#রাজনীতি
#পর্ব_১৫
#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ
-------------------------------------------------------------------------------------
- "না , তা ঠিক না । তোমাকে দেখে তো ভালোই মনে হচ্ছে । যাওয়া যায় তোমার সাথে !"
- "চলো তাহলে !"
মেয়েটি আসাদের হাত আকড়ে ধরে বলে , "হুম , চলো !"
-------------------------------------------------------------------------------------
রাফি ক্রিকেট খেলার বেশ বড় একজন ভক্ত । খেলা চলাকালীন সময়ে দুনিয়া ওলট-পালট হয়ে গেলেও রাফির কোনো হুশ থাকেনা ।
- "ভাইয়া !"
একটা পরিচিত মেয়েলি কন্ঠস্বরের আওয়াজে রাফি চমকে উঠলো । পাশে তাকিয়ে দেখে তুলি দাঁড়িয়ে । মুখে বিরল হাসি । সোফা থেকে নেমে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে বলে , "তুলি ? তুই এখানে কিভাবে এলি ?"
- "অবাক হলি ?"
আসাদ রাফির সামনে এসে দাঁড়িয়ে ধীর গলায় বললো কথাটা । রাফি বসা থেকে উঠে আমতা আমতা করে বলে , "আসাদ তুই ?"
- "এক্সপেক্ট করিসনি , তাই নাহ ? অবশ্য না করার'ই কথা ।"
- "আসলে...!"
- "ভাবিসনি কখনো এমন হতে পারে , কি তাই তো ? ঠিক'ই ভাবতি , তবে আজকে ভাগ্যটা হয়তো তোর সাথে ছিলো না । সেজন্যই আমার তুলির সাথে দেখা হয়ে গেলো । তুলিকে আমি অনেকদিন দেখতে চেয়েছি , এমনকি তোর গ্রামেও যেতে চেয়েছি । কিন্তু তুই আমাকে দেখাস নি , এমমনকি তোর বাড়িতেও নিয়ে যাসনি । কেনো করেছিলি সেগুলো ? যাতে নিজের বোনকে নিয়ে ব্যবসা করতে পারিস ?"
রাফি উচ্চ গলায় বলে , "কি সব যা-তা বলছিস ? ব্যবসা মানে কি , হ্যাঁ ?"
- "ব্যবসা নয়তো কি ? যে বয়সে মেয়েটা স্কুলে যাবে , খেলাধুলা লরবে । তা না করে ও কি করছে ? রেস্টুরেন্টে মানুষকে ফুল বিলাচ্ছে । বাহ , কি অসাধারন চিন্তা ভাবনা তোর ! এতই যখন টাকার দরকার ছিলো , তো আমাকে বলতি । আমি দিতাম , নিজের বোনকে দিয়ে এসব না করালেও পারতি ।"
- "আমার পাঁচ-দশ হাজার টাকার দরকার ছিলো না , যে তোকে বলবো । আমার দরকার লাখ টাকার । নাহলে আমার মা'কে আমি হারিয়ে ফেলবো !"
- "কি হয়ছে আম্মুর ?"
- "দু'টো কিডনি'ই নষ্ট হয়ে গেছে । ডাক্তার বলেছেন , প্রতিস্থাপন করা নাকি সম্ভব না । বাঁচিয়ে রখার একমাত্র উপায় হলো ডায়ালাইসিস । যেটা প্রতি মাসে দুই বার করে করতে হবে । এতো টাকা আমি কোথায় পাবো ?"
- "হাসালি রে রাফি । যাকে আমি মা বলে ডেকেছি , তার এতো বড় একটা অসুখ হয়েছে আর সেটা তুই আমাকে একবার বললি না পর্যন্ত । তোর তো শুধু টাকার দরকার ? আমি জীবন দিতেও ভাবতাম না । তোকে একটা কথা'ই বলবো , তুই সত্যি'ই আমার যোগ্য একজন বন্ধু । তোর মতো বন্ধু পেয়ে আমি ধন্য ।"
রাফি নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না । আসাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে , "মাফ করে দে আমাকে । সত্যি'ই আমি বুঝতে পারিনি । জানিস , আমি না বুঝে কতো বড় একটা অন্যায় করতে যাচ্ছিলাম ।"
আসাদ রাফিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে , "কিসের অন্যায় ?"
- "আমি সিকদারের সাথে হাত মিলিয়েছিলাম । সিকদার বলেছিলো , তোকে মারতে পারলে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দেবে । আমার মাথা ঠিক ছিলো না রে , আমি ওর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই । তখন আমার মাথায় শুধু টাকার চিন্তাই ছিলো , অন্য কিছু ভাবার অবস্থায় আমি ছিলাম না ।"
আসাদ মুচকি হেসে জবাব দিলো , "সিফাত একটা কথা প্রায়'ই বলে , শুনেছিস তো ? আমি নাকি রাজনীতির 'র'ও বুঝি না । এখন মনে হচ্ছে , হি ইজ রাইট । আমি বোকা , আসলেই বুঝি না কিছু । রাজনীতি আমার জন্য না । আজকে সেটা তুই বুঝিয়ে দিলি । শুকরিয়া , আমাকে রাজনীতি শেখানোর জন্য । আমি কৃতজ্ঞ !"
- "আসাদ , শোন..!"
রাফির সম্পূর্ণ কথা না শুনেই আসাদ তুলিকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় ।
-------------------------------------------------------------------------------------
আসাদ বাইক চালাচ্ছে , আর তুলি পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আসাদকে । এক পর্যায়ে আসাদ প্রশ্ন করে , "আম্মু কোন হাসপাতালে ভর্তি আছে , জানো আপু ?"
- "হুম , জানি তো ! আনোয়ার মেডিকেলের তিন তালার তিনশো বার নাম্বার রুমে !"
- "বাহ , তুমি দেখি সব জানো !"
- "জানবোই তো , আমি কি আর ছোট আছি নাকি ? আমি বড় হয়ে গেছি না ?"
- "হুম , অনেক বড় হয়েছো !"
- "আচ্ছা , তুমি আর ভাইয়া তখন রেগে রেগে কথা বলছিলে কেনো ? ভাইয়া কি কোনো ভুল করেছে ?"
- "নাহ , তোমার ভাইয়া কোনো ভুল করেনি । ভুল আমি করেছি !"
- "কি ভুল করেছো তুমি ?"
- "তোমার আম্মুকে আমি নিজের আম্মু ভেবেছি , এটাই আমার ভুল !"
- "এটা ভুল কিভাবে ? এটা তো ভালো , আমার এখন দুইটা বড় ভাইয়া আছে !"
আসাদ তুলির কথায় কোনো জবার না দিয়ে নিরবে একটা মুচকি হাসি দিলো ।
-------------------------------------------------------------------------------------
- "আম্মু , আম্মু দেখো কে এসেছে !"
তুলির ডাকে ঘুম ভাঙে সেলিনা বেগমের । মিটমিট করে তাকিয়ে দেখেন , তুলি ওনাকে ডাকছে । আর পাশে আসাদ দাঁড়িয়ে । আসাদকে দেখেই ওনার মুখ জুড়ে হাসি খিলখিল করে ওঠে । একটা হাত আসাদের দিকে বাড়িয়ে দিলে , আসাদ হাতটা আকড়ে ধরে । উনি কর্কশ গলায় বলেন , "জানো , আমি রাফিকে কতবার বললাম আসাদকে নিয়ে আসিস । আসাদকে নিয়ে আসিস । ও শুধু বলে , তুমি নাকি অনেক ব্যস্ত । আসতে পারবে না । তুমি'ই বলো , মায়ের সাথে দেখা করতে এলে কি ব্যস্ততা থাকে !"
- "আসলে আমি দেশের বাহিরে ছিলাম , তাই আসতে পারিনি । কিন্তু এখন থেকে প্রতিদিন এসে তোমার সাথে গল্প করে যাবো ।"
আসাদের কথা শুনে সেলিনা বেগম আনন্দের হাসি হাসলেন । সে কি হাসি । মায়ের মুখের হাসির কাছে হয়তো দুনিয়ার সব সুখ তুচ্ছ ।
-------------------------------------------------------------------------------------
অন্যদিকে...!!
চলবে...!!
0 Comments:
Post a Comment