গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ২৪

 |২৪|


---


১. লিসবনের এক শীতল সন্ধ্যা – দূর থেকে আসা হাওয়ায় ভারী হয় মন

তুর্যর মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে সব কিছু যেন নিখুঁতভাবে এগোচ্ছিল। কিন্তু সম্পর্ক শুধু দুইজন মানুষের বিষয় না—তাদের পরিবার, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, অভিজ্ঞতা সবই তার অংশ।


তন্নী আজ একটু চুপচাপ। তুর্য জিজ্ঞেস করে,

“তোর চোখ এত ভাবুক কেন আজ?”


তন্নী ধীরে উত্তর দেয়,

“আজ আব্বুর সাথে কথা বলেছি। তোকে নিয়ে বললাম। কিছুটা আশা ছিল... কিন্তু...”


তুর্য চোখ বড় করে তাকায়, “কী বললেন তিনি?”


তন্নী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,

“তিনি বললেন, তুই ‘ভালো ছেলে’ হলেও, তুই আমার জন্য ঠিক না। বিদেশে পড়া মানেই স্বাধীনতা নয়। আর, তুই... একা, পরিবারহীন, অস্পষ্ট অতীত—এটা নাকি রিস্ক।”


তুর্য কিছু বলে না। তার ঠোঁট শক্ত হয়ে যায়। ভেতরের একটা কিছু যেন কেঁপে ওঠে।


---


২. ফ্ল্যাশব্যাক – তন্নী ও তার বাবার ফোনকল

তন্নী বাবাকে ফোন করেছিল সন্ধ্যার একটু পর। একেবারে সোজাসাপটা বলেছিল,

“আব্বু, আমি যাকে পছন্দ করি, সে তুর্য। ও ভালো মানুষ। আমার পাশে দাঁড়ায়, বুঝে, সম্মান করে। আমি...”


তার বাবা ঠান্ডা গলায় বলেন,

“তুমি ভালো বলতে পারো, কিন্তু আমরা বিচার করি ভবিষ্যৎ দিয়ে। ছেলেটার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী? বাবা-মা নেই, আর তুমি বলছো সে বিদেশেই থাকতে চায়। এইরকম একটা মানুষকে তুমি সারাজীবনের ভরসা ভাবছো?”


তন্নী বলে,

“ভরসা তো রক্তে নয়, আচরণে তৈরি হয়।”


তার বাবা থেমে যান, তারপর বলেন,

“তুমি এখন আবেগে আছো। আমি সময় দিতে বলি। আমি এই সম্পর্ক সমর্থন করতে পারি না।”


কল কেটে যায়। তন্নী একদৃষ্টিতে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে।


---


৩. বর্তমানে ফিরে – তুর্যর প্রতিক্রিয়া

তুর্য মাথা নিচু করে বলে,

“তোর বাবা ঠিকই বলেছেন। আমি হয়তো প্রমাণ করতে পারিনি যে আমি তোর জন্য ‘যোগ্য’। আমি শুধু তোর পাশে থাকতে চেয়েছি, কখনো দাবি করিনি।”


তন্নী হালকা গলায় বলে,

“তুই কখনো দাবি করিস না বলেই আমি তোর হয়ে উঠছি তুর্য।”


তুর্য তাকায় তন্নীর চোখে—গভীর, দৃঢ়, নিঃশব্দে কথা বলে।


---


৪. ক্যাম্পাসের করিডোর – বন্ধুরা পাশে দাঁড়ায়

তাসনিম শুনে রীতিমতো ক্ষেপে যায়,

“মানে! এত কিছু দেখে শুনে, এত সম্মান দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে—তবুও না? কিসের ভিত্তিতে এই রিজেকশন?”


তিহান ঠাণ্ডা মাথায় বলে,

“সামাজিক ধারণা সহজে বদলায় না। তবে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা একসাথে থাকলে, যেকোনো প্রতিরোধ ভেঙে যায়।”


রাফায়েল একটু গম্ভীর হয়ে বলে,

“আমি জানি, তুর্যর মধ্যে এমন কিছু আছে, যা ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানো যায় না। ওর অভ্যন্তরীণ শক্তি একদিন সবার ধারণা বদলে দেবে।”


---


৫. একটি চিঠি – তন্নীর আব্বুর উদ্দেশ্যে

তন্নী রাতে আব্বুকে একটি চিঠি লেখে। ইমেইল নয়, সত্যিকারের কাগজে—হাতে লেখা।


> “আব্বু,

আমি জানি তুমি চিন্তা করো। আমিও করি। তুর্য হয়তো পরিবারের কাঠামোয় নিখুঁত না, কিন্তু তার মূল্যবোধ, মানবিকতা, সাহস—এসবই আমার জীবনের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠছে। আমি কারো অন্ধ প্রেমে পড়িনি, ধীরে ধীরে, বুঝে, দেখে ভালোবাসছি। তুমি যদি একদিন ওকে সামনে থেকে দেখো, তাহলে আমি বিশ্বাস করি, তুমি নিজেই বলবে—এই ছেলেটা আমার মেয়ের জন্য ঠিক।”


তন্নী চিঠি শেষ করে চোখ বন্ধ করে। বাইরে বৃষ্টি পড়ে। তুর্য ঠিক তখন ফোন করে।


“সব ঠিক তো?”


তন্নী হেসে বলে,

“সব ঠিক হয়ে যাবে তুর্য। কারণ তুই আছিস।”


---

0 Comments:

Post a Comment