গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ২৫

 #দায়িত্বের_সংসার 

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ২৫ 

.

.

কুম্ভকর্ণ পৃথিবীতে হয়তো সত্যি ছিলো, হয়তো না অতসীকে দেখার পর থেকে সায়ান এটা বিশ্বাস করে। 

গাড়িতে বসার পর বড়জোড় পাঁচ-সাত মিনিট জেগেছিলো তারপরেই ঘুম। 

এত ঘুম কই পায় মেয়েটা?  একটু ফ্রি পেলেই ঘুমিয়ে যায়।  ইফাদ কে জিজ্ঞেস করেছিলো মেডিসিনের জন্য এমন হয় না কি?  কিন্তু ইফাদ বলেছে এমন মেডিসিন অতসী কে প্রেস্ক্রাইব করা হয়নি যা খেলে অতসী মরার মতো ঘুমাবে৷ 

.

ব্যাক সিটে আরাম করে ঘুমাচ্ছে অতসী। পুরোভর সায়ানের উপর । চুল খুলে গেছে, হাত দিয়ে সায়ানের হাত ধরে অন্য হাত সায়ানের কোমর জড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে সায়ান কোলবালিশ মাত্র। 

.

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সায়ান। প্রচন্ড ভুল করে ফেলেছে সে। এভাবে অনামিকার জীবন নষ্ট করা উচিৎ হয়নি।কিন্তু সেদিনের ঘটনার ভুল টা যদি না হতো। 

.

.

সায়ান যে করেই হোক অতসী কে চেয়েছিলো। তাইতো অতসী কে কিডন্যাপ করাতেও চিন্তা করেনি। অতসী প্রতিদিন যে সময় বাসায় ফিরতো সে সময় অনুসারেই সায়ানের সিকিউরিটি গার্ড অতসী কে তুলে আনে। অতসী সব সময় বোরখা পড়ে, হিজাব পড়ে। মুখ দেখে চিনার উপায় নেই। তাইতো বোরখা দেখেই তুলে এনেছিলো। যখন মুখ খুলে দেখা হলো স্পষ্টত জ্ঞানহীন অনামিকা কে।

সায়ান বেশ অবাক হয়ে যায়। যতদূর অনামিকা কে চিনে অনামিকা ওয়েস্টার্ন ড্রেসে চলাফেরা করে কিন্তু আজ বোরখা?  

ততক্ষণে অনামিকার কিডন্যাপের খবর কিছুটা সায়ানের বাবাও জেনে যায়।

এরপর থেকে বাধ্য হয়েও অনামিকার সাথে যোগাযোগ বাড়িয়েছিলো সায়ান। অতসীর করা অনামিকার প্রতি অত্যাচারের কথা গুলো শুনে অনামিকার প্রতি হয়তো করুণা জন্মাতো যাকে সায়ান এক সময় ভালোবাসা বলে মেনে নেয় কিন্তু ভালোবাসা কি এত সহজ?

.

হুমায়ূন আহমেদ একদম ঠিক বলেছেন 

---- যুদ্ধ এবং প্রেমে কোন কিছু পরিকল্পনা মতো হয় না। 

.

.

অতসীর ডান হাতের আঙুলগুলো নিয়ে খেলছিলো সায়ান। বাম হাত তো সায়ান কে জড়িয়ে আছে। এদিকে সায়ানের বাম হাত অতসীকে জড়িয়ে আছে। এই মেয়ে আসার সময় হাতে কোন চুড়ি পড়েনি। কোন গহনা পড়ে না। নাম মাত্র হাতে চুড়ি , গলায় পাতলা চেইন,আর নাকফুল পড়ে। কিন্তু এভাবে বড়মা এর সামনে গেলে কেলেংকারী হয়ে যাবে। 

পিছনে ব্যাগ থেকে জুয়েলারী বক্স বের করে দুহাতে মোটা দুটো বালা, আংটি পড়িয়ে দিচ্ছিলো। 

ঘুমের মধ্যে অতসী কোন শান্ত। একদম গুটিসুটি মেরে জড়িয়ে আছে অথচ যদি জেগে থাকতো?  

আল্লাহ্ মাফ করো!  কামড়িয়ে, খামছিয়ে অবস্থা খারাপ করে দিতো। 

.

যে নারী ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দরী সে প্রকৃত রুপবতী কিন্তু অতসীর এই বাড়াবাড়ি সৌন্দর্য সায়ানের সহ্য হচ্ছে না। তাইতো ড্রাইবার কে বলে পিছনের লাইটস অফ করিয়ে দিয়েছে। 

ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দুচোখে ঘুম নেমে এলো সায়ানের।

.

.

.

.

গ্রামের পথ ধরতেই বেশ ঝাকুনি লাগছিলো। এক সময় ঘুম ভেঙে যায় সায়ানের। বাহিরে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে কোথায় আছে!  হ্যাঁ আর ১০-১২ মিনিটের পথ বাকী। খুব ধীরে সুস্থে অতসী কে ডেকে তুলছিলো। 

বাড়ির সামনে এসেই চোখ খুলে অতসী। 

চুলগুলো পাঞ্চক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে আঁচল টেনে মাথায় দেয়। 

গ্রামে ১১ টা মানেই গভীর ঘুমে আছে গ্রামবাসী। 

একটা বনেদি বাড়ির গেটের সামনে দাড়ানো। বাড়ির গেট বেশ পুরোনো। ওরা দাড়াতেই কেউ একজন টর্চ হাতে এগিয়ে এসে গেট খুলে দিলো। কেমন একটা গা ছমছম পরিবেশ!  

অতসী দুহাতে সায়ানের বাম হাত আঁকড়ে ধরে রেখেছে। সায়ান মুচকি হেসে অতসীর ডান হাত নিজের বাম হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে এগিয়ে যাচ্ছিলো। 

বাড়ির উঠোন বেশ বড়। কয়েকজন এগিয়ে এসে কুশলাদি বিনিময় করে ভিতরে নিয়ে যায়। 

একে তো ঘুম ঘুম চোখ তারপর কালো শাড়িতে অতসীকে দেখতে সত্যি অপরুপ লাগছিলো। 

থাকার জন্য ওদের দু তলায় একটা ঘরে ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব জিনিসপত্র এনে দিয়ে যাওয়ার পর 

সায়ান ফ্রেশ হতে চলে যায়, এসে দেখে অতসী কেমন ব্যাক্যাত্যাড়া হয়ে শুয়ে আছে। 

.

.

-কি হয়েছে?  এভাবে আছো কেনো? 

-নড়তে পারছি না তো!  কোমরে ব্যথা লাগছে! 

-পুরো পথ ঘুমিয়ে এসেছো তো তাই পেশি টান দিয়েছে । এসো উঠো, আমি দেখছি। 

.

.

-দূরে থাকুন!  খালি স্পর্শ করার বাহানা। দূরে থাকুন তো। যত্তসব। 

-আমার স্পর্শ ভালো লাগবে না কিন্তু ওই যে পুকুরঘাট ওখান থেকে যখন ভূত এসে স্পর্শ দিবে তখন ভালো লাগবে। 

জানো তো এ বাড়িতে..... 

.

-থামুন! আমি ভূতে বিশ্বাসী না!  ভূত বলতে কিছুই নেই। হ্যাঁ! কিছু জ্বীন আছে!  যা মানুষকে ভয় দেখায় এই আর কি!  হইছে, হইছে থামেন! রাত করে তেনাদের কথা তুলতে নেই!  কখন আবার এসে যায়!  

.

-তেনারা মানে?  

-জ্বীন!  চুপ করুন। আর একটা কথাও না। 

.

অহ্ আচ্ছা মিসেস.  তুমি তাহলে জ্বীনে ভয় পাও। কথাটা মনে মনে বলেই ঘর কাপিয়ে মনে মনেই হাসলো সায়ান। 

.

-তাহলে বলছি কি!  শোন মেয়ে!  বড়মা জ্বীন পোষে। যদি এবাড়িতে কোন স্ত্রী রাতে স্বামীর বুকে মাথা না রেখে ঘুমায় তারা এসে ওই মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর তেলাপোকার মধ্যে বসিয়ে রাখে। 

-হু কেয়ারস! আমি তেলাপোকা ভয় পাই না। 

-সাপ তো পাও!  না হলে তেনারা সাপের রুপ ধরে এসে প্যাচিয়ে ধরবে। 

.

.

অতসীর মুখের আদল পরিবর্তন হয়ে গেছে। ভয় পাচ্ছে বুঝাই যাচ্ছে। 

.

-সত্যি?. 

-মিথ্যা বলে লাভ?  

-মি. মাহমুদ!  আমি ওয়াশরুমে যাবো!  

-তো যাও!  না করেছে কে?  

-আপনি আসুন। 

.

হাত ধরে টেনে ওয়াশ রুমের দরজার সামনে দাড় করায়। এখানে থাকুন বলে সুতি একটা শাড়ি নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে যায়। কয়েক সেকেন্ড পর আবার দরজা খুলে শাড়ি, তোয়ালে সব সায়ানের হাতে দেয় আর বলে যখন যখন চাইবো আপনি দিবেন। এখান থেকে যাতে না নড়তে পারেন তাই এই ব্যবস্থা৷ বলেই আবার দরজা লাগিয়ে দেয়। 

.

কিছুক্ষণ পর পর সায়ান কে ডাকছে। সায়ান প্রথম দুইবার উত্তর নিলেও পরের বার ইচ্ছে করে চুপ ছিলো। অতসী ঝড়ের বেগে দরজা খুলে দেখে সায়ান হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওর শাড়ি থেকে সুতো মুখে নিয়ে চিবোচ্ছে। 

.

রাগে কটমট করে অতসী বললো 

-ওটা খাওয়ার জিনিস না মি. মাহমুদ!  আর আপনি কি চাচ্ছেন? আপনাকে আমি ওয়াশ রুমের ভিতরে দাড় করিয়ে রাখি?  যদি না চান তাহলে চুপচাপ উত্তর দিবেন। 

.

বলেই তোয়ালে আর শাড়ি নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। 

.

সায়ান হেসে কুটিকুটি অবস্থা!  এই মেয়ে কি বলছে?  

শিয়াল কে বলছে আপনি কি চাচ্ছেন!  আপনাকে মুরগির খোয়ারে ঢুকতে দিতে?  যদি না চান....... হাহাহা

.

.

অতসী যে বেশ ভয়ে আছে দেখলেই বুঝা যাচ্ছে। সায়ান মুখের সামনে খাবার ধরতেই মাথা ঝাকিয়ে না করে। 

সায়ান তখন ইদানীং কালের বিখ্যাত ডায়লগ দেয় 

.

-আজ যদি অনামিকা সুস্থ থাকতো !  

.

আর কিছু বলতে হয়না। অতসী চুপচাপ খেয়ে শুয়ে পড়ে। রাত তখন সাড়ে বারোটা বাজলো। বিছানার এক পাশে অতসী পাশ ফিরে গুটিয়ে শুয়ে আছে অপর পাশে সায়ান এক হাত বুকে অন্য হাত চোখের উপর রেখে। কারণ অতসী লাইট বন্ধ করতে দেয় নি। যদি তারা আসে?  

এক সময় যথারীতি শিয়ালের ডাক শুরু হয়। সায়ান যেনো এটার অপেক্ষাতেই ছিলো। টুপ করে বেড সাইডের সুইচ টিপে লাইটস অফ করে দেয়৷ অতসী সবে ঘুমিয়ে যাচ্ছিলো। শিয়ালের ডাক শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে যখন দেখে লাইটস অফ তখন সায়ান কে ধাক্কাতে লাগে। 

.

- কি হলো 

- লাইটস অফ হলো কেনো? 

- আমি কি জানি? 

-উঠে দেখুন! 

-পারবো না 

-ফোনে ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালান। 

-চার্জ নাই। 

-উফফফ!  ভয় লাগছে তো। 

.

সায়ান কোন উত্তর দেয় না। 

কিছু সময় পর সায়ান বেশ বুঝতে পারে অতসী ধীরে ধীরে বাম হাত বুক থেকে সরিয়ে কাধে মাথা রেখে শুয়ে আছে। সায়ানের অন্য হাত এনেও নিজের উপর দিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে অতসী আবার গভীর ঘুমে। 

সায়ান হেসে অতসীর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো 

.

-তোমাকে জ্বালাতে এত ভালো লাগে কেনো?

.

ঘুম ঘুম কন্ঠে অতসীও উত্তর দিলো।

-আমার জ্বলতে এত ভালো লাগে কেনো? 

.

.

চলবে

#ছবিয়াল- Effat Tonny

0 Comments:

Post a Comment