#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-২১
শাহাদ যখন কুহুকে নিয়ে দেশে ফিরলো তখন সকাল। দীর্ঘ জার্নি শেষে বাড়ি ফিরে বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে শাহাদ লম্বা করে শ্বাস টানলো। বাড়ির পরিচিত গন্ধ পেয়ে শাহাদের দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তিভাব কেটে গেলো। ক্লান্ত শ্রান্ত কুহু ঢুলতে ঢুলতে গাড়ি থেকে নেমে এলো। ফ্লাইটে তার ঘুম হয় নি। তারউপর কয়েকবার ফ্লাইট চেঞ্জের ঝামেলা তো আছেই। বিজন্যাস ক্লাসে জার্নি করেও তার ঘুম একদম ই হয় নি।তবে শাহাদ পুরো ফ্লাইটে আরাম করে ঘুমিয়েছে। দেখেই বুঝা যায় এসব লং ফ্লাইটে জার্নি করা তার অভ্যাস আছে।
কুহু শুকনো মুখে শাহাদের পাশে দাঁড়ালো। শাহাদ কুহুকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলো। বাড়ির গিন্নিরা তখন ব্রেকফাস্ট বানাতে ব্যস্ত,কুলসুমা বেগম সোফায় বসে চা খাচ্ছেন আর কি কি বাজার লাগবে তা বলছেন মালাকে।মালা তার পায়ের কাছে ফ্লোরে বসে টি টেবিলের উপর কাগজ কলম দিয়ে বাজারের লিস্ট করছে। শাহাদ আর কুহুকে প্রথম নজরে পড়লো মালার। সে চকচকে চোখে তাকিয়ে বললো-
"ও দাদীজান দেখেন ভাইজান আর ভাবিসাব আইসা পড়ছে।"
এরপরই মালা এক দৌড়ে কিচেনে চলে গেলো।রেজিয়া সুলতানা আর জয়া বেগমকে খবর দিয়ে আসলো। রেজিয়া সুলতানা এসে কুহুর শুকনো মুখ দেখে জিজ্ঞেস করলেন -
"মুখটা এমন শুকিয়ে গেছে কেন? খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক হয় নি?"
"ওখানে গিয়ে ওর জ্বর হয়েছিলো মা।"
শাহাদের কথায় রেজিয়া সুলতানা আঁতকে উঠে বললেন-
"ওমা সেকি! জানাসনি কেন আমাদের?"
"চিন্তা করবে তাই জানাইনি।"
জয়া বেগম বললেন-
"তোমার চাচ্চুকে আমি বলেছিলাম এত দূরে ছেলেমেয়ে দুটোকে পাঠানোর দরকার নেই। যেতে আসতেই তো কয়েকদিন লাগে। তখন তোমার চাচ্চু বললো তোমরা নাকি এক মাসের মতো থাকবে।"
শাহাদ মাথা নাড়িয়ে বললো -
"এক মাসই থাকার প্ল্যান ছিলো।কুহু অসুস্থ হয়ে গেলো তাই আর বেশিদিন থাকার রিস্ক নেই নি। "
কুলসুমা বেগম সোফায় বসে চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন-
"ভালো করেছিস।এবার যা ফ্রেশ হ গিয়ে। আর নাতবউ তুমি বিশ্রাম নিয়ে আমার সাথে দেখা করবে।"
কুহু মাথা হেলিয়ে সায় জানালো। ঘরে এসে ফ্রেশ হলো। কুহু অসুস্থ থাকায় ব্রেকফাস্ট টেবিলে শাহাদের পাশে বসে একসাথে খেতে বলা হলো।খাওয়ার মাঝখানে এমদাদ খান শাহাদ কুহুর ট্রিপ থেকে এত তাড়াতাড়ি চলে আসার কারন জানতে চাইলো। সব শুনে তিনি খুব আফসোস করলেন। এত সুন্দর একটা সময় মাটি হলো দুজনের। আশফাক খান শাহাদকে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন-
"এবার তবে দলের কাজকর্ম হাতে নাও। ওয়েবসাইট হ্যাক করার পর কত ক্ষতি হয়েছে তা তো জানোই। আগামী নির্বাচনের আগেই সব ঠিক করতে হবে। বিরোধী দল কেউই বসে নেই।সুযোগ পেলেই আঘাত করছে।"
আব্দুল গাফফার খান ছেলের কথার প্রতিবাদ করে বললেন-
"মাত্র ট্রিপ থেকে এসেছে এক দুটো দিন বিশ্রাম নিতে দে। আর সব ওর ঘাড় চাপিয়ে দিয়ে নিজে শুধু সভা-সমাবেশ করে বেড়ালে চলবে?দলের সভাপতি হিসেবে তোর নিজেরও কিছু কাজ আছে।"
বাবার বলা কথা আশফাক খানের মনঃপূত হলো নাম।তিনি নাকচ করে বললেন-
"এখনি ওর রাজনীতি করার বয়স,এখন না শিখলে পরে আর কখন শিখবে?"
শাহাদ বাবা আর দাদার মাঝখানকার দ্বন্ধ মিটানোর জন্য তাড়াতাড়ি বললো -
"আমি আজকেই পার্টি অফিসে যাব বাবা।কোনো অসুবিধা নেই আমার।"
আশফাক খান মনে মনে খুশি হলেন ছেলের তৎপরতায়। শাহাদ ব্রেকফাস্ট শেষ করে ঘরে এলো। কুহুও এলো পিছু পিছু। শাহাদ সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে ঘড়ি পড়ছে। ঘড়ি পড়ার এক ফাঁকে আয়নার ভিতর দিয়ে কুহুর দিকে তাকালো। কুহু মনোযোগ দিয়ে শাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। শাহাদের কাজকর্ম লক্ষ্য করছে। শাহাদ ঘড়ি পড়া শেষ করে ঘাড়ের দুপাশে পারফিউম স্প্রে করলো। তারপর খাড়া চুলগুলো হাত দিয়ে ব্রাশ করে কুহুর দিকে ফিরে বললো-
"আমার আজ ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যাবে। দুপুরে ঠিকমতো খেয়ো। আর এদিক সেদিক না গিয়ে ঘরে শুয়ে রেস্ট করো। তোমার শরীর এখনো দূর্বল।"
কুহু হাতের নখের দিকে তাকিয়ে বলল-
"ফিরে এসে আমার বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো। আমার বাবা মাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।"
শাহাদের মনে পড়লো কুহুর বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা। সে কুহুর কাছে এসে হেসে বলল-
"অবশ্যই যাব। তুমি পুরোপুরি সুস্থ হও।আর দু এক দিনের মধ্যেই নিয়ে যাব।"
কুহুর মুখ জুড়ে হাসি ছড়িয়ে গেলো।শাহাদও হাসলো। কিন্তু ভিতরর ভিতরে তার খারাপ লাগলো। কারন কুহু না জানলেও সে খুব ভালো করেই জানে কুহুকে বাপের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় সে বের করতে পারবে না।চাইলেই কুহুকে একা পাঠিয়ে দিতে পারে।কিন্তু বিয়ের পর বর ছাড়া একা বাপের বাড়ি যাওয়াটা কেউ ভালোভাবে নিবে না।সব মিলিয়ে কুহুর বাপের বাড়ি যাওয়াটা এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত। কুহুর খুশি দেখে শাহাদের মনটা খুব ই খারাপ হয়ে গেলো। উপরে উপরে হাসলেও সে মন খারাপ নিয়ে পার্টি অফিসে রওয়ানা করলো।
দুপুরের দিকে কুহু নিচে নামলো। তখন তার ডাক পড়লো কুলসুমা বেগমের ঘরে। কুলসুমা বেগম পানের বাটা থেকে পান মুখে দিয়ে কুহুর দিকে তাকালো।কুহু একটা সুতির থ্রি পিছ পড়েছে।গায়ে ওড়না জড়িয়ে চুল ছেড়ে রেখেছে।কুলসুমা বেগম জহুরি চোখে বিছানায় তার সামনে বসে থাকা কুহুর দিকে তাকালেন। গলার স্বর নামিয়ে কুহুকে কাছে ডেকে কিছু প্রশ্ন করলেন। এমন সব প্রশ্ন যে কুহুর কানে ঝা ঝা শব্দ হতে লাগলো। দাদী শাশুড়ীর সামনে এমন কথাবার্তায় লজ্জায় কুহুর কথা বন্ধ হয়ে গেলো।সে ঘাড় নাড়িয়ে উত্তর দিচ্ছে সব প্রশ্নের। কুলসুমা বেগম হতাশ হলেন কুহুর উত্তর শুনে। মধুচন্দ্রিমায় মধু আর চন্দ্রের সন্ধি হওয়ার বদলে যে সন্ধিবিচ্ছেদ হয়েছে তা ভালোই বুঝতে পারলেন। রাগ গিয়ে পড়লো তাঁর অপদার্থ নাতির উপর। কুহুকে বিদায় করে দিয়ে মালাকে দিয়ে রেজিয়া সুলতানাকে ডেকে পাঠালেন। রেজিয়া সুলতানা আসলে বললেন-
"খান বংশে উত্তরাধিকারির যে এখন খুব প্রয়োজন তা নিয়ে কি তোমার ছেলের কোনো চিন্তা আছে? হানিমুনে গিয়ে তোমার ছেলে নতুন বউকে একা ঘরে ফেলে রেখে রাজনীতির বংশ উদ্ধার করেছে। বউ এর খেয়াল না রেখে অসুস্থ করে নিয়ে এসেছে।এরকম করলে কি করে চলবে?"
রেজিয়া সুলতানা শ্বাশুড়ির উপর বিরক্ত হলেন।বিরক্তিভাব বুঝতে না দিয়ে বললেন-
"আজকালকার ছেলেমেয়েরা একটু সময় তো নিবেই।বোঝাপড়ার তো একটা ব্যাপার আছে।"
"বোঝাপড়া করুক। কিন্তু তোমার অপদার্থ ছেলেকে বলে দিও বিয়ে করেছে এখন যেন রাজনীতি বাদে বউ এর দিকে একটু নজর দেয়।"
কুলসুমা বেগমের কাটকাট কথায় রেজিয়া সুলতানারও কিছুটা টনক নড়লো। আসলেই তো ওদের হানিমুন তো হয়ই নি।হানিমুনের সময়ই তো ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছিলো।ওটা নিয়েই তো শাহাদ ব্যস্ত ছিলো তারপর হলো কুহুর জ্বর। শ্বাশুড়ির কথা রেজিয়া সুলতানা একবারে ফেলে দিতে পারলেন না।খান বংশে আসলেই এখন উত্তরাধিকারীর দরকার। শাহাদ ছাড়া কোনো ছেলে নেই খান বংশে। শাহাদ যে ধরনের পেশায় নিজেকে জড়িয়েছে সে পেশায় যেকোনো সময় জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার ভয় আছে।সেই সাথে নিভে যাবে খান বংশের উত্তরাধিকারের প্রদীপও।
---------------
শাহাদ পার্টি অফিসের মিটিং রুমে বসে আছে। লম্বা টেবিলটার চারদিকে আরো অনেক নেতাকর্মী বসে আছে। টেবিলের এক প্রান্তে রাজকীয় একটা চেয়ার। সেখানে দলের সভাপতি আশফাক খান বসেন। শাহাদ সেই চেয়ারটার সবচেয়ে কাছের চেয়ারটায় বসে আছে। আরো অনেক ছোটবড় নেতাকর্মীরা মিটিং রুমে উপস্থিত। দলের সিনিয়র নেতা রমিজ উদ্দীন চিন্তিত মুখে বললেন-
"এভাবে অপপ্রচার চালানোতে বিরোধী দলের হাত ছাড়া অন্য কারো হাত নেই। হ্যাকাররা শুধু শখের বশে তো আর ওয়েবসাইট হ্যাক করবে না।এখানে বিরোধী দলেরই হাত আছে। "
আরেকজন নেতা বললেন-
"তা তো আছেই। কার হাত আছে সেটা খুঁযে বের করে প্রয়োজনীয় স্টেপ নেয়া দরকার। অপপ্রচার চালিয়ে দলের অনেক দুর্নাম করেছে। এটা সহ্যের বাইরে।"
সায় জানিয়ে আরেকজন বললেন-
"আমি একশ ভাগ নিশ্চিত এখানে হিশাম চৌধুরীর হাত আছে। ও ছাড়া নির্বাচনের আগে এই কাজ কেউ করবে না।"
মোশাররফ আলী খ্যাঁক করে উঠলেন। বললেন-
"তুমি কি করে নিশ্চিত যে এখানে হিশাম চৌধুরীর হাত আছে। এত সিক্রেট খবর হিশাম তোমাকে বলে দিয়েছে নাকি। দলের ভিতরে থেকে তুমি হাত মিলিয়েছো নাকি হিশামের সাথে?"
মোশাররফ আলীর কথায় দলের নেতাটা রেগে গেলেন।গরম কন্ঠে বললেন-
"বড় ভাই কি জেনেবুঝে এই কথা বললেন? সিনিয়র বলে কিন্তু আপনি যা তা বলে পার পেয়ে যাবেন তা হবে না।"
মোশাররফ আলী চেতে উঠে বল্লেন-
"কি করবা তুমি? এত বড় সাহস আমাকে গরম চোখ দেখাও।ঘাড় ধরে দল থেকে বের করে দিব।"
তুমুল বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে গেলো। শাহাদ এতক্ষন তাকিয়ে থেকে সবার কথা শুনছিলো। এইবার একটা ফাইল টেনে নিয়ে জোরে টেবিলের উপর আঘাত করলো। জোর শব্দে সবাই চমকে গিয়ে শাহাদের দিকে তাকালো। শাহাদ একটা হাত চেয়ারের হাতলে রেখে হাই তুললো। বললো-
" মিটিংয়ে বসেছি দলের সবাই একজোট হয়ে কাজ করার জন্য। অথচ আপনারা তো দেখছি দলই ভেঙে দিচ্ছেন।"
মোশাররফ আলী ব্যস্ত হয়ে বললেন-
"শাহাদ বাবা, তুমি চাপ নিও না।শুনলাম লম্বা জার্নি করে এসেছো। বাসায় যাও৷ রেস্ট নাও।দল আমি সামলাচ্ছি।"
"আমি তো কয়েকদিনের জন্য বাইরে গিয়েছিলাম। তখন কেন সামলাতে পারেন নি?কোথায় ছিলেন আপনি? দলের কাজ করতে গিয়ে আমার হানিমুন বরবাদ করতে হলো কেন?"
মোশাররফ আলী মুখ কালো করে চুপ হয়ে গেলেন।শাহাদ আবার বললো-
"দলের ভিতর সমস্যা না থাকলে বাইরের কেউ এত সহজে ওয়েবসাইট হ্যাক করে অপপ্রচার চালাতে পারে না।দলেরই কেউ হেল্প করেছে।"
রমিজ উদ্দীন বললেন-
"ঠিক বলেছো তুমি। দলের কেউ হেল্প করেছে। নয়তো ওরা যেসমস্ত বিষয় নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে তা দলের ভিতরের মানুষ ছাড়া জানার কথা না।"
সারা ঘর জুড়ে গুঞ্জন উঠলো। কে করতে পারে এই কাজ এই নিয়ে সবাই কানাকানিতে লেগে গেলো। শাহাদ এই ঘরে থাকা সবাইকে একবার দেখে নিলো। কয়েকজন বিশ্বস্ত দলীয় নেতাকে তার বাবার নিজস্ব রুমে আসতে বলে সে উঠে দাঁড়ালো।সবার দিকে তাকিয়ে বলল-
"দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা যে করেছেন তিনি আমি জেনে যাওয়ার আগেই দল ছেড়ে বেরিয়ে যান।আমি ধরতে পারলে কঠিন শাস্তি দিব।"
---------
দেখতে অনেকটা পুরনো আমলের রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হাসিব। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে লোহার গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো।দারোয়ান তাকে দেখেই তাড়াতাড়ি গেট খুলে দিলো। দাঁত বের করে হেসে বলল-
"ছোট স্যার বাড়িত আইলেন বুঝি?"
হাসিব এই অর্থহীন প্রশ্নের উত্তর দেয়া প্রয়োজন মনে করলো না। সে বাগান পেরিয়ে বাড়ির সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। তার কাঁধে আর হাতে ব্যাগ। কাঁধের ব্যাগ আর হাতের ব্যাগ দুটোতেই বই। ড্রয়িং রুমে এসে ব্যাগ দুটো সোফায় রেখে একটা কাজের লোককে পানি দিতে বললো। কিছুক্ষনের মাঝেই খবর পেয়ে মঞ্জুরা বেগম ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। সোফায় বসে থাকা হাসিবকে দেখে তিনি আঁতকে উঠলেন।দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে হাসিবের পাশে বসে বললেন-
"কি রে বাবা! কোনো খবর না দিয়ে এলি যে! কোন সমস্যা হয়েছে?"
হাসিব গ্লাসের পুরো পানিটা শেষ করে বলল-
"না সমস্যা হয় নি।তোমাদের দেখতে ইচ্ছে হলো তাই।"
মঞ্জুরা বেগম নিশ্চিন্ত হলেন। তবে অসময়ে ছেলের এমন চলে আসাতে তিনি ভালো বোধ করছেন না। খবর পেয়ে তৃপ্তিও নিচে নামলো। হাসিবকে দেখে তার মুখে হাসি এলো। হাসিবের সামনে দাঁড়িয়ে বললো-
"কখন এলে? এত দিন পর মনে পড়লো আমাদের?"
হাসিব হাসিমুখে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে জানতে চাইলো -
"রিশাম কোথায়?"
"দুপুরে খেয়ে ঘুমাচ্ছে। খুব জ্বালায় জানো।তুমি এসেছো, যে কটা দিন আছো তোমার ভাতিজা তুমি সামলাবে।"
"যে কটা দিন নয় ভাবি।এখন থেকে আমি এখানেই থাকব।"
মঞ্জুরা বেগম বিস্ফোরিত চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন-
"এখানে থাকবি মানে?"
"হ্যা মা।এখানেই থাকব। বাড়ির কাছে ভার্সিটিতে পড়ি অথচ আমাকে থাকতে হয় হলে। সেই এসএসসি থেকে বাড়ি ছাড়া আমি। আমি আর থাকব না এভাবে।"
"তোর ভালোর জন্যই তোকে দূরে রাখা হয়েছে।জানিস না এই বাড়ির শত্রুর অভাব নেই।তোর বাবাকে মেরেছে। তোর ভাইকেও ছেড়ে দিবে না।যদি জানে তুইও রাজনীতিতে ঢুকেছিস তোকে আস্ত রাখবে? একমাত্র বাড়ির বাইরে থাকলেই তুই রাজনীতিতে যুক্ত নেই এটা ওরা বিশ্বাস করবে।"
হাসিব ক্ষেপে গেলো। উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগ দুটো হাতে নিয়ে বললো -
" আমার কি নিজের পরিবারের সাথে থাকার অধিকার নেই?পরিবারের সাথে থাকলেই যদি রাজনীতিতে নাম উঠে যায় তবে সেটাই হোক।আমি সব ছেড়ে দিয়ে রাজনীতি করব।"
হাসিব ধুপধাপ সিড়ি পেরিয়ে উপরে উঠে গেলো।মঞ্জুরা বেগম মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন।দুই ছেলের এক ছেলেকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু এটাও আর সম্ভব হলো না।
----------------
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামলেও শাহাদের আর বাড়ি ফেরা হলো না। তাকে শহরের একটা ফাইভ স্টার হোটেলে আসতে হলো। হোটেলের আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজে বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর তমাল এসে গাড়ির কাচে টোকা দিলো। কাচ নামিয়ে দিলো শাহাদ। তমাল নিচু গলায় বললো-
"ভাই পাখি খাচায় ঢুকে গেছে। এখন শুধু হাতে নাতে ধরার পালা।"
শাহাদ গাড়ি থেকে বের হয়ে এলো। লিফটে চড়ে উঠে এলো আট তলায়। আট তলায় কয়েকটা ছেলে দাঁড়িয়ে ছিলো শাহাদ বের হতেই তারা শাহাদের পিছু নিলো। শাহাদ হলওয়ে পেরিয়ে আটশ পাঁচ নাম্বার রুমটার সামনে এসে দাঁড়ালো। হোটেল ম্যানেজারকে ভয় দেখিয়ে রুমের চাবি নিয়ে এসেছে তমাল।শাহাদের ইশারা পেয়ে আস্তে করে রুমের লক খুললো।ধড়াম করে দরজা খুলে বিলাসবহুল রুমটায় ঢুকলো শাহাদ।পিছু পিছু তার দলের ছেলেগুলোও ঢুকলো।
মোশাররফ আলী হোটেল রুমে মেয়ে নিয়ে এসে একটু আনন্দ ফূর্তি করছিলেন হঠাৎ বিকট শব্দে তিনি চমকে উঠলেন। গায়ে চাদর চেপে ধরে তিনি দরজার দিকে তাকালেন।দলবল নিয়ে শাহাদকে ঢুকতে দেখে তার মুখ হা হয়ে গেলো। শাহাদ রুমে ঢুকে সোজাসুজি মোশাররফ আলীর দিকে তাকালো।মোশাররফ আলীর পাশে একটা অল্প বয়সী মেয়ে গায়ে চাদর চেপে ধরে আছে,চোখেমুখে আতংক। শাহাদ কিছু না বলে বেডের পাশে সোফাটায় গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসলো।মোশাররফ আলীর দিকে তাকিয়ে বলল-
"এই বয়সে এসব করে বেড়াচ্ছেন আংকেল? বাসায় আন্টি জানে?"
মোশাররফ আলী প্রথমে ভয় পেলেও এবার রেগে গেলেন।বললেন-
"আমার জীবন নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। একজনের প্রাইভেসি নষ্ট করার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে? আমি যা খুশি তা করব তাতে তোমার কি?"
"সে আপনি করতেই পারেন তাতে আমার কিছু যায় আসে না।কিন্তু আপনি যে দলের ভেতরের খবর বাইরে পাচার করেছেন এতে আমার যায় আসে।"
মোশাররফ আলী নিভে গেলেন।এবার তার আগের ভয়টা ফিরে এলো।কিন্তু জোর করে সাহস ধরে রেখে বলল-
"কি প্রমান আছে তোমার কাছে?"
"যাকে দিয়ে হিশাম চৌধুরীর কাছে ডকুমেন্টস পাঠিয়েছেন সে নিজেই বলেছে। এটাও বলেছে আপনিই নাকি ওয়েবসাইট হ্যাক করার বুদ্ধি দিয়েছেন।এমনি এমনি বলেনি, দুটো চড় থাপ্পড় দিতে হয়েছে।"
মোশাররফ আলী ঘামতে শুরু করলেন। তিনি যে কোণঠাসা হয়ে গেছেন বেশ বুঝতে পারছেন।শাহাদ আফসোস করে বলল-
"দলের এত বড় ক্ষতি করেছেন তাতে আমি তেমন কিছু মনে করিনি আংকেল।কিন্তু দুদিন পর মেয়ে বিয়ে দিবেন আর এখন মেয়ের বয়েসী একজনকে নিয়ে হোটেলে এসেছেন। ভেরি ব্যাড আংকেল।"
"তাতে তোর কি? তোর বউকে নিয়ে তো আসিনি।"
শাহাদের চোয়াল টানটান হয়ে গেলো। পায়ের উপর থেকে পা নামিয়ে সোজা হয়ে বসে বলল-
"আংকেল আমার বউকে নিয়ে কিছু বলবেন না প্লিজ।"
"কেন রে বললে কি করবি? তোর বউকে বলব তোর বোনকে বলব তোর মাকেও বলব।কি করবি তুই?"
"আপনার জিভ কেটে দিব।"
"তাই?? সাহস থাকলে জিভ কেটে দেখা।"
শাহাদ হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে বিছানায় চলে এলো। এক হাতে গলা চেপে ধরলো মোশাররফ আলীর। শাহাদের শান্ত চোখমুখের দিকে তাকিয়ে মোশাররফ আলী আতংকে শিউরে উঠলেন। উনি বলার সময় এত কিছু ভাবেন নি।জোশে বলে ফেলেছেন৷ কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে গেছে।যে ছেলে বড়দের সাথে সালাম ছাড়া কথা বলে না, সবসময় চোখ নামিয়ে রাখে সেই ছেলে যে তাকে গলা চেপে ধরবে তা তিনি ভাবেন নি।
শাহাদ হাতের চাপ বাড়িয়ে দিলো। শ্বাস নিতে না পেরে মোশাররফ আলীর জিভ অটোমেটিক বেরিয়ে এলো। শাহাদ অন্যহাতটা তমালের দিকে বাড়িয়ে দিলো।তমাল কয়েকটা টিস্যু এগিয়ে দিলো। শাহাদ টিস্যু নিয়ে টিস্যু পেচিয়ে মোশাররফ আলীর জিভটা টান দিয়ে ধরলো। তারপর অন্যহাতে তমালের কাছ থেকে ছুড়ি নিয়ে খচ করে জিভটা কে*টে দিলো। পাশে থাকা মেয়েটা এতক্ষন ভয়ে ভয়ে সব দেখছিলো এবার এই ঘটনা দেখে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালো।
শাহাদ কাজ শেষ করে টিস্যুতে ছু*ড়ির র*ক্ত মুছতে মুছতে বললো-
"আপনাকে বলেছিলাম আংকেল আমার বাড়ির মেয়েদের নিয়ে খারাপ কিছু বললে জিভ কে*টে ফেলব।আপনি শুনেন নি।"
মোশাররফ আলীর তখন শাহাদের কথা শোনার মতো অবস্থা নেই। তিনি যন্ত্রনায় চিৎকার করছেন।
চলবে
[আমার পরিক্ষা, পড়াশোনা নিয়ে চাপে থাকার কারনে পর্ব লিখতে লেট হচ্ছে ]
0 Comments:
Post a Comment