#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-১৮
সকাল সকাল উঠে রেডি হওয়া শুরু করলেও পুরোপুরি রেডি হতে অনেক্ষন লেগে গেলো। শাহাদ নিজে রেডি হয়ে অনেক্ষন আগেই বেরিয়ে গেলো।কিন্তু কুহুর আর রেডি হওয়া হলো না।আনিশা আর রাফা তাকে পুরোটা সময় ধরেই সাহায্য করলো।আনিশা কুহুর লাগেজ গুছিয়ে দিলো। তারপর কুহুকে রেডি হতে সাহায্য করলো। শাহাদ অপেক্ষা করতে করতে কয়েকবার মালাকে দিয়ে ডাক পাঠালো।বেশি দেরি হলে ফ্লাইট মিস করার সম্ভাবনা আছে। লাগেজগুলো আগেই নিচে পাঠিয়ে দেয়া হলো। শাহাদ গাড়ির পিছনে সব তুলে দিলো। কুহুকে নিয়ে আনিশা বাইরে বেরিয়ে আসলো।কুহু আজ একটা গাউন পড়েছে। আসার সময় বাড়ির বড়দের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসেছে।বাড়ির বড়রা সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে তাদের যাওয়া দেখার জন্য৷ শাহাদ সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা শিউর হয়ে নিলো।এমন সময় রাহাত এসে কাঁধ পেচিয়ে ধরলো শাহাদের। ষড়যন্ত্র করার মতো করে ফিসফিস করে বলল-
"হানিমুন মানে হচ্ছে মধুচন্দ্রিমা। চাঁদ তো সাথে করে নিয়েই যাচ্ছ। মধুর ব্যাপারটা হলেই হয়।"
শাহাদ রাহাতের হাত সরিয়ে দিলো। রাহাত অসভ্যের মতো একটা হাসি দিলো। শাহাদের চোখ পড়লো একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কুহু আর আনিশার দিকে। আনিশা কুহুর কানের কাছে কিসব ফুসুরফাসুর করছে। কুহু মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে স্তম্ভিত হয়ে সেসব শুনছে। শাহাদ কুহুর মুখ দেখেই বুঝতে পারলো কিসব কথা চলছে। সে এসব থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য তাড়া দিলো গাড়িতে উঠার।কুহু ছুটে এসে শাহাদের খুলে রাখা দরজা দিয়ে এক প্রকার লাফিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো। শাহাদ দরজা লাগিয়ে অপর পাশ দিয়ে উঠার সময় রাহাত হাত উঁচিয়ে গলা ছেড়ে বললো-
"শালা ভাই মধু আর চাঁদ দুটোই কিন্তু তোমার আয়ত্ত্বে।"
শাহাদ রাহাতের দিকে বিব্রত হয়ে একবার তাকালো। রাহাত চোখ মারলো। তার পাশে দাঁড়িয়ে আনিশা মুখে হাত চেপে হাসছে। শাহাদ দ্রুত গাড়িতে উঠে বসলো। এখানে থাকা আর নিরাপদ মনে করলো না। গাড়িতে উঠে দেখতে পেলো কুহু ফোনে কথা বলছে। গাড়ি ছেড়ে দিলো। গন্তব্য এয়ারপোর্ট। কুহু ফোনে কথা শেষ করলো। শাহাদ প্রশ্ন করলো-
"বাসায় কথা বলছিলে?"
কুহু মাথা নাড়লো।মুখে বললো-
"বাবা মাকে বলেছি ফিরে এসে ওদের সাথে দেখা করতে যাব। "
শাহাদ মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। খুব তাড়াতাড়ি হানিমুন প্ল্যান করায় কুহুর বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে যেতে পারে নি। ফিরে এসে নাহয় যাওয়া যাবে। প্লেনে করে দীর্ঘ জার্নির পর এয়ারপোর্টে এসে নামলো ওরা। চারদিকে একটা সন্ধ্যা সন্ধ্যা ভাব বিরাজ করছে। চারপাশটা কুহুর বেশ অপরিচিত লাগলো সাথে মানুষগুলোও। ওদের জন্য ঠিক করা গাড়ি চলে এলে শাহাদ ড্রাইভারকে তাদের লাগেজ গুলো বুঝিয়ে দিয়ে এলো। এসে একটা রুমাল দিয়ে কুহুর চোখ বেঁধে দিলো। কুহু চমকে জিজ্ঞেস করলো-
"চোখ বাঁধছেন কেন?"
" যেখানে যাচ্ছি সেখানে গেলে খুলে দিব।"
কুহুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো শাহাদ। কুহু যাওয়ার পথে গাড়ির বাইরে থেকে অনেক শোরগোল শুনতে পেলো। বিভিন্ন বাজনা এবং গান কানে এলো। সে বুঝতে পারলো আশেপাশে কোথাও স্ট্রিট প্রোগ্রাম হচ্ছে।পুরো রাস্তা অতিক্রম করার সময়ই এরকম বিভিন্ন স্ট্রিট প্রোগ্রামের আওয়াজ পেলো। আস্তে আস্তে আওয়াজ ক্ষীণ হয়ে এলো। গাড়ি এসে থামলো কিছুটা নির্জন জায়গায়।কুহুকে হাত ধরে শাহাদ বের করে আনলো গাড়ি থেকে। কুহু গায়ে ঠান্ডা বাতাসের ছোয়া অনুভব করলো।শাহাদ কোনো কিছু না বলেই কুহুকে কোলে তুলে নিলো।কুহু ভয় পেয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো শাহাদের। কুহুর ভয় দেখে শাহাদ স্মিত হাসলো।
একটা সময় পর কুহুকে নামিয়ে এক জায়গায় বসালো।এর কিছুক্ষন পরেই ইঞ্জিনের শব্দ শুনতে পেলো কুহু,দুলুনি অনুভব করলো আর তারপরেই পানির আওয়াজ। অর্থাৎ তারা কোনো জাহাজে আছে। প্রায় দশ মিনিট যাওয়ার পর শাহাদ কুহুর হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো। নিজের কাছাকাছি নিয়ে এসে চোখের বাঁধন খুলে দিলো। কুহু অনেক্ষন পর চোখ খোলা পেয়ে পিটপিট করে তাকালো।প্রথমে কিছু বুঝতে পারলো না। আস্তে আস্তে সামনের দৃশ্য স্পষ্ট হলো। কুহুর চোখমুখ আনন্দময় বিস্ময়ে ছেয়ে গেলো।
শাহাদ কুহুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো -
" ভেবেছিলাম একবারে গন্তব্যে গিয়ে চোখ খুলে দিব। কিন্ত এখন মনে হলো এই সুন্দর দৃশ্য তোমার দেখা উচিত।"
কুহু এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে দেখলো। চারপাশে বিশাল সাগর। সন্ধ্যার আলোতে সাগরের পানি দেখতে কালো লাগছে কিন্তু আলো পড়ে পানি চিকচিক করছে। সাগরের এদিক ওদিক আরো অনেক জাহাজ আর ছোট ছোট ইয়ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কুহু শাহাদের দিকে তাকালো। তারা একটা ছোট সাইজের ইয়টে আছে, শাহাদ ইয়টটা চালাচ্ছে। তার দৃষ্টি সামনের দিকে। কুহু শাহাদের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে।জিজ্ঞেস করলো-
"কোথায় আছি আমরা?"
শাহাদ ইয়টটার গতি কমিয়ে দিলো। সামনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো-
"ব্রাজিলে। একটু আগে রিও শহর পিছনে ফেলে এসেছি আমরা।"
কুহু চমকালো।ওরা বাংলাদেশ থেকে এত দূরে? অবশ্য লং ফ্লাইটে যখন ছিলো তখনি বুঝেছিলো যে তারা দেশের বাইরে কোথাও যাচ্ছে।কুহু পিছনে তাকালো। পিছনে আলোকজ্জ্বল রিও ডি জেনেরিও শহর।ব্রাজিলের দ্বিতীয় রাজধানী বলা হয় যে শহরকে।শাহাদ ইয়টটাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে কুহুকে আরেক্টু কাছে আনলো। কুহুর পিছনে দাঁড়িয়ে কুহুর হাত নিজের হাতে নিয়ে উঁচু করে এক দিকে তাক করলো। বললো-
"ওই যে দ্বীপটা দেখতে পাচ্ছ।আমরা এখন সেখানেই যাচ্ছি। সেখানে আমাদের জন্য রিসোর্ট বুক করা হয়েছে।এইটা চাচ্চুর পক্ষ থেকে গিফট।বিয়েতে আসতে পারেনি সেজন্য।"
"চাচ্চু আসেনি কেন?"
শাহাদ কুহুর হাত ছেড়ে দিলো। ইয়টের গতি বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
"বাবা আমাদের সমস্ত ব্যবসার দায়িত্ব চাচ্চুর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে।চাচ্চুকে তাই মাঝে মাঝেই ব্যবসার কাজে বিদেশে যেতে হয় অনেকদিনের জন্য। আমাদের বিয়ের সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রোজেক্টের কাজ চলছিলো। সেটা রেখে আসা অসম্ভব ছিলো। বিয়ের ডেট পিছানোর কথা বললে চাচ্চুই না করে। এরপর প্রোজেক্টের কাজ শেষ করে চাচ্চু দেশে ফিরেছে।"
কুহু দৃষ্টি দিলো স্পষ্ট হয়ে আসা দ্বীপটার দিকে।নির্জন দ্বীপ,তার মাঝে টিমটিম করে কিছু আলো জ্বলছে
।আশেপাশে আরো কিছু দ্বীপ দেখা যাচ্ছে, ওগুলোতেও এরকম আলো। আস্তে আস্তে ইয়টটা এসে দ্বীপের কাছে ভীড়লো।ছোট্ট একটা জেটি আছে, সেখানেই শাহাদ ইয়টটা থামালো। কুহুকে হাত ধরে ইয়ট থেকে নামিয়ে লাগেজ গুলো নামালো শাহাদ।তারপর কিছুটা হেঁটে একটা সাগরের তীরে একটা কটেজের সামনে এলো। কটেজের মধ্যবয়স্ক কেয়ারটেকার আগে থেকেই ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলো।শাহাদকে দেখে বিনীত হেসে স্বাগতম জানালো।কটেজের সমস্ত কিছু বুঝিয়ে দিয়ে তিনি বিদায় নিলেন। শাহাদ কুহুকে নিয়ে কটেজের ভিতর প্রবেশ করলো।
কটেজটা পুরোটা কাঠের তৈরি। কাঠের মেঝে, কাঠের দেয়াল,বড় কাচের জানালা যেখান থেকে সাগর দেখা যায়। কুহু বিস্ময় নিয়ে কটেজটা দেখলো। একটা লিভিং রুম সহ কিচেন। তারপর বেডরুম,বেডরুমের সাথে লাগোয়া বড় ওয়াশরুম। শাহাদ বেডরুমে এসে লাগেজ দুটো নামিয়ে রাখলো।কুহু বেডরুমে এসে আনন্দে চাপাস্বরে চিৎকার করে উঠলো।বেডরুমের এক পাশে ছাদ পর্যন্ত ইয়া বড় কাচের দরজা।অর্থাৎ পুরো দেয়ালটাই কাচের। সেখান থেকে সাগরের তীর মাত্র কয়েক পায়ের দূরত্ব। চাইলেই দরজা খুলে সাগরে নেমে যাওয়া যাবে। কুহু অস্থির পায়ে ঘরের এদিক থেকে ওদিক যেতে লাগলো। শাহাদ বুকে দুহাত ভাঁজ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে কুহুর আনন্দ দেখছে।
কুহু আবিষ্কার করলো বেডরুমের অপর পাশে একটা সুইমিং পুল আছে।সেখান থেকে সাগর দেখা যায়।সুইমিং পুলটার পিছনেই রয়েছে একটা ছোট পাহাড়, সেখান থেকে শব্দ করে ঝরনা গড়িয়ে পড়ছে।রাতের নিস্তব্ধতায় সেই আওয়াজ আরো প্রখর শুনালো। শাহাদ তার নিজের লাগেজটা নিচু টেবিলটার উপর তুললো।নিজের জামাকাপড় বের করে লাগেজ খুলে সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।মুখ থেকে বেরিয়ে এলো -
"এইগুলো কি?"
শাহাদ একটা কাপড় হাত দিয়ে উপরে তুলে ধরলো।একটা ফিনফিনে পাতলা নাইটি।কুহু শাহাদের কথা শুনে শাহাদের দিকে ফিরে দেখলো শাহাদ একটা নাইটি ধরে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।কুহু দৌড়ে শাহাদের কাছে এলো।লাগেজে তাকিয়ে কুহুর চোখ কপালে উঠলো। এটা তো তার লাগেজ। লাগেজের ভেতর জামকাপড়ের উপরে নাইটিসহ বিভিন্ন ছোট ছোট কাপড় রাখা।নিশ্চয়ই আনিশার কাজ।শাহাদ এমন একটা লূক নিয়ে কুহুর দিকে তাকালো যার অর্থ হলো "এগুলো কি তোমার?"। কুহু ছো মেরে শাহাদের কাছ থেকে জিনিস্টা নিয়ে লাগেজে ঢুকিয়ে লাগেজটা লাগিয়ে ফেললো।বিব্রত কন্ঠে বললো-
" এটা আমার লাগেজ আপনারটা ওইটা। দুটো সেম দেখতে তাই আপনার ভুল হয়েছে।"
শাহাদ রোবটের মতো গিয়ে ফ্লোরে হাঁটু ভেঙে বসে নিজের লাগেজটা খুললো।এরপর জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। শাহাদ চলে যেতেই কুহু ধপাশ করে লাগেজের পাশে টেবিলের উপর বসে পড়লো। আনিশা এমন কাজ করবে জানলে কিছুতেই আনিশাকে লাগেজ গোছাতে দিতো না। কুহু বেডের দিকে তাকালো। বিশাল বড় কাঠের বেড,বেডের চারকোনায় চারটা কাঠের স্ট্যান্ড,সেগুলোর সাথে বেডের উপর দিয়ে আরো চারটি স্ট্যান্ড জুড়ে দেয়া হয়েছে সেগুলোয় সাদা পাতলা পর্দা টানানো।খুব সুন্দর করে সেগুলো স্ট্যান্ডের সাথে সেট করা।বেডের চাদর আর বালিশের কভার ক্রিম কালারের।চাদরের উপর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ চিহ্ন আঁকা। কুহুর কিছুটা লজ্জা লাগলো। এরকম নির্জন দ্বীপে এরকম একটা কটেজে শাহাদের সাথে সে হানিমুন করতে এসেছে।
শাহাদ ফ্রেশ বের হয়ে এলো। তার পড়নে হাফ হাতা হালকা ব্লু কালারের শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। কুহুকে উদ্দেশ্য করে বলল-
"ফ্রেশ হয়ে নাও। ভাবছি ডিনারটা সাগরের তীরেই করব।ক্যান্ডেললাইট ডিনার। তুমি কি বল?"
কুহু এদিক ওদিক একটু তাকালো।আগের ঘটনা নিয়ে বিব্রত ভাবটা এখনো কাটে নি।কিছুটা ভেবে উত্তর দিলো-
"আমাকে তাহলে একটু রেডি হতে হবে।"
শাহাদ হাসলো। দুহাত পকেটে গুঁজে কুহুর কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। কুহুর দিকে ঘাড় ঝুঁকিয়ে ফিসফিস করে বললো-
" ঠিক আছে।তবে নো মেকাপ, ওকেহ?আর আমাকে বেশিক্ষন অপেক্ষা করাবেন না মিসেস শাহাদ।"
একটা প্রাণকাড়া হাসি দিয়ে শাহাদ লিভিং রুমে চলে গেলো। কুহু কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো। তার বুকের বা পাশটা ডিপডিপ করছে। লজ্জামিশ্রিত অনুভূতিরা মস্তিষ্কের আনাচে কানাচে আসন্ন ঘটনার সংকেত দিচ্ছে। কুহু চাইলেও তা এড়িয়ে যেতে পারছে না। এমন অনুভূতি নিয়েই কুহু ওয়াশরুমে গেলো।
চমৎকার ওয়াশরুম। সাইজে একটা রুমের সমান। একপাশে টয়লেট অন্য পাশে কাচঘেরা শাওয়ার নেয়ার জায়গা। একটা বাথটাব আছে, পাশে একটা বেসিন। একটা ডিভানের মতো দেখতে বসার জায়গা। অনেক সুন্দর করে সাজানো। কুহুর বেশ লাগলো। সে ফ্রেশ হয়ে খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়লো। শাড়ীর রঙ কালো। হালকা সাজলো।শাহাদ মেকাপ নিতে না করেছে তাই মেকাপ নেয় নি।শাড়ির সাথে ম্যাচ করে কালো পাথরের হালকা গয়না পড়লো।হাত ভর্তি পড়লো কাচের চুড়ি। চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে পারফিউম মাখলো। ব্যাস তৈরি সে।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো কাচের দরজার ওপাশে শাহাদকে দেখা যাচ্ছে।সে ডিনারের টেবিলে মোম জ্বালাচ্ছে। একটু দূরেই শব্দ করে সাগরের পানি আছড়ে পড়ছে তীরে। সাগরের ঢেউ দেখতে দেখতে ডিনার করবে তারা।শাহাদ মোম জ্বালিয়ে কুহুকে ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। নিজের স্ত্রীকে এমন রূপে দেখে যেকোনো পুরুষেরই মস্তিষ্ক ওলটপালট হয়ে যাওয়ার কথা।শাহাদও তার ব্যতিক্রম নয়। সে কাচের দরজা পেরিয়ে কুহুর সামনে এসে দাঁড়ালো।শান্ত চোখে কুহুর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো।
কুহু শাহাদের দিকে আড় চোখে তাকালো। শাহাদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে নিলো। শাহাদের এই দৃষ্টি দেখলে তার মন প্রাণে ঝড় বয়ে যায়। সে আরেকবার চোখ তুলে তাকালো। শাহাদ এখনো তাকিয়ে আছে।আশ্চর্য!! এই লোক কি পণ করেছে যে আর চোখ সরাবে না?চোখের পাতাও কি ফেলবে না নাকি?
শাহাদ কুহুকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো।কানের দুল থেকে শুরু করে হাতের চুড়ি,চোখের পাপড়ি কিছুই বাদ দিলো না।দেখা শেষ করে ফিসফিসিয়ে বললো-
"মাই বিউটিফুল ওয়াইফ!!"
তারপর হাত মেলে দিলো কুহুর দিকে। কুহু শাহাদের হাতে হাত রাখলো। শাহাদ তার পুরুষালি হাতে কুহুর নরম হাত আকড়ে ধরলো। ডিনার টেবিলের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। তখনি শাহাদের পকেটে থাকা ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো।এখানে আসার পর কটেজের কেয়ার টেকারের কাছ থেকে সিম নিয়েছে বাংলাদেশে যোগাযোগ রাখার জন্য। সিম পেয়েই সে দেশে কল করে তাদের পৌঁছে যাওয়ার খবর দিয়ে দিয়ে।
শাহাদ পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো বাংলাদেশি নাম্বার। কুহুর হাত ধরে রেখেই ফোনটা কানে ধরলো।ফোন কানে ধরার কিছু মুহুর্ত পরই তার ভ্রু দুটো কুচকে গেলো। কিছুক্ষনের ব্যবধানে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। কুহুর হাত ছেড়ে দিয়ে কাচের দরজা দিয়ে বের হয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো।
চলবে
[গল্পের প্রয়োজনে এখানে অন্য দেশের ব্যাপার আনতে হয়েছে। টাইমজোনসহ অনেক কিছুই মিলবে না।তাই ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ। ]
0 Comments:
Post a Comment