গল্প রাজনীতি পর্ব ১২

 #রাজনীতি

#পর্ব_১২

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


- "রাফির কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না । খোঁজ লাগাও , আজকের মধ্যে ও'কে আমার চাই !"


- "আচ্ছা , মুই দেখতে আছি । তুই চিন্তা করিস না !"


কথা বলা শেষ করে লোকটা নিজের কল লিস্ট থেকে একটা নাম্বার বের করে কল লাগায় , 


- "এ তুই কোম্মে আছো আয় ?"


- "মামা আমিতো অফিসে আছি !"


- "তুই তায় অপিসেই থাক , মুই আইতাছি !"


- "হঠাৎ অফিসে আসবে কোনো কাজ ছিলো নাকি ?"


- "আইয়া কমু আনে !"


- "আচ্ছা !"


কল কেটে পুনরায় রওনা দেয় মগবাজের উদ্দেশ্যে । 


অফিসে পৌঁছে লোকটা ভিতরে গিয়ে দেখে সবাই তাস খেলা এবং হাসি ঠাট্টায় ব্যস্ত । টেবিলের উপরে চাপড় মেরে কর্কশ গলায় বলে , "তোগো কি এইগুলা করার লইগ্গা রাকছি নাকি ? কোন জাগা কি অয় , হেয়ার খবর তো রাহো না । খালি মজমা নিয়া থাহো না ?"


একজন বসা থেকে উঠে কিছুটা আগ্রহ নিয়ে বলে , "মজমা কি মামা ?"


- "নাটক করো মোর লগে ? জানা না তোরা ?"


- "জানলে কি আর জিজ্ঞেস করতাম বলো ?"


- "মজমা মানে , মদ-জুয়া-মাইয়া মানুষ ।"


ছেলেটা দুই হাতে নিজের কান চেপে ধরে বলে , "তোমার এই কথা শোনার আগে আমি বধির হয়ে গেলাম না কেনো ?"


- "অভিনয় এট্টু কোম কর বোজ্জো ? নাইলে উস্টা মাইরা দাঁত কয়োডা ভাইঙ্গালামু ।"


- "ওকে মামু !"


- "ভেটকি মাইরো না । যে কামের লইগ্গা আইছি , হেইয়া হোন ।"


- "হুম , বলো না !"


- "রাফি নাকি নিখোঁজ । ভাইগনা মোরে ফোন দেছেলে । তোগো উফার নাকি দায়িত্ব আছেলে ওগো দেইক্কা হুইন্না রাহার ?"


- "মামা , ভাই তো আমাদের বলছিলো আসাদের উপরে নজর রাখতে । রাফির ব্যাপরে তো কিছু বলেনি ।"


- "তোমাগো কয় নাই , হেইর পানে তোমরা করও নায় । হাত তালি দিমু মুই ?"


কেউ কিছু বলছে না । নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রয়েছে । মামা আবার বলে , "হোন , সবাইরে কামে লাইগ্গা যাইতে ক । যতো তাড়াতাড়ি পারো রাফিরে খুইজ্জা বাইর কর । নাইলে ভাইগনা যে কি করবে হেয়া কিন্তু মুই কইতে পারি না ।"


- "আচ্ছা মামা , তুমি নিশ্চিন্ত থাকো । আমরা দেখছি কি করা যায় ।"


- "তোগো জ্বালায় আর নিশ্চিন্ত থাহার কোনো কায়দা আছে নাকি আয় ? গেছেলাম দুই প্যাগ মারমু বইল্লা কিন্তু ভাইগনা ফোনডা দেছে এমন সময় , আহ্হারে ।"


- "তুমি তাহলে যাও খাইতে , আমরা কাজে গেলাম ।"


ছেলেগুলো রুম থেকে বেড়িয়ে গেলে । মামা একটা চেয়োর টেনে বসে পড়লেন । কপালে হাত দিয়ে বলেন , "এক্কালে ঘাইম্মা গেছি রে । বুড়া অইছি , এতো কাম করা যায় ?"


আচমকাই নিজের জীভ দাঁত দিয়ে কেটে বলেন , "ওমা , এয়া মুই কি কই ? মুই তো এহনো জুয়ান , বুড়া ক্যামনে অইলাম । এহনো তো ভাইগনার লইগ্গা এট্টা মামি আনতে অইবে । মোর বা দোষ কোতায় । এতো প্রেসার দেলে কি মাতা ঠিক থাহে নাকি ?"


মামা নিজেই নিজের সাথে বক বক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন । 


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদ ড্রয়িং রুমে পাইচারি করছে । সিফাত এবং অনন্যাও আছে অবশ্য । অনন্যা আসাদকে শান্ত করতে না পেরে নিজেই চুপটি মেরে বসে আছে সোফার উপরে । সিফাত বলে বলে ক্লান্ত হয়ে গেছে যে , "রাফি ফিরে আসবে , ওর কিছু হবেনা ।"


কিন্তু আসাদ মানতে নারাজ । সচক্ষে রাফিকে দেখা না অবধি আসাদের মনে শান্তি মেলবেনা ।


দুপুরেও কিছু খায়নি ছেলেটা । আসাদ না খাওয়ায় সিফাত এবং অনন্যার পেটেও কিছু পড়েনি । মুখটা শুকিয়ে গেছে চিন্তায় চিন্তায় । আসাদের লোকজনও কোনো খোঁজ পাচ্ছে না । 


কিছুক্ষন পরে ডোর বেল বাজলে আসাদ গিয়ে গেট খুলে দেখে রাফি দাঁড়ানো । মাথায় ব্যান্ডেজ পেঁচানো আছে । ব্যান্ডেজের কোনা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে চুয়িয়ে চুয়িয়ে । রাফিকে আসাদ নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে নিয়ে বলে , "তুই ঠিক আছিস তো ভাই ? কতটা চিন্তায় ফেলেছিলি জানিস ? দম বন্ধ হয়ে আসছিলো ।"


রাফি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে , "আরে আমার কিছু হয়নি । জাস্ট মাথায় একটু চোট লেগেছে ।"


- "কিভাবে হলো এসব ? নিশ্চয়ই প্রাপ্তির কাজ তাই না ?"


- "ভিতরে চল বলছি সব । দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না । মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা ।"


- "হুম , চল । চল !"


আসাদ রাফিকে ধরে ভিতরে সোফায় নিয়ে বসালো । অতঃপর বলে , "একটু ঘুমিয়ে নিবি নাকি ? তাহলে মনে হয় আরাম লাগবে ।"


- "নাহ , লাগবে না । আমি ঠিক আছি ।"


- "তোর এই অবস্থা হলো কিভাবে ? প্রাপ্তি করেছে তাই না ? ও'কে তো আমি মেরেই ফেলবো ।"


আসাদ উত্তেজিত হলে রাফি শান্ত গলায় বলে , "আরে না , প্রাপ্তি কিছু করেনি ।"


- "প্রাপ্তি'ই তো তোকে ক্যান্টিনের পিছনের গেটে নিয়ে গেছিলো ।"


- "পুরো কথাটা তো শুনবি নাকি ?"


- "বল , শুনছি ।"


- "আজকে যে আমার জন্মদিন ছিলো সেটা তোর মাথায় আছে ?"


- "আজকে তোর জন্মদিন ?"


- "হুম , জানি হয়তো কাজের চাপে ভুলে গেছিস । তবে প্রাপ্তির মনে ছিলো । আর ও আমাকে ক্যান্টিনের পিছনের গেটে নিয়ে গিয়ে , 


-------------------------------------------------------------------------------------


-"কি ব্যাপার এখানে আসলে কেনো ? ওখানে সবার সামনেই তো বলতে পারতা !"


- "হুম , পারতাম তবে সারপ্রাইজটা আর থাকতো না ।"


- "কিসের সারপ্রাইজ ?"


- "নিজেই নিজের বার্থডে মনে রাখতে পারো না , আর বলছো কিসের সারপ্রাইজ ?"


- "আজকে আমার বার্থডে ছিল ?"


- "নাগো আমার ছিল !"


- "কিন্তু আমার বার্থডে হলে আসাদ নিশ্চয়ই উইশ করতো ওর তো ভুলে যাওয়ার কথা না ।"


- "সে তো এখন অনন্যাকে নিয়ে ব্যস্ত । তোমার বার্থডে মনে রাখার সময় কি তার কাছে আছে নাকি ?"


- "এভাবে বলোনা , ছেলেটার মনটা খারাপ ছিল । তারপর তুমি ওর উপরে রাগ করছো , কথা বলো না । সেজন্য হয়তো অনন্যার সাথে একটু সময় কাটিয়ে নিজের মনটা ভালো করতে চেয়েছিল ।"


- "বাহ আমি রাগ করছি বলে অন্য মেয়ের সাথে ঘুরে নিজের মন ভালো করতে হবে তাই না ? আমাকে মানিয়ে নেয়া যায়না । তার উপরে তুমি জানো , ও আমাকে কি বলছে ? আমি নাকি ও'কে মারতে চাই , ও আমাকে নাকি কতকিছু শিখাইছে । এগুলো কেনো বলল , কি জন্য বলল কিছুই বুঝলাম না ।"


- "ধুর , বাদ দাও তো ওর কথা । মন ভালো হলে ঠিক'ই ফিরে আসবে । এখন বলো আমার জন্য কি সারপ্রাইজ আছে ?"


- "চোখ বন্ধ করো ।"


রাফি নিজের চোখ বন্ধ করে বলে , "এই নাও করলাম ।"


- "ওয়ান টু থ্রি , সারপ্রাইজ !"


রাফি নিজের চোখ খুলে দেখে , সামনে মস্ত বড় একটা কেক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন ছেলে । রাফি কেকটা কাঁটতে যাবে তখনি বাহির থেকে কয়েকজন ছেলে এসে প্রাপ্তির মুখ চেপে ধরল । রাফি কিছু করতে গেলে ওদের মধ্যে থেকে একজন হকি স্টিক দিয়ে সজোরে আঘাত করে রাফির মাথায় ।  


চলবে...!!

0 Comments:

Post a Comment