গল্প:বাধন হারা বেনী
লেখীকা:সানজিদা আহমেদ শাহারা
পর্ব:২২
দুজনেই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।মেহরাব আর আলোরার মাঝে কঞ্চিত ফাক রয়েছে।সামনের বেলকনিতে থাকা কাপল দুজন রুমের ভীতরে ঢুকে গিয়েছে আরো বেশ কিছু সময় আগেই।আলোরার চুপ-চাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ টা নামিয়ে মেহরাব এর মুখ পানে তাকায় মেহরাব আলোরার তাকানো বোঝে তবু ও সে আকাশ পানেই তাকিয়ে রইলো। আলোরা মেহরাব এর দাড়ির গুলো হয়তো গুনে গুনে দেখছিলো তার দম যেনো থেকে থেকে বন্ধ হয়ে আসছে।এই দাড়ি গুলো তার কিশোরী জীবনের প্রথম আর্কষনের বিষয় বস্তু ছিলো সেই যে ছোট্ট বেলায় মেহরাব যেদিন প্রথম জীবনে গোফ দাড়ি কেটেছিলো সবার আগে আলোরা তা বুঝতে পেরেছিলো। সেদিন সে হায় রে কি কান্না, কেনো মেহরাব দাড়ি কেটেছে।সকলে তাকে থামাতে সেদিন কত কথায় না বলেছিলো এখনো ভাবলে তার ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।আলোরা ভাবে মেহরাব এর দাড়ি গুলো একবার ছুয়ে দেখবে, নিজে ইচ্ছা করে তো কখনো দাড়ি গুলো ছোয়া হয় নি।পুরুষ মানুষের সৌন্দর্য যেনো দাড়িতেই বেশি সুন্দর।মেহরাব আলোরাকে বেলি ফুল গাছটার ডালের নিচে বেলকনিতে বসায়।এই বেলি ফুল গাছ টা বহু পুরানো তার লম্বা লম্বা ডাল গুলো উপরের ছাদ থেকে ঝুলে নিচে এসে ঝুকে পড়েছে তা এক অপরুপ দৃশ্য সৃষ্টি করেছে মেহরাব আলোরার পায়ের উপর শুয়ে পড়ে।আজ অনেক দিন পরে মেহেরাব আলোরার দিকে পূর্ন দৃষ্টিতে তাকালো।হেসে বলল একটা গান শুনাবি?
আলোরা ও আর দেরি করলো না গান গেয়ে উঠলো..মেহেরাব তার হাত টা নিয়ে নিজের দাড়িতে রাখলো।
আলোরা গাইতে থাকে মেহেরাব প্রশন্ন চিত্তে গান শুনতে থাকে।
এই তো হেথায় কুঞ্জ ছায়ায়
স্বপ্ন মধুর মোহে
এই জীবনে যে কটি দিন পাবো
তোমায় আমায় হেসে খেলে
কাটিয়ে যাবো দোঁহে
স্বপ্ন মধুর মোহে
কাটবে প্রহর তোমার সাথে
হাতের পরশ রইবে হাতে
রইবো যেদিন মুখোমুখি মিলন আগ্রহে
এই বনেরই মিষ্টি মধুর
শান্ত ছায়া ঘিরে
মৌমাছিরা আসর তাদের জমিয়ে দেবে জানি
গুঞ্জরনের নীড়ে আসর জমিয়ে দেবে জানি
অভিসারের অভিলাষে রইবে তুমি আমার পাশে
জীবন মোদের যাবে ভরে
রঙের সমারোহে...
গান গাইতে গাইতে হালকা বাতাসে ছয়-সাত টা বেলি ফুল এসে পড়ে তাদের উপর টুপ-টাপ করে। মেহরাব সেই ফুল থেকে একটা কুড়িয়ে আলোরার কানে গুজে দেয় আলোরা হাসে তার গজ দাঁতটা তার হাসির সৌন্দর্য আলো বহু গুন বাড়িয়ে দেয়।আলোরা ও স্বইচ্ছায় তিন-চারটে ফুল মেহরাব এর দাড়িতে গুজে দেয়।মেহরাব হেসে ওঠে।
মেহরাব: আমি তোকে গভীর ভাবে স্পর্শ না করে ও ভীষন ভালোবাসবো আলু,বিয়ে করবি আমায়?
আলোরা: মামনিকে আমি কথা দিয়েছিলাম।
মেহরাব: আমি মা কে বোঝাবো,আমি তোকে কখনো স্পর্শ করবো না।স্পর্শ না করে ও ভালোবাসা যায়।
মেহরাব: আমায় বিয়ে করবি আলু?
আলোরা:আপনার কিছু হলে আমি বেঁচে থেকে ও মরে যাবো মেহরাব ভাই।
মেহরাব: তোকে পেয়ে ও নিজের করতে না পেরে আমি বেঁচে থেকে ও মরে আছি আলু।
আলোরা: মামনি বললে আমি রাজি মেহরাব ভাই।
মেহরাব: আচ্ছা?কিসে রাজি তুই?
আলোরা: ঐতো
মোহরাব: বল বল
আলোরা: ঐ যে বিয়েতে
মেহরাব: কার সাথে বিয়ে
আলোরা : আপনার সাথে।
কথা টা শেষ করেই আলোরা দু হাতে নিজের মুখ ঢেকে নেয়।মেহরাব হাসে বিস্তার হাসে তার লাল টুকটুকে একটা বউ।মেহরাব দু হাতে ধরে আলোরা মুখ থেকে হাত সরায়।আলোরা লাজুক চোখে চাঁদের দিকে তাকায় আর মেহরাব আলোরার দিকে এই সুন্দর দৃশ্য ক্যামেরায় ক্যাপচার করে আড়াল থেকে সোহরাব।
............................
আকাশ ভরা তারা একটা থালার মতো গোল চাঁদ, সুন্দর আঁকা বাঁকা রাস্তা দিয়ে একটি কালো গাড়ি মোটা মুটি বেগে সামনের দিকে গতিশীল। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে একটি জাপানিজ হিপহপ সং।কাফি ড্রাইভ করে যাচ্ছিলো বাড়ির দিকে পথে তার মনে হতে থাকে গাড়ির পেছনে কেউ আছে। বারংবার লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাচ্ছিলো সে কিন্তু আসলে সেখানে কিছু ছিলো না। বার বার লুকিং গ্লাসের দিকে তাকানোর জন্য হঠাৎ তার গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়।
এক্সিডেন্ট হওয়ার প্রায় সাত আট ঘন্টা পরে তাকে রেস্কিউ করা হয় একটি পাহাড়ি খাদ থেকে।তার তখন ও কোন চেতনা ছিলো না।ডাক্তাররা তাকে আই সি ইউ এ অবজারভেশনে রেখেছে। গাড়িটির খুব বাজে অবস্থা এমন সময় বদ্ধ আই সি ই তে দরজা ভেদ করে একটি দমকা হাওয়া ঢুকে পড়ে, হাওয়া গিয়ে সোজা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় কাফির নিথর দেহটিকে।এরপর হঠাৎ করেই কাফির হুশ ফিরে আসে সে পুরো সুস্থ তবে তার চোখ অসমম্ভব রকমের লাল হয়ে আছে।তাকে ইনজেকশন পুশ করার জন্য নার্স আসলেই সে নার্সের হাত ধরে তাকে এ দেওয়াল থেকে ও দেওয়ালে ছুড়ে ছুড়ে মারতে থাকে।এক পর্যায়ে নার্সের আর্ত চিৎকারে হাসপাতালের সব লোক আই সি ইউ এর সামনে জড়ো হয়। তখন আই সি ইউ এর দরজা ভেঙ্গে এক দলা মাংস এসে সকলের সমানে পড়ে আর তা ছিলো সেই নার্সের। নার্সের রক্তে সাদা টাইলস লাল হতে শুরু করে।এরপর সকলে এগিয়ে যায় কাফির দিকে কিন্তু কাফি নিস্তেজ হয়ে পড়ে যায় ফ্লোরে।হাসপাতালে মুহূর্তের মধ্যে জনরব শুরু হয়ে যায় ঘটনাটা মুহূর্তেই ইউ টিউব সহ বিভিন্ন গণ মাধ্যমে ভাইরাল হতে থাকে।সাথে সাংবাদিকরা ও এসে হাজির হয়।ফোন টা বেজে ওঠে আবেদ নিবাসের দ্বিতীয় তলার তিন নম্বর বেড রুমের।ফজলে হাসান আবেদ ভীত হাতে ফোন তুলে কানে দেয় হাসপাতালের এই ভীষন বাজে অবস্থার কথা শুনে তিনি হার্ট এট্যাক করেন।
চলবে...
[ আমাদের এখানে বিদ্যুৎ না থাকায় চাইলে ও কিছুতেই গল্প দিতে পারছিলাম না।আশা করি কালকে থেকে আবার গল্প দিতে পারবো]
0 Comments:
Post a Comment