গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ২৭

 #এক_তুমিতেই_আসক্ত 

#আয়ান_মাহমুদ 

|২৭|


মে মাসের সকালগুলো অন্যরকম। পোর্তো ট্রিপ থেকে ফিরে সবাই পড়েছে প্রস্তুতির ঘূর্ণিপাকে। চারপাশে শুধু ফাইনাল রিপোর্ট, প্রেজেন্টেশন, সাবমিশনের তারিখ আর ডেডলাইন।


তাসনিম এমনভাবে বোর্ডে এক্সেল শিট টাঙিয়ে রেখেছে যেন যুদ্ধের ঘোষণা। তিহান তো ঘুমোতেই ভুলে গেছে।


তুর্য তার ডেস্কে বসে একাগ্রভাবে কোড লিখছে। তন্নী লাইব্রেরির কোণার একটা টেবিলে নিজের নোট সাজাচ্ছে।


তাদের চোখে চোখ হয়। হাসি হয় না। কারণ সময় আর ক্লান্তি মাঝখানে।


---


তন্নী লক্ষ্য করে—তুর্য এখন অনেক কম কথা বলে। এমনকি সামনাসামনি দেখা হলেও, কেবল মাথা নোয়ানো, অথবা একরকম নীরব অভিবাদন।


তাসনিম একদিন বলল,

— “তোরাই তো আমাদের রোমান্সের আশা! এখন দেখি যেন বরফ!”


তন্নী শুধু হেসে বলে,

— “সব কিছু আসলে বাইরে থেকে বোঝা যায় না। সময় অনেক কিছু বদলায়।”


তাসনিম কপালে চিন্তার রেখা টানে।


---


তুর্য আসলে এক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়ে গেছে। তার বাবা-মার পুরনো বন্ধু সম্প্রতি তাকে পোর্তুগালের বাইরের একটি কোম্পানি থেকে ইন্টার্নশিপ অফার পাঠিয়েছেন। এটি দারুণ সুযোগ, কিন্তু তার মানে ৩ মাস অন্য শহরে থাকা।


তুর্য দ্বিধায়। তন্নীকে কিছু বলতে পারছে না। পরীক্ষার চাপের ভেতরে এমন কথা বলা মানেই ভেঙে ফেলা।


তিহান একদিন বলল,

— “তুই কি তন্নীর সঙ্গে সত্যি কথা বলবি না?”

— “তানির এখন মাথা ভর্তি প্রেজেন্টেশন আর ওর মায়ের অসুস্থতা। আমি চাই না এই সময় ওর মন ভেঙে দিতে।”

— “কিন্তু দূরত্ব বলেই তো অনেক কিছু মিস হয়ে যায় রে!”


তুর্য চুপ।


---


একদিন লাইব্রেরিতে বসে তন্নী খুঁজে পায় একটা কাগজ। তুর্যর হাতের লেখা—


---


> তন্নী,


আমি জানি তুমি অনেক কিছুর মধ্যে আছো। আমি ও তোমার পাশে সবসময় ছিলাম—তবে এখন একটু সরে যেতে হবে।


এটা শেষ না, শুধু একধরনের পরিবর্তন।


আমি যাচ্ছি তিন মাসের জন্য। জানি, না বলা চলে না। কিন্তু সময়ের গায়ে চাপা দিয়ে বলাটা ভুল মনে হচ্ছিল।


আমি জানি, তুমি দূরত্বকে ভয় পাও না। আমিও না।


ফিরে এসে যদি তোর চোখে আবার সেই শান্তি দেখি, তাহলে বলব—

তোমাতেই আসক্ত আমি।


— তুর্য


---


তন্নী চিঠিটা পড়েও কিছু বলতে পারে না। শুধু জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে, চোখে ধরা পড়ে অল্প অল্প কুয়াশা।


---


তুর্য চলে যাওয়ার আগে আর দেখা হয়নি তন্নীর সঙ্গে।

তন্নী যখন গিফট রেডি করেছিল, তখন তুর্যর ফ্লাইট ছুটে গেছে।


তাসনিম তাকে ফোনে বলে,

— “তুই ওকে মিস করবি?”

— “করবো না, এটা বলা কি সম্ভব?”


তাসনিম দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে।

— “তাদের প্রেমই গভীর হয়, যারা দূরে থেকেও একে অপরকে আগলে রাখে।”


---

0 Comments:

Post a Comment