#রাজনীতি
#পর্ব_১৪
#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ
-------------------------------------------------------------------------------------
আসাদ হা হয়ে তাকিয়ে আছে সিফাতের মুখের দিকে । একটা রহস্যময়ী হাসি বিরাজ করছে সিফাতের মুখে । আসাদ ঐ হাসির কারনটা বুঝতে চেষ্টা করছে , কিন্তু পারছে না । এমতাবস্থায় সিফাত বলে , "আচ্ছা শোন , তোকে একটা কথা বলি । কয়দিন পরেই তো ভার্সিটি ইলেকশন , তাই না ? আর ভার্সিটি ইলেকশন শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে কিন্তু তোর পালাও এসে পরবে । আমি জানি তোর মনে আমাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে । আমার কাজকর্ম নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে । বা তোকে আমি এতকিছু বলি , কিভাবে বলি ? কেনো বলি ? সবকিছু নিয়েই অনেকগুলো প্রশ্ন জমা হয়েছে তোর মাঝে । তো তুই যদি সামনের ইলেকশনে জয়লাভ করিস তাহলে তোকে বলবো সবকিছু । তাই বলছি , এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামাস না । সামনে যেটা আসতে চলেছে সেটা নিয়ে ভাব , বাকিটা আমি সামলে নেব ।"
আসাদের ঘোর এখনো কাটেনি । এতক্ষণ যেন সিফাতের কথা গুলো ও গিলে গিলে খেয়েছে কিন্তু কিছুই বুঝতে পারেনি । তাই , সিফাতের কথাই মেনে নিল আসাদ । সিফাতের হ্যাঁ এর সাথে হ্যাঁ মিলালো । সিফাত মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে যায় । রুমে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সিফাতের ফোনটা বেজে ওঠে । নাম্বারটা পরিচিত দেখে বিলম্ব না করে কলটা রিসিভ করে ,
- "হ্যালো , মাস্টার !"
- "হুম , বল !"
- "প্রাপ্তির খোঁজ পেয়েছি ।"
- "মামা তোর সাথে আছে !"
- "হ্যাঁ মামা আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন !"
- "মামাকে ফোনটা দে !"
- "আচ্ছা !"
- "হ , ভাইগনা কও !"
- "প্রাপ্তিকে নিয়ে আমার পার্সোনাল রুমে রাখো । আমি রাতে আসবো ।"
- "ভাইগনা , তুমি কি করতে চাইতে আছো । মুই কিন্তু বুইজ্জা হালাইছি ।"
- "ধুর , উল্টা পাল্টা কথা বইলো না তো !"
- "আচ্ছা , মুই দেখতাছি । এখন রাখি তাইলে ।"
- "হুম !"
-------------------------------------------------------------------------------------
রাফি মাত্র ঘুম থেকে উঠলো । দূর্বলতাটা কাটেনি এখনো । বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হবার জন্য । ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় নিজের তাসরিফ জমিয়ে টিভিটা অন করলো । বেশ মনোযোগ দিয়ে টম এন্ড জেরি দেখছিল রাফি , হাসছিলোও বটে । মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে ফোনের শব্দ শুনে । বেশ বিরক্তি নিয়ে কলটা রিসিভ করে ফোনটা নিজের কানে ধরলো , "হ্যালো , কে ?"
- "আমি সিকদার !"
- "জ্বী , ভাই বলেন !"
- "ইলেকশনের তো আর বেশিদিন নেই রাফি । কিন্তু এখন পর্যন্ত একটা ভালো খবর তুমি আমাকে দিতে পারলে না ।"
- "ভাই , বাসায় তো এখন আসাদ আছে । আমি বরং আপনার সাথে দেখা করে কথা বলি ?"
- "আচ্ছা , ঠিক আছে । আমি অপেক্ষায় থাকবো তোমার কোনো ভালো খবরের । আর যদি সেটা না হয় তাহলে বাকিটা তো তুমি জানো'ই ।"
- "চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখিনি আমি । কিন্তু সময় এবং সুযোগ কোনটাই মিলছে না , সেজন্য একটু দেরি হচ্ছে । তবে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন , আপনাকে আমি হতাশ করবো না ।"
- "তাই যেন হয় । নাহলে কিন্তু আমিও আমার কথা রাখতে পারব না ।"
-------------------------------------------------------------------------------------
সময়ের টানে অনেকগুলো দিন অতিবাহিত হয়েছে । ভার্সিটি ইলেকশনও শেষ । আসাদের ইলেকশন আসতেও বেশি দিন বাকি নেই । নবাবী ভোজের রুফ টপে বসে সেই কথাগুলি'ই ভাবছিল আসাদ । হঠাৎ একটা বাচ্চা মেয়ে এসে ওর দিকে একটা গোলাপ বাড়িয়ে দিল । আসাদ প্রথমে কিছুটা অবাক হলো । পরক্ষণেই গোলাপটা নিজের হাতে নিয়ে মেয়েটিকে বলে , "এটা আমাকে কেনো দিলে আপু ?"
মেয়েটা হুট করে ক্ষানিকটা হেসে দিয়ে বলে , "আমার কাজ'ই তো এটা !"
হাসিটা বড়'ই মলিন । বোঝাই যাচ্ছে , মেয়েটি নিজের অবস্থাতে বেশ ভালো'ই আছে । আসাদ মেয়েটিকে নিজের কোলে বসিয়ে জিজ্ঞেস করে , "কিন্তু এটা তো তোমার স্কুলে যাওয়ার সময় , খেলাধুলা করার সময় আপু । সেটা না করে তুমি এখানে মানুষকে ফুল দিয়ে বেড়াচ্ছো ।"
মেয়েটি বিষন্ন গলায় উত্তর দিল , "আমার কাছে তো টাকা নেই , যে আমি স্কুলে যাব । এই কাজ করে যতটুকু টাকা পাই সেটা দিয়েই আম্মুর চিকিৎসা করাচ্ছি । এখন আমি যদি সেটা না করে স্কুলে যাই , তাহলে আমার মা যে মারা যাবে । তখন আমি কার কাছে থাকবো ?"
- "কি হয়েছে তোমার মায়ের ?"
- "ডাক্তার আংকেল বলেছে , আমার মায়ের নাকি খুব কঠিন একটা রোগ হয়েছে । যেটার চিকিৎসা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন । আমি তো ছোট , কেউ আমাকে বড় কোনো কাজে দেয়না । তাই এই কাজটাই করি ।"
- "এই কাজ করে যে টাকা পাও সেটা থেকে তোমার মায়ের চিকিৎসা হবে ?"
- "আমি তো বলতে পারব না , কিন্তু আমার একটা বড় ভাই আছে । যার কাছে আমি টাকাগুলো নিয়ে দেই ও'ই সবকিছু জানে ।"
- "তোমার ভাইয়ের সাথে আমাকে দেখা করিয়ে দেবে ?"
- "দাঁড়াও আমার ভাইয়ের একটা ছবি আছে আমার কাছে , তোমাকে দেখাচ্ছি ।"
মেয়েটি আসাদের কোল থেকে নেমে দৌড়ে ভিতরে চলে গেলো । কিছুক্ষণ পরে হাতে একটা ছোট্ট ছবি নিয়ে এসে ছবিটা আসাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে , "এই দেখো , এটা আমার ভাইয়া ।"
তবে ছবিটা যার ছিল সেটা দেখার জন্য আসাদ হয়তো মোটেই প্রস্তুত ছিল না । নিজের চোখকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না । তবে বিষয়টাতে কোনো রিয়েক্ট না করে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মেয়েটিকে বলে , "তুমি সিওর , এটাই তোমার ভাইয়া ?"
- "এখানে শিওর হওয়ার কি আছে ? আমার ভাইয়ের ছবি আমার কাছে থাকবে , এটাই তো স্বাভাবিক । তুমি কি বোকা গো ।"
কথাটা বলে খিল খিল করে হাসতে থাকে মেয়েটি । আসাদ আপন মনে বলে , "সত্যি'ই আমি অনেক বোকা ! সিফাত ঠিক'ই বলে , আমি মানুষ চিনতে পারিনি ।"
মেয়েটির মৃদু ধাক্কায় ধ্যান ভাঙে আসাদের । মেয়েটি বলে , "কি হলো , কথা বলছো না কেনো ?"
- "নাহ , কিছুনা ! তুমি যাবে আমার সাথে ?"
- "কিন্তু কোথায় ?"
- "তোমার ভাইয়ার কাছে !"
- "তুমি আমার ভাইয়াকে চেনো ?"
- "চিনি তো , আমার খুব ভালো বন্ধু ।"
- "না বাবা আমি তোমার সাথে যাব না । আমি শুনেছি , খারাপ লোকেরা আমাদের মতো ছোট ছোট বাচ্চাদের তুলে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয় । তুমিও যদি তাই করো , তখন ?"
- "আমাকে দেখে কি এমন মনে হচ্ছে তোমার ?"
- "না , তা ঠিক না । তোমাকে দেখে তো ভালোই মনে হচ্ছে । যাওয়া যায় তোমার সাথে !"
- "চলো তাহলে !"
মেয়েটি আসাদের হাত আকড়ে ধরে বলে , "হুম , চলো !"
চলবে...!!
0 Comments:
Post a Comment