গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ২৮

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 28


🍂🍂🍂


~যা যা আনতে বলা হয়েছে সব এনেছেন?

ফারাজ এর হাত থেকে ব্যাগ নিতে নিতে জিজ্ঞেস করে দিয়া।

~হ্যাঁ। ইভান আর আমি বেশ কয়েকবার লিস্ট এর সাথে মিলিয়ে দেখেছি। সব ঠিক আছে। তবুও তুমি আরেকবার চেক করে দেখে নাও। কোনো কিছু কম থাকলে আমি এনে দিচ্ছি।

~আচ্ছা

ডানে বামে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার চোখ বুলিয়ে ব্যাগ এ থাকা সামগ্রীগুলো দেখতে থাকে দিয়া। সামনে দাড়ানো ছেলেটি যে তার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তা সে বেশ বুঝতে পারছে। কিন্তু এখন সে মোটেও কিছু বলার মত মুডে নেই।

~দিয়া...

ফারাজের ডাক শুনে চোখ তুলে ফারাজের দিকে তাকায় দিয়া। পুনরায় ভ্রু কুঁচকে ব্যাগ এর দিকে চোখ রেখে জবাব দেয়,

হ্যাঁ বলুন।

~তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।

ঠোঁটের হাসি বিস্তৃত করে বলে ফারাজ। কিছুটা দূরে আয়মানকে দেখে কিছু বলতে যেয়েও চুপ হয়ে যায় দিয়া। এত দূর থেকে এদিকে বলা কথা শোনা সম্ভব না বুঝতে পারে দিয়া। ফারাজ এর হাত ধরে তাড়া দিয়ে মিহি স্বরে বলে,

আপনি এখন যান ফারাজ ভাই। কেউ দেখে ফেললে ঝামেলা হয়ে যাবে।

ফারাজ যেতেই দিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে নিলেই আয়মান দিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। দিয়া ভ্রু কুঁচকে আয়মান এর দিকে তাকাতেই আয়মান প্রশ্ন করে,

ছেলেটা কে ছিল?

~কেনো?

~তুমি ওর হাত ধরেছিলে কেনো?

~আমি কার হাত ধরি না ধরি তার কৈফিয়ত কি এখন আপনাকে দেওয়া লাগবে নাকি আমার?

~অবশ্যই দেওয়া লাগবে।

~কেনো? কি হন আপনি আমার? বাবা, ভাই নাকি স্বামী? একটাও না। তবে? সামনের থেকে সরুন!

বলেই আয়মান কে ধাক্কা দিয়ে হাটা ধরে।

~ও কি তোমার বয়ফ্রেন্ড? আমার জানা মতে তুমি সিঙ্গেল। আজ অব্দি কোনো ছেলের সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াওনি তুমি।

যেতে নিয়েও আয়মান এর কথা শুনে থেমে যায় দিয়া। ঘুরে আয়মান এর দিকে তাকায়।

~জড়াইনি কিন্তু জড়াতে কতক্ষন? ভালোবাসে সে আমাকে। খুব শীঘ্রই তাকে একসেপ্ট করবো ভেবেছি।

~সাহস থাকলে একসেপ্ট করে দেখিও। খুন করে ফেলবো দিয়া।

~এ ছাড়া আপনি আর রুদ্র ভাইয়া পারেন টা কি?

তাচ্ছিল্য হেসে চলে যায় দিয়া। আয়মান রেগে দিয়ার যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে।


🍂🍂🍂


~কি রে ভাই! এত সময় লাগে একটা জিনিস আনতে! ফারাজ ভাই কি আবার ওরে তুলে নিয়ে গেলো নাকি! সন্দেহ হইতেছে এখন।

বিরক্ত কন্ঠে বলে উঠে কাব্য। কাব্যর কথা শুনে স্নেহা কাব্যর মাথায় এক চাপড় মেরে বলে,

তোর যত্তসব আজাইরা কথা। ফারাজ ভাই ওকে তুলে নিয়ে যাবে কোন দুঃখে?

~হ্যাঁ!তুই জানস না? ফারাজ ভাই যে ওরে পছন্দ করে। কতবার প্রপোজও করছে।

~জানি কিন্তু তুলে নিয়ে যাবে কেন! এইসব চিন্তা তোর মত বেক্কল দ্বারাই করা সম্ভব।

কাব্য চোখ মুখ কুচকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দিয়া দ্রুত পায়ে ঘরে প্রবেশ করে দরজা আটকে দেয়। আহিল এগিয়ে যেতেই দিয়া তার হাতের ব্যাগটি এগিয়ে দেয়। 

~সব ঠিক আছে। চেক করে এনেছি। (দিয়া)

~তুই কি সত্যিই যেতে চাইছিস মেহের? সুফিয়ান ভাই জানতে পারলে কি হবে জানিস তো! (স্নেহা)

~জানতে পারলেও সে আমাকে কোনোভাবে আঘাত করবে না এতে সিওর আমি। কিন্তু তোদের যদি কোনো ক্ষতি করে? (মেহের)

~তখনের টা তখন দেখা যাবে। তুই তৈরি হয়ে নে। (আহিল)

হাতে থাকা ব্যাগটি এগিয়ে দিতেই মেহের রেডী হতে শুরু করে।

.

কালো বোরকা আর হিজাব পড়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চারদিকে চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মেহের। এগুলোই সে ফারাজ আর ইভানকে দিয়ে আনিয়েছিল। মেহেরের সাথেই আছে আহিল, দিয়া, স্নেহা আর কাব্য। হার্টবিট এর গতি তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে, চোখ দিয়ে অজস্র অশ্রুধারা বেয়ে যাচ্ছে। আহিল এর ধরে রাখা হাতটা আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরতেই আহিল ঘাড় ঘুরিয়ে মেহেরের দিকে তাকায়। হাঁটতে হাঁটতেই আশ্বাস দিয়ে বলে,

চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।

বাড়ি ভর্তি গার্ড এর চোখ ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া এতটাও সহজ নয়। কোনো রকমে বাড়ির পেছনের গেট এর বাইরে পা রাখতে নিতেই কেউ একজন মেহেরের হাত টেনে পিছনে ঘুরিয়েই গালে চর বসিয়ে দেয়। সামনে নিজের মাকে দেখে বুকটা ধক করে উঠে মেহেরের। মেহরিশ অগ্নিদৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেহেরদের দিকে। মেহেরকে জিজ্ঞেস করে,

পালিয়ে যাচ্ছিলি? 

মেহের জবাব দেয় না। মেহরিশ গর্জে উঠে,

জবাব দিচ্ছিস না কেনো! পালিয়ে যাচ্ছিলি! এই দিন দেখার জন্যই এত আদর যত্ন করে বড় করে ছিলাম তোকে!

~আন্টি প্লীজ আপনি শান্ত হোন। (স্নেহা)

~তোদের কি বলেছিলাম আমি! ওর ভালো তোরা বুঝিস। ওকে বুঝাতে বলেছিলাম। কিন্তু তোরাই ওকে পালাতে সাহায্য করছিস! (চিৎকার করে বলে মেহরিশ)

~মা শোনো...

মেহের কিছু বলতে নিতেই মেহেরের মা এগিয়ে এসে আরো এক চর বসিয়ে দেয়। মেহের মাথা নিচু করে চোখ চেপে দাড়িয়ে থাকে। কিন্তু নিজের গালে আঘাত না পেয়ে চর এর ধ্বনি অন্য দিক থেকে শুনতেই চোখ তুলে তাকায় মেহের। চরটা মেহেরের গালে নয় বরং কাব্যর গালে পড়েছে দেখে সকলেই হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকে। মেহের এর সামনে এসে কাব্য দাড়িয়ে পড়ায় চরটা কাব্যর গালেই পড়েছে। মেহের কাব্যকে সরিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়।

~সমস্যা কি তোমার? বুঝতে চাইছো না কেন যে আমি এই বিয়ে করতে চাই না। ওনাকে আমি বিয়ে করবো না।

~তুই বুঝতে চাইছিস না কেন! রুদ্র ভালো ছেলে। তোকে ভালো রাখবে।

~একজন মাফিয়ার সাথে আমি কখনোই ভালো থাকবো না। কিছুতেই না। বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ!!!

কিছুক্ষণ থেমে আবারো বলে,

আমাকে ক্ষমা করো মা।

বলেই মেহরিশ এর পাশ কেটে চলে যেতে নিতেই কয়েকজন গার্ড এসে মেহেরের সামনে দাঁড়ায়। মেহের তাদের দেখে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।

~আমাকে একা রেখে চলে যাচ্ছো রুদ্রাণী? এতই সোজা?

রুদ্রর শান্ত কণ্ঠস্বর শুনে পেছনে ঘুরে তাকায় মেহেরসহ সকলেই। মেহের ভয় পেয়ে স্নেহার হাত শক্ত করে ধরে। রুদ্র এগিয়ে এসে মেহেরের সামনে দাঁড়াতেই মেহের স্নেহার পেছনে যেয়ে লুকায়। রুদ্র ঘাড় কাত করে মেহেরের দিকে চেয়ে নিঃশব্দে হাসে।

~এখন ভয় পাচ্ছো কেন? সামনে এসো।

রুদ্রর কথা শুনে মেহের আরো যেনো গুটিয়ে যায়।

~ওকে যেতে দিন ভাইয়া। ও বিয়ে করতে চাইছে না আপনাকে। কেনো জোর করছেন ওকে? (স্নেহা)

~সরি বউমনি। ওকে ছাড়া সম্ভব না। ও আমার অস্তিত্বে মিশে গেছে একদম।

বলেই রুদ্র মেহেরের হাত ধরে টেনে সামনে এনে দাড় করায়।

~যার সাথে সারাজীবন থাকতে হবে তাকে ভয় পাচ্ছো? নট ফেয়ার রুদ্রাণী।

মেহের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,

আমি এখানে থাকবো না। যেতে দিন আমাকে।

~সম্ভব না।

বলেই হাত ধরে টেনে নিয়ে বাড়ির দিকে যেতে নিলে আহিল মেহেরের অন্য হাত ধরে আটকায়। রুদ্র শান্ত দৃষ্টিতে মেহেরের হাতের দিকে একবার চেয়ে আবার আহিলের দিকে তাকায়। থমথমে গলায় বলে,

আমার অবর্তমানে তুমি আর কাব্য ওর সাথে থেকে ওকে প্রোটেক্ট করেছো তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এখন বাধা দিয়ে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বাধ্য করো না যা আমি করতে চাইছি না।

~ও এই বিয়ে করতে চাইছে না ভাইয়া। ও কষ্ট পাচ্ছে। (কাব্য)

~আজকের পর আর কষ্টের কান্না কাদতেঁ দিবো না। এইটুকু ভরসা রাখতে পারো।

আহিল মেহেরের হাত ছেড়ে দিতেই মেহের টলমল দৃষ্টিতে আহিলের দিকে তাকায়। রুদ্র মেহেরের হাত ধরে টান দিতেই মেহেরের যেনো ঘোর ভাঙে। চিৎকার করে বলতে থাকে,

~আমি যাবো না ওনার সাথে। ভাই কিছু কর! দিয়া, স্নেহা আমি এই বিয়ে করবো না। প্লীজ তোরা কিছু কর!

আহিল আর কাব্য দাতে দাঁত চেপে, হাত মুষ্টিবদ্ধ করে, মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে। এই মুহূর্তে মেহেরের আর্তনাদ যেনো ভোঁতা ছুরি দ্বারা আঘাত করছে সকলের হৃদয়ে। রুদ্র আসতেই মেহরিশ বেগম ঘরে চলে গেছেন। কাব্য মেহেরের কাছে যেতে নিতেই আহিল কাব্যর হাত ধরে আটকায়। স্নেহা আর দিয়া রুদ্র আর মেহেরের পিছু পিছু যায়।


🍂🍂🍂


মেহেরকে ঘরে এনেই বিছানায় ছুড়ে মারে রুদ্র। এতে হাতে কিছুটা ব্যাথা পেলেও ঠোঁট কামড়ে চুপ করে থাকে মেহের। মেহের ধীরে ধীরে উঠে বসে রুদ্র দিকে তাকায়। রুদ্র মাথা চেপে ধরে সারা ঘর পায়চারি করছে। মেহের বুঝতে পারে যে সে এখন রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টায় আছে। দ্রুত পায়ে মেহেরের কাছে এসে বসতেই মেহের কিছুটা পিছিয়ে যায়। রুদ্র এগিয়ে যেয়ে মেহেরের দু বাহু শক্ত করে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

পালিয়ে যাচ্ছিলে রুদ্রাণী? আমাকে ছেড়ে যাচ্ছিলে? এতই সোজা? আমাকে ছাড়ার কথা মাথায় আনো কি করে তুমি?

~আপনি প্লীজ আমাকে যেতে দিন। আমি... আমি বিয়ে করবো না।

~কেনো? (শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে রুদ্র)

~আপনি... আপনি মাফিয়া। (ভীতু স্বরে জবাব দেয় মেহের)

~তুমি তো জানো আমি কেনো এই পথে গিয়েছি। জানো না?

মেহেরকে চুপ করে থাকতে দেখে রুদ্র জোরে এক ধমক দেয়।

~কি হলো? জানো না তুমি?

রুদ্রর ধমকে কেপে উঠে মেহের। মাথা নেড়ে বুঝায় যে সে জানে।

~তবে? কেনো আমার থেকে দূরে যেতে চাইছো? (করুন স্বরে জিজ্ঞেস করে রুদ্র)

~আপনি মাফিয়া। আমার আপনাকে ভয় লাগে। যদি কখনো আমাকেও মেরে দেন?

বলেই মাথা নিচু করে থাকে মেহের। রুদ্র অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় মেহেরের দিকে। ধরা গলায় বলে,

আমি আপনাকে মারবো? আপনার এমন কেনো মনে হয় মেহেরজান? আপনি আমার প্রাণভোমরা। নিজের প্রাণভোমরাকে কেউ কি করে মারতে পারে?

রুদ্রর কণ্ঠ শুনে চোখ তুলে তাকায় মেহের। রুদ্রর চোখে পানি টলমল করছে। মেহের কিছু বলার আগেই রুদ্র কাউকে কল করে বলে,

ওদের ঘরে আসতে বল।

ফোন রাখতেই স্নেহা, দিয়া আর তিনজন মেয়ে ঘরে প্রবেশ করে।মেহের ভ্রু কুঁচকে ওদের দিকে তাকায়। রুদ্র বলে,

পার্লার থেকে এসেছেন ওনারা। বিয়ের জন্য তৈরি হয়ে নাও। বিয়ের আগ পর্যন্ত এই ঘর থেকে তোমাদের বের হওয়া নিষেধ।

বলেই হন হন করে ঘরে থেকে বেরিয়ে যায় রুদ্র। মেহের করুন চোখে রুদ্রর যাওয়া দেখে।

~~~

চলবে~

(সবাই নেক্সট নেক্সট না বলে একটু গঠনমূলক কমেন্টও তো করতে পারেন নাকি! পরের পার্ট তো এমনিও দিবো।🙂)

0 Comments:

Post a Comment