গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ১০

 #এক_তুমিতেই_আসক্ত 

#আয়ান_মাহমুদ 

|১০|


সন্ধ্যা নামে, ক্যাম্পাসের চারপাশে বাতাসে এক ধরনের শান্তি ছিল। আকাশে রঙ বদলাতে শুরু করেছিল—প্রথমে নরম গোলাপী, তারপর লাল, আর অবশেষে রাতে ঢুকে যাওয়ার সময় সাদা অন্ধকারে মিশে যাচ্ছিল। তুর্য আর তন্নী আজকে দীর্ঘ সময় ধরে একে অপরের কাছাকাছি ছিল, তবে এই সময়েও তাদের মধ্যে এক অদৃশ্য দূরত্ব বজায় ছিল। তাদের মধ্যে কোন কিছু বলার ছিল না, কিন্তু তবুও, কিছু ছিল যা চোখে চোখে, মন থেকে মন পর্যন্ত চলছিল।


তন্নী আজ বেশ চুপচাপ ছিল, যেন তার ভেতর কিছু গভীর চিন্তা ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তার মায়ের কথা, নিজের সম্পর্ক, ক্যাম্পাসের ক্লান্তি, এই সব কিছুই মিলে এক অদ্ভুত ভার অনুভব হচ্ছিল তার ভেতরে। কাস্কাইসের পরের দিনগুলি এতটা সহজ ছিল না, যতটা সে ভাবতে চেয়েছিল। তার মনের মধ্যে কিছু অস্থিরতা ছিল, যা তার মনে শান্তি এনে দেয়নি। তন্নী জানত, তার মধ্যে কিছু অপ্রকাশিত অনুভূতি লুকিয়ে ছিল—যেগুলো সে তুর্যকে বলতে পারেনি।


তুর্যও অনুভব করছিল, তন্নী কিছুটা অদ্ভুতভাবে দূরে সরে গেছে। সে জানত, তন্নী সাধারণত খোলামেলা নয়, তবে আজ তার চুপচাপ থাকা কিছুটা অস্বাভাবিক ছিল। একসঙ্গে এত সময় কাটানোর পর, তুর্যও একটু বোঝার চেষ্টা করছিল। তবে সে বুঝতে পারছিল না, কিছু একটা ছিল যা তন্নী বলছে না, বা হয়তো সে জানতও না। তুর্য তার দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল, তারপর তার কাঁধের দিকে তাকিয়ে বলল, "তন্নী, তুমি কি ঠিক আছো?"


তন্নী ধীরে ধীরে মাথা তুলে তার দিকে তাকাল। "হ্যাঁ, তুর্য। ঠিক আছি। তবে মাঝে মাঝে কিছু চিন্তা আমার মাথায় ঢুকে যায়।"


"তুমি জানো, আমি তোমার পাশে আছি, তোমার যদি কিছু বলার থাকে, আমি শুনতে প্রস্তুত," তুর্য ধীরে ধীরে বলল, তার কণ্ঠে একটা দুঃখের ছায়া ছিল। সে জানত, তন্নী অনেক কিছু ভেতরে ধারণ করছে, তবে তাকে তা প্রকাশ করতে বাধ্য করা ঠিক হবে না।


তন্নী কিছু সময় চুপ করে রইল। তার মনে হচ্ছিল, তুর্যকে সব কিছু বললে হয়তো কিছুটা শিথিল হতে পারে, কিন্তু তন্নী জানত, সব কিছু বলা তার জন্য এতটা সহজ নয়। "আমি... আমি শুধু একটু একা থাকতে চাচ্ছি, কিছুটা চিন্তা করতে চাই," সে শেষ পর্যন্ত ধীরে ধীরে বলল, তার কণ্ঠে কিছুটা ঝোঁক ছিল।


তুর্য তার দিকে তাকিয়ে কিছু সময় স্থির রইল। "ঠিক আছে," তুর্য একটু হেসে বলল, "তবে জানো, একা থাকলেও তুমি যখনই চাইবে, আমি তোমার পাশেই থাকব।"


তন্নী ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে বলল, "ধন্যবাদ, তুর্য।" তারপর সেও কিছুটা স্থির হয়ে বসে রইল, যেন কিছু একটা ভাবছিল, কিছু একটা খুঁজছিল নিজের ভেতরে।


সন্ধ্যা শেষে, ক্যাম্পাসের পরিবেশ আরো শান্ত হয়ে গেল। তন্নী আস্তে আস্তে তার রুমে ফিরে গেল, নিজের কাছে ফিরে যেতে চাইল। তুর্যও কিছু সময় পর রুমে ফিরে গেল, কিন্তু তার মনে একটা অদ্ভুত অস্বস্তি ছিল। সে জানত, কিছু একটা ছিল, কিছু অনুভূতি, যা তন্নী এখনো তার ভেতরে লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু সে জানত, সে যদি চুপচাপ থাকে এবং তার সময় দেয়, তন্নী নিজে একদিন তা খুলে বলবে।


তুর্য নিজের রুমে ফিরে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকাল। সেদিনের কাস্কাইসের দৃশ্য তার চোখে ভাসছিল—সেখানে সূর্যের আলো, সাগরের শান্ত ঢেউ এবং তন্নীর মুখের নিঃশব্দ ভাবনা। তুর্য অনুভব করছিল, সে হয়তো কখনো পুরোপুরি জানবে না, তন্নী আসলে কী চায়, তবে সে চাইছিল, ধীরে ধীরে এই সম্পর্ক আরও গভীর হোক। সময় এবং ভালোবাসাই শেষ পর্যন্ত সত্যি বের করবে।


রাতের অন্ধকারে, তুর্য কিছুক্ষণের জন্য চুপচাপ বসে রইল। তার মনে হচ্ছিল, সে হয়তো কিছু বুঝতে পারছে, কিন্তু সেটি ছিল একটি পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা রহস্য—যে রহস্য একদিন, সময়ের সাথে সাথে উন্মোচিত হবে। কিন্তু এখন, তার সামনে ছিল শুধু অন্ধকার, যা তাকে ভাবতে বাধ্য করছিল—আশ্চর্যজনকভাবে, তন্নী তার জীবনে সেই রহস্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে।


এবং এই নীরব রাতেই, তুর্য অনুভব করছিল, তার জীবনের পথে এক নতুন অধ্যায় অপেক্ষা করছে।


---

0 Comments:

Post a Comment