#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-২৩
শাহাদ কোনোভাবেই কুহুর সাথে রোমান্টিক কোনো মুহূর্ত পাচ্ছে না। সারাদিন সে বাইরে থাকে, রাতে বাড়িতে এসে দেখে কুহু ঘুমিয়ে পড়েছে।এখন আর কুহু ওর জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করে না।প্রায় কয়েকদিনই শাহাদ পার্টি অফিসে না খেয়ে বাড়িতে কুহুর সাথে খাবে বলে অভুক্ত থেকেছে।কিন্তু বাড়ি ফিরে শুনেছে কুহু নাকি আগেই খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়েছে। দুজনার মধ্যকার এই বিরহের আগুনে আরো ঘি ঢাললো কুহুর বাপের বাড়ি যেতে না পারার দুঃখ।সব মিলিয়ে শাহাদ খুব নাজেহাল অবস্থায় আছে। একদিকে বাইরে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র আর অন্যদিকে ঘরে বউ এর রাগ। ফাটা বাঁশের চিপায় পড়ে শাহাদের অবস্থা তেমন ভালো না।আজ শাহাদ মনে মনে পণ করেছে আজ যেভাবেই হোক সে দশটার আগে বাড়ি ফিরবে।বিয়ের আগে তাও সে মাঝেমধ্যে ডিনারটা বাড়িতে করতে পারতো। বিয়ের পর নির্বাচনের চাপ সামলে বাড়ি গিয়ে বউ এর মুখ দেখাটাও মুশকিল হয়ে গেছে।
শাহাদ সমস্ত কাজ তমালের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে এলো।তমাল অসহায় কন্ঠে কয়েকবার মিটিংয়ের কথা তুললো। তাতে কাজ হলো না।শাহাদ গাড়ি নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা দিলো। মাঝে একবার গাড়ি থামিয়ে একটা গোলাপের তোড়া কিনলো। কি মনে করে আইসক্রিমও নিলো।আইস্ক্রিম খেয়ে যদি কুহুর মনটা একটু গলে সেই আশায়। বাড়ির পার্কিং এরিয়ায় যখন গাড়ি পার্ক করলো তখন বাজে রাত নটার উপর। শাহাদ গাড়ির চাবি একটা ড্রাইভারকে দিয়ে গ্যারেজে রাখতে বলে তড়িঘড়ি করে বাড়ি ঢুকলো। বাড়ি ঢুকে দেখলো কেবল ডায়নিং এ খাবার দেয়া হচ্ছে।তারমানে এখনো কেউ খায় নি,কুহুও খায় নি, ঘুমিয়ে পড়ার তো প্রশ্নই উঠে না। সে লম্বা লম্বা পা ফেলে দুতিনটা সিড়ি একবারে পার হয়ে উপরে উঠতে লাগলো।
কুহু ওড়না ঠিক করতে করতে সিড়ির দিকে আসছিলো। সে নিচে যাবে। দুটো সিড়ির ধাপ নামতেই সামনে তাকিয়ে শাহাদকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে চমকে গিয়ে "আয়ায়ায়া" বলে চিৎকার করে উঠলো। শাহাদ নিচের দিকে তাকিয়ে উঠছিলো আর চিন্তা করছিলো কিভাবে কুহুকে ফুলগুলো দিবে।আকস্মিক চিৎকারে সামনে তাকিয়ে দেখলো কুহু তার একদম সামনে। দুজনেই কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলো।ধাক্কা লাগলো দুজনেরই। কুহু চিৎকার করতে করতে শাহাদের উপর পড়ে গেলো। শাহাদ কুহুকে ধরার জন্য আইস্ক্রিম আর ফুলের তোড়া ছুড়ে ফেললো। আইস্ক্রিমের বক্স খুলে গিয়ে সিড়ি বেয়ে গড়িয়ে পড়লো আইস্ক্রিম,সাথে পড়লো ফুলের তোড়াটাও।কুহু পড়ে যাওয়ার ভয়ে দুহাতে শাহাদের চুল খামছে ধরলো। শাহাদ এক হাতে কুহুকে জাপ্টে ধরে আরেক হাতে সিড়ির রেলিং ধরে কোনোমতে দুজনের পড়ে যাওয়া ঠেকালো।
চিৎকার শুনে বাড়িতে থাকা মেয়ে বউরা সবাই সিড়ির নিচে এসে সমবেত হলো। শাহাদ আর কুহুকে এভাবে দেখে সবার মুখ হা হয়ে গেলো। কুহু আর শাহাদ দুজনে ওভাবেই সবার দিকে তাকালো। রাফা কিটকিট করে হেসে বলল-
"এমা! ভাইয়া লুকিয়ে ভাবিমনির জন্য আইস্ক্রিম নিয়ে এসেছিলো।"
মালা সিড়ির মাঝামাঝি পড়ে থাকা ফুলের তোড়াটার দিকে তাকিয়ে বলল-
"গোলাপ ফুলও তো দেখি আনছে। ভাইজান তো বিরাট রুমান্টিক।"
শাহাদের অবস্থা হলো করুন। একে তো কুহু চুল খামছে ধরে আছে তার উপর সবার এরকম দৃষ্টি। সে কুহুকে ফিসফিসিয়ে বললো-
"কুহু আমার চুল ছাড়ো।"
কুহু এক প্রকার আতংকে ছিলো। শাহাদের কথা শুনে সে তাকিয়ে দেখলো সে শাহাদের চুল ধরে শাহাদের গায়ের সাথে লেপ্টে আছে।সে তাড়াতাড়ি শাহাদের চুল ছেড়ে দিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো।শাহাদ একহাতে চুলেগুলো একটু নাড়লো। কুহু যেভাবে খামছে ধরেছিলো তাতে চুল পড়ে টাক হয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছুনা। শাহাদ দ্রুত সিড়ি পেরিয়ে ঘরে চলে গেলো। কুহু নিচে দাঁড়ানো সবার দিকে অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো।ঘরে যাবে কিনা নিচে যাবে বুঝতে পারলো না।শেষে রেজিয়া সুলতানা বললেন-
"যাও ঘরে গিয়ে দেখো শাহাদের কিছু দরকার কিনা।"
কুহু তাড়াতাড়ি সিড়ি পেরিয়ে ঘরে চলে এলো। এসে দেখলো শাহাদ ঘরে নেই।ঘরের বামপাশে থাকা দরজাটা হালকা খোলা দেখলো। ওখানে শাহাদের স্টাডি রুম। তাহলে নিশ্চয়ই স্টাডিরুমে।ঢুকবে কিনা ভাবতে ভাবতে শাহাদ বেরিয়ে এলো। কুহুকে একবার দেখে চোখ সরিয়ে নিলো শাহাদ। সে যতই চেষ্টা করছে ততই যেন তার রোমান্টিকতার দফারফা হচ্ছে। তাই এখন সে অন্য পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
রাতে খাওয়ার পর শাহাদ তার স্টাডিরুমে ঢুকে গেলো। ল্যাপ্টপের কীবোর্ডে ঝড় তুলে ইন্টারনেটে সার্চ করলে "রোমান্টিক হওয়ার উপায়"। ইন্টারনেটে যেসব উপায়ের কথা ভেসে উঠলো সেসব উপায় পর্যন্ত পৌছাতেই তো সে পারছে না। একসাথে এক বিছানায় ঘুমালেও কেউ কারো কাছাকাছি আসতে পারছে না। কুহুকে বলেছে প্রেম হওয়ার পর পরিনয় হবে।সেই প্রেমটাই করতে পারছে না পরিনয় তো বহু দূরে। শাহাদ সিদ্ধান্ত নিলো আগামি কয়েকদিন সে বাড়িতে থাকবে। বাড়িতে থেকে সমস্ত কাজকর্ম দেখাশোনা করবে।
শাহাদ বাড়িতে থেকে যাওয়ায় কুহু মনে মনে অনেক খুশি হলো। বিয়ের পর সে শাহাদকে হাতেগোনা কয়েকদিন পেয়েছে। এছাড়া শাহাদ সবসময়ই বাইরে বাইরেই ছিলো। কুহু বেশ খুশি হয়ে সকাল সকাল পরিপাটি হয়ে জিমে শাহাদের জন্য কফি নিয়ে গেলো। কফিতে চিনির পরিমান বেশি হলেও শাহাদ খেয়ে প্রশংসা করলো। শাহাদের বাড়িতে বসে থাকা আশফাক খান ভালোভাবে নিলেন না। এই বয়সের ছেলেরা বাইরে গিয়ে কাজ করবে, দেশের কল্যানে নিজেকে বিলিয়ে দিবে তা না করে ঘরে বসে থাকার কারন কি? তিনি মিটিং এ যাওয়ার আগে শাহাদকে ডেকে একগাদা ফাইল ধরিয়ে দিলেন। গম্ভীর স্বরে বললেন-
" বাড়িতে শুধু বসে না থেকে কিছু কাজ কর। আসন্ন নির্বাচনের জন্য প্ল্যান তৈরি কর।"
আশফাক খানের কান্ডে সবচেয়ে বিরক্ত হলেন কুলসুমা বেগম। নতুন নতুন বিয়ে করেছে ছেলে এখন বিভিন্ন অযুহাতে বাড়িতে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। বংশের বাতি আনার জন্য কোথায় নিজে ছেলেকে ছুটি দিবে তা না করে ছেলের কাঁধে কাজের বোঝা চাপিয়ে দিলো? কুলসুমা বেগম রেজিয়া সুলতানাকে ডেকে অনেক কথা শুনালেন।পুত্রবধুকে পুত্রের নির্বুদ্ধিতার কথা শুনাতেও ভুললেন না। শেষে বলে দিলেন রেজিয়া সুলতানা যেন আশফাক খানের সাথে এ নিয়ে আলাপ করে।রেজিয়া সুলতানা পড়লেন বিপাকে। না তিনি শ্বাশুড়িকে কিছু বুঝাতে পারবেন আর না শ্বাশুড়ির ছেলেকে।দুজনেই নিজ নিজ বুঝে চলে।তাই তিনি চুপ থাকারই সিদ্ধান্ত নিলেন। এদের সাথে কথা বলার বদলে তিনি কুহুর সাথে কথা বলে নিবেন।
----------
শাহাদ স্টাডিরুমে ফাইল সামনে নিয়ে বসে আছে। আরামদায়ক চেয়ারটা অল্প অল্প নাড়াচ্ছে। বাড়িতে থেকে গিয়েছিলো বউ এর সাথে রোমান্স করতে অথচ এখন তাকে ফাইল দেখতে হচ্ছে। বাড়িতে থেকে গেছে বলে কুহুর আনন্দ কিছুটা হলেও চোখে পড়েছে তার।এখন বাড়িতে থেকে ফাইল নিয়ে বসে আছে দেখলে কুহু নিশ্চয়ই ভেবে বসবে শাহাদ ফাইল দেখতেই বাড়িতে থেকে গেছে। শুরু হবে আরেকটা ভুল বুঝাবুঝি। শাহাদ কয়েকটা ফাইল হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো স্টাডি থেকে। ফাইল বগলদাবা করে সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
কুহু রেজিয়া সুলতানার ঘর থেকে নিজের ঘরে এসে দেখলো শাহাদ নেই। সে একবার স্টাডি রুমে উঁকি দিলো সেখানেও শাহাদকে না দেখতে পেয়ে সে কিছুটা খুশিই হলো।সে ঝটপট আলমারি খুলে একটা শাড়ি বের করে ফেললো।রেজিয়া সুলতানা তাকে ডেকে বিভিন্ন উপদেশ দিয়েছেন। বুঝিয়েছেন স্বামীর মন কি করে পেতে হবে সেসব কথা। শ্বাশুড়ির কাছ থেকে এসব কথা শুনতে কুহুর লজ্জাই লেগেছে কিন্তু সে ভদ্র মেয়ের মতো সব শুনেছে। সেই কথাই এখন সে পালন করবে। আকাশী কালার শাড়িটা সে পড়ে ফেললো।আনাড়ি হাতে শাড়ি পড়তে অসুবিধা হলেও মোটামুটি ভালোই হলো শাড়ি পড়াটা। হাত ভর্তি আকাশি কালার কাচের চুড়ি পড়লো, কানে পড়লো দুল। শাহাদ মেকাপ দেয়া পছন্দ করে না তাই হালকা করে একটু সাজলো।তারপর চুলগুলো ছেড়ে দিলো। আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে একটা বেলী ফুলের মালার অভাব অনুভব করলো।বেলী ফুলের মালা থাকলে খোপায় দিতে পারতো। কুহু এক হাতে আচল নাড়িয়ে গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে ঘরময় নেচে বেড়ালো। তারপর বিছানায় বসে শাহাদের অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু এতক্ষন পরেও শাহাদের কোনো খোজ না পেয়ে তার বেশ রাগ লাগলো। মুখে নেমে এলো কালো ছায়া।কুহুর সাথে সাথে আকাশেও নেমে এলো কালো মেঘ। আকাশ কালো করে ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি নামলো। কুহু দৌড়ে গেলো জানালার কাছে।বৃষ্টি দেখে তার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো।কোনো কিছু না ভেবেই দুহাতে শাড়ি তুলে দৌড় দিলো ছাদের দিকে। ছাদের দরজায় এসে একটু থেমে ফম নিলো। তারাপর নেমে গেলো ছাদে।দুহাত দুদিকে মেলে দিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে বৃষ্টিতে ভিজলো।খুশিতে লাতে লাফাতে ছড়া কেটে বললো-
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে
ধান দেব মেপে
লেবুর পাতা , করমচা
যা বৃষ্টি চলে যা।
তারপর ব্যস্ত হয়ে বললো -
"না না বৃষ্টি যাস না,যাস না।বেশি করে আয়।"
কুহুর লাফানোর মাঝে একটা ভয়ার্ত পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে এলো-
"এভাবে লাফাচ্ছো কেন?পড়ে যাবে তো।"
কুহু লাফানোর মাঝেই চমকে গিয়ে পাশে তাকাতে গিয়ে ধপাশ করে পড়ে গেলো। যন্ত্রনায় কোমড় চেপে ধরলো। দেখতে পেলো অস্থির হয়ে দৌড়ে আসা শাহাদকে।শাহাদ ফাইলপত্র নিয়ে ছাদে ছাউনির নিচে চেয়ার টেবিলে এসে বসেছিলে। বিশাল ছাদের জায়গায় এমন ছাতাওয়ালা কয়েকটা খোলা ঘরের মতো আছে। চারপাশে খোলা শুধু উপরে ছাউনি। তার ভিতরে চেয়ার টেবিল রাখা। মাঝে মাঝে পরিবারের সকলে মিলে আড্ডায় বসে এখানে। এখানেই শাহাদ মনোযোগ দিয়ে ফাইল দেখছিলো। ইচ্ছে ছিলো তাড়াতাড়ি ফাইল শেষ করে ঘরে যাবে।কিন্তু এর মাঝে বৃষ্টি এসে গেলো। এরপর একটা মেয়েলি কন্ঠের ছড়া শুনে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো কুহু লাফাচ্ছে। তৎক্ষনাৎ শাহাদ চিৎকার করার সাথে সাথে কুহু পড়ে গেলো।
শাহাদ ফাইল পত্র ফেলে দৌড়ে এলো কুহুর কাছে। হাটু ভেঙে বসলো কুহুর কাছে। কুহু কোমড়ে হাত দিয়ে যন্ত্রনায় মুখ খিচে বসে আছে। শাহাদ কুহুর হাত ধরে টেনে সোজা করলো। কোমড়ে টান পড়ায় কুহু ককিয়ে উঠলো। শাহাদ বৃষ্টিতে ভিজে গেছে পুরো।কুহুকে জিজ্ঞেস করলো-
"বেশি ব্যথা পেয়েছো? চল ঘরে চল।"
কুহু শাহাদের হাত ধরে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে কোমড়ের ব্যথায় দাঁড়াতে পারলো না আবার পড়ে গেলো। মিনমিন করে শাহাদকে বললো-
"আমাকে কোলে করে ঘরে নিয়ে যান। আমি হাটতে পারব না।"
শাহাদ এই পর্যায়ে এসে বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে যাওয়া কুহুর দিকে পূর্ন দৃষ্টি দিলো।বৃষ্টি ভেজা শাড়ি পড়া কুহুকে দেখতে পেলো। বৃষ্টিতে ভিজে কুহুর ফর্সা মুখ যেন ভেজা গোলাপের মতো লাগছে।শাহাদ স্থান কাল ভুলে কুহুর গালে আলতো করে হাত রাখলো। কুহুর কোমড়ের ব্যথা উধাও হয়ে গেলো শাহাদের স্পর্শে।উষ্ণ স্পর্শে চোখ বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো তার।কিছুক্ষন সেও বৃষ্টিতে ভেজা শাহাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। শাহাদের সামনের চুলগুলো থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে।শান্ত চোখের দৃষ্টি কুহুর দিকে নিবদ্ধ। ছাদে বসে থাকা দুজনের উপর আকাশ থেকে নেমে আসছে অঝোর বর্ষন। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকালো তারপরেই কাছেই কোথাও বিকট শব্দে বাজ পড়লো।কুহু এক চিৎকার দিয়ে শাহাদের গলা জড়িয়ে ধরলো। শাহাদ হঠাৎ আক্রমনের জন্য প্রস্তুত ছিলো না।সে ফ্লোরে হাতের তালুতে ভর দিয়ে টাল সামলালো।
কুহু শাহাদের কাঁধে মুখ গুজে আছে।।শাহাদ এক হাতে কুহুকে আগলে আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ থেকে বর্ষন নেমে আসছে।বৃষ্টির পানি আর দুজনের অনুভূতি মিলেমিশে একাকার।শাহাদের ইচ্ছে হলো কুহুকে নিয়ে এভাবেই এখানে বৃষ্টিতে ভিজে সারাটাদিন কাটিয়ে দিতে। কিন্তু তার বিবেক তাকে এখানে থাকতে নিষেধ করছে।বলছে এই বৃষ্টিতে অসুস্থ হতে পারে কুহু। শাহাদ সেই রিস্ক নিলো না।দুহাতে কোলে তুলে নিলো কুহুকে। কুহু মুখ তুলে চাইলো শাহাদের দিকে। শাহাদ কুহুর কপালে নিজের কপাল দিয়ে আলতো করে ঢুস দিলো।তারপর মৃদু হেসে হাটা ধরালো ছাদের দরজার দিকে। তার খুব ভালো লাগলো। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দুজনের এরকম কাছাকাছি চলে আসা তার মনটা খুশিতে ভরিয়ে দিলো।
শাহাদ কুহুকে নিয়ে ছাদের সিড়ি পেরিয়ে নিচে আসতেই থেমে গেলো। কুলসুমা বেগম আর মালা আসছে। কুহু তাদেরকে দেখে লজ্জায় শাহাদের ঘাড়ে মুখ লুকালো।কুলসুমা বেগম নাতি আর নাতবউকে এমন অবস্থায় দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। মালা হেসে মুখে ওড়না চেপে কুলসুমা বেগমকে বললো-
"দাদীজান আসেন যাইগা, আমের আচার এতক্ষনে ভিইজ্জা চুপচুপা হইয়া গেছে।"
কুলসুমা বেগম গলা ঝাড়লেন। অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন-
"আমের আচার যে ছাদে ছিলো সেটা মনে রাখবি না তুই?এখন তো নষ্টই হয়ে গেছে।চল ঘরে যাই। "
ঘরে যাওয়ার কথা বললেও কুলসুমা বেগম গেলেন না।তিনি শাহাদকে যাওয়ার জন্য জায়গা করে দিলেন। শাহাদ কুহুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি করিডোরে চলে আসলো। আরেকটু গেলেই তাদের ঘর। করিডোরের মাঝামাঝি এসেই দেখা হয়ে গেলো আব্দুল গাফফার খানের সাথে। গাফফার খানকে দেখে কুহু শাহাদের গলা শক্ত করে চেপে ধরে এক প্রকার ঘাড়ের ভেতর ঢুকে যেতে চাইলো। শাহাদ গলায় চাপ পেয়ে কয়েকবার কাশলো। এই অবস্থায় দাদাজানের সামনে পড়ে তারও লজ্জা লাগছে। আব্দুল গাফফার হো হো করে হেসে বললেন-
" ওয়েল ডান মাই বয়,ওয়েল ডান।এমন বয়সে আমিও কোলে নিয়েছি তোর দাদীকে। একবার কোলে নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতা করে ফার্স্ট হয়েছিলাম।"
তারপর আবার হো হো করে হেসে বললেন-
"যা যা,দাদার মান রাখিস।"
শাহাদ জোর করে হেসে কুহুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি নিজের ঘরের দিকে হাঁটা দিলো। এভাবে চললে লজ্জা শরম আর বাকি থাকবে না তার। সিড়ি পেরিয়ে তারপর তাদের ঘরে যাওয়া লাগে। সিড়ির কাছে এসেই শাহাদ থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। সিড়ি দিয়ে উঠে সামনে দাঁড়িয়ে আছে আশফাক খান। এই ঘটনায় কুহু শাহাদের গলা আরো পেচিয়ে ধরে মুখ শাহাদের কাঁধের কাছে নিয়ে অন্যদিকে মুখ করে রইলো।লজ্জায় তার চোখ বন্ধ হয়ে গেছে। শাহাদের অবস্থা হলো দেখার মতো।কুহু নাহয় লজ্জায় তার কাঁধে মুখ লুকিয়েছে কিন্তু সে কোথায় লুকাবে মুখ?।একে তো সামনে দাঁড়ানো বাপ অন্যদিকে বউ গলায় ফাঁস হয়ে ঝুলে আছে,শ্বাস নেয়াই দায় হয়ে গেছে। আশফাক খান ছেলে আর ছেলের বউকে এই অবস্থায় দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তাড়াতাড়ি পিছন ফিরে সিড়ি বেয়ে নেমে যেতে লাগলেন।অস্বস্তি কাটাতে গলা উচিয়ে বল্লেন-
" অনির মা কোথায়, একটু চা দিয়ে যাও তো।"
শাহাদ বেশ তার বাবার অস্বস্তি বুঝলো। আর কারো সামনে পড়ার আগেই সে বড় বড় পা ফেলে ঘরে ঢুকে গেলো। বউকে কোলে নিয়ে শান্তিমতো ঘোরার অবস্থাও তার নেই। বারবার তার রোমান্টিক হওয়ার দোরগোড়ায় কোনো না কোনো বাঁধা আসছেই।শাহাদ ঘরে ঢুকে বিছানার উপর কুহুকে বসিয়ে দিলো। বললো-
"ভেজা শাড়ি চেঞ্জ করো নয়ত ঠান্ডা লাগবে।"
"আমি তো উঠতেই পারছিনা।"
শাহাদ আলমারি খুলে কুহুর জন্য একটা থ্রিপিস বের করে এনে বললো-
"এখানেই চেঞ্জ করো।"
ফার্স্ট এইড বক্স থেকে একটা মলম বের করে বললো-
"তারপর এটা ব্যথার জায়গায় এপ্লাই করো।"
তারপর নিজের জামাকাপড় নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। তারও যত দ্রুত সম্ভব ভেজা জামাকাপড় চেঞ্জ করা উচিত।
চলবে
0 Comments:
Post a Comment