গল্প-টক_ঝাল_মিষ্টি পর্ব ১৭

 #টক_ঝাল_মিষ্টি 

#তামান্না_আঁখি 

#পর্ব-১৭


"এইযে শুনছেন,উঠুন।"


শাহাদের ঘুম ভাংলো একটা মিষ্টি কন্ঠ শুনে।সাথে নাকে এসে ধাক্কা দিলো একটা মিষ্টি গন্ধ। ভ্রু কুচকে আধখোলা চোখে তাকালো। সামনে দাঁড়ানো একটা নারীমূর্তি দেখতে পেলো।শাহাদ চোখ বন্ধ করে ফেললো।কিছুক্ষন বন্ধ রেখে এবার পুরোপুরি চোখ খুলে তাকালো। চোখে ভাসলো সিঁদূরে লাল জামদানিতে কুহুর প্রতিচ্ছবি। কুহুর চুলগুলো ভেজা। কিছু চুল দু কাঁধের কাছে এসে পড়ে আছে, কপালে আর কানের পাশ দিয়ে ছোট ছোট চুলগুলো শান্ত হয়ে বসে আছে।এগুলো বোধ হয় শুকিয়ে গেছে।গলায় লম্বা একটা সোনার হার,কানে ছোট সাইজের দুল।আর হাতে সোনার বালা।মেকাপহীন মুখ। এরকম স্নিগ্ধ রূপে কুহুকে দেখে শাহাদ অভিভূত হয়ে তাকিয়ে রইলো।এত সুন্দর স্নিগ্ধতা এই মেয়েটা মেকাপের আড়ালে ঢেকে রাখে কেন? কুহু আবারো ডাকলো-


"শুনছেন? উঠবেন না?"


এমন ডাকে শাহাদের ঘোর কাটবে তো দূর বরং বাড়লো। এমন সুন্দর সকালই তো প্রতিটা পুরুষ চায়। শাহাদের ইচ্ছে হলো হাত ধরে টেনে কুহুকে পাশে বসিয়ে দিতে কিন্তু নিজের ইচ্ছে সংবরণ করলো। আগে প্রেম হবে তারপর পরিণয়। শাহাদ বিছানা থেকে নামলো। কুহুর দিকে পূর্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল- 


"কখন উঠেছো?"


"অনেক্ষন আগে।"


"ডাকলে না কেন?"


"ভাবলাম ঘুমাচ্ছেন তাই ডিস্টার্ব না করি।"


"এতক্ষন একা একা কি করলে?"


"নিচে ছিলাম। মা,চাচী আর দাদীজান এর সাথে।"


শাহাদ বিস্মিত হলো। এর মধ্যেই এই মেয়ে সবার সাথে মিশে গেছে? শাহাদ আলমারি থেকে একটা কালো হাফ হাতা গেঞ্জি বের করে বলল- 

"কি করছিলে নিচে?"


"রান্না দেখছিলাম।"


শাহাদ আবারো বিস্মিত হলো। গেঞ্জি হাতে নিয়ে কুহুর দিকে তাকালো। কুহু চুলগুলো হালকা ঝাড়ছে।শাহাদের বলতে ইচ্ছে হলো -"বিনা কারনে চুল ভিজানোর কি প্রয়োজন ছিলো?চুল ভিজানোর কারনটাই তো ঘটেনি।" কিন্তু বললো না৷ গেঞ্জি হাতে ওয়াশরুমে চলে গেলো। শাহাদ ওয়াশরুম যেতেই কুহু দ্রুত বিছানার চাদর তুলে সুন্দর একটা চাদর পাতলো।বালিশ ঠিক ঠাক করলো। অনেক ফুল ঝড়ে পড়ে গিয়েছিলো এগুলো ঝাড়ু দেয়ার জন্য মালাকে ডেকে একটা ঝাড়ু নিয়ে আসলো। কুলসুমা বেগমের কড়া নির্দেশ নব দম্পতিদের ঘরে কাজের লোকের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাদের ঘর তাদেরকেই পরিষ্কার করতে হবে। তাই কুহু কোমড়ে আঁচল গুজে কাজে লেগে পড়লো। শাহাদ ওয়াশরুম থেকে চেঞ্জ করে বের হয়ে কুহুকে ঝাড়ু দিতে দেখে বললো-


"তুমি এসব করছো কেন?"


কুহু শাহাদের আসার আভাস পেয়ে সটান দাঁড়িয়ে গেলো। ঝাড়ু হাতে শাহাদের সামনে অস্বস্তি হচ্ছে তার৷  ইতিউতি তাকিয়ে বলল- 

"নিজের ঘর নিজেকেই পরিষ্কার কর‍তে হবে। দাদীজানের আদেশ।"


শাহাদ চারপাশে তাকালো।এত ফুল, এসব নিজেদেরকে পরিষ্কার করতে হবে?কুহুর দিকে তাকিয়ে  বললো-

"আমি হেল্প করছি।"


"না না। বেশি কাজ নেই, আমি পারব।শুধু ঘরটাই ঝাড় দিব।বাকি সব পরে করব।"


"আর ইউ শিউর?"


"হুম্মম্মম।"


শাহাদ বিস্ময় নিয়ে ঘর ত্যাগ করলো।কুহু যে এত তাড়াতাড়ি সংসারি হবে তা সে ভাবে নি।সে ভেবেছিলো চঞ্চল কুহুকে সংসারি করতে কিছুটা বেগ পেতে হবে।


কুহু পুরো ঘর ঝাড় দিয়ে সব গুলো ময়লা ঝুড়িতে ফেলে তা ঘরের বাইরে রেখে দিলো। মালা এসে নিয়ে যাবে এসব।ঘরে থাকা বাকি ফুলগুলো পরেও খোলা যাবে । এক পাশে ড্রেসিং টেবিলের টুলের উপর থাকা লেহেংগাটা নিয়ে কোনোমতে দলা পাকিয়ে আলমারির নিচের ড্রয়ারে রেখে দিলো। এখন এত ভাজ করার সময় নেই তার। তারপর আচল ছেড়ে দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে দিলো। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আয়নায় নিজেকে দেখলো। একটু পাউডার দিয়ে নিলো মুখে।তারপর নিচে নেমে এলো। নিচে এসে সোজা কিচেনে গেলো।জয়া বেগম কুহুকে দেখে হেসে বললেন-

"তোমাকে কফি দেব নাকি চা?"


"চা। আজকে আমি বানাই চাচী?"


"না না, তুমি বসো।এখনি এসব করতে হবে না।"


কুলসুমা বেগম ডায়নিং এ এসে বসতে বসতে বললেন-

"বানাতে যখন চাচ্ছে বানাতে দাও।অন্তত শাহাদের কফিটা বানিয়ে নিয়ে যাক।"


কুহু জয়া বেগমের দিকে তাকালো। জয়া বেগম বললো-

"আসো তাহলে। আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।"


"আমি কফি বানাতে জানি চাচী।"


"বাহ তাহলে তো বেশ ভালো। এক চামচ চিনি দিবে শাহাদের কফিতে।"


কুহু কফি বানাতে বানাতে একবার ঘাড় ফিরিয়ে বামপাশে তাকালো।সেখানে রেজিয়া বেগম সকালের রান্না বসিয়েছে।বিয়ে বাড়ি বলে রান্নার কাজও বেশি। অনেক বড় কিচেন। চা কফি বানানোর সরঞ্জাম সব এখানে। আর বামদিকে মেইন কিচেনে অন্যান্য সব বড় রান্নাগুলো করা হয়। রেজিয়া সুলতানা এখন সেখানেই রান্না করছেন। তার আশেপাশে দু-তিন জন কাজের মহিলা বিভিন্ন জিনিস এগিয়ে দিচ্ছে। 


কুহুর কফি বানানো শেষ।কিন্তু শাহাদ কোথায় আছে তা সে জানে না।কাউকে জিজ্ঞেস করবে কিনা বুঝতে পারছে না।জয়া বেগম কুহুর ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন। মালাকে বললেন-


"মালা যা তো কুহুকে জিমে দিয়ে আয়।ও নতুন এসেছে চিনবে না।"


মালা চায়ের কাপ সাজাচ্ছিল কাপ গুলো রেখে বলল- 

"আসেন ভাবিসাব।"


কুহু কফির কাপ হাতে নিয়ে মালার পিছু পিছু চললো।যেতে যেতে মালা বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ জুড়ে দিলো। কুহু শুধু হুম হাম করলো। তার আগ্রহ এখন শাহাদ কি করছে তা নিয়ে। মালা বাড়ির ড্রয়িং রুম পেরিয়ে একটা লম্বা বারান্দা ধরে কুহুকে নিয়ে হাঁটতে লাগলো।বারান্দার পাশে তাকালে বাগান দেখা যায়। বারান্দার শেষ মাথায় নিয়ে এসে একটা কাচের দরজাওয়ালা ঘরের সামনে এলো। কুহু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বাইরে থেকে ভিতরে জিমের সরঞ্জাম দেখতে পেলো। মালা কুহুকে রেখে চলে গেলো। কুহু দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। এক পাশে শাহাদকে দেখতে পেলো।অনেকগুলো ট্রেডমিল সারি করে রাখা,মাঝ বরাবর একটা ট্রেডমিলে দৌড়াচ্ছে শাহাদ। চুল ছুয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে কানের পাশ দিয়ে। ট্রেডমিলের সামনে পুরোটা কাচের দেয়াল। বাইরে বাগানের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। শাহাদ বাগানের দিকে দৃষ্টি রেখে দৌড়াচ্ছে। 


কুহু শাহাদের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে গলা ঝাড়লো।শাহাদ মাথা ঘুরিয়ে দেখলো। তারপর দৌড়ানো বন্ধ করে নেমে এলো ট্রেডমিল থেকে। একটা টাওয়েল নিয়ে ঘাম মুছে সেটা গলায় ঝুলিয়ে রাখলো। তারপর কুহুর কাছে এসে হাত বাড়িয়ে কফির কাপটা নিয়ে জিম করার একটা সরঞ্জামের উপর বসে পড়লো।কফিতে চুমুক দিয়ে কুহুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো- 

"কে বানিয়েছে কফি?"


"আমি।"


"আমার কফিতে এক চামচ চিনি দিবে।"


"এক চামচ ই তো দিয়েছি।"


"পরিমানে একটু কম নিবে। "


কুহু নাক ফুলালো।কি এমন ঢং রে বাবা! চিনি একটু বেশি খেলে কি এমন হবে? তিতা কফি খাওয়া কি খুব বীরত্বের বিষয় নাকি?যত্তসব।কুহু মুখ ঘুরিয়ে জিম থেকে চলে আসলো। দরজার কাছে দেখা হলো রাহাতের সাথে। তার পড়নে জিমের পোষাক। সেও জিম করতে এসেছে।কুহু কে দেখে হেসে বলল-

"গুড মর্নিং কুহু।"


কুহুও হেসে গুড মর্নিং জানিয়ে বের হয়ে এলো। রাহাত শাহাদের দিকে হেটে আসতে আসতে বললো-

"সকাল সকাল বউ এর হাতের মিষ্টি কফি? আহহ!! কি জীবন রে ভাই "


শাহাদ হাসলো।কফির কাপের দিকে তাকিয়ে বলল-

"হুম,একটু বেশিই মিষ্টি।"


রাহাত শাহাদের সামনাসামনি বসে বললো-

"আসিফের ব্যাপারে কি ভাবলে? বিষয়টা হালকাভাবে নিও না, সামনে নির্বাচন।"


"নিচ্ছি না। বিয়ের আমেজটা যাক,তারপর দেখব।"


"ভুলভাল কিছু করে আবার জেলে টেলে যেও না। নির্বাচনে প্রভাব পড়বে কিন্তু।"


শাহাদ ব্যাঙ্গার্থক হেসে বলল- 

"আজ পর্যন্ত আমাকে কখনো ভুলভাল কিছু করতে দেখেছো? খান বাড়ির ছেলে আমি, যতকিছুই হোক গায়ে কাঁদা লাগানো যাবে না।"


"হুমম সেটাই, গায়ে কাঁদা লাগাও না আবার কাঁদা নিয়ে তো ঠিকই মাখামাখি করো।"


"মাখামাখি করেও ক্লিন থাকার জন্য বুদ্ধি খরচ করতে হয়। নয়ত তোমার মতো কয়েকবার জেলে যেতে হবে।"


রাহাত খোঁচা খেয়ে বললো-

"হিশাম চৌধুরীর বাবাকে গু*লি করার অভিযোগ কিন্তু আছে এখনো তোমার নামে। হিশাম দয়া করে পুলিশ কে*স করেনি নয়ত থানায় কিন্তু নাম উঠে যেত।দা*ঙ্গা হলে যে তোমায় রিভ*লবার নিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করতে দেখা যায় তা কিন্তু সবাই জানে।"


"দলীয় হা*ঙ্গামায় একটু আধটু কাঁদা লাগানো দোষের না। এবারের নির্বাচনে যোগ দিবে নাকি আমাদের হাঙ্গামায়? শিউরিটি দিচ্ছি ফুললি স্যাটিসফাইড হবে।"


রাহাত ট্রেডমিলে উঠতে উঠতে বললো-

"না রে ভাই!! নিজের দলের বহু শত্রু আছে, এবারের নির্বাচনে শ্বাস ফেলার সময় পাব না।"


শাহাদ কফি শেষ করে জিম থেকে বেরিয়ে এলো। ঘরে গিয়ে এবার লম্বা শাওয়ার নিবে। ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই দেখলো এমদাদ খান ঢুকছে,তার পিছু পিছু কয়েকটা লাগেজ নিয়ে ঢুকছে ড্রাইভার।  । চাচাকে এতদিন পর দেখে শাহাদের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।এমদাদ খান আদরের ভাতিজাকে দেখে দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে বললেন-


"মাই বয়, হাউ আর ইউ?"


শাহাদ এমদাদ খানকে হাগ করলো। এমদাদ খান শাহাদের কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো-

"বিয়ে করে ফেলেছিস তাহলে।আই এম প্রাউড অব ইউ, মাই বয়। তোর বিয়েতে না থাকার জন্য সরি। বউমা কোথায়?ডাক তাকে, একটু দেখি।"


শাহাদ গলা উঁচিয়ে তার চাচী আর কুহুকে ডাকলো।রাফা রিদি এমদাদ খানের গলার আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে নিচে নামলো। দুজনেই গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। একে একে পরিবারের সবার সাথে দেখা হলো এমদাদ খানের৷ কুহু সালাম দিলো এমদাদ খানকে। এমদাদ খান কুহুর সালামের জবাব নিয়ে লাগেজ খুলে র‍্যাপিং পেপারে মোড়ানো একটা বড় বক্স দিলো কুহুর হাতে। দিয়ে বললো-

"তোমার কি পছন্দ তা তো আমি জানি না।তাই আমি কিছু শাড়ি গহনা কিনেছি তোমার জন্য।এগুলো সব তোমার।"


কুহু ধন্যবাদ দিলো এমদাদ খানকে।রাফা রিদি দুজনেই বায়না ধরলো তাদের জন্য কি কি এনেছে তা দেখানোর জন্য। এমদাদ খান পরিবারের সবার জন্য যা যা এনেছেন সব খুলে সবাইকে দিলেন৷


একটা সময় পর পরিবারের সবাই মিলে ব্রেকফাস্ট করতে বসলো।বিশাল বড় টেবিল ঘিরে সবাই খেতে বসলো।সবাই খেতে খেতে বিভিন্ন আলোচনায় মগ্ন হলো।এমদাদ খান বড় ভাই আশফাক খান আর বাবা আব্দুল গাফফারকে বিদেশে ব্যবসায়ী অবস্থার বর্ননা করলো।পুরুষরা কাজে বেরিয়ে যাবে বলে পুরুষদের খাইয়ে তারপর বাড়ির বউ রা খেতে বসে। বাড়ির পুরুষরা তাদেরকে একসাথে খেতে বসতে বললেও তারা বসে না। কারন এমন অনেকবার ই যখন একসাথে খেতে বসেছে তখনই এটা ওটা ঝামেলা হয়েছে। এজন্য ওদের বিদায় করে দিয়ে তারপর ওরা নির্ঝঞ্ঝাট হয়ে  খেতে বসে।কুলসুমা বেগম বসে থেকে সবাই ঠিকঠাক খাচ্ছে কিনা কোনো কমতি থাকলো কিনা তার তদারকি করে। এটা তার বহুদিনের অভ্যাস। এরপর তিনি বাড়ির বউদের নিয়ে খেতে বসেন। বাড়ির বউদের ছাড়া তিনি খেতে পারেন না। 


 খাওয়ার সময় কুলসুমা বেগমের নির্দেশে কুহু শাহাদসহ বাকি সবাইকে একবার সার্ভ করে দিলো। সবাই খেতে শুরু করলে কুলসুমা বেগম শাহাদকে বললো-


"বউটা না খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তুই গান্ডে পিন্ডে খাচ্ছিস। বউটাকে ডেকে তো একটু খাওয়াতে পারিস নাকি?"


শাহাদ এমন কথা শুনে বিমূড় দৃষ্টিতে তাকালো সবার দিকে। তার তো খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো কুহুর সাথে খেতে বসতে কিন্তু গুরুজনদের সামনে তা করতে পারে নি। সে একবার কুহুর দিকে তাকালো। কুহু লজ্জায় আর চোখ উপরে তুলছে না।কুলসুমা বেগম ডাকলেন কুহুকে-

"নাতবউ তুমি আসো তো।তোমাকে একটু খাইয়ে দিক। কান্ডজ্ঞানহীন হয়েছে আমার নাতি,একদম তার দাদার মতো।"


আব্দুল গাফগার খান মুখে মাত্র রুটি তুলেছেন স্ত্রীর এমন কথা শুনে রুটি চিবানো খুব কঠিন মনে হলো তার কাছে।রাহাত শাহাদের মুখোমুখি বসেছিলো। সে মুচকি হাসছে।কুহু ধীর পায়ে এগিয়ে এসে শাহাদের চেয়ারের পাশে দাঁড়ালো। শাহাদ তার প্লেটে থাকা বিফ স্টেক থেকে একটু কেটে কাটা চামচে নিয়ে কুহুর দিকে বাড়িয়ে দিলো। কুহু একটু ইতস্তত করে মুখ বাড়িয়ে খেয়ে নিলো। কুলসুমা বেগম নাক সিটকে বললেন-

"কি এক কাটা চামচ দিয়ে খাওয়া শিখেছিস। হাতে ভাত মাখিয়ে বউ কে খাওয়ানোর মর্ম কি বুঝবি?"


শাহাদ কথা বললো না, দাদীর সাথে কথা বলে সে পারবে না।কুলসুমা বেগম পাশে বসা রাহাতের মা হামিদা বেগমের সাথে আজকালকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে আফসোস করতে লাগলেন। রাহাত সব কিছু দেখে শুনে দাদী শ্বাশুড়ির মন পেতে আনিশাকে তুলে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নিলো।নিজের হাতে পরোটা ছিড়ে মাংস নিলো তাতে। আনিশাকে চোখের ইশারায় ডাকলো। আনিশা ইশারা বুঝে রাহাতের চেয়ারের পাশে এসে দাঁড়ালো। রাহাত আনিশাকে ইশারা করে হা করতে বললো।আনিশা রাহাতের হাতে পরোটা মাংস দেখে লাজুক হেসে হা করলো। রাহাত হাত বাড়িয়ে দিলো আনিশার দিকে। তখনি চোখ পড়লো আশফাক খানের দিকে। আশফাক খান খাবার টেবিলে বসে তাদের দিকে ভ্রু কুচকে জহুরি চোখে তাকিয়ে আছে। শ্বশুর আব্বার এমন দৃষ্টি দেখে রাহাতের মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো।আনিশার হা করা মুখের কাছ থেকে হাত সরিয়ে আনলো।পরে কি ভেবে আবারো হাত এগিয়ে নিলো খাওয়াতে। আশফাক খানের দিকে তাকিয়ে আবারো হাত সরিয়ে আনলো।আশফাক খান ধমকের সুরে গমগম করে বলে উঠলেন-

"মেয়েটা কখন থেকে হা করে আছে, খাবারটা দিচ্ছ না কেন?"


সকলের দৃষ্টি ঘুরে গেলো রাহাতের দিকে। রাহাত হতচকিত হয়ে হাতের খাবারটা আনিশার মুখে দিয়ে দিলো।আনিশা রাহাতের দিকে হতাশ চোখে তাকিয়ে মুখ নাড়িয়ে খাবারটা চিবাতে লাগলো। রাহাতের বাবা নাজিমউদ্দীন ছেলের নির্বুদ্ধিতায় যারপরনাই বিরক্ত হলেন। শাহাদ তার মুখোমুখি বসা রাহাতের দিকে তাকিয়ে গা জ্বালা হাসি দিলো। রাহাতের মুখটা এমনিই বাংলার পাঁচের মতো হয়ে ছিলো, শাহাদের হাসি দেখে এবার তার ব্রহ্মতালু অবদি জ্বলে গেলো।


খাওয়া শেষে কুহু ঘরে আসলো। শাহাদ সোফায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। বিয়ের এই কটা দিন তাকে সব রকমের কাজ থেকে ছুটি দেয়া হয়েছে।কুহুকে দেখে জিজ্ঞেস করলো- 

"হানিমুনে কোথায় যেতে চাও?"


আকস্মিক প্রশ্নে কুহু হকচকিয়ে গেলো। হানিমুনের কথা শুনে কিছুটা লজ্জা লাগলো। লজ্জার রেশ কাটিয়ে বললো- 

"আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন সেখানেই।"


"তোমার কোনো পছন্দ নেই?"


কুহু ঠোঁট কামড়ালো। উত্তর দিলো-

"সাগর দেখতে যাই?"


শাহাদ মৃদু হাসলো। অর্থাৎ সেও এটাই চায়। মাথা নাড়িয়ে বললো -

"কাল সকালে রেডি থেকো তবে। কাল আমাদের ফ্লাইট।"


চলবে

0 Comments:

Post a Comment