গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ২০

 |২০|


---


লিসবনের এক শান্ত দুপুর। ক্লাস শেষে তুর্য জানাল, “তন্নী, আজ বিকেলে একটু হাঁটতে যাবি নদীর ধারে? ভালো লাগবে।”

তন্নী কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল তার দিকে, তারপর হালকা মাথা নাড়ল।

দুজনের মাঝে এখন একধরনের নীরব বোঝাপড়া জন্ম নিচ্ছে—যেটা শব্দের ওপর নির্ভর করে না।


---


ট্যাগাস নদীর পাড়ে হাঁটছিল ওরা। আশেপাশে কিছু পর্যটক, কিছু প্রেমিক যুগল।

তুর্য আর তন্নী পাশাপাশি হাঁটছে, কিন্তু মাঝে একটু ব্যবধান।

বাতাস বইছে নরমভাবে, যেন কিছু গোপন কথা কানে বলছে।


“তন্নী,” তুর্য বলল, “তুই মাঝে মাঝে এমন চুপ করে যাস কেন?”


তন্নী চোখ নামিয়ে বলল, “কারণ আমার ভয় হয়। আমি ভুল লোকের কাছে খুলে পড়েছিলাম একসময়। তারপর থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছি।”

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস, তারপর সে যোগ করল, “তুই আলাদা, জানি। কিন্তু আমি এখনও নিজেকে পুরোটা তোকে দিতে পারিনি।”


তুর্য থেমে গেল। নদীর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই যা পারিস, সেটা দিস। আমি তোর পাশে আছি, অধিকার নিয়ে নয়, আশ্রয় হয়ে।”


তন্নীর চোখে জল এসে গেল, কিন্তু সে হাসল। “তোমাকে কিছু বলার নেই... কিন্তু সবটাই তোর জন্য বাঁচিয়ে রাখছি।”


---


ওরা ফিরে আসছিল যখন রাফায়েল, তাদের এক ক্লাসমেট, এসে পড়ল সামনে।


রাফায়েল তন্নীর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি কি জানো, তুমি কী হারাচ্ছো? তুমি তো জানো আমি...”


তুর্য মুখ কালো করে বলল, “রাফায়েল, থামো। তন্নী কারো সম্পত্তি নয়, ওর নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে।”


তন্নী শান্তভাবে বলল, “রাফায়েল, আমি তোর প্রতি কৃতজ্ঞ, কিন্তু আমার যা কিছু বলার, আমি বলেই দিয়েছি। আর কিছু বাকি নেই।”


রাফায়েল কেটে পড়ল, কিন্তু চারপাশের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী এ দৃশ্য দেখে ফেলেছে। ক্যাম্পাসে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়তে দেরি হল না।


---


তাসনিমের প্রশ্ন:


তাসনিম সেই সন্ধ্যায় তন্নীকে জিজ্ঞেস করল, “তুই কীভাবে এত স্থির থাকতে পারিস তুর্যর সামনে?”


তন্নী হেসে বলল, “কারণ তুর্য আমার সবার চেয়ে বেশি বোঝে। ওর সামনে আমি আমার দুর্বলতাগুলো স্বীকার করতে পারি।”


তাসনিম কাঁধে মাথা রাখল, “তোর জন্য আমার গর্ব হচ্ছে। প্রেমে পড়া সহজ, কিন্তু প্রেমে শক্ত হয়ে থাকা কঠিন।”


---


তুর্যর ডায়েরি:


রাতের বেলায় তুর্য নিজের ডায়েরিতে লিখল—


“আজ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে বুঝলাম, ভালোবাসা কখনও জোর করে হয় না। সময়ের সাথে সাথে, সে নিজেই জায়গা করে নেয়। তন্নী আমাকে কিছু বলেনি, কিন্তু তার চোখ আজ একরকম কথা বলে গেছে। আমি জানি, সে আসবে... ধীরে ধীরে, কিন্তু পুরোটাই।”


---


শেষ দৃশ্য:


তন্নী নিজের ঘরে বসে তুর্যর পাঠানো একটা ছবি দেখছিল—ট্যাগাস নদীর ছবি, আর নিচে লেখা একটা লাইন:


“তোর নীরবতাও আমার কাছে গান হয়ে বাজে।”


তন্নীর মুখে এক টুকরো শান্তির হাসি। আজ না হলেও, খুব শিগগিরই সে তার মনের দরজা খুলে দেবে। কারণ সে জানে, তুর্য অপেক্ষা করবে।


---

0 Comments:

Post a Comment