#এক_তুমিতেই_আসক্ত
#আয়ান_মাহমুদ
|১৪|
এদিন ক্যাম্পাসে সূর্য তলিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু শহরের আলো সবকিছু আলোকিত করছিল। তবে তুর্যর মন আজ একটু ভারাক্রান্ত ছিল। তন্নীর সঙ্গ কখনোই এতটা দূর থেকে অনুভব করেনি। তাকে এত চুপচাপ এবং একা থাকতে দেখে তুর্য চিন্তা করতে শুরু করেছিল। আজ তন্নী যেন আরও বেশি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল নিজের মধ্যে। টিউশনের কাজ শেষ করেও তন্নী ক্যাম্পাসের কাছাকাছি এক কোণে হাঁটছিল, কিন্তু তার চোখে অস্বস্তি স্পষ্ট ছিল।
সন্ধ্যার দিকে তুর্য তার হোস্টেল রুমে ফিরে গিয়েছিল, একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাসনিম তার কাছে ফোন করল।
"তুর্য, তন্নী আজ খুব অস্বস্তি অনুভব করছে। হোস্টেলে একটুও ভালো লাগছে না। তুমি কি ওর সাথে একটু কথা বলতে পারো?" তাসনিমের কণ্ঠে চিন্তা ছিল।
তুর্য কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল, "তাসনিম, ঠিক বলছো। আমি এখন ওর সাথে কথা বলব।"
তুর্য হোস্টেলের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল। স্নিগ্ধ বাতাস আর সন্ধ্যার অন্ধকারে তার মন কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিল। তন্নী এতটা ভেতরে ডুবে থাকবে কেন? তার মধ্যে কিছু একটা ছিল, যা তাকে এতটা একা করে রেখেছিল। তুর্য ভাবতে লাগল, "এটা কি আসলে তার নিজের ভিতরের কিছু সমস্যা, না আমি কিছু বুঝতে পারছি না?"
তুর্য তন্নীর রুমের দিকে যাচ্ছিল, আর মনকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল। হঠাৎ, সে দেখতে পেল, তন্নী রুমের মধ্যে বসে ছিল, তার চোখে কিছুটা ক্লান্তি ছিল। তন্নী তার হাতে একটি বই ধরে ছিল, কিন্তু চোখের তলাতে অন্ধকার ছাপ ছিল। তুর্য ধীরে ধীরে এসে বলল, "তন্নী, তুমি কি ঠিক আছো?"
তন্নী তার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ নীরব ছিল, তারপর সোজা হয়ে বসে বলল, "আমি খুব ক্লান্ত, তুর্য। অনেক কিছু মনে হচ্ছে, যা সবার সাথে ভাগ করতে পারি না।"
"কিন্তু তুমি জানো, তুমি একা কখনোই থাকো না," তুর্য এক টুকরো হাসি দিয়ে বলল, "আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।"
তন্নী সুর মিলিয়ে বলল, "হ্যাঁ, জানি। কিন্তু আমি নিজেই জানি না, আমার ভেতর কি হচ্ছে। সবকিছু এত দ্রুত বদলাচ্ছে।"
তুর্য আরও কাছে এগিয়ে এসে বলল, "তন্নী, জীবন অনেক সময় আমাদের পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দেয়, কিন্তু এই পরিস্থিতে যদি কিছু থাকে, তা হলো—তুমি একা নও।"
তন্নী কিছু সময় চুপ ছিল, তারপর বলল, "তুর্য, আজকে ক্যাম্পাসের মধ্যে আমি নিজেকে কোথাও হারিয়ে ফেলেছি। যেন আমি আর তন্নী নেই, আমি অন্য কোনো জায়গায় আছি।"
তুর্য এক হাতে তার কাঁধে হাত রেখে বলল, "তন্নী, আমরা যতটা ভাবি, ততটা জটিল কিছু নয়। তুমি যদি মনে করো, আমি তোমার পাশে আছি। তুমি যেমন আছো, ঠিক তেমনভাবে তোমাকে ভালোবাসা।"
তন্নী আবার একটু নীরব হয়ে গিয়েছিল। তারপর বলল, "আমার মাকে নিয়ে আমি অনেক চিন্তা করছি, তুর্য। আমি তাকে দূরে রেখেছি, তার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারিনি।"
তুর্য কিছু না বলে তন্নীর পাশে বসে থাকল, তাকে বুঝতে দেওয়ার চেষ্টা করল যে, কিছু চাপলে কিছুই হবে না, শুধু সহানুভূতির প্রয়োজন। কিছুক্ষণ পরে, তন্নী মাথা তুলে বলল, "তুর্য, তুমি জানো, আমি যে অনুভূতি নিয়ে এসেছি, তা তোমার কাছে শেয়ার করা খুব কঠিন। আমি জানি না, আমার মধ্যে কিভাবে সবটা মিলিয়ে যাবে।"
তুর্য কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল, "তন্নী, আমি বুঝি। তুমি যা অনুভব করো, সেটাই তোমার অনুভূতি। তবে জানো, কখনো কখনো নিজেদের কাছে থাকার থেকেও অনেক বেশি শক্তি আসে যখন আমরা আমাদের পাশে একে অপরকে খুঁজে পাই।"
তন্নী এক ঝলক হাসল, আর তুর্য তার পাশে বসে রইল। আজকের মতো তার জন্য কোনো বড় কোনো কথা বলা হয়নি, শুধু কিছুটা সময়, কিছুটা সঙ্গ—এটাই তাকে শান্ত করছিল।
"তুর্য, তুমি জানো না, মাঝে মাঝে আমাদের ভিতরে অনেক কিছু ঘটে, যা আমরা অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারি না। তবে তুমি যখন পাশে থাকো, তখন কিছুটা স্বস্তি পাই," তন্নী বলল, আর তুর্য তার কাঁধে একটি হালকা চাপ দিল।
তুর্য তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, "তন্নী, কিছু না বললেও, আমি সবসময় তোমার সাথে আছি। তুমি কি জানো, কখনও কখনও আমাদের একে অপরকে বুঝতে হয়, এবং শুধু সেটা ভালোবাসার প্রমাণ।"
তন্নী তুর্যের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ নীরব রইল। তার মনে যেন শান্তির এক অদ্ভুত অনুভূতি ছিল। তবে, কিছুটা সময় কাটলেই তন্নী হয়তো বুঝবে, যে এই সম্পর্ক শুধু তার একলা হওয়ার ভীতি নয়, এটি এমন এক জীবন, যা সঠিক সময়ে সঠিকভাবে বাঁচতে শেখায়।
এবং এই কথাগুলো তার হৃদয়ের গভীরে পৌঁছাল, যেখানে অনেক কিছু ধীরে ধীরে খুলতে থাকবে।
---
0 Comments:
Post a Comment