গল্প-টক_ঝাল_মিষ্টি পর্ব ৩৬

 #টক_ঝাল_মিষ্টি 

#তামান্না_আঁখি 

#পর্ব-৩৬


শাহাদ বারান্দা থেকে নেমে হাতের হকিস্টিক দিয়ে সামনে যাকেই পেলো সজোরে আঘাত করলো। শাহাদকে দেখে অনেকেই মারামা*রি থামিয়ে তাকিয়ে রইলো। তমাল আতকে উঠলো শাহাদকে এসবের মাঝে দেখে। শাহাদ নামার পর মারামা*রি আরো বেশি করে হতে লাগলো। শাহাদ আ*ঘাত করলেও কাউকে জখম করলো না। কয়েকজন এসে ওকে ঘিরে ধরলো। একটা ছেলে এই গন্ডগোলের মাঝে শাহাদের পিঠে লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করলো। শাহাদ ঘুরে তাকাতে গেলে আরেকটা আঘাত এসে লাগলো শাহাদের কাঁধে। প্রচন্ড যন্ত্রণায় চোখ মুখ কুচকে গেলো শাহাদের৷ দলের অন্য ছেলেরা শাহাদকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসলে ওদেরকেও নির্দয় ভাবে পিটানো হলো। ইতোমধ্যে দুইদলের কয়েকজন রক্তা*ক্ত হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। এর মধ্যে একটা ছেলে শাহাদকে আঘাত করে একটা নোংরা গালি দিয়ে বলল- 

"খু*নির বাচ্চা পারলে আমারে মা*ইরা দেখা।"


খু*নি শব্দটা শুনে শাহাদের মস্তিষ্কে আগুন জ্বলে গেলো। হাতের হকিস্টিক দিয়ে ছেলেটার কান বরাবর আঘাত করলো। তারপর হকিস্টিক টা ফেলে দিয়ে ছেলেটার বুক বরাবর লাথি দিলো।ছেলেটা ছিটকে মাটিতে পড়ে গেলো। শাহাদ এখানেই থেমে গেলো না সে হিংস্রভাবে ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলো।ছেলেটার পাশে হাটু গেড়ে বসে ওর কলার ধরে নাক বরাবর একের পর এক ঘুষি দিতে লাগলো। মারামা*রি করতে থাকা সবাই  দাঁড়িয়ে থেকে শাহাদের মা*র দেখতে লাগলো।তমাল দৌড়ে এসে শাহাদকে থামাতে চাইলো। কিন্তু শাহাদ থামলো না সে ক্রোধে অন্ধ হয়ে গেছে। একটা সময় দলের অন্য ছেলেরাও এসে তমালের সাথে শাহাদকে আটকানোর ট্রাই করলো। সবাই টানাটানি করে শাহাদ কে পার্টি অফিসের ভিতরে নিয়ে গেলো। শাহাদ ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে কয়েকবার আবারো ছেলেটার দিকে তেড়ে যেতে চাইলেও তমাল যেতে দিলো না সে অফিসের দরজা লক করে দিলো। অফিসের ভেতর থেকে শাহাদের ক্রোধান্বিত গর্জন ভেসে আসছে। 


চোখ বন্ধ করে মাটিতে পড়ে থাকা রক্তা*ক্ত ছেলেটিকে অন্য ছেলেগুলো এসে তুললো। ছেলেটির নাকের হাড় ভেংগে গেছে।ঠোঁট কেটে গলগল করে র*ক্ত বের হচ্ছে। দুই দলের সবাই মোটামুটি আহত হয়েছে। সবারই আঘাত লেগে র*ক্ত ঝড়ছে। শাহাদের আঘাত লেগে র*ক্ত ঝড়ছে সেই সাথে দলের অন্যরাও আঘাত পেয়েছে তাই তমাল এই গন্ডগোল আর বাড়াতে চাইলো না। সে  হুংকার দিয়ে বলল- 


"যদি বাচতে চাস তাহলে এখান থেকে বের হ।নাহলে একটারেও জান নিয়ে ফিরতে দিব না।"


অন্য পাশের ছেলেগুলোও হুংকার ছেড়ে বিভিন্ন থ্রেড দিলো। তারপর শাহাদের মা*র খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ছেলেটাকে টেনে নিয়ে বের হয়ে গেলো। ছেলেগুলো বাইক নিয়ে চলে গেলে তমাল দরজা খুলে দিলো। শাহাদ সাথে সাথে বের হয়ে আসলো। তার রাগ এখনো কমেনি। আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে বা পেয়ে বললো-


"কোথায় ওরা? এত বড় সাহস আমাদের পার্টি অফিসে এটাক করে?'


তমাল শাহাদকে ধরে বললো -


" ভাই হাসপাতালে চলো তোমার আঘাত লাগছে।"


শাহাদ অন্যদের দিকে তাকিয়ে দেখলো সবারই রক্তা*ক্ত অবস্থা। তমালকে বললো-

"ওদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যা।আমি ওদেরকে ধাওয়া করে ওদের পিছু নিব।"


তখনি তমালের মোবাইলে কল এলো। তমাল কল ধরে কিছুক্ষণ কানে রেখে বলল- 

"জী স্যার আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।"


কল কেটে দিয়ে তমাল শাহাদের দিকে তাকিয়ে বলল- 

"ভাই স্যার তোমাকে নিয়ে খান বাড়িতে যেতে বলেছে।"


শাহাদ যেতে চাইলো না। তার মাথায় তখনো রাগ টগবগ করছে। তমাল আর অন্যরা মিলে এক প্রকার জোর করে তাকে গাড়িতে তুলে খান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।


কুহুর বুকের ভেতরটা ঢিপঢিপ করছে। ভয়ে হাত পা অল্প কাঁপছে। চোখে একটু পর পর পানি আসছে কিন্তু গাল বেয়ে পড়ার আগেই সে মুছে ফেলছে। শাহাদ মারামা*রি করেছে খবরটা শোনার পর থেকে খান বাড়িতে যেন বজ্রপাত ঘটেছে। কুলসুমা বেগম একমাত্র নাতির চিন্তায় হাত পা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাকে ঘরে শুইয়ে রাখা হয়েছে। রেজিয়া সুলতানা বাইরে নিজেকে শক্ত দেখালেও ভিতরে ভিতরে ভেঙে পড়েছেন। আপাতত সবাই এখন ড্রয়িং রুমে বসে অপেক্ষা করছে শাহাদের জন্য। কুহু কিছুতেই ভিতরের অস্থিরতা দমাতে পারছে না।রেজিয়া সুলতানা সহ বাড়ির সবাই কুহুকে শান্তনা দিয়েছে কিন্তু কোনোমতেই সে মনের ভিতরের কুচিন্তা গুলো দূর করতে পারছে না।খানিক বাদেই গাড়ির আওয়াজ ভেসে আসলো বাইরে থেকে।বাড়ির মহিলারা দৌড়ে গেলো জানালার দিকে। জানালার পর্দা সরিয়ে তাকালো বাইরের দিকে। অনেক গুলো গাড়ি এসে ঢুকেছে খান বাড়িতে।গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে আশফাক খান। তার সাথে নেমেছে অনেক নেতাকর্মীরাও। অন্য  একটা গাড়ি থেকে লাঠি ভর দিয়ে নেমে আসলেন আব্দুল গাফফার খান।তিনিও আজ ছেলের সাথে নির্বাচনী এলাকা দেখতে গিয়েছিলেন। নেতৃবৃন্দ সবাইকে নিয়ে আশফাক খান আউটহাউজে ঢুকে গেলেন।বাকি কর্মীরা বাইরে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইলো।জয়া বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন- 


"শাহাদ কোথায়?ও আসছে না কেন?"


রেজিয়া সুলতানাও উদ্বেগ নিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন। একটু পরেই একটা এম্বুল্যান্স করে মেডিকেল টিম এসে থামলো ড্রাইভয়েতে। মেডিকেল টিমকে আউট হাউজের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো।একটু পর আহত ছেলেদের চিকিৎসা করার জন্য আউহাউজের বাইরে বাগানে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করলো। এর কিছুক্ষন পরই একটা প্রাইভেট কার আর ২টা মাইক্রোবাস এসে গেটের কাছে থামলো। কুহুর বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো।শাহাদের গাড়িটাকে সে চিনতে পেরেছে। সে চাতক পাখির মতো শাহাদকে দেখার জন্য আকুল নয়নে তাকিয়ে রইলো। রক্তা*ক্ত শাহাদকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে কুহু ছোট একটা চিৎকার দিয়ে মুখে হাত চেপে ধরলো। জমে থাকা চোখের পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। জয়া বেগম কুহুর কাছে গিয়ে কুহুকে ধরে স্বান্তনা দিলেন। রেজিয়া সুলতানা ছেলের এমন অবস্থা সহ্য করতে পারলেন না।তিনি জানালার গ্রিল ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। 


গাড়ি থেকে নেমে শাহাদ বড় বড় পা ফেলে সোজা আউটহাউজের ভিতরে চলে গেলো।তার চোয়াল এখনো শক্ত হয়ে আছে।চোখে এখনো ক্রোধের আগুন জ্বলছে। আহত সবাইকে বাগানের মেডিক্যাল ক্যাম্পে নিয়ে গেলো তমাল। সবাই কম বেশি অনেক র*ক্ত ঝড়িয়েছে তাই খুব দ্রুত ওদের চিকিৎসা প্রয়োজন। রেজিয়া সুলতানা নিজেকে শান্ত করে কুহুর দিকে তাকালেন।কুহু কান্নাভেজা চোখে আতংক নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। সাধারণ ঘরের মেয়েটা হয়তো এইসব আগে কখনো দেখেনি। তিনি কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন- 


"তুমি ঘরে যাও।শাহাদ নিশ্চয়ই ঘরে আসবে এখন।যাও মা।"


শাশুড়ীর কথায় কুহু ঘরে এসে বারান্দায় দাঁড়ালো।এইখান থেকে আউটহাউজ আর সামনের বাগানটা স্পষ্ট দেখা যায়। মেডিকেল ক্যাম্পে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে। কুহুর চোখ শাহাদকে খুঁজছে। শাহাদ আহত হয়েছে তারপরও সে ট্রিটমেন্ট কেন নিচ্ছে না? আউটহাউজের ভিতর থেকে নেতাকর্মীদের চিৎকারের আওয়াজ শোনা গেলো। এর কিছুক্ষন পরই শাহাদ বেরিয়ে আসলো। ডানদিকের কাঁধের পাঞ্জাবি র*ক্তে ভিজে আছে।তমাল  এসে শাহাদকে ধরে ডাক্তারের কাছে নিতে চাইলো কিন্তু শাহাদ ঝটকা মেরে তমালের হাত ছাড়িয়ে নিলো। সে ট্রিটমেন্ট করবে না। তমাল হাজার বার বলেও শাহাদকে মেডিকেল ক্যাম্পের দিকে নিতে পারলো না।শাহাদ চোখমুখ শক্ত করে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে কুহু সবটাই দেখলো। শাহাদ কি তাহলে এখন ঘরে আসবে? কুহু তাড়াতাড়ি ঘরের ভিতর চলে আসলো। আয়নায় একবার নিজেকে দেখলো। চেহারা মলিন হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি সে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি ভালো করে মুছে নিলো।নিজের দুর্বল অবস্থা সে শাহাদকে দেখাতে চায় না।


বেশ কিছুক্ষন পর শাহাদ এসে দরজা খুলে ঢুকলো ঘরে। তার চেহারায় এখনো রাগের আভাস রয়েছে। দরজা খুলে কুহুর দিকে তাকিয়ে মুহুর্তেই তার চেহারার কাঠিন্য দূর হয়ে গেলো।কুহুর সামনে নিজেকে এই অবস্থায় আবিষ্কার করে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কন্ঠ যথাসম্ভব নরম করে বললো- 

"আমি গোসলে যাচ্ছি।আমার টি শার্ট আর ট্রাউজার দাও।"


কুহু অস্থির হয়ে বললো-

"আপনার তো আঘাত লেগেছে। ট্রিটমেন্ট না করান অন্তত একটু স্যাভলন দিয়ে...."


"ওসব লাগবে না।"


শাহাদ ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। বাথটাবের উপর চোখ বন্ধ করে বসে রইলো। কিছুক্ষন পর কুহু এসে দরজায় নক করলো।দরজা খুলে শাহাদ যখন জামাকাপড় নেয়ার জন্য হাত বাড়ালো তখন কুহু জামা কাপড়ের সাথে ফার্স্ট এইড বক্স হাতে ধরিয়ে দিলো।শাহাদ কুহুর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার চোখ ছলছল করছে কিছুটা অভিমানও রয়েছে সেই চোখে। তাই সে আর না করতে পারলো না ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটানে র*ক্তভেজা পাঞ্জাবিটা খুলে ফেললো। কাঁধে অনেকটা জায়গা গভীরভাবে কেটে গেছে। যেই লাঠি দিয়ে আঘাত করার হয়েছে সেখানে নিশ্চয়ই লোহা জাতীয় কিছু ছিলো। শাহাদ স্যাভলনের শিশিটা ঢেলে দিলো ক্ষতটার উপর। সারা শরীর জুড়ে একটা জ্বলুনির ঢেউ খেলে গেলো।অস্পষ্ট আর্তনাদ বেরিয়ে এলো মুখ দিয়ে।কুহু যেন শুনতে না পারে তাই পানির কল ছেড়ে দিলো।দাঁতে দাঁত চেপে বাকি যন্ত্রনাটুকু সহ্য করে নিলো। বড় বড় শ্বাস ফেললো।জিম করা হাতের শক্ত পেশিগুলো যন্ত্রণার দরুন আরো ফুলেফেপে উঠছে।পেশিগুলোতেও কয়েকজায়গায় আচড় রয়েছে ।শাহাদ দুটো পেশিতেই স্যাভলন ঢাললো তারপর গালে আর কপালে কিছু আঘাত আছে ওইগুলোয় তুলা দিয়ে ড্রেসিং করে নিলো। তারপর লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আসলো। 


কুহু তখনো বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো শাহাদের জন্য।শাহাদকে দেখে চিন্তিত চোখে তাকালো। শাহাদ টাওয়ালটা সোফার উপর রেখে বলল- 

"খেতে দাও।খিদে পেয়েছে।"


কুহু তৎক্ষনাৎ ছুটে এলো রান্নাঘরে। রেজিয়া সুলতানাকে দেখতে পেলো খাবার গরম করছে। কুহুকে দেখে প্রশ্ন করলো- 

"শাহাদ খেতে চেয়েছে? এই নাও খাবারগুলো টেবিলে নিয়ে যাও। আমি মায়ের কাছে যাই নাতিকে র*ক্তাক্ত অবস্থায় দেখে উনার শরীর খারাপ করেছে।"


কুহু খাবার নিয়ে টেবিলে রাখলো। ততক্ষনে শাহাদ এসে বসলো টেবিলে। খাবার সার্ভ করার সময় কুহু শাহাদের দিকে খেয়াল করলো। এক হাত মুখে রেখে গভীর চিন্তায় মগ্ন। কুহু দুইবার ডাকলো শুনলো না।এরপর কুহু কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিতেই শাহাদ ব্যথায় "আহ" করে উঠলো। কুহু ভয় পেয়ে বললো-


"কি হয়েছে? ব্যথা পেয়েছেন?"


শাহাদ ব্যথাটা গিলে ফেললো। দুপাশে মাথা নেড়ে বললো না।কুহু জেদ ধরে বললো- 

"আমি আঘাতটা দেখব। আর আপনি এক্ষনি ট্রিটমেন্ট করাবেন।"


কুহু শাহাদের কাঁধের দিকে হাত বাড়াতেই শাহাদ হাত ধরে ফেললো।কুহুকে কাছে টেনে এনে কুহুর কোমড় জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো।চোখ বন্ধ করে বলল- 


" যতক্ষন তোমার সাথে আছি এই বিষয়ে কথা বলবে না।এই বিষয়  ভুলে থাকতে চাই।"


"কিন্তু ট্রিটমেন্ট? "


শাহাদ মাথা তুলে কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল- 

"পরে করে নিব।"


"পরে না।আপনি খেয়ে উঠে গিয়ে ডক্টরের কাছে যাবেন। "


শাহাদ মৃদু হেসে বলল- 

"ফাইন, যাব।এখন তো খেতে দাও।"


কুহু শাহাদকে খেতে দিলো। প্রথম লোকমা মুখে দেয়ার আগে কুহুকে জিজ্ঞেস করলো- 

"তুমি খেয়েছো?"


"পরে খাব।আপনি খান।"


শাহাদ পাশের চেয়ার টেনে কুহুকে বসিয়ে দিয়ে প্রথম লোকমাটা ওর মুখে দিলো। তারপর নিজের জন্য মুখে খাবার তুলতে নিলেই বাইরে থেকে পুলিশের গাড়ির শব্দ ভেসে এলো। শাহাদের মুখে আর খাবার দেয়া হলো না।সে খাবার রেখে উঠে পড়লো।কুহু অস্থির হয়ে শাহাদের হাত খামছে ধরলো।বললো-


" খাবার ফেলে কোথায় যাচ্ছেন আপনি??"


"তুমি ঘরে যাও।বাইরে আসবে না একদম।"


কুহু আবারো শাহাদের বাহু শক্ত করে ধরলো।ভয়ার্ত কন্ঠে জানতে চাইলো -

"পুলিশ কেন এসেছে বাড়িতে? কি করেছেন আপনি?"


শাহাদ কুহুর হাত ছাড়িয়ে শক্ত কন্ঠে ধমকের সুরে বললো- 

"যা বলেছি তাই করো।ঘরে যাও।"


কুহু আবারো শাহাদের বাহু খামছে ধরে আতংক নিয়ে শাহাদের দিকে তাকিয়ে রইলো।শাহাদের বাহু ধরে রাখা তার হাত দুটো কাঁপছে। শাহাদ চোখ বন্ধ করে গভীর করে শ্বাস টানলো। নিজেকে সামলে নিয়ে কুহুর কপালে চুমু খেয়ে কুহুর দু গালে হাত রেখে ফিসফিস করে বলল- 

"কিচ্ছু হবে না আমার। খান বাড়ির ছেলে আমি।আমার গায়ে কোনোদিন পুলিশের হাত লাগেনি। ঘরে যাও।বাইরে আসবে না, কেমন?। "


শাহাদ হাত ধুয়ে সদর দরজার দিকে গেলো। দরজা খুলে বাইরে আসতেই পুলিশের দলটাকে দেখতে পেলো। স্থানীয় থানার ইন্সপেক্টর এসেছে। আশফাক খান নেতাকর্মীদের নিয়ে আউটহাউজ থেকে বেরিয়ে এসেছেন।আব্দুল গাফফার খান লাঠি হাতে পিছু পিছু আসছেন।শাহাদ এগিয়ে গেলো। থানার ইন্সপেক্টর শাহাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো-


"ইউ আর আন্ডার এরেস্ট মি.শাহাদ। এটেম্প টু মার্ডারের কেস হয়েছে আপনার বিরুদ্ধে।"


ততক্ষনে আশফাক খান তার দলবল নিয়ে চলে এসেছেন।নেতাগোছের একটা ছেলে গর্জে উঠলো-


"ওই দারোগা আপনি কি কানা? ভাইরে যে আগে এটাক করা হইছে ওইটা দেখেন না?ওইটা সেল্ফ ডিফেন্স ছিলো এটেম্প টু মার্ডার না।"


আশফাক খান চিরচরিত গম্ভীর কন্ঠে বললেন- 

"অফিসার, আমার ছেলে কোনো কেসে কোনো দিন থানায় যায় নি। কোনো হাতকড়া আমার ছেলের হাতে পড়েনি।এবারও পড়বে না।তাই বুঝেশুনে কথা বলুন।"


ইন্সপেক্টর  বিনয়ের সাথে বললো-

"সরি স্যার। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।আপনার ছেলের নামে কেস করা হয়েছে।আমাদেরকে আমাদের ডিউটি করতে দিন।"


কথা শেষ করে ইন্সপেক্টর শাহাদকে হাতকড়া পড়াতে আদেশ করলো একটা কন্সটেবল কে।প্রিয় নাতির হাতে পুলিশের হাতকড়া পড়ানো এই দৃশ্য গাফফার খান সহ্য করতে পারলেন না।তিনি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে নিলে তাকে ধরে ফেললো কয়েকজন ছেলে। তাঁর হাতের লাঠি মাটিতে পড়ে গেলো। 


চলবে

0 Comments:

Post a Comment