প্রত্যাখ্যান, একটা নতুন স্বত্বা, ক্যারিয়ার সব কিছু আমাকে জেকে ধরেছিলো। আমি চাইলেও মুক্ত হতে পারছিলাম না। তখন আমার মায়ের কোল বেশি প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু যেদিন আমার মায়ের অবহেলার কারণে আমি আমার নিজের ছোট্ট  স্বত্বা হারিয়ে ফেললাম!  সেদিন থেকে আমি আবার  প্রতিশোধের নেশায় মেতে উঠেছিলাম।

সায়ানের সাথে দেখা করে সব দোষ অতসীর দেওয়া ছিলো আমার ইচ্ছাকৃত। কারণ সায়ানের মা বুঝতে পারেনি সায়ানের পছন্দ কে ছিলো। এরপর সব ভালোই চলছিলো, সায়ানের সামনে নিজেকে ভিক্টিম প্রমাণ করা, অতসীর দোষ সব কিন্তু ঝামেলা বাজলো তখন যখন সায়ান অতসীকে কিডন্যাপ করতে যায়। আমিও উল্টো চাল দিয়ে নেক্সট মোমেন্টে অতসীর জায়গায় নিজেকে কিডন্যাপ করিয়ে নিয়েছিলাম। আমি জানতাম সায়ান এদিক দিয়ে অনেক দায়িত্বশীল মানুষ। কারণ তার জন্য একটা মেয়ের সম্মানহানী সে মেনে নিবে না। হলো ঠিক তাই!  এরপর খুব দ্রুত আমাদের বিয়ের সব ফাইনাল কিন্তু আমি বিয়েটা করতে চাইনি। আবার যখন যখন অতসীর কপালে মা চুমু দিতো তখন তখন আবার পুরোনো ঘা সতেজ হতো। প্রথমে আমার মা-বাবা পরে সন্তান হারিয়ে আমি যেনো আহত সিংহী হয়ে উঠেছিলাম। 


-তোমার সন্তান? 


আমার সন্তান!  আমার ছোট্ট সন্তান!  যখন ওকে ছোট্ট ট্রে করে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছিলো আমি শুধু ছোট্ট হাত-পা দেখেছিলাম। তাও আবার ছিন্নভিন্ন!  আমার তথাকথিত   মায়ের জন্য আমার সন্তান মরে যায়। কারণ পাকা পেপে সে আমাকে খেতে দিয়েছিলো।

আমি জানতাম না পেঁপে বা আনারস খেলে আমার বাচ্চাটার কষ্ট হবে। জানি এতে মায়ের দোষ ছিলো না তবুও সব পেয়েও হারানোর যন্ত্রণা আমাকে শেষ করে দিচ্ছিলো। তাই আমি এসব করেছি। 


কথাগুলো শেষ করার আগেই অনামিকার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ভিষণ ভাবে। তাই ডক্টর নাতাশা অনামিকা কে নরমাল করে। কিন্তু অনামিকা বেশ ক্লান্ত হওয়ায় নেতিয়ে পড়ছিলো বারবার। অতসী, রাইমা দুজনে অনামিকা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। দুজনেই আজ কান্না করছে। রাইমা বেশ স্পষ্ট করেই বলে উঠলো 


-কি ভয়ংকর একা ছিলে তুমি আপু!  সবার মাঝে থেকেও তুমি ছিলে না। আর আমি কি না!  তোমাকে!  আপু!  প্লিজ মাফ করে দিও। 


অতসী চুপচাপ দাঁড়িয়ে কান্না করছিলো। এদিকে অতসীর মা ঠায় বসে আছে। সবাই নিশ্চুপ। 

ডক্টর নাতাশা ইফাদের দিকে এগিয়ে  যায় । 

-ইফাদ!  সব জানার পর জানিনা তোমাদের সিদ্ধান্ত কি হবে, তবে মেয়েটা মানুষিক ভাবে অসুস্থ। ছোট বয়স থেকে এসব আঘাত নিয়ে, অবহেলা নিয়ে ওর মাইন্ড নেগেটিভ দিকে চলে যাচ্ছিলো। এমন হওয়াটা স্বাভাবিক ছিলো। শুধু হারিয়ে আজ এমন। যদি পারো ভালোবাসায় আগলে রাখো। শাস্তি দিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে ঠেলে দিও না। 


একসময় ইফাদ সায়ানের দিকে একটা ম্যাটার্নিটি রিপোর্ট এগিয়ে দেয়। ফাইলের উপরে বাচ্চার ছবি স্পষ্টত। 

রোগীর নামে লিখা "অনামিকা ইসলাম " 


রিপোর্ট দেখে দিহান বলতে লাগলো.... 


অনামিকার প্রেগ্ন্যাসির সময়ের সব এই রিপোর্টে লিখা আছে। অতিরিক্ত দুর্বলতা, এবং অক্সিজেনের অভাবে বাচ্চা ১৩ সপ্তাহ বয়সে মারা যায়।তার মানে সায়ানের জন্য প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার  সময় টা ছিলো অনামিকার প্রেগ্ন্যাসির সময়। তাই বাধ্য হয়েই অনামিকা সায়ানের মায়ের  সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কারণ অবশ্যই বাচ্চাটা ভালোবাসার মানুষের ছিলো। অনামিকার কথায় স্পষ্ট সে অনামিকা কে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। তাই হয়তো মানুষিক  চাপে এমন করতে বাধ্য হয়েছে। 

তবে প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায় অনামিকার সন্তানের বাবা কে?


পিছন থেকে কারো কন্ঠস্বর ভেসে আসে। দৃঢ়, স্পষ্ট, বলিষ্ঠ কন্ঠে কেউ বলে

-- অনামিকার সন্তানের বাবা আমি ছিলাম। 


পিছন ফিরে ইফাদ খেয়াল করলো  আফরিনের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি আর কেউ নয় 

আফরিনের বড় ভাই মি. রেদোয়ান রাকিব।


চলবে 


#ছবিয়ালঃআকাশ

0 Comments:

Post a Comment