গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ২৮

 #এক_তুমিতেই_আসক্ত 

#আয়ান_মাহমুদ 

|২৮|


---


সকালে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই তন্নীর মনে হলো, যেন এক স্বপ্নভঙ্গের উৎসব চলছে। সবাই আজ পরিপাটি, গাউন পরে, ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে। একদিকে হাসি, অন্যদিকে অশ্রুর ভার।


তাসনিম সোনালি টুকটুকে শাড়িতে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তিহান তার কালো স্যুটে যেন পরিপূর্ণ পুরুষ।

তুর্য নেই।


তন্নী সাদা জামদানি পরে আয়নায় নিজেকে দেখে। ঠোঁটের কোণে একটুকু হাসি থাকলেও, চোখের তলায় ক্লান্তি।


— “তুর্য থাকলে হয়তো আজ আমার ছবি তুলত সবচেয়ে বেশি...” মনে মনে বলে তন্নী।


---


গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনিতে যখন নাম ডাকা হচ্ছিল, তাসনিম গলা চড়িয়ে চিৎকার করে—


— “তন্নী চৌধুরীই আমাদের ক্যাম্পাস কুইন!”


সবাই হেসে উঠল। তন্নী লজ্জায় পড়ে মাথা নামিয়ে হাঁটে মঞ্চে।


তিহান ছবি তুলছে পাগলের মতো।

— “তাসনিম, তুই যদি আর জোরে চিৎকার করিস, আমি তোর ব্যাগ চুরি করে পালাবো।”


তাসনিম ফিসফিস করে বলে,

— “তোর তো পালানোর শখ চিরকাল। কিন্তু আজ পালানোর দিন না। আজ বিদায়ের দিন...”


এই কথাটাই চারপাশে বারবার ফিরে আসে।

বিদায়।


---


সন্ধ্যাবেলায় স্নাতক বিদায়ের পর তন্নী যখন নিজের রুমে ফিরে আসে, দরজার সামনে ছোট একটা বাক্স পড়ে থাকে।


তার উপরে লেখা শুধু—


> “From someone who remembers.”


ভেতরে একটা সাদা মিনি ফটো অ্যালবাম, তুর্য নিজে এঁকেছে ছোট ছোট স্কেচ আর লিখেছে নোট।


“তাসনিমের ঝগড়া – দিন ২৮”


“লাইব্রেরিতে তন্নীর বইয়ের ভেতর লুকানো চকোলেট – দিন ১৪”


“সিন্ত্রার বৃষ্টি – আমাদের একমাত্র ছায়া”


শেষ পাতায় লিখা —


> “আজ স্নাতক। তুই আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর শিক্ষার নাম।


আসছি। শীঘ্রই।”


তন্নী চোখ বন্ধ করে রাখে অনেকক্ষণ।

নীরব কান্না নামিয়ে আনে ধীরে ধীরে।


---


স্নাতক বিদায়ের রাতটা ক্যাম্পাসের টেরেসে সবাই মিলে কাটায়।


তিহান গিটার বাজায়, তাসনিম গায়, কেউ কেউ হেসে হেসে পুরনো গল্প বলে।


তন্নী চুপচাপ বসে থাকে, কানে হালকা সুর বাজে—

“তোমায় খুঁজে ফিরি দূর আকাশে,

আসবে কি তুমি আবার কাছে?”


তিহান একসময় পাশে এসে বসে, বলে—

— “ও আসবে তন্নী। ওই ছেলে তো তোকে ভালোবাসে অন্ধের মতো।”


তন্নী হেসে বলে,

— “ভালোবাসা মানে তো শুধু হাত ধরা না, পাশে থাকা না।

ভালোবাসা মানে অপেক্ষা।

আমি অপেক্ষা করবো।”


চাঁদের আলোয় ওর চোখের ঝিলিক টের পায় সবাই।


---

0 Comments:

Post a Comment