গল্প suddenly_fall_in_love পর্ব ৫

 #suddenly_fall_in_love 

#লেখনীতে_সামিয়া_স্নিগ্ধা 

#পর্ব_০৫


সুমাইয়া আজকে রাজুর পছন্দের বিরিয়ানি রান্না করছে। শশুর বাড়িতে এটাই ওর প্রথম রান্না। যদিও বাড়িতে খুব বেশি লোক নেই। তবুও রান্না ঠিকঠাক হবে কিনা এটা নিয়ে একটু চিন্তায় আছে।যতই হোক শশুর বাড়ির লোকদের খাওয়াবে একটু এদিক ওদিক যেন না হয় তাই খুব মনোযোগ দিয়েই রান্না করছে সে।


রান্না শেষে সবার জন্য নিজেই খাবার পরিবেশন করলো সুমাইয়া।ওর শশুর বাড়ির সবাই রান্নার বেশ প্রশংসাই করলো। একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল সে।যাক রান্নাটা ঠিকঠাক মতই করতে পেরেছে সে।

--

সন্ধ্যা বেলা সুমাইয়া আর ওর ননদ তাহা দুজনে বসে বসে টিভি দেখছিল। এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে।তাহা বলল,,,


-ভাবি,তুমি বসো।আমি দেখছি।


তাহা গিয়ে দরজা খুলতেই নাবিলা আর মাওয়াকে দেখে ভীষণ খুশি হয়ে বলল,,,,


-তোমরা এসেছো। দারুন মজা হবে আজকে। জমিয়ে আড্ডা দিতে পারবো।


রাজুর মা রুম থেকে বেরোতে বেরোতে বলল,,,,


-কে এসেছে রে তাহা?


বলে ড্রয়িংরুমে এসে নাবিলা আর মাওয়াকে দেখে তিনিও ভীষণ খুশি হন। এগিয়ে এসে বলেন,,,,


-আরে,তোমরা। কেমন আছো?


নাবিলা আর মাওয়া ওনাকে সালাম দিয়ে বলল,,,


-আলহামদুলিল্লাহ, আন্টি। আপনি কেমন আছেন?


-এইতো, আলহামদুলিল্লাহ। দাঁড়িয়ে আছো কেন?বসো,বসো।


-আরে, আন্টি ব্যস্ত হবেন না।


-তোমরা গল্প করো।আমি তোমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি বলে তিনি কিচেনে চলে গেলেন।


সুমাইয়া, নাবিলা, মাওয়া, তাহা ওরা সবাই মিলে একসাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে লাগলো।

--

আরুশি শুয়ে শুয়ে ফোন দেখছে এমন সময় আননোন একটা নাম্বার থেকে মেসেজ আসে।এতো রাতে মেসেজ?কৌতূহল নিয়ে মেসেজটা ওপেন করে সে।মেসেজটা একটু চিঠির মতো করে লিখা,,,


"কেমন আছো? শরীর,মন ঠিক আছে তো?মন ভালো না থাকলেও ভালো রাখার চেষ্টা করবে, কেমন?কারো জন্য নিজের জীবনটা নষ্ট করার চিন্তা ভুলেও করবেনা কিন্তু, যাকে ভালোবাসতে সে তোমার হয়নি এটা ভেবে উল্টো-পাল্টা কাজ করতে যাবে না একদম।তুমি লাইফে আরো ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো।সে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসবে, ভীষণ হ্যাপি রাখবে দেখো।

নিজের খেয়াল রেখো, যত্ন নিও।

ইতি,

তোমার চেনা জানার মধ্যেই কেউ।"


মেসেজটা পড়ে একটু ভাবতেই বুঝতে পারলো এটা মাহমুদ ছাড়া কেউ হবে না। কারণ ওর ব্যাপারে এসব শুধু মাহমুদই জানে।

আরো বেশ কয়েকবার মেসেজে চোখ বুলাল।শিওর হওয়ার জন্য নাম্বারে

ডায়াল করলো সে। দু-তিন বার রিং হতেই রিসিভ করলো মাহমুদ। আরুশি বলল,,,


-আপনি মাহমুদ,তাই না?


মাহমুদ হেসে ফেলল,,,


-বুঝে ফেললেই তাহলে?


-হুম,না বোঝার কি আছে? আপনি ছাড়া আমার ব্যাপারে আর কেই বা এতসব জানে?তবে এক মিনিট, আমার নাম্বার পেয়েছেন কোথায়?


-তোমার বেস্টফ্রেন্ড যে আমার কাজিন সেটা কি ভুলে গেছো?


-মাওয়া দিয়েছে?


-হুম, মাওয়ার থেকেই নিয়েছি।


-ওহ, আচ্ছা।


-যেগুলো মেসেজে বলেছি সেগুলো মনে থাকবে তো?


-হুম।


-আচ্ছা,গুড,নাইট।কাল এক্সাম আছে।দোয়া করো আমার জন্য।


-হুম,গুড নাইট।রাখছি।


বলে কল কেটে দিল আরুশি।নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটে উঠল।মানুষটা কি সুন্দর বুঝে তাকে।কি সুন্দর করে সব কিছু বুঝায়, সাপোর্ট দেয়। ছেলেটার সাথে কথা বললে মনটাও হালকা লাগে আরুশির।ফোনটা পাশে রেখে কম্বল গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল সে।

গ্রামে ভীষণ ঠান্ডা। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই চারদিকে কুয়াশায় ঢেকে যায়।আর রাত বাড়তে বাড়তে ঠান্ডাও বাড়তে থাকে। কম্বল জড়িয়ে শুয়ে পড়তেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় আরুশি।

-----

বেশ কয়েকমাস পর আজ গ্রামে ফিরছে মাহমুদ তন্ময় দুজনেই। মাহমুদ ঠিক করেছে গ্রামে ফিরেই এবার সে আরুশিকে তার মনের কথা জানাবে। এতো দিনে কথা বলতে বলতে এইটুকু বুঝতে পেরেছে যে মেয়েটা সেই ডিপ্রেশন থেকে কিছুটা হলেও মুভ অন করতে পেরেছে।


সেবার ব্রিজের উপর থেকে যখন আরুশিকে টেনে নামিয়ে এনে ছিল।তখন তার সেই বিষন্ন, কান্নাভেজা মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে কেমন একটা অদ্ভুত মায়া জন্মেছিল তার প্রতি।আর সেই মায়ার প্রেমেই পড়ে যায় মাহমুদ।তার জীবনের এই হঠাৎ প্রেমের আগমনের কথাগুলোই বাসে বসে বসে ভাবছে মাহমুদ।


কখনোই এতো তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা হয়না তার। এবার আরুশিকে দেখার জন্যই তাড়াতাড়ি ফিরছে সে।আরুশির কথা ভেবে ভেবে মুচকি হাসছে মাহমুদ। তন্ময় বলল,,,


-ভাবীর কথা ভাবছিস নিশ্চয়ই? আচ্ছা রাজি হবে তো?


-এতো দিনে কথা বলতে বলতে যা বুঝেছি,আরুশি ও আমার প্রতি কিছু তো ফিল করে।নয়তো মাওয়ার থেকে যা শুনলাম,ও কখনোই কোনো ছেলেদের সাথেই কথা বলে না।সে জায়গায় আমার সাথে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই কথা বলে।


-তাহলে তো তোর লাইন ক্লিয়ার ভাই। আমার লাইনটা কবে সেটিং হবে বল?


মাহমুদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,,,


-তোর লাইন মানে?তুই আবার কাকে ভালোবাসিস?


-আগে বল, শোনার পর কোনো রিয়েক্ট করবি না?


-রিয়েক্ট করবো কেনো?বল।


-না,থাক।


-থাকবে কেন?এখনি বল। আবার কি গোলমাল পাকিয়েছিস তুই?


-আমি মাওয়াকে ভালোবাসি।


বলতেই মাহমুদ বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে রেগে তাকালো ওর দিকে। তন্ময় এর ফেস ততক্ষণে চুপসে গেছে। তন্ময় এর এমন চুপসে যাওয়া চেহারার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে ফেলল মাহমুদ।


-আমার এক্সপ্রেশন দেখেই তোর এই অবস্থা?তো মাওয়ার বাবাকে বলবি কি করে,ওনার মেয়েকে যে তুই ভালোবাসিস? উনি কিন্তু ভীষণ রাগী।


-প্লিজ তুই একটু ম্যানেজ করে নিস ভাই।


-আচ্ছা, দেখা যাক।


-দেখা যাক না,বল ম্যানেজ করবি।


-আচ্ছা ভাই করবো।


চলবে,,,,,,,,

ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল,সবাই রেসপন্স করবেন প্লিজ।

0 Comments:

Post a Comment