#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৪৩
"কোন ধরনের শাস্তি এটা? তুমি বললে আমার মেনে নিতে হবে?"
"হবে তো!"
"মিসেস মাহমুদ! আমার জেদ সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা কি নেই?"
"বিয়ের পরে আপনার কাছে আমি কিছু চেয়েছি? শুধু আজকে......."
"চাওয়া না চাওয়া ফ্যাক্ট না! ফ্যাক্ট ইজ দ্যাট, আই কান্ট এলাউ দিস "
"আপনি কি চান না মানুষ আমাকে আমার নিজের পরিচয়ে আমাকে চিনতে পারবে?"
"তুমি আমার কোম্পানি জয়েন করো! ইনফ্যাক্ট তুমি চাইলে আমি দেশেই....."
"মি. মাহমুদ! এটা একটা স্বপ্নের মতো। আমি ফ্রি কিছু চাই না। সাফল্যের কোন শর্টকাট পদ্ধতি নেই। আপনি যেতে দিতে না চাইলে আমি যেতে পারবো না। কিন্তু এভাবে হয়তো আমার সব ইচ্ছেগুলো মাটিচাপা পড়ে যাবে। "
অতসীর কথা শেষ হতে না হতেই সায়ান দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়। যাবেই না কেনো? যে অতসীর জন্য এ গল্পের শুরু সে গল্পের অতসী এভাবে সায়ান কে ছেড়ে দুই বছরের নামে সিংগাপুর চলে যাবে? শুধু মাত্র একটা ভালো কোম্পানির থেকে জব অফার এসেছে বলে? গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর আরো বিস্তর জানতে পারবে বলে? আবার বলছে কি না এসব শাস্তি? দুই বছরের হিসাব ও জানে না কি? দিহানের বাচ্চাকে পানিতে চুবিয়ে রাখতে ইচ্ছে করছে। আজ ও যদি অতসী কে সে এসব না শিখাতো তাহলে হয়তো এমন স্বপ্ন অতসী দেখতো না।
বেশ রাত করেই সায়ান বাসায় ফিরে। অতসী দিব্যি বসে আমলকি খাচ্ছে।বেশ রাগের সাথে
সায়ান এসে হাত থেকে আমলকি নিয়ে নিলো।
অতসী ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। কথা না বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেলো সায়ান। ফিরে এসে সায়ান অতসীকে খাবার খাওয়ানোর জন্য হাত বাড়াতেও অতসী বললো
"আজ আমি দেই? "
সায়ান মুচকি হেসে খাবার অতসীর মুখের দিকে খাবার তুলে দিয়ে বললো
"আমরা একজন অপর কে কতটা ভালোবাসি এটা জানতে হলেও, বুঝতে হলেও আমাদের দুজন, দুজনকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। আজ থেকে ঠিক পাঁচ দিন পর তোমার যাওয়ার সময়৷ আশা করি বুঝেছো। "
কথাগুলো বলার সময় সায়ানের কন্ঠস্বর পাল্টে যাচ্ছিলো। নিজেকে সামলে নিয়ে অতসীর মুখে খাবার তুলে দিলো।অতসীর গলা দিয়ে আজ যেনো খাবার গুলো কেনো নামছিলো না! কে জানে?
সারা রাত অতসী সায়ানের বুকের পাশে মাথা রেখে জেগে ছিলো। ইদানীং আগের মতো অস্বস্তি কাজ করে না। কিন্তু অনামিকার এসব কাজগুলো মানতে বেশ কষ্ট হয়। ভাবতেই অবাক লাগে সায়ান,ইফাদ কিংবা দিহানের মতো মানুষদের এত সহজে মিথ্যে বিয়ের অভিনয়ে এত নিখুঁত ভাবে কিভাবে ফাসিয়ে ফেললো?
পরের দিনগুলো খুব দ্রুত পার হলো। অতসী যেদিন চলে যাচ্ছিলো অতসীর বাবা এসেছিলো কিন্তু সায়ান তার সাথে অতসীকে একা ছাড়েনি। এয়ারপোর্টে সবাই ছিলো কিন্তু সায়ান ছিলো না। বাসা থেকে তাকে বিদেয় দেয়৷ কারণ সে অতসীর চলে যাওয়া হয়তো সহ্য করতে পারছিলো না।
সবাইকে ছেড়ে যেতে অবশ্যই খারাপ লাগছিলো। অতসী ভেবেছিলো মি.মাহমুদ অন্তত আসবে। এয়ারপোর্ট অবধি তার হাতে হাত রেখে যাবে কিন্তু এমন হলো না। শুধু ইফাদ এসেছে সাথে।
ইমিগ্রেশন শেষ করে অতসী কান্নায় ভেঙে পড়ে। খুব কষ্ট হচ্ছিলো অতসীর। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে পাড়ি জমালো স্বপ্নের দেশে।
প্রথমে অতসীর সব কিছুতেই সমস্যা হচ্ছিলো। জলবায়ু পরিবর্তন, ঠিক মতো কিছুই করতে পারতো না,খেতে বসলে সায়ান কে মনে করে কেঁদে উঠতো। সবসময় অতসী সায়ানের কমতি অনুভব করতো। মুঠোফোনের ওপর পাশে সায়ানের কন্ঠে শুনে মাঝেমধ্যে কেঁদে উঠতো অতসী। তবুও অতসীর স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে আসতে দিচ্ছিলো না সায়ান। কারণ ভালোবাসার জন্য নিজের মন কে আকাশের মতো উন্মুক্ত করে দিতে হয়, যাতে ভালোবাসা শুধু যেনো আপন আকাশেই উড়তে পারে। উড়ার জন্য যেনো অন্যের আকাশে পাখনা না মেলে!
নিজেকে সামলে, গুছিয়ে উঠতেই কেটে গেলো তিনটে মাস। তিন মাসে অনেক কিছু শিখেছে অতসী৷ মানুষ চিনেছে, পরিবেশ বুঝে চলেছে৷ পাওয়ার খাতায় জমা অনেক হয়েছে শুধু সায়ানের উপস্থিতির অনুভব গুলো বাদে৷
আজ কোন এক ফ্রেন্ডের বিয়েতে ইনভাইট করেছে অতসীকে। খ্রিস্টানদের বিয়ে কখনো অতসী দেখেনি।তাইতো বিনা বাক্যে রাজি হয়েছে। মোটামুটি থিম অনুসারে লং ড্রেস পড়েছে৷ অফ হোয়াইট কালারের, চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে, সাথে কিছু ফুল। দ্রুত তৈরী হয়ে পৌঁছে যায় ভেনুতে। বিয়ের সব নিয়ম সে দেখতে চায়।
বিয়ে শেষ হওয়ার পর একটা সময় নতুন বউ নিজের হাতের ফুল ছুড়ে মারে। যা অন্য কোন মেয়ের হাতে পড়লে তার বিয়ে দ্রুত হয় এটা তাদের মান্যি। কিন্তু এবার ফুল এক ছেলে পেলো।
ছেলেটা অতসীর কলিগ। হুট করে এসে অতসীর সামনে হাটুগেড়ে ফুল নিয়ে বসে। চারপাশের সবাই হৈ হুল্লোড় করে অতসীকে প্রপোজাল এক্সেপ্ট করতে বলছিলো । অতসী এমন পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। বেশ ঘাবড়ে নিজের দুহাতে কাপড় শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলেটা যেই না অতসীর হাত ধরতে যাবে ঠিক তখন কেউ একজন ছেলেটাকে সজোরে লাথি মেরে ফেলে দেয়।
অতসী কিছু বুঝে উঠার আগেই সামনের ছেলেকে একজন মেরে রক্তাক্ত করে ফেলেছে।সেদিকে তাকিয়ে কয়েক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় সে। এ আর কেউ না মি.সায়ান মাহমুদ।
হাসবে না কাঁদবে অতসী বুঝতে পারে না। দৌড়ে সায়ানের কাছে যেতেই সায়ান হাত দিয়ে ইশারা করে থেমে যেতে।
চারপাশে লোকজন জমে গিয়েছে।
ইতিমধ্যে কয়েকজন মিলে সায়ান কে ছাড়িয়ে নিয়েছে।পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিলো। পরিস্থিতি সামলে উঠতে অতসী সবাইকে বলে সায়ান ওর স্বামী। কারণ না হলে সায়ানের জেলে যাওয়া নিশ্চিত।
সায়ান অতসীকে টেনে সেখান থেকে নিয়ে চলে আসে।
রাস্তায় ফুটপাত ধরে হাটছিলো অতসীর হাত ধরে। গাড়ির কাছে আসতেই অতসী বললো
"মি.মাহমুদ আপনি শার্ট খুলে ফেলুন। ভিজে গেছে তো! "
"কেনো আমার জরিমানা করানোর খুব প্রয়োজন? "
"মানে? জরিমানা আসলো কোথা থেকে? "
"এদেশের নিয়ম এটা। খালি গায়ে কেউ রাস্তায় চললে তাকে জরিমানা করা হয়। "
"আচ্ছা! আপনি এখানে? কিভাবে? কখন? কবে এসেছেন? "
"তোমার সাথে একই ফ্লাইটে!"
রাইমা-দিহানের সম্পর্ক ইদানীং বেশ স্বাভাবিক ভাবেই চলছে।একদিন বিকেলে দিহান খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু চিন্তা করছিলো। কফির মগ সামনে রাখতে রাখতে রাইমা জিজ্ঞেস করলো
"কি হয়েছে? এত কিসের চিন্তা?"
"ভাবছি!"
"কি?"
"আচ্ছা! এটা কখনো ভেবেছো? সায়ান যদি আন্টিকে অতসীর কথা স্পষ্ট ভাবে বলে থাকে, তাকে দেখিয়ে থাকে তাহলে আন্টি কেনো অনামিকার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলো? অনামিকা অপমান করার পরেও কেনোই বা আন্টি বিয়েতে রাজি হলো? সব রহস্যের সমাধান হলেও ঘুরে ফিরে আমরা সেখানেই আটকে আছি। কারণ মূল অধ্যায়ে আমরা এখনো যেতেই পারিনি। "
চলবে
#ছবিয়ালঃনুশরাত
0 Comments:
Post a Comment