গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ২৬

 গল্প: বাধন হারা বেনী

পর্ব:২৬(অধঃ শেষ পর্ব)

লেখনি: সানজিদা আহমেদ শাহারা


মেহরাব দ্রুত আবেদিন স্যর এর কেবিনে যায়।তার কেবিন এর সামনে এখন ও আবেদিন স্যার দাড়িয়ে আছে। মেহরাব দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে বলে স্যার আমি আমার আলোরাকে ফিরে পেতে চায় আমি নিশ্বঃ তাকে ছাড়া দয়া করে সব কিছু আমাদের খুলে বলুন আমরা কিভাবে আপনার এই হাসপাতাল এর সাথে জড়িয়ে গেলাম।

আবেদিন স্যার গম্ভীর কিন্তু হাসি মুখে বললেন

-আমি ও চায় তোমরা এই মুসিবাত থেকে বের হও।তোমরা যে এখানে আসবে তা আমি চায়নি কখনো কিন্তু আমার অদৃষ্ট তোমাদের এখানে টেনে এনেছে।

এরপর আই সি ইউ এর দরজার ছোট্ট কাচের ফাকা দিয়ে তাকালেন।বিছানায় আবেদিন স্যার এর নিথর দেহখানা যেনো প্রানহীন ভাবে পড়ে আছে। তার তাকানো দেখে সবাই তার দিকে তাকালে এই দৃশ্য আতকে ওঠে।সকলকে অবাক করে বলে

আবেদিন- তখন আমি পড়াশুনার জন্য আর ভাগ্যান্বেষণ এর জন্য জাপান আসি।জাপান তখন এতো আধুনিক ছিলো না।ঐ যে আমার দেহখানা দেখছো সে প্রচন্ড লোভী ছিলো।যখন আমার তার সাথে যোগাযোগ ছিলো তখন সে আমাকে প্রচন্ড ভাবে খারাপ কাজে সঞ্চালন করতো।এমন কোন অন্যায় ছিলো না যে সে করেনি।আর এই যে দেখো এখন কেমন মরার মতো পড়ে আছে কি লাভ হলো বলতো এসব করে?সেই তো মৃত্যুর স্বাদ নিতেই হলো।

মেহরাব - আপনার হেয়ালি কথা কিছুই বুঝছিনা আমি দয়া করে পরিষ্কার করে বলুন সব টা।এভাবে ধোঁয়াশায় রাখবেন না দয়া করে।

আবেদিন- আমি ঐ যে দেহটা শুয়ে আছে সেই দেহে বসবাসকারী কারিন জীন। বলতে পারো আমিই উনি।জাপান এ এসে প্রথম দিকে আমি তেমন কোন উন্নতি করতে পারিনি।এরপর একদিন আমি কিছু ভন্ড তান্ত্রিক দের দেখি যারা সাধারণ কিছু বিষয় যা স্বাভাবিক ওষুধে ঠিক হয় তা গুজরুকি করে মানুষকে বোকা বানিয়ে ঠিক করে দেওয়ার নামে টাকা ইনকাম করছে।তা দেখে প্রথম বার আমার মনে উকি দিলো ইচ্ছা।আমি ও ওভাবে টাকা ইনকাম করবো তবে একটু ভিন্ন উপায়ে।এরপর আমি একজন মোং এর সাথে যোগাযোগ করি।তিনি প্রথমে আমাকে এমন শিক্ষা দিতে চাননি।কিন্তু আমার মনের ইচ্ছাকে গোপন রেখে মানুষের ভালো করার কথা বলে তাকে বহু সময় নিয়ে রাজি করাতে সক্ষম হই।এরপর শুরু হয় আমার দীর্ঘ তিন বছরের কালো জাদু শিক্ষা।আসলে কালো জাদু বা ভালো জাদু বলে কিছুই হয় না।সব একই জাদু তুমি মানুষ এর ভালোর জন্য যদি কোন কিছু করো তবে তা ভালে জাদু আর যদি তোমার জ্ঞানকে কখনো খারাপ উদ্দ্যেশে ব্যবহার করো তবে তা খারাপ জাদু।আমি দিক্ষা নিয়েক দেশে ফিরে যায়।সেখানে গিয়ে আমার এই কর্ম কান্ড পরিচালনা করতে থাকে পরিচয় আড়াল করে।একদিন আমার কাছে আসে তোমার নানী ও তার বড় বোন।তারা যে জীন জাতিরই লোক তা প্রথম দেখায় আমি জানতে পারি।এরপর তারা আমাকে সব খুলে বলে তোমার মা ও তোমার বাবার ব্যাপারে।তখন আমি তাদের শর্ত দেয় যে সমস্যার সমাধান আমি করে দিতে পারবো কিন্তু তাদের ও আমাকে হাদিয়া হিসাবে কিছু দিতে হবে।যথারীতি আমি কাজ শুরু করি কিন্তু আমার কাজকে অসফল করে তোমার মা চলে যায় জীনরাজ্য ছেড়ে ফলে আমি তার সন্ধান পেতে কেনো তা জানি না কিন্তু ব্যর্থ হই।জীবনে প্রথম বার ব্যর্থ হয়ে আমার মধ্যে রাগ ও হিংসার জন্ম হয় আমি যখন আমার কিছুটা  হওয়া কাজের জন্য হাদিয়া দাবি করি তোমার নানীর কাছে সে সাফ সাফ কাজ হয়নি বলে মানা করে দেয়।সে আরো আমাকে মানুষ বলে অপমান করে।মানুষ হুজুরের কাছে নাকি জীন হয়ে আশা তার ঠিক হয়নি।একটা সামান্য তুচ্ছ মানুষ সে তার কি সাহায্য করবে? যার নিজেরই তাদের থেকে সাহায্য নিয়ে কাজ করতে হয়।এতে আমার রাগ নিয়ন্ত্রণ এর বাইরে চলে যায়।তখন আমি তোমার নানীর বংশের প্রত্যেকটা জীনের উপর মরণ বান নিক্ষেপ করি এতে তারা মারা যায় তবে মরার আগে জীন রাজ্যের শেষ প্রান্তে থাকা এক গুহার ভেতর ঝুলে থাকা চকচকে জারুল ফল তারা খায় ফলে মৃত্যুর পর তারা আমার থেকে ও দ্বীগুন হিংস্র জীনে পরিনত হয়।কারন তাদের দেহের মুক্তি হয়নি।এবং প্রতিশোধ নিতে আমাকে আক্রমোন করে।আমি প্রান ভয়ে আবার ও জাপানে ফিরে আসি।জাপানে এসে আমি নিজের মতো করে আবার ও কাজ শুরু করি।আমার প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে আমি এক সময় তোমার নানীর বংসের কথা ভুলে যায়।এরপর কেটে যায় বহু দিন ঘটনা শুরু হয় যখন আমি এই হাসপাতাল বানানোর কাজ শুরু করি তখন এখানে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে  আমি তা সমাধান এর চেষ্টা করলে এখানে তোমার নানীর বংশের অস্তিস্ত অনুভব করি কাজ বন্ধ করে দেয়।এরপর আমি আবার ও সব কাজ বন্ধ করে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে রক্ষায় মগ্ন হয়ে পড়ি।এভাবে সময় এগিয়ে যায় আমার নানতী বড়ো হয়ে আমার কাছে হাসপাতালটির বন্ধ কাজ আবার ও শুরু করবে বলে আবদার করতে থাকে।আমি ও রাজি হয়ে যায়।মনে করি যে আর কিছু হবে না।এরপর ও ঘটনা চলতে থাকলে আমি আমার দিক্ষা নেওয়া গুরুকে সবটা বলি তিনি আমাকে ভীষন রাগ করলেন ও ভালো হয়ে যেতে বললেন এবং আমার থেকে আমার সব দিক্ষা ও শক্তি এক মাসের সাধনা করিয়ে ভুলিয়ে দিলেন।এখন আমি একজন সাধারন মানুষ ছিলাম।এরপর সে সব বন্ধ করে দিয়ে যায় ও জীন গুলোকে তাড়িয়ে দেয়। একদিন খবর আসে তিনি মারা গিছেন এবং তার মৃত্যুর আগে থেকেই হাসপাতালে এই ঘটনা আবার ও শুরু হয়।বিশেষ করে লাশ চুরির।তখন আমি তার কাছে আবার যায় সে বলে কিভাবে যেনো তোমার নানী বংশের জীন যে বয়ামে আটকে ছিলো তা ভেঙে গিয়েছে ও তারা  তা থেকে মুক্ত হয়ে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।কিন্তু তারা কিছুই করতে পারবে না।যদি পারে তো এই যে জীন তার বংশের বা তার রক্তের কিছু লোককে এনে তাদের সাথে কথা বলে মাফ চেয়ে নাও তাহলে হয়তো মুক্তি পাবে।তারা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।আমি সেই মোতাবেক তোমাদের খোজ নেয়।এবং যোগাযোগ এর চেষ্টা করি একটা সময় তোমার নানী বংশের একজন জীন আমাকে এসে বলে সে কোন রক্ত পাত চায় না কিন্তু তোমরা আসলে হয়তো ভয়ংকর কিছু হবে কারণ তোমার নানী মরার আগে তোমার মায়ের কাছে গিয়েছিলো তোমার মা ভেবেছে তার সন্তানের ক্ষতি করতে এসেছে সে তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়।তোমার মায়ের উপর তীব্র রাগ নিয়ে সে মৃত্যু বরন করে।তাই রাগের বশে সে তোমাদের ক্ষতি করতে পিছুপা হবে না।আমি ও তোমরা যেহেতু বার বার আমন্ত্রনে সাড়া দিচ্ছিলে না তাই আর চাই নি তোমরা আসো।কিন্তু তোমরা ঠিক অপ্রত্যাশিত ভাবে এলে।আর আশার সঙ্গেই তোমরা তোমার নানী বংশের জীনের নজরে চলে গেলে যার প্রথম শিকার কাফি দ্বিতীয় শিকার আমি।কাফির এখানে দোষ সে তোমাদের সাহায্য করেছে সাথে আমাকে ও তাই এমন শাস্তি তার প্রাপ্য।আর অন্যদিকে আলোরা সেদিন মেহরাব রুপী জীনকে আয়নায় আটকায়নি বরং জীনটি তাকে আটকিয়ে আয়নায় রেখেছে।সাথে কাফিকে ও একটা সময় চক্রে আটকে রেখেছে।এরপর জীনটি সোহরাব এর সামনে এমন ভাবেক কল্পজাল সৃষ্টি করেছে যেনে আলোরা এই সব করেছে বলে সে মনে করে কারণ সোহমেহরা  থেকে সবটা জেনে যাওয়ার পর সে আলোরা ও মেহরাব রুপী জিন এর উপর নরজ রাগছিলো এজন্য।আর কাফির কথা তো আগেই বললাম সে আমাদের সাহায্য করেছিলো এজন্য তাকে আগেই বন্ধী করেছিলো। কাফি আমাদের সব কথা শুনতে পায় কিন্তু সে উত্তর দিতে পারে না।

মেহরাব- এখন আমাদের কি করোনীয়?

আবেদিন- তোমরা রুকাইয়া করো।তোমার নানীর বংশের সাথে কথা বলার চেষ্টা করো তাদের থেকে আমার ও তোমার মায়ের  কৃতকর্মের জন্য মাপ চাও।এছাড়া লড়াই শুধু ধংসই ডেকে আনবে আসলে তাদের আত্মাকে শান্তি দিতে হবে তাহলে তারা মুক্তির পথে হাটবে।

মেহরাব একথা শুনে সকলকে নিয়ে এক মিনিট ও দেরি না করে আলোরার ফ্লাটে আসে আর আসার সময় কাফিকে লাইভ সার্পোট থেকে নিয়ে আসে বর্ন সই দিয়ে। আলোরার আলমারি থেকে সেই আয়নাটা বের করে যেখানে আলোরা সেই জীনকে আটকে রেখেছিলো আসলে জীন আলোরাকে আটকে দিয়েছিলো কৌশলে।এরপর মেহরাব শুরু করে  রুকাইয়া টানা ছয় ঘন্টা রুকাইয়া চলার পর কাফির দেহ টা গোল গোল ঘুরতে থাকে এবং লাইট বিলিঙ্ক করতে থাকে সাথে প্রচন্ড জোরে বাতাস হতে থাকে।মিনিট খানেক সময় নিয়ে কাফি উঠে বসে কথা বলতে শুরু করে।

কাফির ভেতর প্রবেশ করা জীন বলে

জীন- তোদের সাহস দেখে অবাক হয় আমাকে ডেকেছিস তোরা।

মেহরাব ও তার সাথে কথা বলতে থাকে।হাজির হওয়া জীনটি মেহরাব এর নানী।তিনি মেহরাব এর সাথে বাক বিতন্ডিতায় জড়ায় এক পর্যায়ে শক্তি প্রদর্শন করে সোমেহরাকে আঘাত করে।এই পর্যায়ে মেহরাব যখন আবার কিছু বলতে যাবে তখন তাকে ইশারায় থামিয়ে সোমেহরা বলে

সোমেহরা- নানু,ও নানু তুমি আমাকে মেরে ফেলবে? নানু তুমি আমাকে মেরে ফেললে, আমাদের মেরে ফেললে যদি তোমার রাগ ক্ষোব মিটে যায় মেরে ফেলো।তবে তুমি কি জানো প্রতিরাতে মা নামাজের পাটিতে দাড়িয়ে তোমাদের জন্য কাদেঁ নানাজানকে কেবল একটু দেখার জন্য কাদেঁ।তোমার কোলে একটু মাথা রেখে শুয়ার জন্য কাদেঁ।জানো নানু ছোট বেলায় যখন সবাই গরমের ছুটিতে নানু বাড়িতে বেড়াতে যেতো আমি খুব কাদঁতাম নানু বাড়ি যাওয়ার জন্য মা প্রথমে বকতো তারপর আদর করে বলতো একদিন তোমার নানু বাড়ি বেড়াতে যাব মা আজ না।ছোট্ট মনে বড্ড আশা ছিলো নানা বাড়ি যাব আমার মায়ের ও মা আছে তাকে দেখবো। আমি যেমন মায়ের কাছে গেলে গলে যায় মা ও বুঝি তার কাছে গেলে ওমন গলে যায়।আদুরে আবদার করে।আমাকে মেরে ফেলো নানু কিন্তু তার আগে একবার তোমাকে জড়িয়ে ধরতে দও।তুমি ও মায়ের মা ডবোল মা তাহলে তোমার সাথে ও তো আমার রক্তের টান আছে।নানু একবার জড়িয়ে ধরি তোমায় মনে করো এটা আমার শেষ ইচ্ছা।আমি তো তোমারই নাতনী তাই না বলো।

সোমেহরার কথা শেষ হলে সে উঠে দাড়িয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে এসে কাফির মধ্যে থাকা তার নানীকে জড়িয়ে ধরে।এই পর্যায়ে কাফির চোখ থেকে পানি আসতে দেখা যায় অর্থাৎ তার নানীর মন নরম হয়েছে।এবার তার নানী ও তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে।সকলে এবার নির্ভয়ে এগিয়ে তার কাছে এসে তাকে একে একে জড়িয়ে ধরে।তারপর তার নানী তাদের কে সব অভীশাপ থেকে মুক্তি দেয় তার নানার সাথে  কথা বলিয়ে দেয়। কথা বলিয়ে দিলে তার নানা ও তাদের মাকে মাফ করে দেয় সকলকে দোয়া করে।  কাফি ও আলোরাকে তাদের সময় জাল থেকে মুক্ত করে দেয়।এরপর তারা অদৃশ্য হয়ে যায়।কাফি ও আলোরা নিজের সময়ে ফিরতে পেরে ভীষন খুশি হয়।মেহরাব আলোরাকে জড়িয়ে ধরে আর কাফি নিজে এসে সোমেহরাকে জড়িয়ে ধরে।তাদের এই আবেগঘন মুহূর্ত দেখে তাহিয়ানা ও সোহরাবকে জড়িয়ে ধরে।তনিমা আর অনিমা বেচারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে।এরপর হাসপাতাল থেকে খবর আসে আবেদিন স্যার মৃত্যু বরণ করেছে তখন মেহরাব সহ সকলে বুঝতে পারে নানী তার কাম সারছে🤭🤭


[কালকে একটা ঝাকানাকা পর্ব দিবো তারপর সমাপ্ত করবো....😮‍💨]


[যদি ও বা দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো কালকে কিন্তু আপনাগো কি সারপোকা প্রাইজ দিমু আল্লাহ্ ঝড় বৃষ্টি দিয়ে আমারেই সারপোকা প্রাইজ দিয়ে দিয়েছে। 


চলবে।

0 Comments:

Post a Comment