#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-২২
শাহাদ বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় এগারটা বেজে গেলো। সদর দরজা খুলে দিলো বাড়ির কাজের লোক। বাড়ির সবাই তখন খেয়ে দেয়ে যার যার ঘরে চলে গেছে শুধু রেজিয়া সুলতানা সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন আর শাহাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। শাহাদকে ঢুকতে দেখে টিভি অফ করে এগিয়ে এলেন।বললেন-
"এত রাত করে এলি যে?"
শাহাদ উত্তর দেয়ার আগেই শাহাদের সাদা পাঞ্জাবিতে রক্ত দেখে আঁতকে উঠলেন রেজিয়া সুলতানা।ভয়ার্ত কন্ঠে বললেন-
"তোর পাঞ্জাবিতে র*ক্ত কেন? কোথাও আ*ঘাত পেয়েছিস?"
শাহাদ ভ্রু কুচকে তার পাঞ্জাবিতে তাকালো।বুকের কাছে কয়েকটা র*ক্তের ফোটা দেখতে পেলো।শুকিয়ে গেছে। র*ক্ত যে লেগেছে এটা সে জানতো না এখন জানলো। রেজিয়া সুলতানার দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হেসে বলল-
"আমার রক্ত না, তমাল মা*রামারি করে হাত কে*টে ফেলেছিলো ওইটারই র*ক্ত।"
রেজিয়া সুলতানা তাও নিশ্চিত হতে পারলেন না ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শাহাদকে ভালো করে পরখ করলেন। বললেন -
"ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কুহুকে নিয়ে খেতে আয়।"
"আমি খেয়ে এসেছি। কুহু খায় নি?"
"না,তোর জন্য অপেক্ষা করেছে।কোনোমতেই তাকে খাওয়ানো যায় নি।"
"কাউকে দিয়ে ওর খাবারটা উপরে পাঠিয়ে দাও।"
শাহাদ সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে এক টানে পাঞ্জাবিটা খুলে ফেললো।পাঞ্জাবির নিচে সাদা গেঞ্জি আছে। র*ক্ত লেগে থাকা পাঞ্জাবি দেখলে কুহু ভুল বুঝতে পারে। পাঞ্জাবিটা হাতে নিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। দেখলো শাড়ি পড়া কুহু বিছানায় শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে পড়েছে কি? শাহাদের খুব খারাপ লাগলো। মেয়েটা ওর জন্য অপেক্ষা করে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আর ও কিনা পার্টি অফিসে খেয়ে এলো। শাহাদ হাতের পাঞ্জাবিটা ঘরের এক কোনে থাকা ময়লা কাপড় রাখার বাস্কেটে ছুড়ে দিলো। তারপর কুহুর কাছে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে "কুহু,কুহু" বলে ডাকলো।
কুহু ঘুমায় নি।এতক্ষন বসে ফোন টিপছিলো। শাহাদের আসার খবর পেয়ে সে ভং ধরে শুয়ে পড়েছে। কুহুর মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখায় শাহাদ মুখটা দেখতে পেলো না।নাহলে হয়তো জোর করে খিচে রাখা কুহুর চোখ দুটো দেখেই বুঝে ফেলতো যে কুহু ভং ধরেছে।
শাহাদের খুব খারাপ লাগলো।সে টি শার্ট-ট্রাউজার নিয়ে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে। শাহাদ চলে যেতেই কুহু উঠে বসলো। ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকালো। একটা ভেংচি কাটলো।মনে মনে বললো-
"হুহ!! এত দেরি করে এসে আদিখ্যেতা। না খেয়ে বসে আছি সেটা কি জানে?"
আবারো দরজায় শব্দ হলো। কুহু লাফ দিয়ে আগের মতো শুয়ে পড়লো। ঘরে ঢুকলো মালা। তার হাতে ট্রে।সেখানে খাবার। সে কুহুকে শুয়ে থাকতে দেখে আস্তে করে খাবারটা সোফার সামনে টি টেবিলের উপর রেখে দিলো। তারপর উঁকি ঝুঁকি মেরে কুহুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে চলে গেলো। কুহু আবারো উঠে বসলো। তার পক্ষে এভাবে ভং ধরে শুয়ে থাকা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। শাহাদ দরজা খুলে বের হয়ে এলো। কুহু চিন্তায় ডুবে ছিলো তাই শাহাদের আসার আগে শুতে গিয়েও শুতে পারলো না। সে থতমত খেয়ে গেলো। শাহাদ টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে কুহুকে দেখে খুশি হলো।জিগেস করলো-
"ঘুম ভেঙেছে?"
কুহু উপর নীচ মাথা নাড়ালো। শাহাদ টেবিলে থাকা ট্রে টা দেখলো। তারপর নিজেকে পরিপাটি করে বলল-
"এসো, খাবে আসো।"
কুহু বিস্মিত হলো। শাহাদ তার খাওয়ার খোঁজ নিচ্ছে? তাহলে কি সে জানে যে কুহু অপেক্ষা করে না খেয়ে আছে? শাহাদ কুহুর দিকে তাকালো। কুহু এখনো বসে আছে। শাহাদ আর ডাকলো না, সে এগিয়ে গিয়ে বিনা নোটিশে কুহুকে কোলে তুলে ফেললো। কুহু চমকে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো শাহাদের। শাহাদ হাসি মুখে কুহুকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। তারপর নিজে তার পাশে বসে ভাতের প্লেট নিলো। পরিমানমতো তরকারি নিয়ে ভাত মাখিয়ে কুহুর মুখের সামনে ধরলো। কুহু টোটাল ব্যাপারটায় আরো বিস্মিত হলো।শাহাদ ইশারা দিয়ে কুহুকে হা করতে বললো। কুহু হা করে খেয়ে নিলো। শাহাদ হেসে বলল-
"দাদী বলে বউকে মুখে তুলে খাওয়ালে নাকি মহব্বত বাড়ে। তাই ট্রাই করে দেখতে এলাম ঘটনা সত্যি কিনা!"
কুহুর চোখেমুখে কিছুটা হাসি ছড়িয়ে পড়লো। কিন্তু সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো এই সমস্ত মধুর কথা শুনে সে কিছুতেই গলে যাবে না। শাহাদ তার কাছে অনেক অপরাধের আসামী। সে এসব অপরাধ এত সহজে ক্ষমা করে দিবে না। শাহাদ দ্বিতীয় বার কুহুর মুখের কাছে ভাত ধরলো। কুহু জিজ্ঞেস করলো-
"আপনি খাবেন না?"
শাহাদ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।কৈফিয়ত দেয়ার মতো করে বলল-
"আমি খেয়ে এসেছি। আসলে পার্টি অফিসে এমনভাবে ধরলো যে না খেয়ে পারলাম না।"
তারপর কুহুর মুখভঙ্গি অবলোকন করে বলল-
"তুমি কি বেশিক্ষন অপেক্ষা করেছো?"
শাহাদের কেয়ারে কুহুর যতটা অভিমান কমেছিলো এসব শুনে এখন যেন আরো তরতর করে বেড়ে গেলো।খেয়ে এসেছে ভালো কথা,সেটা কি কল করে জানাতে পারতো না?কিংবা কুহু খেয়েছে কিনা সেটার খবরও কি নিতে পারতো না? কুহু যে সবে জ্বর থেকে উঠলো শরীর ভালো কিনা তাও কি জিজ্ঞেস করতে পারতো না?বিয়ের পর কাপলদের কত মধুর স্মৃতি থাকে। আর তাদের সব স্মৃতি হচ্ছে তেতো,মধুর ছিটাও নেই সেখানে। শাহাদ বেশ বুঝতে পারলো কুহুর মনের অবস্থা।হাতের খাবারটা কুহুর দিকে বাড়িয়ে বললো-
"স্যরি আর হবে না। এখন তাহলে খাও।"
কুহু আর একটা কথাও না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলো। শাহাদ প্লেটসহ ট্রেটা মালাকে ডেকে দিয়ে দিলো। নিজে হাত ধুয়ে এসে বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে কুহুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
"পেট ভরেছে?"
কুহু খেয়ে দেয়ে বিছানায় উঠে বসেছিলো। শাহাদের কথায় কঠিন স্বরে বললো-
"হুম।"
শাহাদ মনে মনে কিছু রোমান্টিক কথা গুছিয়ে আস্তে ধীরে বিছানার কাছে এলো।নিজের শোয়ার জায়গাটায় বসলো । প্রস্তুতি নিয়ে কথাগুলো যেই বলতে যাবে অমনি কুহু বললো-
"আমি আপনার একটা নাম দিয়েছি?"
শাহাদ বিস্মিত হলো।আগ্রহ ভরে জানতে চাইলো-
"কি নাম?"
"তিতা খান।"
শাহাদের ভ্রু কুচকে গেল। হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলো -
"কি খান?"
"তিতা খান।শাহাদ খানের পরিবর্তে তিতা খান।"
"কিন্তু আমার নামের অর্থ তো মধু।"
"সেজন্যই তিতা খান।কেননা আপনার মাঝে মধুর লেশ মাত্র নেই।"
বলেই কুহু পুরো খাট নাড়িয়ে অন্যদিক ফিরে শুয়ে পড়লো।শাহাদ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো তার বউয়ের দিকে।জীবনে প্রেম করেনি কোনো।আশেপাশে বন্ধুরা যখন করতো তখন সে বন্ধুদের কাছ থেকে শুনতো তাদের প্রেমিকারা নাকি তাদের মিষ্টি মিষ্টি নামে ডাকে। তার নিজেরও খুব ইচ্ছে ছিলো বিয়ের পর বউ মিষ্টি একটা নাম দিবে, মধুর সুরে ডাকবে। মিষ্টি নাম তো দূর তার বদলে নাম পেলো "তিতা খান"। মনে মনে নামটা উচ্চারন করেও যেন শাহাদের গলাটা তেতো হয়ে গেলো।তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি গেলো।পানির সাথে সাথে গলা পর্যন্ত আসা রোমান্টিক কথাগুলোও গিলে ফেললো।
-------------
রাহাত বিছানায় বসে উশখুশ করছে। আনিশা সেই কখন থেকে আয়নার সামনে বসে চুল আঁচড়েই যাচ্ছে।রাহাত যে অপেক্ষা করছে সেদিকে তার নজর নেই। রাহাত নরম স্বরে ডাকলো-
" অনি,চুল আচড়ানো শেষ হয় নি?"
আনিশা জবাব দিলো-
"না।"
"তাড়াতাড়ি করো না। আমার ঘুম পাচ্ছে।"
"তাহলে ঘুমাও,আমি তো তোমার চোখে ধরে রাখি নি।"
বউ এর এমন উত্তর শুনে রাহাত দমে গেলো।চোখে ধরে রাখে নি ঠিক আছে,কিন্তু বিবাহিত পুরুষ হয়ে বউ ছাড়া ঘুমানো যায়? এই ব্যাপারটা কি আনিশা বুঝে না? আনিশা যে কেন রেগে আছে তা সে বেশ বুঝতে পারছে। আনিশা চেয়েছিলো আর কটা দিন বাপের বাড়ি থাকবে। কিন্তু রাহাত দুদিন আগেই তাকে নিয়ে চলে এসেছে। সেই থেকেই আনিশা মুখ গোমড়া করে আছে।রাহাত রাগ করে বলল-
"এমন করলে কিভাবে হবে অনি?এতদিন বাপের বাড়ি থাকা যায়? তোমার কি নিজের সংসার নেই?"
আনিশা চিরুনি রেখে রাহাতের দিকে ফিরে বলল-
"আছে, অবশ্যই আছে। কিন্তু এতদিনে একবার বাপের বাড়ি গিয়ে দুটো দিন বেশি থাকলে কি হত?"
"সামনে নির্বাচন। বাবা বললো..."
"একদম তোমার বাবার দোহাই দিবে না। বাবা মা দুজনেই তোমাকে বলেছিলো আমাকে নিয়ে আর কটা দিন থেকে তারপর বাড়ি ফিরতে। তুমি ইচ্ছা করে চলে এসেছো।"
ঘটনা সত্যি।হামিদা বেগম আর কটা দিন থাকতে বলেছিলো আনিশাকে নিয়ে।কিন্তু রাহাত আশফাক খানের ভয়ে চলে এসেছে।রাহাত জোর গলায় বলল-
"থাকব কি করে তোমার বাবার জন্য তো এক সেকেন্ডও শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারি না। যেখানেই যাই সেখানেই বাঘের মতো তাকিয়ে থাকে।"
"কিহ! আমার বাবা বাঘ!"
রাহাত জিভে কামড় দিলো। ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। মেয়ের সামনে বাবার বদনাম করে উলটো রাগিয়ে দিয়েছে। সে উঠে এসে দুহাত নেড়ে বললো-
"আরে আরে বাঘ তো ভালো জিনিস।আমাদের জাতীয় পশু বাঘ। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার।"
"আমার বাবা জাতীয় পশু?রয়েল বেঙ্গল টাইগার?"
রাহাতের নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে হলো।সে আনিশাকে রাগিয়ে দিচ্ছে তো দিচ্ছেই। কোনোমতেই লাইনে আনতে পারছে না বউকে। সে আমতা আমতে করে বলল-
"আমি উনাকে যথেষ্ট সম্মান করেই বলেছি। আমি উনাকে খুব ভালোবাসি। "
মিষ্টি কথায় কিছুই হল না।আনিশা একটা বালিশ আর কাঁথা ছুড়ে দিলো রাহাতের দিকে। রাহাত সেগুলো দুহাতে আকড়ে ধরলো।আনিশা রাহাতকে ঠেলেঠুলে ঘরের বাইরে নিয়ে বললো-
" যাও সুন্দরবনে গিয়ে ঘুমাও।"
বলেই ঠাস করে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো। রাহাত এদিক ওদিক তাকালো। তারপর আস্তে আস্তে কয়েকটা টোকা দিলো দরজায় চাপা স্বরে ডাকলো-
"অনি,অনি।প্লিজ দরজা খোলো।"
রাহাতের বাবা নাজিমউদ্দীন ঘর থেকে বের হয়েছেন একটু হাঁটাহাঁটি করতে।রাতের বেলা সহজে তার ঘুম আসে না। তাই নিচে নেমে ড্রয়িং রুমে একটু হাঁটাহাঁটি করবেন আর লেবুর শরবত খাবেন।সিড়ি দিকে আসার সময় রাহাতকে কাঁথা বালিশ নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার ভ্রু কুচকে গেলো। আরেকটু এগিয়ে এসে রাহাতকে জিজ্ঞেস করলেন-
"এত রাতে এখানে কি করিস?"
বাবার আওয়াজ শুনে রাহাত থতমত খেয়ে গেলো। দরজা থেকে সরে বললো-
"কিছুনা, দাঁড়িয়ে আছি।"
"তোর হাতে কাঁথা বালিশ কেন?"
"কাঁথা বালিশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন লাগে তাই দেখছি।"
নাজিমউদ্দীন বেশ বুঝতে পারলেন কি ঘটেছে। তিনি রাগী কন্ঠে বললেন-
"অপদার্থ!! একটা বউ এর মন জুগিয়ে চলতে পারিস না।আমার দাদার চারটা বউ ছিলো। শেষকালে কি বংশের মান ডুবাবি?"
রাহাত মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।নাজিমউদ্দীন গরম চাহনি নিক্ষেপ করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলেন। রাহাত মনে মনে চিন্তা করল আরেকবার ডাকবে কিনা আনিশাকে।পরে ভাবলো শব্দ পেয়ে তার মা উঠে এলে আর রক্ষা থাকবে না। সে সিদ্ধান্ত নিলো গেস্ট রুমে যাবে। তখনি দরজা খুলে দিলো আনিশা। অভিমান ভরা চোখে তাকিয়ে বলল-
"ঘরে এসে শোও।"
বলার সাথে সাথে রাহাত লাফ দিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। হাতের কাঁথা বালিশ ছুড়ে ফেলে আনিশাকে এক টানে কোলে তুলে ফেললো। আকস্মিক আক্রমনে আনিশা চমকে গিয়ে রাহাতের গলা জড়িয়ে ধরলো।রাহাত বললো-
"খুব বাপের বাড়ি থাকার শখ না? একসাথে টানা কয়েকমাস যেন বাপের বাড়ি থাকতে পারো সেটার বন্দোবস্ত করে দেই, আসো।"
বলেই আনিশাকে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলো।এক লাফে সুইচবোর্ডের কাছে গিয়ে লাইট অফ করে দিলো।তারপর শার্ট খুলতে খুলতে লাফ দিয়ে গিয়ে খাটে আনিশার পাশে পড়লো। আনিশা রাহাতের এতসব কান্ডে এমনিই চমকে গিয়েছিলো এখন রাহাতের পাগলামিতে তার "ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি" অবস্থা হলো।
--------------
মোশাররফ আলী কাঁদো কাঁদো চেহারা করে হিশামের সামনে বসে আছে। সে হাতে ইশারা ইংগিতে বিভিন্ন কথা বলছে। তার এসিসট্যান্ট সেগুলো হিশামকে ট্রান্সলেট করে বুঝি দিচ্ছে। হিশাম তার সামনে বসে থাকা সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি পড়া পেট মোটা মোশাররফ আলীর দিকে তাকালো। তার বিরক্ত লাগছে এই লোকটাকে।সে বিরক্ত হয়ে বললো-
"চাচা, আপনি এত ইশারা ইংগিত না করে খাতায় লিখে দেন তাহলেই ব্যাপারটা সহজ হয়।আর নয়ত মুখে বলেন।"
মোশাররফ আলী বড় বড় চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে "না" বুঝালো তারপর জিভ বের করে দেখালো। তার জিভে একটা সাদা ব্যান্ডেজ। হিশামের আরো মেজাজ খারাপ হলো। বললো-
"এত বড় ব্যান্ডেজ লাগিয়ে বসে আছেন কেন?খাওয়া দাওয়ায় অসুবিধা হয় না?ব্যন্ডেজ খুলে ফেলুন।"
মোশাররফ আলী বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। ইশারা ইংগিত বাদ দিয়ে ব্যান্ডেজ করা জিভ নিয়ে তোতলিয়ে বললো -
"এ তুমি কি বলছো!আমার জিভ কেটে ফেলেছে আর বলছো ব্যান্ডেজ খুলে ফেলতে?"
"আপনার জিভ তো কাটে নি।যাস্ট জিভের ডগায় হালকা পোচ মেরেছে আর তাতেই আপনি এত বড় ব্যান্ডেজ বানিয়ে অভিনয়ে নেমেছেন।"
মোশাররফ আলী রাগে গর্জে উঠলেন। টান মেরে জিভে পেঁচিয়ে রাখা সাদা ব্যান্ডেজের কাপড়টা খুলে ফেললো। নিচে জিভের উপর হালকা একটা ব্যান্ডেজ করা।ক্ষুব্ধ হয়ে হিশামকে বললো-
"আমি অভিনয় করছি না।ওই শাহাদ আমার জিভ প্রায় কেটেই ফেলছিলো আমার ক্ষমতার ভয়ে সবটা কাটে নি। আমি অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।"
জিভে ক্ষত থাকায় মোশাররফ আলীর কথা অস্পষ্ট শুনালো। হিশাম কষ্ট করে বুঝে নিলো তার কথা।তাচ্ছিল্য করে বলল-
"আপনার আবার ক্ষমতা। আপনি যেসব করে বেড়ান। শাহাদ তো শুধু পোচ মেরেছে আমি হলে গোড়া থেকে জিভ কে*টে দিতাম।"
মোশররফ আলী রাগে গর্জে উঠলেন।বললেন-
"তোমাকে সাহায্য করার এই প্রতিদান দিচ্ছ? আমি তোমার দলে যোগ দিতে চাইতে এসেছি সেটা তোমার ভাগ্য। অথচ তুমি আমাকে অপমান করছো।"
"আপনি যে আমার সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না তার গ্যারান্টি কি?"
"খানরা আমাকে কখনোই প্রাপ্য সম্মান দেয় নি।আমার পরিবর্তে আমার অনেক জুনিয়রকে দলের বড় বড় দায়িত্ব দিয়েছে।সেই রাগ থেকেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। তুমি আমাকে প্রাপ্য সম্মান দিবে আমি তোমার দলের জন্য কাজ করব। তোমার নিশ্চয়ই বিরোধী পার্টির ভিতরের খবর জানে এমন লোকের প্রয়োজন?"
হিশাম মৃদু হাসলো।আসলেই তার প্রয়োজন।খান পরিবারের রাজনৈতিক দলের ভিতরের কোনো লোককেই তো সে চাচ্ছিলো।শুধু যে-সে লোক সে চায়নি। অনেক আগে থেকে দলের সাথে আছে এমন লোককেই সে চাচ্ছিলো। তাই সে নীতিহীন দূর্নীতিবাজ মোশাররফ আলীকে টার্গেট করেছে। টাকার লোভ দেখিয়ে নিজের কব্জায় এনেছে। তারপর তার তথ্যের উপর ভিত্তি করে ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে। শাহাদের কাছে মোশররফ আলীর বিশ্বাসঘাতকতার প্রমান সেই-ই পাঠিয়েছিলো। শাহাদ মোশাররফ আলীকে দল থেকে বের করে দিলে সে যে হিশামের কাছেই আসবে তা হিশাম খুব ভালো করেই জানতো। বিরোধী দলের পুরনো কর্মীকে নিজের দলে নিয়ে আসা মানে অনেক বড় একটা ব্যাপার।হিশাম একটু চিন্তা করার ভান করে বলল-
"ঠিক আছে,দলে যেহেতু আসতেই চাচ্ছেন তাহলে আসেন। আমার অসুবিধা নেই।"
মোশাররফ আলী হে হে করে হাসলো।মনে মনে ভেবে নিলো হিশাম চৌধুরী একা। তার মাথার উপর বাবা নেই,ছোট ভাইটাও রাজনীতি করে না,শাহাদের মতো ততটা বুদ্ধিমানও না।তাই হিশামকে দমিয়ে রেখে দলের সবকিছু নিজের কব্জায় নিয়ে আসতে বেগ পেতে হবে না। হিশাম কিছু না বললে অন্যান্য নেতারাও কিছু বলতে পারবে না। মোশাররফ আলী হিশামের দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসলো।হাসলো হিশামও। সে মনে মনে মোশাররফ আলীর সাহায্যে খান পরিবারেত রাজনৈতিক ইতিহাসের ইতি টানার ছক কষতে লাগলো।
চলবে
[পরিক্ষার জন্য গত কাল পার্ট দিতে পারি নি। দুঃখিত সবাইকে অপেক্ষা করানোর জন্য]
0 Comments:
Post a Comment