#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৪২
হাসপাতাল থেকে ফিরে শাহাদের মনটা অত্যন্ত ভার হয়ে রইলো। অন্য কোথাও না গিয়ে সে সোজা বাড়ি চলে আসলো। সারাদিন বাড়িতেই থাকলো। বিকালে ঘুম দিয়ে একদম সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমালো। সন্ধ্যায় খান বাড়িতে জম্পেশ আড্ডা বসলো। পুরুষ আর মহিলা সবাই ড্রয়িং রুমে আড্ডায় বসলো। বাড়ির মহিলারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন রকমের ভাজাপোড়ার আয়োজন করে ফেলেছে।সাথে চায়ের ব্যবস্থাও আছে। রান্নাঘরে কাজ করতে গিয়ে কুহু ঘেমে নেয়ে একাকার। তার উপর আজ শাড়ি পড়েছে। শাড়ির আচল কোমড়ে গুজে রান্নাঘরে ছুটাছুটি করছে। রেজিয়া সুলতানা আর জয়া বেগমকে জোর করে সে ড্রয়িং রুমে আড্ডায় পাঠিয়েছে। বাড়ির বড়রা সবাই আলাপ করবে আর তারা রান্নাঘরে থাকবে এটা কুহু মানতে পারলো না। এতদিন তো উনারা করেছেই এবার সে কাজের লোকদেরকে নিয়ে নিজেই পুরো রান্নাঘরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলো।
শিরিনা বেগম মেয়ের এমন ভূমিকা দেখে খুশি হলেন। মেয়েটা ছেলেমানুষী ছেড়ে এরকম সংসারী হবে এটাই তো তিনি চাইতেন। শাহাদ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। সবাইকে সালাম দিলো। শাহাদকে দেখামাত্র এনা তার মায়ের পাশ থেকে উঠে গিয়ে শাহাদ যেই সোফায় বসেছে সেখানে বসে পড়লো। শাহাদ এত কিছু আমলে নিলো না সে টি টেবিল থেকে পেপারটা নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো৷
নাস্তা টেবিলেই ছিল এখন কাজের লোকেরা চা নিয়ে এলো। কুহু শাহাদকে উপর থেকে নামতে দেখেই কিচেনে এসে তার জন্য আলাদা চা বসিয়ে দিয়েছিলো। কাজের লোকদের বলে দিয়েছিলো শাহাদকে যেন চা না দেয়া হয়। চা করা হয়ে গেলে শাড়িটা ঠিকঠাক করে কাপ হাতে নিজেই চললো শাহাদকে চা দিতে। তার ইচ্ছা শাহাদের পাশে বসে সবার সাথে আড্ডা দিবে।
কাজের লোকগুলো অন্য একটা টেবিলে চা নাস্তা এনে রাখলো। এনা এতক্ষনেও শাহাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছিলো না। তাই উঠে গিয়ে টেবিল থেকে চা নিয়ে এসে শাহাদের মুখের কাছে ধরে ন্যাকা ন্যাকা করে বলল-
" এই নাও তোমার চা।
শাহাদ এত কিছু না ভেবে পেপারটা টেবিলের উপর রেখে চায়ের কাপটা হাতে নিলো। ঘুম ঘুম ভাবটা এখনো কাটে নি।এই মুহুর্তে এক চুমুক চায়ের প্রয়োজন খুব বেশি। চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে মুখ তুলে দেখলো রান্নাঘরের দরজার সামনে কুহু থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে,চোখমুখ কঠিন। এভাবে কুহুর দাঁড়িয়ে থাকার কারন বুঝলো না শাহাদ। খেয়াল করে দেখলো কুহুর হাতে একটা চায়ের কাপ। আরো কিছু খেয়াল করার আগেই কুহু ঝট করে ঘুরে গেলো। রান্নাঘরের বাইরে এক কোনায় রাখা ময়লা ফেলার বিনটার কাছে গিয়ে চায়ের কাপ প্লেট সহ চা টা ফেলে দিলো। তারপর ঝড়ের বেগে রান্না ঘরের ভেতর চলে গেলো।
এই পুরো ব্যাপারটায় শাহাদ অবাক হয়ে গেলো। কুহুর হঠাৎ এমন করার কারন কি? কারন খুঁজতে গিয়ে হাতের চায়ের কাপটার দিকে তাকালো তারপর তাকালো পাশে বসা এনার দিকে। তখনি তার মাথায় পুরো ঘটনা পরিষ্কার হয়ে গেলো। চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ালো। এনা শাহাদের হাত খামছে ধরে বলল-
"কোথায় যাচ্ছ? সবাই তো এখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে। বসো না।"
শাহাদ ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিলো। এখনি তাকে কুহুর কাছে যেতে হবে বেশি দেরি করে গেলে রান্নাঘরে আগুন লেগে যেতে পারে। সে দ্রুত রান্নাঘরে চলে আসলো। তাকে দেখে কাজের লোকগুলো বেরিয়ে গেলো রান্নাঘর থেকে। শাহাদ তাকিয়ে দেখলো বিশাল কিচেনের একপাশের তাকে হেলান দিয়ে কুহু দাঁড়িয়ে আছে। দেখে বেশ বুঝা গেলো যে সে রাগে ফুসছে। এই প্রথম শাহাদের একটু ভয় ভয় লাগলো। কুহু অন্য রকম কিছু ভেবে বসে আছে কি না কে জানে? শাহাদ গলা ঝাড়লো। কুহু তাকালো না। আগের মতোই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। শাহাদ কুহুর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে বলল-
" চা নিয়ে আসলে, আমাকে না দিয়ে ফেলে দিলে কেন?"
কুহু কঠিন স্বরে বললো-
"চা দেয়ার জন্য তো এখন কত মানুষ আছে।আমার আর কি প্রয়োজন।"
শাহাদ সচেতন হয়ে ঠোঁট কামড়ালো।বুঝতে পারলো রেড সিগনাল জ্বলছে। খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে।শাহাদ নরম স্বরে বলল-
"আমি ভাবলাম তুমি পাঠিয়েছো। আচ্ছা ঠিক আছে ভুল হয়ে গেছে।এখন তাহলে একটু চা করে দাও। চা না খেলে মাথাটা ক্লিয়ার হবে না।"
কুহু নড়ল না আগের মতো অটল দাঁড়িয়ে রইলো।শাহাদ মুখে মধু ঢেলে বললো-
" চা করে দাও না বউ।"
কুহু অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো শাহাদের দিকে। অন্য মেয়ের হাত থেকে চা নিয়ে এখন এসেছে "বউ বউ" করতে। সে গ্যাস জ্বালিয়ে চায়ের কেতলি বসিয়ে দিলো চুলায়। শাহাদের সামনে চা পাতার বক্স থেকে দু মুঠো চা পাতা দিলো পানিতে। শাহাদ সতর্ক চোখে সব ই দেখলো কিন্তু কিছু বললো না। কিভাবে বউ এর রাগ ভাঙানো যায় এটা নিয়ে চিন্তা করতে লাগলো।
চা পাতা ফুটে গেলে কুহু এক কাপ চা ঢেলে কোনো চিনি ছাড়াই শাহাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো-
"নিন, খান।"
শাহাদ শান্ত ভাবে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিলো। সাথে সাথে ওর মনে হলো ওর মুখটা যেন ক্ষয়ে গেলো।বিশ্রি রকমের তেতো হয়েছে চা টা। তার চোখমুখ বিকৃত হয়ে গেলো। চায়ের কাপটা কিচেনের তাকে রেখে হাত মুখের সামনে এনে বারকয়েক কাশলো।কুহুর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। শাহাদের অবস্থা দেখে বললো-
"ওর হাতে দেয়া চা তো ঠিক ই আরাম করে খেলেন। আমার হাতে দেয়া চা তেতো লাগে তাই না?"
শাহাদ হতাশ দৃষ্টিতে তাকালো কুহুর দিকে। বড্ড ছেলেমানুষী করছে মেয়েটা। ভুল বুঝছে তাকে। সে একহাতে কুহুকে নিজের কাছে এনে আরেক হাতে চায়ের কাপটা নিলো। বললো-
"আমার মিষ্টি বউএর হাতের সবই মিষ্টি। এই দেখো খাচ্ছি।"
শাহাদ চায়ের কাপটা ঠোঁট পর্যন্ত নিতেই কুহু ছো মেরে নিয়ে গেলো। নিয়ে গিয়ে সিংকে চাসুদ্ধ কাপটা রেখে দিলো। শাহাদ পেছন থেকে কুহুকে আলিঙ্গন করে বলল-
"রাগ করে আছো কেন? ওই চা টাও তো তোমার হাতেই বানানো।"
কুহুর কেন জানি গলা ধরে এলো। ধরা গলায় বলল-
"আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে কেন আপনাকে চা দিবে? কেন আপনার পাশে বসবে? কি হয় ও আপনার?"
শাহাদ কুহুকে নিজের দিকে ফিরালো।বললো-
"বিশ্বাস করো ও আমার কিচ্ছু হয় না। তুমি ভুল বুঝছো।ও আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে। ছোটবেলা থেকে হালকা পাতলা জানাশোনা ছিলো। এরপর ও বিদেশ চলে যায়। ব্যাস।"
কুহু মনে মনে জানে যে শাহাদের সাথে ও মেয়ের কিছু নেই। তারপরও সে এসব মানতে পারছে না। তার রাগ পাচ্ছে। এমন সময় রেজিয়া সুলতানা আসলেন কিচেনে। কুহু আর শাহাদকে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো-
"কি ব্যাপার কুহু তোমাকে ডাকছি শুনো নি? আর শাহাদ তুই মেয়েটাকে এখানে আটকে রেখেছিস কেন।ওর বাবা মা এসেছে ওদের সাথে সময় কাটাতে দে।"
শাহাদ কিছু না বলে কিচেন থেকে চলে গেলো। কুহুকে এমন দেখে রেজিয়া সুলতানা কিছু হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলেও কুহু কিছু বললো না। মা বাবার সামনেও সে পুরোপুরি নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো। ড্রয়িং রুমে অনেকবারই এনার সাথে চোখাচোখি হয়েছে। শাহাদ আর দ্বিতীয় বার ড্রয়িং রুমে আসে নি। তার জন্য আরেকবার চা নাস্তা বানিয়ে তার স্টাডিরুমে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
কুহুর বাবা মা চলে গেলো এর কিছুক্ষন পরেই।সবাই থেকে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তারা থাকলেন না।যিয়াদের পড়াশোনা আছে তাই থাকা যাবে না।এনা আর তার পরিবার কয়েকদিন এই বাড়িতে থাকবে। রাতের ডিনারে শাহাদ সবার সাথে খেলো না। মিটিং এর দোহাই দিয়ে সে আউটহাউজে ডিনার করলো। কুহু যেহেতু এনাকে তার আশপাশে পছন্দ করছে না তাই সে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে যতদিন এনা থাকবে ততদিন সে এনাকে ধারেকাছে আসতে দিবে না। ডিনারের পর কুহু রুমে আসলো। শাহাদ তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলো। কুহুকে দেখে সিগারেট ফেলে ডাকলো-
" বউ,শুনে যাও।"
কুহু অভিমান দেখিয়ে বলল-
"আমি ঘুমাব।"
অগত্যা শাহাদকে বারান্দা থেকে আসতে হলো। এসে কুহুর হাত টেনে ধরলো।বললো-
"এই যে হাত ধরেছি, এখন কোথায় যাও দেখি।"
"কেন শুধু হাত ধরবেন কেন? পুরো শরীরে কি সমস্যা?"
কথাটা বলেই কুহু জিভে কামড় দিলো। রাগের চোটে মুখ ফসকে কি বলতে কি বলে ফেলেছে।শাহাদ ফিসফিস করে বললো-
"সমস্যা নেই বলছো?"
"না নেই।এবার ছাড়ুন।"
শাহাদ আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলল-
" উহুম।আগে বল অনুমতি দিয়েছো।"
"কিসের অনুমতি? "
শাহাদ কানে কানে ফিসফিস করে বললো কিসের অনুমতি তার প্রয়োজন। কুহু আর অভিমান করে থাকতে পারলো না।এসব কথা শুনে দিলো হেসে। কপট রাগ দেখিয়ে বলল-
" খুব অনুমতি চাওয়া হচ্ছে এখন তাই না?"
"হুম্মম।আমি ভদ্রলোক, অনুমতি ছাড়া কিছু করা ঠিক হবে না।"
শাহাদ অনুমতি আদায় করেছে কিনা জানা গেলো না তবে দুজনের খুনসুটির আওয়াজ ভেসে আসছে।কুহুর হাসি শোনা যাচ্ছে। নিশ্চয়ই শাহাদ এতক্ষনে তার অভিমান ভেঙে ফেলেছে।
সকাল সকাল কুহু ফুরফুরে মনে ঘুম থেকে উঠলো। গোসল করে শাড়ি পড়ে ভেজা চুল নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। সে এখন কিচেনে যাবে। সিড়ির কাছে আসতেই দেখতে পেলো এনা উপরে উঠছে। তার গলায় ঝুলছে হেডফোন পড়নে জগিং স্যুট। কুহু মনে মনে ভাবলো ডাইনিটা নিশ্চয়ই জগিং করতে গিয়েছিলো। কুহু গুনগুন করতে করতে ভেজা চুল গুলো সামনে ঝাড়তে ঝাড়তে সিড়ি বেয়ে নামতে লাগলো। এনার কাছাকাছি আসতেই চুলগুলো বেশি জোরে ঝাড়া দিয়ে পিছনের দিকে দিলো।লম্বা চুলের অগ্রভাগ এনার গাল ছুয়ে গেলো। চুল থেকে পানির ছিটাও পড়েছে তার মুখে।রেগে গিয়ে বললো-
" হুয়াট দ্য হেল। পানি ছিটাচ্ছ কেন?"
কুহু আশ্চর্য হয়ার ভান করে বলল-
" তোমার এখানে পানি চলে গেছে?সরি।আসলে ঘুম থেকে সকালে উঠতে দেরি হয়েছে তো তাই গোসল করে চুলগুলো শুকানোর সময় পাই নি।"
এনা ভেজা চুলের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো-
"তাহলে আরো সকালে উঠলেই পারো।"
কুহু আঙুলে আচল প্যাচিয়ে লাজুক কন্ঠে বললো-
" আসলে তোমার ভাইয়া উঠতে দেয় না। বুঝোই তো।"
কুহু চোখ মারলো এনাকে তারপর নেচে নেচে সিড়ি বেয়ে নেমে গেলো। এনা শকুনের দৃষ্টিতে কুহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।এই মেয়েকে সে শীঘ্রই বুঝাবে কত ধানে কত চাল।
সকালের ব্রেকফাস্ট শাহাদ আগেই সেরে নিলো যার কারনে এনার সাথে এক টেবিলে বসতে হলো না। খেয়াল করে দেখলো কুহু হাসিমুখে রয়েছে। শাহাদ হাফ ছেড়ে বাচলো। যাক বউ কে অবশেষে সামলানো গেলো। এনা এসে দেখলো শাহাদ ব্রেকফাস্ট করে ফেলেছে। সে রেগেমেগে আগুন হয়ে গেলো কিন্তু তা প্রকাশ করলো না। কুহু এনার অবস্থা দেখে মিটি মিটি হাসলো। কুহুর হাসি দেখে এনার আরো রাগ হলো। এনাকে রাগিয়ে দিতে কুহু আরো একটা দুর্দান্ত কাজ করলো। শাহাদ যখন বাইরে যাওয়ার জন্য নিচে নামলো কুহু তখন সদর দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই যে যার মতো ব্যস্ত তবে এনা খাবার টেবিলে বসে থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কুহু শাহাদকে কানে কানে কিছু বলবে বলে নিচু হতে বললো।শাহাদ মাথা নিচু করলে টুপ করে ওর গালে চুমু দিয়ে বসলো।
কুহুর এরকম আচরনে শাহাদ যারপরনাই অবাক হলো। হাসলো কুহুর ছেলেমানুষী আচরনে।সে ও কুহুর কপালে গাঢ় চুমু খেয়ে বিদায় নিলো। শাহাদকে বিদায় করে দিয়ে কুহু শয়তানি হাসি দিয়ে এনার দিকে তাকালো। এনা শক্ত হয়ে বসে আছে। কুহুর এই হাসি তার জেদ আরো বাড়িয়ে দিলো। সে মনে মনে বিভিন্ন ফন্দী আটলো কুহুকে টাইট করার।
বিকেলবেলায় কুহু ছাদ থেকে কাপড় নিয়ে নিজের ঘরে আসার সময় হলওয়েতে এনার সাথে দেখা হয়ে গেলো।এনা আর থাকতে না পেরে বললো-
"এত ঢং কেন তোমার?"
কুহু না বোঝার ভান করে বলল-
"কিসের ঢং?"
"স্বামী কি তোমার একাই আছে আর কারো নেই? আর শুনো আমি বিদেশে না গেলে আমিই হতাম এই বাড়ির বউ,শাহাদের বউ। তোমার থেকে যোগ্যতা, সৌন্দর্য সবকিছুই আমার বেশি।বুঝেছো?"
কুহুর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।কঠিন স্বরে বলল-
" এখন শাহাদ খানের বউ আমি, খান বাড়ির বউও আমি। এতই যেহেতু যোগ্যতা আর সৌন্দর্য তাহলে অন্যের স্বামীর দিকে নজর না দিয়ে নিজের জন্য কাউকে খুঁজলেই পারো।"
এনা বাকা হেসে বলল-
"অন্যের স্বামীর দিকে নজর দিতে ভালো লাগে। এতে করে একটা কম্পিটিশন ভাইব আসে। তারপর এই কম্পিটিশনে জিতে গিয়ে যখন বউটাকে হারিয়ে দিই তখন কি যে ভাল লাগে। তোমাকে যখন হারাব তখন মজা বুঝবে। তোমাকে হারিয়ে তবেই আমি শান্তিতে বিদেশে যাব।"
কুহু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো এমন কথা শুনে। কোনো মেয়ে এতটা খারাপ হতে পারে তা তার জানা ছিলো না।এনা আবারো বললো-
"এটা আসলে আমার শখ বলতে পারো। অন্যের স্বামীকে নিয়ে খেলতে ভাল লাগে।এতে করে আমি যে রূপে গূণে শতগুণে এগিয়ে সেটা তার বউকে বুঝিয়ে দিই।"
কুহু প্রবল ঘৃণায় হাতের কাপড়গুলো এনার মুখে ছুড়ে দিলো। এনা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো-
"ইউ ব্লাডি বিচ।"
" আমার স্বামীকে নিয়ে খেলবি?আমাকে হারাবি?দাঁড়া দেখাচ্ছি তোকে........."
এটা বলেই কুহু এক হাতে এনার চুল টেনে ধরলো। এনা হঠাৎ আক্রমণে চিৎকার করে উঠলো। নিজেকে কিছুটা সামলে সে-ও কুহুর চুল খামছে ধরলো।এইবার কুহু আরেক হাত দিয়েও এনার আরেকপাশের চুল ধরলো।এনাও কুহুর দেখাদেখি আরেক হাতে কুহুর চুল ধরলো।দুজনের চুল টানাটানি করে চিৎকার করতে লাগলো।
শাহাদ সব কাজ শেষ করে ঘরে ফিরছিলো। সিড়ি থেকেই সে চিৎকার চেচামেচি শুনে দ্রুত সিড়ি পেরিয়ে হলওয়ে তে এলো। দেখলো কুহু আর এনা চুলোচুলি করছে। শাহাদ এই ঘটনা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো। জীবনে সে চুলোচুলির কথা শুনেছে কিন্তু নিজ চোখে দেখেনি কোনোদিন। এই প্রথম সে চুলোচুলি দেখছে।সেখানে আবার তার নিজের বউও আছে।
চলবে
0 Comments:
Post a Comment