1t/Banner 728x90

গল্প রাজনীতি পর্ব ১৩

 #রাজনীতি

#পর্ব_১৩

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


রাফি নিজের চোখ খুলে দেখে , সামনে মস্ত বড় একটা কেক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন ছেলে । রাফি কেকটা কাঁটতে যাবে তখনি বাহির থেকে কয়েকজন ছেলে এসে প্রাপ্তির মুখ চেপে ধরল । রাফি কিছু করতে গেলে ওদের মধ্যে থেকে একজন হকি স্টিক দিয়ে সজোরে আঘাত করে রাফির মাথায় । 


------------------------------------------------------------------------------------


- "এরপর আমার আর কিছু মনে নেই । আমার মাথায় কিভাবে ব্যান্ডেজ এলো , কে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেছিলো কিছুই না । শুধু একটু আগে কেউ একজন যখন আমাকে ডেকে তুলল , তখন চোখ খুলে দেখি একটা গাড়িতে বসে আছি । আর গাড়িটা ঠিক আমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । তবে মজার বিষয় কি জানিস ? গাড়িতে যে ছেলেগুলো ছিল ওরা'ই আমাদেরকে বাঁচিয়ে ছিল । যেদিন আমরা রেজওয়ানের ম্যাসেজ মোতাবেক গোডাউনে দেখা করতে গিয়েছিলাম এবং আমাদের উপর হামলা হয় সেদিন ।"


আসাদ বুঝতে পারছে না কী বলবে । পুরনো চিন্তাগুলো এসে জেঁকে বসেছে , "যদি আমি প্রাপ্তির ছবির পেছনের লেখাগুলোর কথা চিন্তা করি , তাহলে তো প্রাপ্তি'ই দোষী । কিন্তু রাফি তো অন্য কথা বলছে । আর রাফির কথার সাথে আমার চিন্তা-ভাবনা গুলো মিলছে না । কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে ।"


এদিকে সিফাতের মুখে মুচকি মুচকি হাসি , যেটা আসাদের চোখ এড়ালো না । আসাদ এই হাসির কারণ খুঁজে পাচ্ছে না । ক্ষানিক কৌতূহলের সাথে সিফাতকে জিজ্ঞেস করে , "কিরে তুই এভাবে হাসছিস কেনো ?"


সিফাত নিজের মুখের হাসি বজায় রেখে বলে , "হাসছি রাফির কথা শুনে ।"


- "রাফি কী এতক্ষণ হাসির কথা বলল নাকি ?"


- "আহ্হারে আসাদ , এখনও কিছু বুঝতে শিখলি না । নিজের মাথাটাকে একটু কাজে লাগা ভাই । এই মাথা নিয়ে তো রাজনীতি করতে পারবি না ।"


- "সব সময় এতো প্যাঁচানো কথা বলবি না তো , যা বলার খোলাখুলি স্পষ্ট ভাবে বলবি ।"


- "না , আমি সব কিছু বলতে পারবো না । যদি আমি'ই সবটা বলে দেই তাহলে তোর কি কাজ ? আমার পক্ষে যতটুকু বলা সম্ভব ছিল , বা যতটুকু করা সম্ভব ছিলো আমি করেছি । বাকিটা তুই নিজেই করে নে । হ্যাঁ যদি তোর সাহায্য লাগে তবে আমি আছি , কিন্তু তোকে তোর লক্ষ্যে পৌঁছে দেবো ? সরি রে , আমি পারবো না । নিজের লক্ষ্যে তুই নিজেই পৌছাবি ।"


- "যতটুকু করা সম্ভব বলতে ? বুঝলাম না ঠিক !"


- "কিছুনা , আচ্ছা তোরা থাক । আর রাফি এক কাজ কর , একটু ঘুমিয়ে নে । তাহলে ভালো লাগবে । শরীরের দুর্বলতাটা কেটে যাবে । আমি একটু বাহির থেকে আসছি , ছোট্ট একটা কাজ আছে ।"


- "হুম , যা !"


রাফি বেরিয়ে গেলে অনন্যা বলে , 


- "আসাদ , আমিও বরং যাই । অনেকটা দেরি হয়ে গেছে , মামা-মামী আবার চিন্তা করবে ।"


- "আমি পৌঁছে দিয়ে আসবো ?"


- "না তার দরকার হবেনা , আমি সিএনজি নিয়ে চলে যেতে পারবো । তুমি রাফির কাছে থাকো । যদি ওর কোনো কিছুর দরকার হয় । আর হ্যাঁ , যেকোন প্রয়োজনে সবার আগে ফোনটা যেন আমার কাছে আসে , কথাটা মাথায় রেখো ।"


- "যথাআজ্ঞা মহারানী , মাথায় থাকবে ।"


অনন্যা বেরিয়ে গেলে আসাদ গেট লক করে রাফিকে নিয়ে রুমে চলে যায় । 


------------------------------------------------------------------------------------


রুমটা বেশ গোছানো । তবে রুমটাতে আলোর বড্ড অভাব আছে । এত বড় রুমে মাত্র একটি লাইট । রুমের মাঝখানে একটি ইজি চেয়ার রাখা । যেখানে একটা মধ্যবয়স্ক ছেলে বসে আছে । আর ছেলেটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরো অনেকগুলো ছেলে । ইজি চেয়ারে বসে থাকা ছেলেটি বলে , "এবার বল সম্পূর্ণ কাহিনী , কিভাবে কি করলি ?"


সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ছেলে গুলোর মাঝে একটা ছেলে বলতে আরম্ভ করে , "ভাই রাফিকে আমরা একটা পুরাতন গোডাউন থেকে উদ্ধার করি । ও সেখান অজ্ঞান অবস্থায় ছিল , এরপর ও'কে আমরা হসপিটালে নিয়ে যাই । এবং প্রাথমিক চিকিৎসা করে বাসায় রেখে আসি । এতটুকুই , তবে গোডাউনে আমরা অন্য কাউকে খুঁজে পাইনি ।"


- "কিন্তু রাফি যে বলল , প্রাপ্তিকেও ওর সাথে নেওয়া হয়েছে । তাহলে তো গোডাউনে প্রাপ্তিরও থাকার কথা ।"


- "পুরো গোডাউনের রাফি ছাড়া একটা কাকপক্ষীও ছিল না ।"


ছেলেটার কথা শুনে ইজি চেয়ারে বসে থাকা ছেলেটি উঠে দাঁড়ায় । এবং কোনো কথা না বলে হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে যায় । 


------------------------------------------------------------------------------------


সিফাত রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর আসাদকে ফোন দিচ্ছে । কিন্তু আসাদ ফোন তুলছে না । উপায়ান্তর ফোনটা পকেটে রেখে সিফাত বাসার দিকে হাঁটতে আরম্ভ করে । 


বাসার সামনে গিয়ে কলিং বেল প্রেস করলে , কিছুক্ষণ পর আসাদ এসে দরজা খুলে দেয় । আসাদের চোখের ঘুম ঘুম ভাবটা কাটেনি । হাত দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে বলে , "কিরে এত দেরী করে এলি যে ? তুই না বললি একটু পরে'ই চলে আসবি ?"


- "আমার কথা রাখ , তোকে যে এতগুলো ফোন দিলাম । ধরলি না কেনো ?"


- "কখন ফোন দিলি তুই ?"


- "এই তো কিছুক্ষণ আগে !"


- "তাহলে হয়তো ঘুমোনো ছিলাম , তাই শুনতে পাইনি !"


- "আচ্ছা তোর সাথে আমার কথা আছে , যা ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে আয় !"


- "আচ্ছা তুই বস , আমি চোখে মুখে পানি দিয়ে আসছি ।"


সিফাতকে ড্রইংরুমে বসিয়ে আসাদ ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে সিফাতের পাশে এসে বসে এবং বলে ,


- "বল কি কথা ?"


- "প্রাপ্তির কোনো খোঁজ পেলি ?"


- "নাহ প্রাপ্তির ফোন তো বন্ধ বলছে । এখন তো আমারও চিন্তা হচ্ছে , রাফির কথা মোতাবেক যদি ওরা প্রাপ্তিকেও তুলে নিয়ে যায় তাহলে তো প্রাপ্তির সামনে বিপদ । আমাদের উচিত প্রাপ্তিকে খুঁজে বের করা , তুই কি বলিস ? আমরা শুধু শুধু মেয়েটাকে ভুল বুঝলাম ।"


সিফাত মুখে একগাল হাসি নিয়ে বলে , "তুই এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলি আসাদ । মানুষ তোকে যেটা দেখায় ,যেটা বোঝায় তুই ঠিক সেটাই বুঝে বসে থাকিস । নিজে থেকে কখনো কোনো রহস্যের উদঘাটন করার চেষ্টা করিস না । তোর এই একটাই সমস্যা । আর এই জিনিসটা তোকে মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দিতে পারে । কথাটা মাথায় রাখিস ।"


আসাদ হা হয়ে তাকিয়ে আছে সিফাতের মুখের দিকে । একটা রহস্যময়ী হাসি বিরাজ করছে সিফাতের মুখে । আসাদ ঐ হাসির কারনটা বুঝতে চেষ্টা করছে , কিন্তু পারছে না । এমতাবস্থায়...!! 


চলবে...!!

No comments

Powered by Blogger.