গল্প দায়িত্বের_সংসার পর্ব ২৯

 #দায়িত্বের_সংসার

#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)

#পর্বঃ২৯ 

.

.

অনামিকা আপু সুস্থ হয়ে গেলেও কি আপনি আমাকে এভাবে কেয়ার করবেন?  না কি চলে যেতে বলবেন?  

.

.

এমন  প্রশ্নে সায়ান কিছু মুহূর্ত নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো অতসীর দিকে। মুচকি হেসে অতসীর পাশে বসে দু হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে নেয় অতসীর বাম হাত। জিজ্ঞেস করে 

.

- আজকে হঠাৎ এমন প্রশ্ন?  

-সাহারা কে বলা প্রতিটি কথা আমি শুনেছি। আপনি নিজেই যেখানে আমাকে সম্মান করেন না! সেখানে অন্য কে কি বললো এই নিয়ে অবশ্যই আপনার চিন্তার বিষয় হওয়ার কথা না। 

-মানে?  

-আপনি তো আমাকে আপুর জন্য বিয়ে করেছেন, তার দেখাশুনা করার জন্য।মনে পড়ে?  আপুর পাশে ঘুমিয়েছিলাম বলে আপনি আমাকে কত কথা শুনিয়েছিলেন?  

-হ্যাঁ!  সব মনে আছে। 

-আপনি তো আপুকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তবে এখন!  এক সাথে কি দুজন মানুষ কে ভালোবাসা যায়? 

-অনামিকার প্রতি আমার ফিলিংস কখনো ভালোবাসা ছিলো কি না আমি জানি না তবে এটা সত্য আমি তোমাকে ভালোবাসি। শুরু থেকে ভালোবাসি। 

-মানে?. 

-কিছুনা। আচ্ছা!  তুমিও তো দিহান কে ভালোবাসতে। ইচ্ছে করে না ওর কাছে চলে যেতে? 

-দিহানের ভালোবাসার থেকেও আমি রাইমাকে বেশি ভালোবাসি।

-আমার প্রতি তোমার অনেক রাগ তাইনা? 

-রাগ, হিংসে, জেদ মানুষকে পশু বানিয়ে দেয়। আমি মানুষ!  এসব আমার না থাকাটা শ্রেয়। 

.

সায়ান বুঝতে পারে অতসী তাকে উদ্দেশ্য করেই এসব বললো কারণ সায়ানের ব্যবহার সত্যি পশুর থেকে জঘন্য ছিলো। 

.

-হয়তো তোমার-আমার অতীত এজন্য দায়ী!  

-আমার আপনার এমন কোন অতীত নেই মি.মাহমুদ!  যে অতীতের জন্য আপনি এভাবে আমার থেকে সব কেড়ে নিয়েছেন। 

-সব ক্ষতিপূরণ কি আমার ভালোবাসা দিয়েও পূর্ণ হবে না?

-ভালোবাসা?  সে তো আমার একার ভাগ নয়! আপু সুস্থ হলে আমায় চলে যেতে হবে। 

-কে বলেছে? 

-এটাই বাস্তব। 

-কথা দিচ্ছি সব সময় তোমার  বিপদে ঢাল হয়ে দাড়াবো। 

-আর আপু? মেনে নিবে আমায়?  

-হয়তো!  হয়তো না। তবুও আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো না। অনামিকা যদি ডিভোর্স চায় আমি দিয়ে দিবো কেননা শুধুমাত্র আমাদের বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন হয়েছিলো মোট কথা কাবিন হলেও বিয়ে বাতিল করা যায়। 

.

-বোন হয়ে বোনের সংসার ভাঙবো? 

-স্বামী-সংসার দিয়ে দিবে?  

-আমার কিছু দিতে হবে না!  সময় হলে আপনারা কেড়েই নিবেন। 

.

.

কথা শেষে অতসী জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পর বর‍যাত্রী আসবে। শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই। চারিদিকে মরিচবাতির আলোর ঝলকানি।মেয়েটা হাজারো স্বপ্ন, গায়ে হলুদের গন্ধ নিয়ে অপেক্ষা করছে। 

অতসী স্বপ্ন দেখতো একদিন দিহান এভাবে এসে নিয়ে যাবে কিন্তু যেদিন দিহানের জীবনে রাইমা চলে এসেছে সেদিন থেকে দিহান কে মনে করতে চায় না। অনেকদিন হলো মনেও পড়ে না। হয়তো মি.মাহমুদ ধীরেধীরে জায়গা করে নিচ্ছে মন,মস্তিষ্কে। 

একটা মানুষ! সবসময় তোমার আশেপাশে থাকলে মানুষটার প্রতি তোমার আবেগ,অনুভূতি, মায়া জন্মাবে। এটা হিউম্যান সাইকোলজি।  তাইতো বলে কায়া দেখলে মায়া বাড়ে। 

.

.

সারাদিন বাহিরে কাটিয়ে সবে মাত্র দিহান বাসায় ফিরেছে৷ 

বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই রাইমা চিৎকার করে উঠলো। 

.

-এসব কি?  

-চিল্লাচ্ছো কেনো?  কি হয়েছে? 

-ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে, পায়ে জুতো পড়ে কেউ বিছানায় ঘুমায়?  

-আমি ঘুমাই!  তোমার সমস্যা?

-হ্যাঁ! কারণ পরিষ্কার তো আমাকে করতে হয় না?  

-তো করো না!  মেইড কি ঘুম  পারতে রেখেছি? 

-প্যান প্যান বাদ দিয়ে উঠুন। ফ্রেশ হয়ে আসুন। তোয়ালে পড়ে বের হবেন না। 

.

দিহান এই পর্যায়ে উঠে বসে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো 

-মানে?

-আপনি তোয়ালে পড়ে বের হবেন না । তাই বলেছি। 

-কেনো?  কন্ট্রোল হয় না বুঝি? 

-হ্যাঁ! তাই। এখন জলদি যান তো। 

.

.

দিহান ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখলো রাইমা হালকা জলপাই রঙের শাড়ি পড়েছে, চুলগুলো ছাড়া। হালকা সাজগোজ৷ দিহান কে দেখে দিহানের দিকে  পাঞ্জাবি বাড়িয়ে দিলো রাইমা। 

.

-কোথাও যাচ্ছো তুমি? 

-আমি না আমরা। নিন পড়ে নিন। 

-কোথায় যাবো? 

-বেড়াতে!  

-আমার মোটেও এনার্জি নেই ড্রাইভ করার মতো। 

-আপনি কি রিক্সাচালক?  আপনি কেনো চালাবেন?. 

-আমি রিক্সায় উঠিনা। কেমন খোলামেলা, মনে হয় ঠাস করে পড়ে যাবো। 

-গেলে যাবেন। আর আমি আছি তো এই যে শাড়ির আঁচল!  বেধে রাখবো আপনাকে। পড়তে দিবো না। 

.

.

রাইমার কথায় না পেরে দিহান বেরিয়ে আসে। আজ পুরো শহর ঘুরবে রিক্সায়৷ মুক্তো বাতাসে কিছুক্ষণ বিচরণ করলে ক্ষতি কি?  

.

-পরের শিখানো বুলি বেশ তো বলছো!  কেমন আছে তোমার বান্ধুবী? 

.

দিহানের এমন প্রশ্নে হয়তো রাইমার চমকানো উচিৎ ছিলো তবে খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো। 

-ভালো। 

-ওর তো ফোন নেই!  যোগাযোগ হলো কিভাবে?  

-আপনার বন্ধুর নাম্বার দিয়ে 

-কেমন আছে আমার লেডি?  সায়ান কি এখনো মারে?  

.

খুব নির্লিপ্ত ভাষায় জিজ্ঞেস করলো দিহান। 

.

-ভালো আছে৷ না এখন স্বাভাবিক সব। 

-কিছু বলেছে অনামিকা সুস্থ হলে কি করবে?  এক বার ভেবে দেখেছে?  কেনো পড়ে আছে?  

-আর যাই করুক আপনার কাছে ফিরবে না। হয়তো গলায় কলসি বেধে নদীতে লাফ দিবে তবুও ফিরবে না। 

কারণ আমি!  আমার সংসার সে নষ্ট করবে না। 

আমি আপনার লেডির জায়গা নয় আপনার জীবনে রাইমার জায়গা চাইছি। একটু সাহায্য করুন কারণ আমার হাসিকান্নার মাঝেও আপনার লেডি নিজের অনুভূতি খুজে বেড়ায়।

-আমাকে কিছু সময় দাও!  আমি যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ!  অবশ্যই তোমাকে অধিকার দিবো কিন্তু প্লিজ আশা করি বুঝবে। 

.

রাইমা কথা না বাড়িয়ে নিজ থেকে দিহানের হাত খুব শক্ত করে ধরে কাধে মাথা এলিয়ে দিলো। 

হোক না দেরি তবুও মানুষটাকে ছাড়া যে এখন চলছে না। অধিকার মাঝেমধ্যে আদায় করে নিতে হয়। কে আগে এগিয়ে আসবে এই ভেবে কুয়াশার আড়ালের সূর্যকে তো প্রত্যাখান করা যায় না।

.

.

বিয়ে বাড়ির সব কাজ শেষে সবে মাত্র অতসী বিছানায় গা এলিয়েছে। সায়ান ব্যস্ত অতসীর হাত নিয়ে আঁকিবুঁকি করতে। 

আচ্ছা?  মেয়েদের হাত এত নরম হয় কেনো?  মমতাময়ীর হাত? 

কে বলেছে মমতাময়ীর হাত?  এগুলো রাক্ষসীর হাত!  এত বড়বড় নখ! মনে মনে কথাগুলো বলেই মুচকি হাসলো সায়ান। ইতিমধ্যে 

অতসী তখন গভীর ঘুমে। বেড সুইচ টিপে লাইটস অফ করে দিলো সায়ান। 

তেনাদের ভয়ে তো অতসী আগে থেকেই কাছাকাছি। খুব দ্রুত ঘুমের সাগরে ডুব দিলো সায়ান। 

.

রাত তখন বেশ!  বারবার কল আসছে সায়ানের ফোনে৷ ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে ইফাদ কল দিয়েছে। 

.

-ইফু বল!  

-তুই কি এখন আসতে পারবি?  

-কেনো? 

-অনামিকার অবস্থা ভালো না। রেসপন্স খুব কম। মনে হচ্ছে এটাক হয়েছে। আমি ওকে হস্পিটালাইজড করছি। যে কোন কিছু হতে পারে৷ পারলে জলদি আয়। 

 

.

.

চলবে।

#ছবিয়াল_রুদ্র

0 Comments:

Post a Comment