#রাজনীতি
#পর্ব_৯
#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ
-------------------------------------------------------------------------------------
রাগে চোখ রক্তবর্ণ ধারন করেছে । রক্তবর্ণ চোখে ছেলেটার দিকে তাকালে , চোখের ঝাঁজ সহ্য করতে না পরে মাথা নিচু করে ফেলে ছেলেটা । মুচকি হেসে বলে , "শান্ত হবো ? হ্যাঁ আমি শান্ত হবো । তবে সেদিন , যেদিন আমার দেয়া কাজটা তোরা সম্পন্ন করতে পারবি । দুই দিন সুযোগ করে দিলাম , কিন্তু লাভ কি হলো ? ব্যর্থ । তোরা তো জানিস , ব্যর্থতা জিনিসটা আমার সহ্য হয়না । শেষ আরেকটা সুযো দিলাম । হয় আসাদকে মেরে ফেল , নাহয় তোদের মৃত্যু কেউ আটকাতে পারবে না । কথাটা যেন মাথায় থাকে । আমি বারবার বলবো না !"
-------------------------------------------------------------------------------------
আসাদ বাসায় এসে পৌঁছেছে । অন্যন্যার সাথে সময়গুলো বেশ ভালোই কেটেছে ওর । পুরোনো স্মৃতিগুলো আবার জেঁকে বসেছে । ভার্সিটির সেই দিনগুলোর কথা মাথায় আসতেই , আসাদ নিজের অজান্তে হেসে ফেলে ।
সিফাত রুমে ঢুকে দেখে আসাদ আপনমনে হাসছে । বিছানায় নিজের তাসরিফ জমিয়ে কিছুটা কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে , "কিরে হাসছিস কেনো ?"
- "হাসছি নিজের অবস্থার উপরে । কেমন ছিলাম , আর কেমন হয়ে গেলাম !"
- "বাদ দে সব পুরোনো কথা । যার জন্য তোর কাছে আসা , লেখাগুলোর সন্ধিহান করতে পারলি ?"
- "হ্যাঁ , পারছি । তবে ভাবিনি কখনো , আমার সাথে এমনটা হবার ছিলো ।"
- "ভাবিস নি , তো এখন ভেবে নে !"
- "মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে । একটা চিরচেনা মানুষের এমন হঠাৎ পরিবর্তন কিভাবে মেনে নেই , বল ?"
- "যাকে তুই চিরচেনা বলছিস , তার কাছে তুই অপরিচিত ।"
- "কি জানি ।"
- "বুঝতে পারছিস , এটাই অনেক । সাবধানে থাকিস , এটুকুই বলবো । এখন বল , অনন্যা কে ?"
- "রাফি বলেনি কিছু ?"
- "আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছি !"
- "আমার ক্লাসমেট ছিলো । ভার্সিটি লাইফ একসাথেই কেটেছে আমাদের । খুব ভালো একটা মেয়ে । মনটা অনেক পরিস্কার । বাকি সবার মতো মনে অতশত প্যাচ গোঁজ নাই । জানিস , একটা অপরিচিত মানুষ যাকে ও আগে কোনদিন দেখেনি পর্যন্ত , কিন্তু সে বিপদে পড়লে হাত বাড়িয়ে দেয়া মানুষ গুলোর মাঝে অনন্যা একজন । আমদের ক্যান্টিনে যে ছেলেটা আছে , ওর পড়াশোনার সকল খরচ অনন্যা'ই বহন করে !"
- "এতদিন তো মনে হয় , দেশের বাহিরে ছিলো ?"
- "হুম , গতকাল রাতেই এলো । বললো তখন , শুনলি না ?"
- "তো হঠাৎ দেশের বাহিরে কেনো গেছিলো , জানিস ?"
- "হয়তো পড়াশোনার জন্য , তাছাড়া আর কি হবে ? দেশের বাহিরে তো ওর কোনো আত্নীয়স্বজনও নেই ।"
- "বাবা-মা ?"
- "অনন্যা এতিম । মামা-মামি ও'কে বেশ যত্নে লালন-পালন করেছেন । আমার ভাষ্যমতে , আমি কোনদিন দেখেনি অনন্যাকে তারা নিজের মেয়ে ছাড়া অন্যকিছু ভেবেছেন ।"
- "তো তুই অনন্যার মামা-মামির থেকে জানতে পারতি না , অনন্যা কেনো দেশের বাহিরে গেলো সবাইকে ছেড়ে !"
- "আমি গিয়েছিলাম তাঁদের বাসায় , তবে তারা সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন । অনন্যার নাম্বারও বন্ধ দেখাচ্ছিলো । মামা-মামিরও কোনো খোঁজ পাইনি , তাই হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম । কিন্তু তুই হঠাৎ ওসব পুরোনো কথা ঘাটছিস কেনো ?"
- "ঘাটছি কারন , অনন্যা কি সত্যি পড়াশোনার জন্য দেশের বাহিরে গেছিলো ? নাকি এখানে অন্য কোনো গল্প আছে ?"
- "ভাই আমারে মাফ কর , প্লিজ । এমনিতেই একটা ধাঁধা সলভ করতে গিয়ে নাকানিচুাবানী খেয়ে বেসামাল অবস্থায় আছি । তার উপরে আবার অন্য কোনো ধাঁধা দিসনা !"
সিফাত ক্ষানিক হেসে আসাদের কাঁধে একটা হাত রেখে বলে , "এটা তোর জীবনের ধাঁধা । যেটার সমাধান তুই ছাড়া অন্য কারো কাছে নেই । দুর্বল আসাদ থেকে এই আসাদ হয়ে ওঠার গল্পটা নিশ্চয়ই সহজ ছিলো না । পিছনের সেই গল্পটা নিয়ে একটু ভাব , তুই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবি । আর এবারের ফলাফলটা তোর জীবন বদলে দেবে , মিলিয়ে নিস !"
আসাদ হাবার মতো তাকিয়ে আছে সিফাতের মুখের দিকে । সিফাত রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো কিন্তু তবুও আসাদের কোনো হেলদোল নেই । মাঝে মাঝে সিফাতের চরিত্রটা বুঝতে ভীষণ কষ্ট হয় আসাদের । হাবাগোবা ছেলেটার কয়েকটা জটিল কথা আসাদকে নিজের অবস্থানে স্থির করে দেবার জন্য যথেষ্ট । সিফাত ছেলেটার মাঝে কিছু একটা আছে , এটা আসাদের ভাবনা । ভাবনাটা কি সত্যি , নাকি ভাবনার অন্তরালে অন্য কোনো কাহিনী রচিত আছে ।
-------------------------------------------------------------------------------------
অনন্যার মন আনচান করছে আসাদের সাথে কথা বলার জন্য , কিন্তু ভাবছে কল দেবে কি দেবে না । নাম্বারটা বারবার ওপেন করে আবার কেটে দিচ্ছে । কথা বলতেও ইচ্ছে করছে আবার কল দিতেও কেমন কেমন লাগছে । ভাবনা চিন্তার অবসান ঘটিয়ে আসাদের নাম্বারে কল দিলে , কিছুক্ষণ পরে আসাদ কল রিসিভ করে বলে , "হুম , বলো !"
- "কি করো ?"
- "এইতো ফেবুতে নিউজফিড ঘাটাঘাটি করছিলাম , তুমি ?"
- "ভাবছিলাম ।"
- "কি ?"
- "কোনো একজনের কথা !"
- "কার কথা ?"
- "পরে বলবো !"
- "আচ্ছা !"
- "এখন রাখি পরে কথা হবে ।"
আসাদের উত্তর না শুনেই অনন্যা ফোন রেখে দেয় । লজ্জায় লাল হয়ে গেছে অনন্যার মুখ ।
-------------------------------------------------------------------------------------
দিনটা ভালোই কাটলো আসাদের । সারদিনের মাঝে প্রাপ্তির কথা একটি বারের জন্যও মাথায় আসেনি । হয়তো আসতে দেয়নি । হয়তো , খেলার মোড় ঘুরাতে চাচ্ছে আসাদ ।
চলবে...!!
0 Comments:
Post a Comment